মিলন মেলা সমাচার (১০)
লিখেছেন লিখেছেন মিলন মেলা ২৬ জুন, ২০১৩, ০৬:৫৩:০৪ সন্ধ্যা
২২শে জুন ২০১৩, বাংলাদেশ সময় ঠিক ৭টা, সন্ধ্যা বেলার সেই সময়ে ছাত্র রাজনীতির টাটকা বিষয় নিয়ে ব্লগার বাকপ্রবাস হাজির হলেন মিলন মেলার ১০ম আসরে।
হ্যাঁ! মিলন মেলার ১০ আসর বসেছিল বাকপ্রবাসের ব্লগ বাড়ীতে। অত্যন্ত দূঃখ জনক হলেও সত্য যে, এই দিনের মিলন মেলা নানামূখী সমস্যার কবলে পড়ে। যেমনঃ
ক।ঐ দিনের পোষ্ট দেয়ার কথা ছিল ব্লগার সূর্য্য চৌধুরী-এর। কিন্তু তিনি কোন ধরণের যোগাযোগ না করাতে দায়িত্ব দেয়া হয় বাকপ্রবাসকে।
খ। বাকপ্রবাস যথা সময়ে পোষ্ট দিলেও সেদিন ব্লগের স্পিরিট ছিল একদম মন্তর। তাই স্বয়ং মিলন মেলা হাজির হোন রাত প্রায় ১০টায়।
গ। ব্লগের গতির এহেন অবস্থার কারণে মেলা জমে উঠেনি।
তবুও যারা এসেছিলেন, তারা সুন্দর সুন্দর মন্তব্য পোষ্ট করেছেন কষ্ট করে হলেও। কিন্তু প্রতিমন্তব্য প্রদান করতে গিয়ে আবার সমস্যা হয়েছে। আমরা ব্লগারদের কথা দিচ্ছি রমজানের পর একই বিষয়ে আমরা আবার আলোচনার প্রয়াস চালাবো। আসুন জেনে নেই সেদিন আসরের সার সংক্ষেপ
১) ছাত্রদের নিকট সবচেয়ে মূখ্য বিষয় হলোঃ পড়াশোনা।
২) ছাত্রদের গৌরব উজ্জল ইতিহাস নানাবিধ আন্দোলনের ইতিহাস।
৩) ছাত্ররা আন্দোলন করে সকল কর্মশেষ করেছে। এখন শুধু ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্রদের আন্দোলনের প্রয়োজন বাকী রয়ে গেছে।
৪) ছাত্র রাজনীতিতে সুফল যেমন আছে, কুফলও তেমন আছে। বর্তমান ছাত্ররাজনীতিতে সুফলের চেয়ে কুফলের মাত্রা অনেক অনেক বেশি।
৫) বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতির যে গৌরব ছিল তা আস্তে আস্তে ধংস হওয়ার পথে ছাত্র নামের কিছু নরপশুদের কারণে যা কাম্য নয় ।
৬) দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের আস্কারে আজকের ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতির ফল পথচারী বিশ্বজিত খুন হওয়া । তাও আবার শত মানুষের সামনে ডজন পুলিশের সামনে .।
৭) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে, তবে তা কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড় হিসেবে নয়। কোনো একটা রাজনৈতিক দলের আদর্শের প্রতি তাদের সমর্থন বা আনুগত্য থাকতে পারে, তবে কথায় কথায় তাদের সে রাজনৈতিক দলের বরকন্দাজ সাজার কোনো কারণ নেই। জাতির কোনো সংকট দেখা দিলে তখন তারা জনগণের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে নিশ্চয় সে সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে আর সাধারণ সময়ে তাদের মনোযোগী হওয়ার কথা পড়ালেখার ওপর এবং ছাত্ররাজনীতির কর্মক্ষেত্র হওয়া উচিত শিক্ষাবিষয়ক সমস্যাকেন্দ্রিক।
৮) বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান সৃষ্টি, ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯-র গণ অভ্যুত্থান, ১১ দফার আন্দোলন, স্বায়ত্বশাসনের স্বপক্ষে সংগ্রাম, ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম, ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরুধী আন্দোলনি, এতোটুকুতে ছাত্র রাজনীতিতে মুটামুটি একটি আশা আলো দেখি। কিন্তু ছাত্র রাজনীতির পছন শুরু হয় সেই ৭১ পরবর্তী সময় থেকে।
৯) স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে ১২৯ জন ছাত্র প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২৪ জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ জন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৪ জন।
১০) ছাত্র রাজণীতি আমিও করেছি। কোন টেন্ডারবাজী করি নাই। কারো গায়ে হাত দিই নাই। আর এখন? ছাত্র রাজনীতির নাম দিয়ে টেন্ডাবাজী,হত্যা,ধর্ষন, দখল কি না হচ্ছে।---------------এর জন্য তাদের মুরব্বী সংঘটনই দায়ী। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই অপকর্মগুলো চলে আসছে।
১১) ছাত্র রাজনীতিতে ব্যতিক্রম আছে কিন্তু। ঢালাও ভাবে ছাত্ররাজনীতিকে খারাপ বলার সুযোগ নাই। কেউ ছাত্র রাজনীতি করে নিজের ব্যবসা হিসাবে। আবার কেউ ছাত্র রাজনীতি করে ছাত্রদের কল্যানের প্রত্যাশায়। অতএব,
ছাত্র রাজনীতি নামক জিনিসটাকে কতিপয় অছাত্র নষ্ট করেছে। ওদের আমরা সবাই চিনি।
১২) ছাত্রদেরকে আগামীর কর্ণধার হিসেবে তৈরী করার জন্য ছাত্র রাজনীতির বিকল্প নেই। সুতরাং ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার প্রশ্নই ওঠে না। যা বন্ধ করতে হবে তা হলো- ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতি। আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি চলছে তা বন্ধ করা কোন ব্যাপরই না, যদি মূল সংগঠন এদের লাগাম টেনে ধরে। কিন্তু তা করা হয় না। সুতরাং ছাত্র রাজনীতি নয়, বন্ধ করা উচিৎ সেসব মূল রাজনীতি, যারা নিজ দলের ছাত্র সংগঠনকে সংশোধন করে না।
১৩) আমাদের দেশের ছাত্ররাজনীতি আজ দুই ভাগে ভাগ হয়েগেছে । এক পক্ষ নিরস্ত্রভাবে রাস্তায় নামা মাত্র পুলিশ কিংবা সরকারের কুনো অঙ্গসংগঠন দ্বারা খুন কিংবা আহত হওয়া ।অন্য পক্ষ সশস্ত্র ভাবে প্রশাসনের সামনে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্টান বা পারা মহল্লায় মহড়া দিয়ে মানুষ খুন ,বা যে কুনো দরনের সন্ত্রাসী কর্ম কান্ড চালালে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে না ।
১৪) অতীতে ছাত্র রাজনীতি: অতীতে ছাত্ররাই ছাত্রদের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ছিল, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্ররা, তাদের পরিচয় ছিল ছাত্র, তাদের আন্দোল ছিল দেশ, জাতি, আর ছাত্রদের বিষয় নিয়ে, এমনকি খুব বেশীদিনের আগের কথা না, আমি যখন হাইস্কুলে আমরা স্কুল থেকে মার্চ করে পুরো এলাকা মার্চ করেছি কাগজের দাম বৃদ্ধির কারনে, কিন্তু এখন ছাত্র মানে আতংক, ছাত্র মানে অনৈতিক কাজের গুরু, নেশাখোর ইত্যাদি, সবই হচ্ছে জাতীয় রাজনীতির নোঙরামীর জন্য, ভাল এবঙ দেশপ্রেমিক ছাত্র যে নেই তা নয়, কিন্তু পরিবেশ এত নোঙরা হয়ে গেছে যে ভালরা আর সাহস পাচ্ছেনা প্রতিরোধ করার, তবে এ থেকে উত্তোরন এর পথ ছাত্রদেরকেই বের করতে হবে।
১৫) আমাদের একটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যখন দেখি একটি ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে তার চরিত্র ও দেশের উন্নত সাধনে কুরআন ,হাদিস বা ইসলামী বই পড়ে তখন থাকে জঙ্গি বানিয়ে জেলে পাঠানো হয় এর ফলে যেমন দেশের উন্নয়নে বাধা আসে তেমন দেশে ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া থেকে পিছিয়ে পড়ে দেশ ।
১৬) আরো যা বলা হয়েছেঃ
(ক) রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ছাত্রসংগঠন সমুহের তথাকথিত লেজুড়বৃত্তি সৃলভ যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে ছাত্র সংগঠনকে রাজনৈতিক দলগুলির দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের অশুভ প্রয়াস রুখতে হবে।
(খ) রাজনৈতিক দলগুলোর এইমর্মে সততা এবং স্বচ্ছতার অঙ্গীকার করা দরকার যে, তারা ছাত্র সমাজের বিবিধ সমস্যা সমাধানে যত্নবান হবেন।
(গ) ছাত্ররাজনীতিতে কেবলমাত্র ছাত্রদের অংশগ্রহণই নিশ্চিত করতে হবে।
(ঘ) ছাত্ররাজনীতির গতি-প্রকৃতিকে বিশুদ্ধ করতে শিক্ষকদের অগ্রনী ভুমিকা পারন করতে হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের জবাবদিহিতা ও দ্বায়বদ্ধতার ব্যবস্থা হতে পারে অন্যতম সহায়ক শক্তি।
(ঙ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যবস্থাপনাগত দিকে উন্নয়নের যথেষ্ঠ অবকাশ রয়েছে। ঝাত্র, শিক্ষক, বিশেষ ব্যক্তিত্বসমূহ, সর্বপরি সরকার এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
(চ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতীর ভিত্তিতে কেবলমাত্র মেধাবী এবং সৎ ছাত্রগণই ছাত্ররাজনীতিতে নেতৃত্বের পদ অলংকৃত করতে পারে।
যারা সেদিন ব্লগের সমস্যার কারণে বা অন্য কোন ব্যস্ততায় আসতে পারেননি, তারা ইচ্ছা করলে বেড়িয়ে আসতে পারেন বাকপ্রবাসের বাড়ী থেকে।
আর হ্যাঁ! আগামীর মিলন মেলা কিন্তু প্যারিস থেকে আমি সাজিয়ে রাখবেন তার ব্লগ বাড়ীর আঙিনা। সবার সাথে দেখা হবে সেই আসরে সেই প্রত্যাশায়।
(কৈফিয়তঃ মিলন মেলা সমাচার আরো যত্ন করে লিখা হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা হারিয়ে যাওয়াতে তড়িগড়ি করে আবার লিখতে হলো। এজন্য ত্রুটি থাকতে পারে। এজন্য ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।))
বিষয়: বিবিধ
১৭৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন