Music...সুখে থাকতে ভুতে কিলায়... Music

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ১৭ জুন, ২০১৩, ০২:০৫:৪১ দুপুর

"সুখে থাকতে ভূতে কিলায়"...একটি চমৎকার প্রবাদ বাক্য। সুখ আসলে কি তা নিয়ে অনেক গবেষনা হয়েছে। অনেকে মনে করেন চাহিদা তত্তের শিখরে পৌঁছলেই সুখ খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ম্যালথাস এই তত্তকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন এবং পাঁচ স্তরের চাহিদা তত্বের সুত্র দেন যেখানে তিনি বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে মানুষের চাহিদা একটা পূরন হবার সাথে সাথে আর একটি উন্নতর চাহিদা তার সামনে এসে হাজির হয়। সুতরাং কোন একটি নির্দিষ্ট চাহিদা পূরন হলেই সুখের নাগাল পাওয়া গেল বলা যাবেনা।

আমার দৃষ্টিতে সুখ আসলে একটি মনস্তাত্তিক ব্যাপার। কোন একটি নির্দিষ্ট প্রয়োজনে কতটুকু প্রাপ্তিতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন তার উপর সুখ নির্ভর করে। উদাহরন দিয়ে বলি হয়তো বুঝাতে সহজ হবে। ধরুন আপনার অর্থনৈতিক সক্ষমতায় একটি সাইকেল কিনতে পারবেন কিন্তু আপনি যদি হায় আফসুস করেন কেন একটি মোটর সাইকেল কিনতে পারলেন না তাহলে আপনি অসুখী। আর যদি আপনার সক্ষমতায় যা আছে তাতেই তুষ্ট থাকেন অর্থাৎ ঐ সাইকেলেই যদি আপনি মানসিক তৃপ্ত হতেন তাতেই আপনি সুখ খুঁজে পেতেন। কি বুঝা গেল ব্যপারটা?

একবার ইত্যাদি অনুষ্ঠানে ঈদের কাপড় কেনা নিয়ে একটি ছোট্ট নাটিকা দেখিয়েছিল যেখানে এক ধনাট্য ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে নিয়ে দেশের বড় বড় শপিং মলে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুই হাত ভর্তি ঈদের কাপড়-চোপড় তবু স্ত্রীর মন খুশি করতে পারছেননা পক্ষান্তুরে এক দরিদ্র পিতা ফুতপাত থেকে তার সন্তানদের জন্য নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদের কাপড় কিনল তাতে স্বামী-স্ত্রী-সন্তানের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। কি বুঝা গেল ব্যাপারটা?...সুখ আসলে মনে..ধনে নয়।

আসুন এবার কিছু টিপস মগজে গেঁধে নেই যাতে করে বাস্তব জীবনে আমাদের মনকে সুখী রাখতে কাজে লাগতে পারে -

আলহামদুলিল্লাহ বলতে শিখুন: ভালো-মন্দ নসীবে যাই ঘটুক মহার রবের প্রতি তুষ্ট থেকে এক চিলতে হাসি দিয়ে বলুন আলহামদুলিল্লাহ। দেখবেন মুহুর্তেই মনে সুখের শীতলতা ছুঁয়ে যাবে। কার কাছে যে ঘটনাটা শুনেছি মনে নেই তবে ঘটনাটা মনে আছে, আপনাদের সাথে শেয়ার করি কি বলেন?...শেয়ার বাজারে লোকসানে এক মুসলিম ব্যাসায়ী হাসিমুখে রবের কাছে যখন বলছে আলহামদুলিল্লাহ তখন শেয়ার বাজারে ক্ষতিগ্রস্থ ও হতাশাগ্রস্থ্য একজন নাস্তিক অবাক হয়ে বললো, "তুমিই বরং সুখী, যে তোমার সব সমস্যা তোমার সৃষ্টার কাছে সপে দিয়ে তুমি নিশ্চিতে সুখে আছ"...তাই বলি কি ভাই, যাই ঘটুক নসীবে মহান রবের দরবারে তা সপে দিয়ে বলুন আলহামদুলিল্লাহ।

রাগের আগুন বসে রাখুন: দাউ দাউ আগুন যেমন সামনে যা পায় তাই দগ্ধ করে দেয় ঠিক তেমনি আপনার রাগ আপনার চারপাশের সুখগুলোকে শেষ করে দিতে পারে। তাই রাগের আগুন নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখুন। মনে রাখবে কোন কিছুই চর্চা ছাড়া আত্বস্থ্য হয়না। ঠিক যেমন অংক চর্চার মাধ্যেমে আয়ত্বে আনতে হয় তেমনি মেডিটেশনের মাধ্যে নিয়মিত চর্চা করে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে হয়। গ্যারান্টি দিলাম শুধু মাত্র একটি কাজ রাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারলে আপনি সুখী হবেন।

পজিটিভ চিন্তা করা: আপনার চারপাশে ঘটনাগুলোকে পজিটিভ ভাবে গ্রহন করুন দেখবেন সুখী হবেন। কি আবারও উদাহরন দিতে হবে? যান দিলাম একটা উদাহরন, গতকালের ঘটনা আমাদের এইচ আর ডিপার্টমেন্টে এর একজন সিনিয়র কর্মী আমার সাথে অযথাই রাগারাগি করছে। আমি তার রাগটাকে পজিটিভলি নিলাম এবং তাকে সুযোগ দিলাম তার পুঞ্জিভুত ক্ষোভ প্রকাশ করতে। তার রাগের বিপরীতে আমি হাস্যজ্জোল ব্যাবহার দিলাম। একটু পরেই সে নরম সুরে বলল, ভাই কিছু মনে করবেন না কাজের প্রেশারে এমনিতেই মেজাজটা চড়া হয়েছিল। আপনি বাড়তি কাজ দিতে আসায় রাগ আরও চড়ে গিয়েছিল। সেই থেকে তার সাথে সম্পর্ক আরো ভালো হয়েছে।

বিচার দেওয়া বন্ধ করুন আজই: আমাদের প্রায় সবার ভেতরই একটা স্বভাব এ্যাঁটে আছে পান থেকে চুন খসলেই বিচার দেওয়া। বাড়িতে/অফিসে আমরা প্রায়ই বাবা-মা/বসের কাছে ঘন ঘন বিচার নিয়ে যাই। একবার ভেবে দেখুন যার বিরুদ্ধে বিচার দিলেন বিচার দেবার পর তার সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো হবে নাকি আরো অবনতি হবে?। তাই শুধু মাত্র যে ক্ষেত্রে বিচার না দিলেই নয় শুধু সেই ক্ষেত্রে বিচার দিন। ঘন ঘন বিচার দেবার অভ্যাস ত্যাগ করুন। দেখবেন চারদিকের মানুষগুলো শত্রু হলেও আপনার বন্ধু হতে বাধ্য।

সুযোগ পেলেই হাসুন: হাসি মানুষের একটি দারুন স্বভাব। এক চিলতে হাসি আপনার চেহারার রং ই বদলে দেবে, গ্যারান্টি দিলাম। গুরুগম্ভির মুখ ভার করে রাখার চাইতে হাসিখুশি থাকলে মানসিক প্রশান্তি থাকে চরমে। নিজে হাসুন এবং এমন কিছু করুন যাতে আপনার চারপাশের মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটে উঠে। কি বুঝাইতে পারলামনা?...তাইলে তো একটা উদাহরন দিতেই হয়। এই যে রানা প্লাজায় এত্তো লোক মারা গেল হাত-পা হারিয়ে অসহায় হয়ে গেল তাদের মুখে হাসি ফুটানোও একজন হাস্যজ্জোল মানুষের স্বভাব হওয়া উচিত। আমার মনে আছে যখন ক্যাম্পের রুমে রুমে ঘুরে রানা প্লাজায় আহত মানুষদের জন্য সাহায়াত সংগ্রহ করছি তখন কল্পনায় একটি ছবি ভেসে আসছিল, " আমার গার্মেন্ট কর্মী বোনটির মুখে এক চিলতে হাসি"।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন: কথায় আছে শরীর ভালো তো মন ভালো। তাই হাসি-খুশি-সুখী থাকতে সুস্থ্যতা অনেক জরুরী। দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন দেখবেন শরীর-মন কেমন প্রফুল্ল লাগে। এতে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মন থেকে হতাশা দূর হয়ে যাবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে নিজের শরীরের প্রতি নিজের একটা কন্ট্রোল চলে আসে, এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি পায়, আর তাই রাগ নিয়ন্ত্রনে অল্পতে উত্তেজিত না হতে সাহায্য করে।

সন্দেহ ঝেড়ে ফেলুন: অনেকেরই এই বাতিক রোগটি আছে। অযথাই সন্দেহ করে। এতে মানসিক সুখ চিরতরে মন থেকে বিদায় নিতে বাধ্য। কি বুঝলেন না ব্যাপারটা? উদাহরন দিতে হবে? দিলাম না হয় একটা উদাহরন - এক স্বামী প্রায়ই লক্ষ্য করছে তার স্ত্রী যেন কার সাথে ফোনে কথা বলে। স্ত্রীর অজান্তেই তার মোবাইল ঘেটে দেখে স্ত্রী তার ফুফতো ভাইয়ের সাথে কথা বলেছে। আর যায় কোথায় অযথা সন্দেহ করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। রাতে এক দফা ঝগড়া বাধিয়ে দেয় স্ত্রী সাথে। স্ত্রী চুপ থেকে রাত বারোটার পর আলমারি থেকে একটি গিফট বের করে বলে,"হ্যাপি বার্থ ডে"। এবং বলে আমি আমার ভাইকে দিয়ে এই গিফটি আনিয়েছি তোমার জন্য। স্বামী অযথা সন্দেহ করার জন্য লজ্জা পেল। তাই বলি কি, অযথা সন্দেহ না করে সরাসরি জিজ্ঞাস করলেই তো সমস্যা চুকে যায়, তাইনা? আর মনের মধ্যে সুখ সবসময় বিরাজ করে।

প্রাকৃতিক সুখ: সুযোগ পেলেই প্রকৃতির মাঝে ডুবে যান দেখবেন আল্লাহ সৃষ্ট সৌন্দর্য্যে আপনার মন ভালো করে দিবে। মুহুর্তেই আপনার মন প্রফুল্ল হয়ে যাবে যখনই আপনি প্রকৃতির মাঝে মিশে যাবেন।

অনেক লিখলাম...আপতত আর কিছু মনে আসছে না...নতুন কিছু মনে আসলে যুক্ত করে দিব। আপনাদের মনেও এইরকম সুখী হবার কোন মন্ত্র থাকলে মন্তব্যর মাধ্যেমে আমাদের জানান।

বিষয়: বিবিধ

২২৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File