[b]...আজ ১৬ই জুন বাবা দিবস... [/b]
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ১৬ জুন, ২০১৩, ০১:১৬:৪৭ দুপুর
"লেখনীর প্রথমেই বলে নেই...আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মা দিবস/বাবা দিবস পালনের পক্ষে নই কারন নির্দিষ্ট একটি দিনে মা-বাবাকে ভালবাসতে চাইনা, বছরের ৩৬৫ দিনই মা-বাবাকে ভালবাসতে চাই।"
প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের ৫২টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। সেই হিসাবে আজ ১৬ জুন বাবা দিবস। বাবা দিবসটি গত শতাব্দির প্রথম দিকে শুরু হয়। ধারনা করা হয় ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম এই দিনটি পালিত হয়। সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলা ১৯১০ সালে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে তিনি বাবা দিবস পালন শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন আমেরিকায় বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করেন। এর পর থেকে ব্যাপক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বাবা দিবস বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে থাকে।
আমার লেখা অন্য দিকে মোড় নিব তাই এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত যারা পড়তে চান তারা এই লিংকগুলোতে ক্লিক করতে পারেন...
...উইকিপিডিয়ায় বাবা দিবসের ইতিহাস...
...নিউজ-বাংলা অনলাইন পত্রিকা...
...ব্লাগার টাকা আনা পাই এর একটি লেখা...
আজ এই ক্ষনে বাবাকে নিয়ে গল্প করবো...আপনারা চাইলেও মন্তব্যর মাধ্যেমে গল্প-আড্ডা শুরু করে দিতে পারেন...
এক.
প্রথমেই বাবা বিষয়ক একটি কবিতা পড়ুন হয়তো ভালো লাগবে। কবিতার মূল সারমর্ম হচ্ছে বাবার ক্রমধারায় যেন আমিই অতীতে ছিলাম বর্তমানে আছি এবং ভবিষ্যতে থাকবো...
...আমি...
ও আমার খোকা, আমার ওরোশজাত সন্তান
আমার শরীর নিংড়ানো একটি জ্যান্ত ¯প্রাম।
ওর শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে আমারই রক্তের স্রোত
ওর হাড়-মাংস,অস্তিমজ্জা-হরমোন আমারই অস্তিত্ব।
ঠিক যেন সেই নাক,চোখ,মুখ,দেহের গড়ন
সেই আবেগ-অনূভতি,প্রতিফলিত ইচ্ছের ধরন
হুবহু সেই হাঁটার ধরন,বাচন-ভঙ্গি,আতঁলামী
যেন ওর ভেতরেই বিরাজমান আরেকটা আমি।
হ্যা ভাই আমি,অন্য দেহে ভিন্ন হৃদয়ে আরেকটা আমি
ওর শরীরে এতটুকু আচঁড় লাগলে ব্যাথা পাই আমি
জীবনের সবকিছু উজার করে দেই ওর লাগি
ওর মুখের একফালি হাসিতে পুলকিত হই আমি।
আমার বাবা হলো দাদার স্থালাভিষিক্ত,আমি তার
আমার ছেলে আমার অস্তিত্ব,ণবজাত দাদুমনি তার
আমার অস্তিত্ব অতীতে ছিল,বর্তমানে আছে বিদ্যমান
ভবিষ্যতেও আমি থাকব নতুন কোন দেহমনে বিরাজমান।
দুই.
বাবাকে নিয়ে একটা মজার ঘটনা শেয়ার করি আশা করছি ভাল লাগবে। সারাদিন কাজ শেষে বাবা যখন ঘরে ফিরতেন তার পর্দাপন দেখেই আমরা ভাইবোন সবা দৌড়ে তাকে জাপটে ধরতাম আর পকেট চেকিং শুরু করে দিতাম। কারন বাবার পাণ্জাবির দুই পকেটে অনেকগুলো এক টাকারকয়েন থাকতো। হাতিয়ে যে যতটা নিতে পারতো তার ততটাই। এখন বুঝি বাবা ইচ্ছে করেই তার দুই পকেটে কয়েন নিয়ে আসতো। আমাদের ভাই-বোনের এমন হুড়োহুড়ি সে খুবই উপভোগ করতো।
বাবা দুপুরে রেষ্ট নেবার সময় একটা মজার টেকনিক খাটাতেন। যে যতটা পাকা চুল তুলতে পারবে তার তত টাকা। আর যায় কোথায় এক মাথা ঘিরে তিন-চারজন। পারলেতো কাঁচা চুল রোদে পাকিয়ে সংরক্ষন করি এমন ভাব। আমরা যখন মাথায় ইলিবিলি কাটছি পাকা চুলের জন্য ততক্ষনে বাবা আয়েশ করে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে চুল তুলার জন্য চুলের সংখ্যা বিবেচনায় কাউকে একটাকা কাউকে দুই টাকা দিচ্ছে। আমরা ভাই-বোন সবাই বেজায় খুশি তাই পেয়ে। তাকধিনাধিন।
তিন.
বাবা সারাটা জীবন নিজেকে বিলয়ে আমাদের মানুষ বানাতে চেষ্টা করেছেন। কতটুকু মানুষ হয়েছি তার ব্যাখায় যাবোনা তবে ভাইবোনদের একজনও অমানুষ বনে যাইনি, "আলহামদুলিল্লাহ"। বাবা এখন বয়সের ভাড়ে কূঁজো। বয়সের কারনে বিভিন্ন রোগ চারদিক থেকে আঁকড়ে ধরছে। তবে মুখ থেকে এখনো হাসিটি মুছে যায়নি। সদা হাস্যউজ্জল মানুষটি আমার বাবা ভাবতেই ভালো লাগে। আমি আমার বাবাকে খুব বেশি ভালোবাসি। বাবার জন্য আল্লাহর দরবারে আল্লাহর শেখানো দোয়াটাই করি, "রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা"।
চার.
প্রবাসী বাবারা তাদের সন্তানদেরকে যে কি পরিমান মিস করে তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। প্রবাসে ফোনে এ প্রান্তে বাবার চোখে গড়িয়ে পড়ে গরম জল আর আদর করে বলে,"ওলে বাবারে...আস কোলে আস" কিন্তু ঐ বলাতে তৃপ্ত হতে হয় প্রবাসী পিতার সন্তানকে ঝাপটে বুকের সাথে মেশানো হয়না আর। তাই প্রবাসী পিতার সন্তানদের উদ্দেশে অনুরোধ করবো -
=> প্লিজ ঠিকমতো পড়ালেখা করো
=> নিয়মিত নামাজ পড়ো
=> মায়ের কথা মেনে চলো
=> ছোট ভাই-বোনদের যথাসম্ভ্যব সাহায্যে করো
=> বাবার পাঠানো প্রতিটা টাকা হালাল উপয়ে ব্যায় করো
=> ফোনে বেশি করে বাবা বলে ডাক (এই শব্দটা ম্যাজিকের মতো কাজ করে বাবাদের মনে)
পাঁচ.
অনেক চাকরীজীবি/ব্যবাসায়ী বাবা আছেন যারা কর্মব্যস্তার কারনে সন্তানদের সময় দিতে পারেননা। সেই কাকডাকা ভোরে ঘর খেকে যায় আর গভীর রাতে ঘরে ফেরে। সকালে যখন কাজে যায় তখন সন্তান ঘুমিয়ে আবার রাতে যখন বাড়ি ফেরে তখনও সন্তান ঘুমিয়ে। মনের রাখবেন যারা নিয়মিত সন্তানকে সময় দেননা তাদের সাথে সন্তানের আন্তরিক ভালবাসার বন্ধন গড়ে উঠেনা। একটা সময় বাবা বৃদ্ধ হলে তার প্রতি সন্তানের আবেগ-ভালবাসা তুলনামূলক কম থাকে। তাই সেই ব্যস্ত চাকরীজীবি/ব্যবসায়ী বাবাদের বলবো -
=> প্রতিদিন অন্ত্যত এক ঘন্ট সন্তানদের সময় দিন
=> সুযোগ পেলেই সন্তানের সাথে খেলাধূলা করুন, তার পড়া তৈরিতে সাহায্যে করুন
=> সপ্তাহে অন্ত্যত একদিন অথবা এক বেলা সন্তানকে সময় দিন
=> সুযোগ পেলেই সন্তানের পছন্দের কোন জিনিস কিনে গিফট দিন
=> ঈদে কিংবা অন্য বড় ছুটির সময়টাতে সন্তানকে নিয়ে কোথায় বেড়িয়ে আসুন
লেখার শেষে বাবাকে নিয়ে চমৎকার একটি মুভি My Father and My Son...ইউটিউভ এর প্রথম লিংকটা দিলাম.Click this link
বাকি পর্বগুলো এক এক করে দেখতে পারেন এই লিংক থেকে...Click this link
পৃথিবীর সকল বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও দোয়া করে আজকের মতো এখানে বিদায় নিচ্ছি...যারা কষ্ট করে পড়েছেন তাদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
বিষয়: বিবিধ
২২৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন