স্বাস্থ্য কথা...(১) কিছু খাবার যা আমাদের সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ১৩ জুন, ২০১৩, ১২:১১:১০ দুপুর
আমরা যারা রোগমুক্ত সুস্বাস্থ্যর অধিকারী হতে প্রত্যাশা করি তাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবার খাওয়ার ব্যপারে যত্নবান ও সচেতন হতে হবে। আর স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য খেলে গড় আয়ু্র দীর্ঘ হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা/পুষ্টি বিজ্ঞানীরা সবসময়ই গবেষনা করে গেছেন কোন কোন খাদ্য আমাদের সুস্বাস্থ্যর জন্য উপকারী। আজ তেমনী কিছু জাদুকরী গুনাবলী সম্পন্ন কিছু খাবার নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
লালশাক:
লালশাক আমাদের দেশে সবচেয়ে পরিচিত একটি শাক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে হিমোগ্লোবিন, আয়রন, আয়োডিন।
উপকারীতা:
=> বাড়ন্ত শিশুর জন্য লালশাক একটি উত্তম খাবার।
=> গর্ভবতী অবস্থা থেকে শিশুর জন্ম ও মাতৃদুগ্ধ পান পর্যন্ত লালশাক ভীষণ জরুরি।
=> অ্যানিমিয়া, অর্থাৎ রক্তশূন্যতা, নিম্ন রক্তচাপ মানে লো ব্লাড প্রেশার, দুর্বলতা, ক্রমশ শক্তি কমে যাওয়া।
=> ডায়াবেটিস রোগী, অস্টিও আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় লালশাক পালন করে অপরিহার্য ভূমিকা।
=> লালশাক এর লাল রঙ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
=> লালশাক দেহে রক্ত বাড়াবে আর ত্বক, চুল ও নখের পুষ্টি জোগাবে। => এক কথায় শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্যই লালশাক উপকারী।
বাঁধাকপি:
বাধাঁকপিও আমাদের দেশে একটি অতি পরিচিত জনপ্রিয় পাতা জাতীয় সবজি। এটি ভিটামিন সি ও কে-সমৃদ্ধ। বাঁধাকপির ভেতরের আবরণের তুলনায় বাইরের সবুজ আবরণে প্রচুর মিনারেলস রয়েছে। ১ কাপ (৭০ গ্রাম) বাঁধাকপি থেকে ১৭.৫০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতে মলিবডেনাম, ভিটামিন কে, ফলেট, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং খাদ্যআঁশ রয়েছে।
উপকারীতা:
=> প্রচুর খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়
=> বাঁধাকপিতে সালফোরাফেন নামক এক প্রকার উপাদান রয়েছে, যা শরীরে আন্টিঅঙ্েিডন্টের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।
=> ক্যান্সার প্রতিরোধে এনজাইমকে চাঙ্গা করে।
দারুচিনি:
রান্নায় দারুচিনি বহুল ব্যাবহারকৃত একটি মসলা। দারুচিনিতে অল্প পরিমাণে প্রোটিন, প্রচুর পরিমাণে মিনারেল এবং ভিটামিন রয়েছে।
উপকারীতা:
=> দারুচিনি রক্তে চিনি এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমায়। ফলে হৃৎপিণ্ড থাকে ঝুঁকিমুক্ত ও সুস্খ।
=> দারুচিনিতে রয়েছে এসেনশিয়াল অয়েল অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
=> দারুচিনির নিউট্রিশন প্রপার্টির জন্য ব্লাড সুগার কমে।
=> আর্থারাইটসের জন্য দারুচিনি খুবই উপকারী।
=> ব্যাথা কমানোর মহা ওষুধ দারুচিনি-মধু জয়েন্টের ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছেন৷ উষ্ণ গরম জলের মধ্যে এক চামচ মধু আর দারুচিনি গুড়ো মিশিয়ে ব্যাথার স্থানে ধীরে ধীরে মালিশ করুন ৷ দু-তিন মালিশ করার ফলে ব্যাথা কমে যাবে৷
রসুন:
প্রাচীন কাল থেকেই রসুন তার ঔষধিগুণের জন্য সমাদৃত। আমাদের দেশে এটি রান্নার উপকরণ হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয়।তীব্র গন্ধযুক্ত রসুনের কোয়াগুলোতে রয়েছে প্রচুর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, খনিজ লবণ, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি।
উপকারীতা:
=> বিশেষত বিজ্ঞানের জনক বলে পরিচিত হিম্পোক্রিটস মানবদেহের ক্যান্সার, ঘা, কুষ্ঠ সারাতে, রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও পরিপাকতন্ত্রের হজমজনিত সমস্যা দূর করতে রোগীদের রসুন খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। আধুনিক ভেষজ চিকিৎসকরাও সর্দি, কাশি, জ্বর, ফ্লু, ব্রঙ্কাইটিস, কৃমি, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য পরিপাকের সমস্যাসহ লিভার ও পিত্তথলির নানা উপসর্গ দূর করতে রসুন খাওয়ার পরামর্শ দেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি মাঝারি সাইজের রসুনে এক লাখ ইউনিট পেনিসিলিনের সমান অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি অ্যামিবিক ডিসেনট্রি নির্মূলের ক্ষেত্রে রসুন বেশ কার্যকরী।
টমেটো:
দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু সবজি টমেটো।কম ক্যালরিসমৃদ্ধ সবজিগুলোর মধ্যে পাকা টমেটো অন্যতম। এতে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে আছে - প্রোটিন ১.৯ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩.৬ গ্রাম, ভিটামিন ৩২০ আই . ইউ, থায়ামিন ০.০৭ মিগ্রা, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, আঁশ ০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০ মিগ্রা, ফসফরাস ৩৬ মিগ্রা, আয়রন ১.৮ গ্রাম, পটাশিয়াম ১১৪ মিগ্রা, ভিটামিন সি ৩১ মিগ্রা।
উপকারীতা:
=> সম্প্রতি জার্নাল অব দ্য ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এক প্রতিবেদনে জানা যায়, জন্ডিসে, চোখের রোগ নিরাময়ে, ডায়রিয়া, পাকস্থলির রোগে, হাঁপানীতে, লিভারের দুর্বলতায় টমেটোর গুণাগুণ অতুলনীয়। প্রতিষ্ঠাণটির আরও এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের সবজির চেয়ে টমেটোতে ক্যান্সার নিরোধক উপাদান অনেক বেশি। গবেষকদের মতে, প্রোস্টেট গ্গ্নান্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, মুখ, স্তন, অগ্ন্যাশয়, অণ্ডনালি ও ঘাড়ের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে টমেটোর জুড়ি নেই।
লাউ:
শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে লাউ সবচেয়ে ভালো একটি সবজি। এতে ৯৬.১ শতাংশ পানি রয়েছে। হাদিসে এই লাউ এর কথা উল্লেখ আছে বেহেশতী ফল হিসাবে। ১০০ গ্রাম লাউয়ে আছে কার্বোহাইড্রেটঃ ২.৫ গ্রাম
প্রোটিনঃ ০.২ গ্রাম,ফ্যাটঃ ০.৬ গ্রাম,ভিটামিন-সিঃ ৬ গ্রাম,ক্যালসিয়ামঃ ২০ মি.গ্রা.,ফসফরাসঃ ১০ মি.গ্রা.,পটাশিয়ামঃ ৮৭ মি.গ্রা.,নিকোটিনিক অ্যাসিডঃ ০.২ মি.গ্রা. এছাড়াও লাউয়ে রয়েছে খনিজ লবন, ভিটামিন বি-১, বি-২, আয়রন।
উপকারীতা:
=> লাউয়ে পানি ও আঁশ বেশি থাকায় এতে ক্যালরি ও ফ্যাট কম থাকে। তাই এটা শরীরের প্রয়োজনীয় ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে।লাউ নিয়মিত খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়, কর্মউদ্দিপনা ও কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায়। বেশির ভাগ মোটা লোকদের সমস্যা হলো শরীরের পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, তাদের জন্য লাউ প্রাকৃতিক ডাই ইউরেটিক বা পানি বের করে দেওয়ার কাজটি করে।
গাজর:
গাজর Apiaceae গোত্রের একটি বর্যজীবী উদ্ভিদ। এটি একটি জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি। প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে খাদ্য উপাদান
কার্বোহাইড্রেড ৯ গ্রাম,চিনি ৫ গ্রাম,আঁশ ৩ গ্রাম,চর্বি ০.২ গ্রাম,আমিষ ১ গ্রাম,ভিটামিন এ, বিটা-ক্যারোটিন,ভিটামিনলুটেইন এবং জিক্সানথিন,
থায়ামিন (vit. B1) 0.04 mg,রিবোফ্লাভিন (vit. B2) 0.05 mg, নিয়াসিন (vit. B3) 1.2 mg,ভিটামিন B6 0.1 mg,ফোলেট (vit. B9), ভিটামিন সি 7 mg,ক্যালসিয়াম 33 mg,লৌহ 0.66 mg,ম্যাগনেশিয়াম 18 mg,ফসফোরাস 35 mg,
পটাশিয়াম 240 mg,সোডিয়াম 2.4 mg
গাজরের উপকারীতা অনেক যেমন -
=> গাজরের জুসে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম; যা ওজন কমাতে বেশ সহায়ক।
=> লিভারের কার্যকারিতা ও স্বাস্থ্য এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
=> গাজরের জুস ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।
=> যে কোন ব্যথা-বেদনা এবং বয়সের ছাপ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
=> গাজরের জুস ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, যা দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। হাড়ের রোগ, অস্টিওপরোসিস ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
=> এর পটাশিয়াম, কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
=> গাজরের জুস, লিভারের জন্য খুবই উপকারী। লিভারের চর্বি ও পিত্ত কমাতে সাহায্য করে।
=> ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
=> গাজরের জুস বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কোষের ক্ষয় রোধে সহায়ক এবং দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়াকে রোধ করে।
=> বিটা-ক্যারোটিন শরীরে নিজে নিজেই ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। শরীরের নিজের তৈরি এই ভিটামিন শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
৩১২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন