মিলন মেলা সমাচার (১১)
লিখেছেন লিখেছেন মিলন মেলা ০৩ জুলাই, ২০১৩, ০৮:১৭:৫৫ রাত
বাবার আদর ও শাসন-এ বিষয়ে আসর বসেছিলো গত ২৯শে জুন ২০১৩ তারিখের শনিবারে প্যারিস থেকে আমি-এর ব্লগ বাড়ীতে। যখন তিনি পোষ্টটি লিখছেন, তখনই খবর আসে ফ্রান্সের প্যারিসে একজন বাবা সন্তানদের ছেড়ে চলে গেছেন তার মালিকের ডাকে সাড়া দিয়ে-যিনি প্যারিস থেকে আমি-কে সহ এই বয়সের অনেককে সন্তানসম ভালবাসা দিয়ে আপন করে নিয়ে প্যারিসের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে পিতৃত্ব ও ভালবাসার মজবুত আসন তৈরী করেছিলেন। তিনি ইউকে ইসলামীক ফোরাম ফ্রান্স-এর সভাপতি জনাব সফি উল্লাহ। মিলন মেলা পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
মরহুম সফিউল্লাহ এর জানাযার নামাযে অংশ নয়ার কারণে প্যারিস থেকে আমি পোষ্ট দেয়ার নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে উপস্থিত থাকা সম্ভব নয় বলে প্যারিস থেকে আমি-এর প্রিয়তম সহধর্মীনি উনার লিখা পোষ্টটি তার ব্লগ থেকে প্রকাশ করেন। মিলন মেলার প্রতি এই আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শনের জন্য প্যারিস থেকে আমি পরিবারকে হৃদয় খোলা ভালবাসা জানাচ্ছি মিলন মেলা পরিবারের পক্ষ থেকে। প্রত্যাশা করছিঃ সহসাই সেই রমনী হাজির হবেন “প্যারিস থেকে উনি” বা অন্য কোন নিক নিয়ে মিলন মেলাতে সরাসরি। প্যারিস থেকে আমি এবারের মিলন মেলার বিষয়কে নিয়ে আসেন ক’টি প্রশ্নের আলোকে। আর ব্লগাররাও মনের মাধুরী মিশিয়ে উত্তর লিখেন সেই আলোকে। যার সার সংক্ষেপ নিম্নে উপস্থাপিত হলোঃ
প্রশ্নঃ বাবা আমাকে কতটা ভালবাসতেন?
উত্তরঃ
- আমার বাবা আমার কছে মনে হয় এই জগতের সেরা বাবা।
- প্রতিটি বাবা তার সন্তানকে ভালবাসে। আমার বাবাও আমাকে ভালবাসেন।
- আমি যখন সন্তানের বাবা হয়েছি তখনি বুঝেছি বাবা আমাকে কত ভালবাসতেন।
- সেই আজও মনে পড়ে ৫বছর বয়সের বাবার স্মৃতি। একদিন বাবার সাথে মাঠে গেলাম ধান কাটতে। ধান কাটতে গিয়ে আমার একটি আঙ্গুল কেটে ফেলি। বাবা দেখে বললেন, আঙ্গুল এর মাঝে প্রশ্রাব করতে। বাবার কথা মত আমি আমার আঙ্গুলের মাঝে প্রশ্রাব করি। সাথে সাথে আমার কাটা আঙ্গুলের রক্ত পড়া বন্ধ। সেই আঙ্গুলের কাটা দাগ আজও আছে, কিন্তু বাবা আজ নেই। সেই স্মৃতি আজও আমায় কাদাঁয়।
- আমার বাবা আমাকে যতটুকু ভালবাসা দিয়েছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ভালবাসা তার বুকে আমায় জড়িয়ে আদর করা।
- আমার প্রতি বাবার ভাল দিকগুলি ছিল- তিনি চাইতেন আমি ভাল লেখা-পড়া করি। মুখের জড়তা বিনাশের জন্য হুজুরের কাছ থেকে বিস্কুট পড়া নিয়ে আসতেন। বেলা বিস্কুটের পিটের উপর লাল কালিতে লিখা দোয়া ওয়ালা বিস্কুট দিনে দুইটা খুব যত্ন করে খাওয়াতেন। অসুখ বিসুখে নিজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে রেখে ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতেন। সাধ্যমত খাবার আর কাপড় চোপড় দিতে কোন রকমের কৃপনতা করতেন না।
- ক্লাস ফাইভ, সিক্সে হোস্টেলে ছিলাম।কিছুতেই সেখানের পানি খেতে পারতাম না!খুব গন্ধ লাগতো আর খারাপ লাগতো!তাই অল্প পানি খেয়ে থাকতাম!পানি নিয়ে এই কষ্টের জন্য আব্বু বোতলকে বোতল মিনারেল পানি কিনে দিয়ে যেতো। ফলে আর হোস্টেলের পানি খেতে হয়নি!হোস্টেলের সবাই অবাক হয়ে দেখতো আর বলতো এমন 'অদ্ভুত' বাবাও হয়!আজ যখন অনেক দুরে চলে এসেছি তখন বুঝতে পারি নিজের শ্রম, ঘাম, আত্না দিয়ে কতো কষ্ট করেছেন আমাদের জন্য।
প্রশ্নঃ আমি বাবাকে কতটা ভালবাসি বা ভালবেসেছিলাম?
উত্তরঃ
- আমার জন্মের পর থেকে বাবা প্রবাসী ছিলেন বলে বাবাকে খুব কাছে পেতাম না। তাই বাবার প্রতি ভালবাসার টানে বাবার সাথে থাকব বলে আমিও প্রবাসী হয়েছিলাম।
- বাবা আমাকে অনেক ভালবাসতেন। কিন্তু আমি বাবাকে কতটা ভালবেসেছিলাম বা কতটা ভালবাসা উচিৎ ছিল সেটা বুঝার আগেই বাবা চলে গেলেন। তবে এতটুকু বলতে পারিঃ বাবা আমাকে যখন আদর করতেন তখনতো ভাল লাগতই, যখন শাসন করতেন তখনও অন্যরকম এক ভাললাগা অনুভুত হত।
- আমার বুঝ হওয়ার পুর্ব থেকেই বাবা ঢাকায় থাকতেন। যখনই বাড়ী আসতেন আদরই করতেন, আমি ও বাবাকে অনেক ভালবাসতাম। এখনও বাবাকে খুব মিস করি দূর প্রবাসে বসে ।
প্রশ্নঃ বাবা কিভাবে আমার শাসন করেছেন?
উত্তরঃ
- আমার বাবার শাসন আমার কপালে বেশি জুটেনি। কারণ আমার জন্মের পর থেকেই আমার বাবা প্রবাসে ছিলেন। আমি যখন বড় হলাম মানে দশম শ্রেণীতে পড়তাম, তখন বাবা বিদেশ থেকে চলে গেলেন দেশে আর এর তিন বছর পর আমি চলে আসলাম প্রবাসে।
- আমার বাবা ছিল ইসলামের জন্য নিবেদিত, আমি যদি কখনো কোন ইসলামী প্রোগ্রামে না যেতাম তাহলে বাবা অনেক কষ্ট পেতেন, বাবা বলতেন তুই যদি ইসলামের জন্য শহীদ হইতি তাহলে আমি শহীদের পিতা হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করতাম। সেই বাবা আজ আমাকে ছেড়ে ছলে গেছে না ফেরার দেশে।
- দুষ্টামী করি নাই বলে বাবা আমাকে কখনো শাসন ও করে নাই।
- পঞ্চম শ্রেণিতে আব্বার এক নাম্বারের ছাত্র ছিল মাহমুদ নাইস। পরপর দুই দিন পড়া পারেনি বলে মাহমুদ নাইসের আব্বা স্যার এমন লাঠি দিয়েছিল যে, লাঠির চোটে প্রাইমারী স্কুলের ক্লাসরুম থেকে দৌড়ে বারান্দায় এসে বসে পড়ল। আব্বা স্যার আবার বারান্দায় এসে আবার আরেক চোট দিল। গায়ে বেতের বাড়ির লাম্বা লাম্বা দাগ বসে গেল। স্কুল ছুটির পর মাহমুদ নাইস তার আব্বা স্যারের সাথে বাড়িতে আসল। দুপুরের ভাত খেল। শরীরটা ভার ভার অনুভব করল। মাহমুদ নাইস ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় আলতু করে রাখল। কখন যেন সে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙতে শুরু করল। প্রচন্ড ভার অনুভব করছে সে। শরীরটা নাড়াতে পারছে না। কিন্তু মাথাটা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। চেয়ে দেখল, মা মাথায় পানি ঢালছে। ততক্ষণে শরীরে জ্বর ১০০ ডিগ্রীর উপরে...
- ছোট বেলায় বাবাকে খুব ভয় পেতাম। কারণ, কথায়-কাজে একটু গড়বড় হলেই বকা-ঝকা এবং পিটুনি ছিল অবধারিত। যেমনঃ কোন কাজ করতে দিলো, কিন্তু তা বাবার মনপুত না হওয়া। দোকানে গেলাম একটু ফিরতে দেরী হওয়া, ডাক দেওয়ার সাথে সাথে সামনে হাজির হতে না পারা, পড়তে বসে ঘুম বা ঝিমুনি আসা, পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলতে যাওয়া, লুকিয়ে রাখা খেলার সামগ্রী ( নাটাই-ঘুড়ি, মার্বেল, লাটিম, চাকা ইত্যাদি) ওনার চোখে পড়া-বকা আর পিটুনির আওতায় এসে যেতাম আমি। মহল্রার আরো একজন ছেলে ছিল আমার মত অবস্থায়। তার বাবা ছিলেন আরো বিপজ্জনক টাইপের। সে দুঃখ করে তার বাবার মৃত্যু কামনা করত। আমি আমার বাবার মৃত্যু কামনা না করলেও তিনি বেশীর ভাগ সময় ঘরে থাকুন তা আমি চাইতাম না। কোন বাবার প্রতি সন্তানের এমন আচরণ নিঃসন্ধেহে খুবই দূঃখ জনক। আমার মতে এ ক্ষেত্রে বাবাকে সন্তান থেকেও নিঃসন্তান বলা চলে।
- আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল মানুষ . জীবনে আদর ছাড়া শাসন পায়নী , শাসনের দায়িত্য মায়ের হাতেই ছেড়ে দিতেন , ৬টি বছর গত হল বাবা ডাকটি ডাকতে পারিনা , চলে গেছেন না ফেরার দেশে , সবার কাছে দোয়া চাই
- বাবা কোন শাসন করেননাই আদরই করতেন। কারন ভালো করেই চলতাম। পা থেকে জুতই খোলা হতনা। আগে পরে দুস্টমি করলেও বাবা বাড়ী আসলে খুব ভদ্র ভাবেই চলতাম। এমন ভদ্র চেলে হয়না!
প্রশ্নঃ বাবার আদর ও শাসন যারা পাননি তাদের বেড়ে উঠার কাহিনী ও মানসিক অবস্তা।
উত্তরঃ
- বাবা দীর্ঘ জীবন প্রবাসে থেকেছেন, উনার প্রবাসে থাকার একটি মাত্র লক্ষ্য ছিল-আমি। ..আজ আমার বাবা দেশে, আমি উনার সেবা করতে না পেরে আমার মনে অনেক যন্ত্রণা যা বলার মত না।
- যারা বাবার আদর থেকে বঞ্চিত তারা খুব অসহায়। তারা এতিমের মত। ওদের মানসিক অবস্থা সবসময় খারাপ থাকে।
প্রশ্নঃ যারা বাবা হয়েছি তাদের মানসিক অবস্তা।
উত্তরঃ আমি এখন বাবা। প্রাঃ ইউনিভার্সিটি শিক্ষিকা এক মেয়ে এবং ১২ ও ৯ বছর বয়সের দুই ছেলে আমার। আমি ওদেরকে যেমন আদর করি তেমন শাসনও করি। তাদেরকে খেলাধুলার সামগ্রী কিনে দেই। আমার সন্তানেরা আমাকে সাংঘাতিক রকমের ভালবাসে। তাদের আকাঙ্খা, আমি যেন সর্বদা তাদের কাছাকাছি থাকি। খাওয়ার টেবিলে, ঘুমাতে গেলে আব্বুকে কাছে চা-ই চাই। ওদের সাথে আমার দারুন ফ্রেন্ডশীপ। কথা প্রসঙ্গে বলে, আব্বু মরে গেলে আমরাও মরে যাব। আমি ওদেরকে বুঝাই - আব্বু মরে গেলে সন্তারা মরতে নেই, বরং বেঁচে থেকে আব্বুর জন্য দোয়া করতে হয়। আমার প্রতি সন্তানদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখে আমার বাবা আফসোসের সুরে বলেন, আমার সাথে আমার ছেলে মেয়েরা এমন ব্যবহার করেনি। এই সুযোগে আমি ভদ্রতা রক্ষা করে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি - আমাদের প্রতি আপনাদের আচরণ যথাযত ছিল না, তাই এমনটি হয়েছিল। প্রত্যেক মা বাবার উচিৎ সন্তানদের প্রতি যথাযত ভালবাসা পোষণ করে তাদের সাথে এমন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, যাতে করে সন্তানের নিকট আজীবন আদর্শ হয়ে থাকতে পারেন।
প্রশ্নঃ বাবা হয়েও যারা সন্তানদের ছেড়ে প্রবাসে আছেন, তাদের মানসিক অবস্তা।
উত্তরঃ
- জন্মের প্রথম থেকেই আমার ছেলে বাবার শুন্যতা অনুভব করলো, যা আমি করিনি কোনোদিন। শিশু জন্মের পর সবার আগে যার সান্নিধ্য পায় সে তার বাবা। কিন্তু আমি অভাগা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি আমার ছেলেকে। একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যখন একটু বুঝতে শেখে তখন তাকে নানা বিষয়ে বুঝাতে হয়, চেনাতে হয় এবং শেখাতে হয়। কিন্তু মা-বাবাকে কখনো নতুন করে চেনাতে হয় না। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী সে বুঝে নেয় তার আশ্রয়স্থল ও নির্ভরতার জায়গাটি। পরিবারে মায়ের যেমন ভূমিকা থাকে, বাবার ভূমিকাও কিন্তু কোনো দিক দিয়ে কম নয়। বাবাই পরিবারের অন্যতম কর্তা।
- আমি আমার সন্তান থেকে বহু দুরে অবস্থান করছি। এই দুর প্রবাসে সারাক্ষণ সন্তানের কথা ভাবি। মোবাইলে/কম্পিউটারে সন্তানের ছবি দেখি। ফোনে সন্তানের সাথে কথা বলে মনকে সান্তনা দিই।
প্রশ্নঃ বয়োজৈষ্ঠ্য বাবার প্রতি আমাদের করণীয়।
উত্তরঃ বাবাকে সবসময় শ্রদ্ধা করতে হবে। ভালবাসতে হবে। সেবা করতে হবে। বাবা বৃদ্ধ হলে তার প্রতি যত্নের পরিমান আরো বাড়িয়ে দিতে হবে। সামর্থ থাকলে বাবাকে দেখাশুনা করার জন্য অতিরিক্ত কাজের লোক রাখতে হবে। অথ্যাৎ কোন অবস্থাতেই বাবাকে অবহেলা করা যাবে না।
বাবা নিয়ে বিশেষ মন্তব্যঃ
- বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক অনেকটা আলোছায়াময়। মানসিক ভাবে এ সম্পর্ক খুব গভীর হয়তো। কিন্তু দৃশ্যত এটি অনেক দুরের। সন্তান ও পরিবারের মুখের হাসির জন্যই বাবারা দূর আকাশের তারা। কাছে থেকেও দুরের শ্রদ্ধার মানুষ। আর সন্তানদের জন্যই বাবাদের ঘর্মাক্ত মুখ, ঘামে ভিজে যাওয়া শার্ট আর দিনভর দৌড়-ঝাঁপের পর রাত করে বাসায় ফেরা।
- এমন এক সময় মিলন মেলায় বাবার বিষয়টি এলো, যখন আমার শ্রদ্ধেয় বাবাকে হারানোর ব্যাথা এখনো হৃদয়ে তাজা হয়ে আছে। হঠাৎ করে বাবার তিরোধানের মাত্র ২ দিন আগে তাঁর সাথে ফোনে শেষ বাক্যালাপ যখন হয়, তখনো কিন্তু ভাবিনি যে, তিনি এভাবে আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে যাবেন। বাবা আরবী ইংরেজী দুই ধরণের শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন, আর তাই, দ্বীনি শিক্ষালাভে আমাদের তেমন কোন বিশেষ ঘাটতি ছিল না। তবে নয় সন্তানের দেখভাল ও ভরণপোষণের জন্য একমাত্র সম্বল সাধারণ সরকারী চাকুরীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন বলে, বিশেষায়িত উন্নত শিক্ষাদানেও ছিলেন অপারগ। সেজন্য অবশ্য মনে তেমন কষ্ট নেই।শৈশবে, দূরন্তপনা আর ছন্নছাড়া গোছের ছিলাম বলে তাঁর হাতের মাইর কম খাইনি। স্নেহময়ী মায়ের ইন্টারফেয়ারে যাতে শাস্তিতে কমতি না হয়, তাই অনেক সময় কামরার দরজা বন্ধ করেও মারতেন, দুতিনটি ছড়ি একত্র করে। মার খেয়ে এমনো সময় গেছে, যখন মনে মনে ভাবতাম 'গাড়ির তলে পড়ে মরে যাওয়া উচিত।' এখন সেসব দিনের কথা ভাবলে লজ্জিত হই। বাবা যদি তখন কড়া শাসনে না রাখতেন, তাহলে হয়তঃ আজ সমাজের ও রাষ্ট্রের এমন বিশৃঙ্খলাময় পরিবেশে নিজেই জীবনের খেই হারিয়ে ফেলতাম। ঘুষের কারবার হয় বলে বাবার প্রথম চাকুরীস্থল অডিট ডিপার্টমেন্ট হতে সিনিয়রিটি ছাড়াই অন্যস্থানে বদলী নিয়ে নেন। তাই, তাঁর নিম্নস্তরের কলিগরা দ্রুত প্রমোশন নিয়ে উপরে উঠে গেলেও তিনি তাঁর সরলতার জন্য বেশী উপরে যেতে পারেননি। তবে বাবার এই মহান গুনটি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছি বলেই আমি নিজেকেও ঘুষ-দূর্নীতি হতে সযত্নে বাঁচিয়ে চলায় সক্ষম হয়েছি, ১০০ ভাগ যদিও দাবি করবোনা। বই পড়ার বিশেষ করে ইসলামী বই পাঠের নেশা ছিল তাঁর আজীবন, সেজন্য ঘরে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল লাইব্রেরী। সেটার প্রভাব ও পড়েছে তাঁর এই সন্তানের উপর। তবে সাত মেয়ের পর অনেক সাধনায় পাওয়া দ্বিতীয় ছেলের (আমার একমাত্র ভাই) প্রতি একটু বেশী স্নেহশীল ছিলেন বলে তাকে আমার মতো গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন, একথা স্বীকার না করলে তাঁর প্রতি হয়তঃ অবিচার করা হবে।
বাবার প্রতি তাঁর বড় এই ছেলের এই একটি জায়গাতেই একটু মনোকষ্ট রয়ে গেছে।মহান আল্লাহতায়ালা আমার জান্নাতবাসী বাবার সব ভালো কর্মকে গ্রহন করুন, তাঁর ত্রুটি বিচ্যুতিকে মার্জনা করে তাাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দিন, এই প্রার্থনা করি। আমিন।
- বাবা আমাদের উন্নতি ও কল্যানের সোপান গড়ে দেন নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে।
বাবাকে নিয়ে ছন্দের কারিগরদের প্রয়াস
বাবার ভাবনা
আমায় নিয়ে ভাবনা যত বাবার
ছেলেটাতো আচ্ছা হাবা
ভবিষ্যতে করবেটাকি, কিইবা হবে
আমি বলি ভাবনা কেন বাবা
আমি তোমার যোগ্য ছেলে
যদি বল গরু হতে আপত্তি নেই, কিংবা ছাগল
উমা বাবা ছুটছে পিছু, মারবে বুঝি!
নিচ্ছে লাঠি কিংবা গদা
আমিও পালায়, জান বাবা?
বেঁচে থাকার সাধটা যে মোর আছে সদা
মাইরের উপর ঔষধ নাই
মাইরের উপর ঔষধ নাই
এটাই বাবার নীতি
ধোলাই এর পর ধোলাই
বাবার খুব প্রীতি
ডাকতো যখন নাম ধরে
সিংহ গর্জন যেন
কাপতাম ভয়ে ভাবতাম আর
ডাকছে বাবা কেন?
মনে মনে হিসেব করতাম
করেছি কি কোন অন্যায়!
ভুলের তবে মাফ আছে
অন্যায় হলে রক্ষে নাই
জীবনের বাস্তবতায় বাবা যখন একা হয়ে যায়
সূর্যটা অস্তগামী
ব্যাস্ত আমরা যে-যার মত
ছুটছি কেবল
ছুটছি শুধু, ছুটছি অবিরত
ফল দেয়না
তায় রাখিনা খবর বৃক্ষটার
বৃক্ষ তার
হিসেব মেলায় এক জীবনের অন্ধকার
আমার বাবা সেরা বাবা
আমার বাবা সেরা বাবা
ভেবে দেখি আমি
বাবার সকল কথা ছিল
হিরার চেয়েও দামী।
ছোট বেলায় কোলে চড়ে
বাবার সাথে মাঠে
কাধে নিয়ে লাঙ্গল চষতেন
বিকেলে যেতাম হাটে।
জিলাপী আর চানাচুরে
হাতটি দিতেন ভরে
মাথায় বাজার তবুও আমায়
আনতেন কোলে করে।
স্কুলেতে কোলে ছাড়া
পাঠাতেন না বাবা
ভাবতেন আমি ছোট্ট শিশু
ভাবতেন হাবাগোবা।
কৃষক বাবার ছেলে আমি
কৃষকের কাজও জানি
যা শিখেছি বাবাই গুরু
বাবাকেই উস্তাদ মানি।
পড়ালেখাও বাবার দুআ আর
পরিশ্রমের দান
দুআ চাই যেন রাখতে পারি
বাবার চাওয়ার মান।
হে আল্লাহ আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন আমরা যেন আমাদের বাবার পূর্ণ হক আদায় করতে পারি যা ইসলাম বলেছে ,,আর আমাদের মধ্যে যাদের বাবা জীবিত তাদের কে সুস্ততা দান করুন এবং যাদের বাবা মৃত্যু বরণ করেছেন তাদেরকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন ..আমিন ...
(( যারা আজ পর্যন্ত প্যারিস থেকে আমি-এর মতো বাবা হতে পারেননি, তাদের জন্য দোয়া থাকলোঃ আল্লাহ যেন অতিশীঘ্র তাদের বাবা হবার সু-সুবাদ প্রদান করেন।))
আমরা যখন মিলন মেলা সমাচার লিখছি সে সময়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাবার আদর ও শাসন-এ এই পোষ্টটি পড়া হয়েছে ৪৪৫ বার আর মন্তব্য করা হয়েছে ১২৯টি। আগামী শনিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় আবার আমরা মিলিত হবো টুডে ব্লগে মিলন মেলা ব্যানারে ‘রামাদ্বান ও রোযা’ বিষয়ে। সবাই আসবেন সেই প্রত্যাশা।
বিষয়: বিবিধ
২২০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন