মিলন মেলা সমাচার (০৬)
লিখেছেন লিখেছেন মিলন মেলা ২৯ মে, ২০১৩, ০৭:২০:৫৫ সন্ধ্যা
টুডে ব্লগের একঝাঁক রুচিশীল আর জ্ঞান পিপাসু ব্লাগারের জমজমাট আড্ডার আসর "মিলন মেলা" এর পক্ষ থেকে সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে উপস্থাপন করছি মিলন মেলা সমাচার (০৬)।
প্রতি শনিবারের মত ২৫শে মে ২০১৩ তারিখে আসর বসে মিলন মেলার ব্লগ আঙিনায় "মিলন মেলা পোষ্ট {০৬) বিষয়ঃ নামায এবং নামাযের সমাজ" বিষয় নিয়ে।
উপস্থিত হোন অনেক অনেক ব্লগার, নিবেদন করেন তাদের জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য আর প্রতিমন্তব্য। সকলের সদয় অবগতির জন্য নিম্নে তার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হলোঃ
১. নামায সময় মতো আদায় করা সকল মুসলমানের উপর ফরয। আর ঐ নামায আদায় করতে হবে মসজিদের গিয়ে রুকুকারীদের সাথে। নামায আপনাকে সকল ধরণের অশ্লীল আর খারাপ কর্ম থেকে বিরত রাখবে।
২. আল্লাহ আমাদের নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন “আমি তোমার উম্মতের প্রতি পাঁচটি নামায ফরজ করেছি। আর স্বয়ং আমি এ ওয়াদা করেছি যে, যে লোক এ নামাযগুলো সঠিক সময়ে যত্নসহকারে রক্ষনাবেক্ষন করবে, আমি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাব। আর যে সেগুলো রক্ষনা-বেক্ষন করবে না, তার জন্য আমার কোন প্রতিশ্রুতি নেই।" আমাদের দেশ আজ আল্লাহর সেই প্রতিশ্রুতি পাওয়া থেকে বঞ্চিত। কারণ আমরা নামাজ পড়ে না এমন লোককে----ক্ষমতায় বসিয়েছি।
৩. আমরা যে নামায পড়ি, সে নামায হলো কতিপয় সূরা কিরাত আর রুকু সিজদার নাম। কিন্তু যে নামায মানুষকে অশ্লীলতা আর খারাপ কর্ম থেকে বিরত রাখে, সে নামাযের ধরণ হলোঃ নামায পড়তে হবে এমন, যেন আমি আল্লাহকে দেখছি-নতুবা কমপক্ষে এমন যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন।
৪. হাদীসের ভাষায়ঃ ইসলাম ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ।
৫. মুহাম্মদ সা. যখন মিরাজে গেলেন, তখন তিনি নামায ফরজ হিসাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি নিয়ে আসলেন।নামায সকল উম্মতের উপর ফরয ছিল।
৬. সংস্কৃতি হচ্ছে সমাজের উন্নতির অন্যতম মাধ্যম। সেই সংস্কৃতির অন্যতম বিষয় হলো নামাজ। যে সমাজে নামাজ চালু আছে সেখানের সমাজ উন্নত।
৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- বান্দার কাছ থেকে কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে বিষয়ের হিসেব গ্রহণ করা হবে তা হল তার নামায।
৮. আমাদের কে পাঁচ ওয়াক্ত নামায সঠিক সময়ে আদায় করা উচিত। পরিবারের সবাইকে নামায পড়ার জন্য অনুরোধ জানানো উচিত। নামায না পড়লে কি কি শাস্তি পেতে হবে বলা উচিত।
৯. নামাজ পড়ার সাথে সাথে নামাজ আমাদের কে কি শিক্ষা দেয় তা সম্পর্কে জানা উচিত। এজন্য কুরআন হাদিস ,ও ইসলামী সাহিত্য বেশি করে অধ্যায়ন করতে হবে।
১০. সমাজ বদলাতে চাই আল্লাহ ভীরু মানুষ। আর সেই আল্লাহ ভীরু মানুষ তৈরী করে নামায।
১১. নামাজের প্রতি যে অনাসক্তি তার জন্য আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্তাও দায়ী।আর এই প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে আল্লাহর ভয়ে ভীত লিডার আনতে হবে।
১২. নামায যা শিক্ষা দেয়, তাহলো- নিয়মানুবর্তিতা, শৃংখলা,সময় জ্ঞান, উচু নিচুর ভেদাভেদ ভুলে যাওয়া,আনুগত্য, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা,অহংকার দূরিকরণ ইত্যাদি।
১৩. নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব। আর গুটা সমাজ যদি নামাজ আদায় করে আমাদের সমাজ ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে। আর একদিন আমাদের দেশ আল্লাহর সুন্তুষ্টির ফলে প্রকৃত ইসলামিক দেশে রুপান্তরিত হবে।
১৪. আমারা যাতে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)এর দেখানো পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে পারি এবং নামাজের প্রকৃত শিক্ষায় নিজেদেরকে শিক্ষিত করতে পারি।
১৫. আল কোরানে ৮২ বার নামায কায়েম করার জন্য বলা হয়েছে অর্থাৎ নিজে নামায পড় এবং পরিবার , সমাজ ,ও রাষ্ট্রে নামায কায়েম কর।
১৬. নামাযের ব্যাপারে পরিবারের প্রধানকে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি নিজে নামায পড়বেন অন্যদেরকেও নামায পড়তে বলবেন।
১৭. সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিরা সবাই যদি নামায পড়ে তাহলে তাদের এলাকায়/বাড়ীতেও সবাই নামায পড়তে উৎসাহিত হবে।
১৮. শুদ্ধভাবে নামায পড়ার জন্য ছোট বেলা থেকে ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষা দিতে হবে। মক্তবে ভাল আলেম রেখে বা বাসায় ভাল আলেম দিয়ে বাচ্চাদেরকে কুরআন-হাদিস ও নামায শিক্ষা দিতে হবে।
১৯. নামায আামদেরকে সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়। নামায যেভাবে সময় মতো আদায় করতে হয়, নামায শেষ হলে আমরা যখন সমাজে যাবো-তখন সময়ের কাজ সে সময়েই করতে হবে। কোন কাজ বাকী বা কাযা রাখা যাবেনা। ১০টার বৈঠক যেন সাড়ে ১২টায় শুরু না হয়। কাউকে এপয়েন্টম্যান্ট দিলে সময় মতো যেন হাজিরা দেই।সময় মতো খাওয়া, সময় মতো বিশ্রাম, সময় মতো লেখা পড়া-এমন একটা সমাজ চাই।
২০. নামায আমাদেরকে শৃংখলার শিক্ষা দেয়। সবাই সারিবদ্ধ হয়ে দাড়াই, নিয়ম মেনে চলি, মমসজিদে গিয়ে অশৃংখল কিছু করিনা।নামায শেষ হলে যখন সমাজে আসবো, তখনও শৃংখলা মানতে হবে। বাসের লাইনে সামনে যাওয়ার চেষ্টা না করি। অন্য জনকে পাশ কাঠিয়ে সামনে যেন না যাই।ডাক্তারের সহকারীর সাথে যোগসাজসের মাধ্যমে দেরীতে এসেও সবার আগে এপোয়েন্টম্যান নেয়ার সুযোগ গ্রহণ যেন না করি।নিজের প্রভাব আর পরিচয় খাটিয়ে অবৈধ সুযোগ যেন গ্রহণ না করি।
২১. নামায আমাদের জামায়াতবদ্ধ জীবনের তাগিদ দেয়।নামাযে আমার একজন নেতা (ইমাম) থাকেন, সমাজেও আমার একজন নেতা থাকতে হবে। আমি যেমন নামাযে নেতার আনুগত্য করি, সমাজেও আমাকে নেতার আনুগত্য করতে হবে। নামাযে ইমাম ভূল করলে একটি নির্দিষ্টি প্রক্রিয়াতেত তাকে সংশোধনের প্রয়াস চালাই, সমাজের ইমাম ভূল করলে আমরা একই ভাবে সংশোধনের হিকমত পূর্ণ পন্থা গ্রহণ করবো।সর্বাবস্থায় আমরা নামাযের সাথে যেমন থাকতে চাই, একই ভাবে সমাজেও আমরা সর্বাবস্থায় সংগঠনের সাথে থাকতে হবে।
২২. নামাযে আমরা যা বলি, সমাজে তা করতে হবে।নামাযে আমরা বলিঃ হে রব, কেবল তোমারই গোলামী করি এবং কেবল তোমারই সাহায্য চাই। অতএব, সমাজে আসলে কোন ধরণের ব্যক্তির গোলামী করা বর্জন করতে হবে। সকল ক্ষেত্রে রবের গোলামী হচ্ছে কি না-তা পরখ করে দেখতে হবে। কোন ধরণের গোষ্ঠী দল বা প্রতিষ্ঠান আপনার আমার সাহায্য করবে আর আপনি চলমান মুসিবত হতে রক্ষা পাবেন এধারণা বিসর্জন দিয়ে কেবল আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী হতে হবে।
মিলন মেলার অন্যতম উপদেষ্টা মোহাম্মদ লোকমান তার মন্তব্যে বলেনঃ আলহামদু লিল্লাহ্! সুন্দর সুন্দর কমেন্টের মাধ্যমে নামাজ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলাম। আমারা যাতে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)এর দেখানো পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে পারি এবং নামাজের প্রকৃত শিক্ষায় নিজেদেরকে শিক্ষিত করতে পারি।
আরো অনেক বিষয় আলোচিত হয়েছে সেদিনের মিলন মেলায়। আমাদের প্রত্যাশা মিলন মেলার মাধ্যমে আমরা আমাদের এজীবন এবং ঐ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেবো।
আগামী শনিবার মিলন মেলা বসবে আবু তাহের মিয়াজীর ব্লগ বাড়ীতে। মাকে নিয়ে সেই আয়োজনে আপনারা সবাই আমন্ত্রিত। মায়াস্সালাম।
বিষয়: বিবিধ
২২৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন