...একজন আদর্শ স্ত্রীর কিছু গুনাবলী...
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ২০ জুন, ২০১৩, ১২:১৫:৩০ দুপুর
আমাদের দেশে একটি সুন্দর প্রবাদ বাক্য প্রচলিত আছে, "সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে"। আর তাই হয়তো যুবকেরা হন্য হয়ে তন্য তন্য করে স্ত্রী হিসেবে রমনী খুঁজতে শুরু করে। কিন্তু যে ভুলটি প্রায় সবাই করে তা হলো রমনীর বদলে চামড়া সুন্দর একজনকে স্ত্রী করে নিয়ে আসে। তাদের কি করে বুঝাই বলেন রমনী বলতে চামড়াগত সৌন্দর্য্য বুঝানো হয়নি। একজন মেয়ের সার্বিক গুনাবলীকেই মূলত রমনী বুঝানো হয়েছে। এবার সেই মেয়ে চামড়াগত রংয়ের দিক দিয়ে কাল হোক আর ফর্সা হোক, উচ্চতার দিক থেকে লম্বা কিংবা খাট, বয়সের দিক থেকে কম বা বেশি যাই হোক এমন কিছু গুনাবলী আছে যা একজন মেয়েকে করে তুলে অতুলনীয় রমনী যার গুনের আলোয় আলোকিত হয় একটি পরিবার। কি জানতে চান কি সেই গুনাবলীসমূহ? আসুন জেনে নেই একজন আদর্শ স্ত্রীর কিছু গুনাবলী -
সদা সত্য বলা: একজন আদর্শ স্ত্রী সবসময় তার স্বামীর সাথে সত্য কথা বলে। কোন ব্যাপারেই মারপ্যাঁচ-ধানাইপানাই করে না। যা বলার সোজা-সাপটা সত্য কথাটাই বলে। যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বস্যতার ভীত সবসময় মজবুত থাকে।
তুলনা করা: অনেক স্ত্রীই এই ভুলটি বেশি করে থাকেন। নিজের স্বামীকে অন্যর স্বামীর সাথে তুলনা করেন। এতে করে সাংসারিক শান্তি বিনষ্ট হতে পারে। একজন আদর্শ স্ত্রী কখনোই বলবে না যে অমুকের স্বামী তো তোমার মতো এমনটা করেনা, তুমি কেন কর?। একজন আদর্শ স্ত্রী প্রয়োজনের নিজের আদর্শের আলোতে স্বামীকে বলদে নিবেন। যেমন স্বামী সিগারেট খাওয়া ত্যাগ করতে সহায়তা করবেন।
তুষ্ট থাকা: বিশ্বাস করুন এই তুষ্ট থাকা ব্যাপারটা যে কোন নারীর জন্য একটা বিরাট বিরাট বিরাট গুন।স্ত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই স্বামীর আয়ের সীমাবদ্ধতা বুঝতে চায় না। তার চাহিদার কোন শেষ নাই। পাশের বাড়ির ভাবীর মতো শাড়ি কিনতে হবে, টিভিটা ৪২ ইঞ্চি না হলে প্র্যাসটিজই থাকে না ইত্যাদি অজুহাতে অস্থ্যির রাখে স্বামীকে। একজন আদর্শ স্ত্রী এমনটা করেনা। সে মনে করে আমার স্বামী মানেই আমি। আর আমার যা আছে তাতেই আমি তুষ্ট থকাবো। আর বিশ্বাস করেন সেই পরিবারেই মহান রব আয়ে বরকত দেন।
স্বামীর ভুলত্রুটি অন্যকে না বলা: অনেক স্ত্রী আছেন বুঝে হোক আর না বুঝেই হোক স্বামীর ভুলত্রুটি অন্যর কাছে বর্ননা করে। বিশেষ করে নিজের মা-বোনের কাছে স্বামীর খারাপ স্বভাবগুলো বর্ননা করে। অন্যর কাছে স্বামী ছোট হচ্ছে সেটা হয়তো সে বুঝেও না। একজন আদর্শ স্ত্রী ঠিকই বুঝে, পৃথিবীর কোন মানুষই ১০০% নিঁখুত নয়, এমনকি সে নিজেও ত্রুটিহীন নন। তাই সে স্বামীর ভুলক্রটিগুলোগুলোতো কাউকে বলেনই না বরং শুধরাতে সাহায্যে করেন।
ঘরের কাজ করার ক্ষেত্রে: অনেক নারীই আছেন যারা সমঅধিকার বলে চিৎকার চেচামেচি করেন অথচ তার উপর যে দায়িত্ব তা পালন করেননা। একজন আদর্শ স্ত্রী নিজের ঘর সমসময় পরিপাটি রাখেন, ঘরের সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন। এককথায় ঘরের স্বামীর তথা নিজের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
স্বামীর জন্য সাজ: একজন স্ত্রী ভালো করেই জানে তার স্বামী তার কোন দিকটা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। আর একজন আদর্শবান স্ত্রী স্বামীর পছন্দ অনুযায়ী নিজেকে আকর্ষনীয় করে সাজান। ঘাম/মশলা জাতীয় গন্ধ থেকে পরিচ্ছন্ন হয়ে গায়ে সুরভি মাখেন।
স্বামীর খেদমত করা: একজন আদর্শ স্ত্রী সবসময় ব্যাকুল থাকে স্বামীর খেদমতের জন্য। নিয়মিত খাবার মেখে খাইয়ে দেন অনেকে। এতে স্বামী-স্ত্রী ভালবাসা গভীর হয়। রাতে মাথায় ইলিবিলি কেটে দেওয়া, শরীর ম্যাসেজ করে দেওয়া, অজুর পানি এগিয়ে দেওয়া এরকম যখন যে খেদমত প্রয়োজন করে থাকে।
আচার-ব্যবাহার: একজন আদর্শ স্ত্রী ভালো করেই জানে যে স্বামীর হৃদয়ে প্রবেশ করার সহজ পথ বিনয় ও সততা। একজন আদর্শ স্ত্রী সবসময় স্বামীর সাথে নারীসুলভ বিনয় ভাবে কথা বলেন। সারাদিন কাজ শেষে স্বামী যখন ঘরে ফেরে সে এমন ভাবে ছুটে যান যেন স্বামীর জন্যই এতক্ষন অপেক্ষা করছিলেন।
রাগের আগুন বসে রাখা: এটা যে কোন মানুষের জন্যই একটা বিরাট গুন। সংসারে টুকটাক ঝগড়া লাগতেই পারে। সে সময়ই হচ্ছে রাগ নিয়ন্ত্রনে রাখার পরিক্ষা দেবার সময়। একজন আদর্শ স্ত্রীর এই গুনটি থাকে। তার স্বামী যদি কোন কারনে রেগে গিয়ে চেঁচাতে শুরু করে, সে চুপ থেকে তাকে চেঁচাতে দেন। স্বামীর রাগ উবে আসলে বুঝিয়ে বলেন।
স্বামীর পরিবার: যে কারো কাছে তা মা পৃথিবীর শ্রেষ্ট নারী। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বউ-শাশুড়ী মানেই উনুনে টগবগ করা গরম জল। একজন স্বামী যতটুকু স্ত্রীকে ভালবাসে তার চাইতে বেশি ভালবাসে তার মাকে। এখন একজন আদর্শ স্ত্রী কখনোই চাইবেনা যে তার কারনে তার স্বামী তার মায়ের সাথে রূঢ আচরন করুক। যে কোন সমস্যা বুদ্ধিমত্তার সাথে সমাধার করে স্বামীর পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে সুহার্দ্যপূর্ন সম্পর্ক বজায় রাখে।
সন্তান প্রতিপালন: আল্লাহর দেয়া অনন্য দান সন্তান। একজন আদর্শ স্ত্রী সবসময় নিজ (স্বামীর) সন্তানের প্রতিপালনে সচেষ্ট থাকেন।
স্বামীর ছুটির দিনে: ছুটির দিনে সব ছেলেরাই সকালের ঘুমটাকে উপভোগ করে। একজন আদর্শ স্ত্রী ব্যপারটা বুঝতে পারেন। তাইতো সাত-সকালে বাজারের লিষ্ট ধরিয়ে দেননা বরং ঘুম থেকে উঠে স্বামী কোনটা খেতে পছন্দ করেন তাই তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। বিকেলে স্বামীকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে বেরিয়ে যান। ছুটির দিনটি স্বামীর জন্য করে তুলেন উপভোগ্য।
ইবাদত: একজন আদর্শ স্ত্রী নিজে তো মাহান রবের দাসত্য করেনই পাশাপাশি স্বামীকেও উৎসাহি করেন বিভিন্ন ধরনের ইবাদতে। যেমন স্বামী-স্ত্রী একসাথে তাহাজ্জুতের নামায আদায় করা, দরিদ্র কাউকে সাহায্য করা, ইত্যাদি।
পরিশেষে বলবো, মনের মধ্যে এ্যাঁটে থাকা কথাগুলো লিখলাম। লেখায় কোন ভূলক্রটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। আর কোন পয়েন্ট যুক্ত করা প্রয়োজন মনে করলে মন্তব্যর মাধ্যেমে জানাতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
৭৩৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন