মিলন মেলা সমাচার (৫)
লিখেছেন লিখেছেন মিলন মেলা ২২ মে, ২০১৩, ০২:৫১:৪৭ দুপুর
১৮ই মে ২০১৩, শনিবার, সন্ধ্যা ৭টা। সরি ০৭:১২:৫৩। ঢুডে ব্লগের নিয়মিত আয়োজন জ্ঞাপপিপাসু আর রুচিশীল ব্লগারদের জমজমাট আড্ডার আসর “মিলন মেলা” বসে প্রতি শনিবারের মতো করে। মিলন মেলার বিষয় ছিলঃ গনহত্যা। মিলন মেলাতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠিত ৪টি ঘটনাকে গণহত্যা আখ্যা দেয়া হয়।
১. বিডিআর হত্যাকান্ড।
২. আাটাশে ফেব্রুয়ারীর নির্বিচার হত্যাকান্ড।
৩. সাভার ট্রাডেজি।
৪. শাপলা ট্রাডেজি।
যাত্রিক ত্রুটির কারণে মিলন মেলার পোষ্ট দিতে ১৩ মিনিট দেরী হওয়াতে মিলন মেলার পক্ষ থেকে দূঃখ প্রকাশ করা হয়। ১২৪৫বার পঠিত মিলন মেলা পোষ্টটিতে ১৬৫টি মন্তব্য করা হয়। যারা বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে ঐ দিনে মিলন মেলায় হাজির হতে পারেননি, তারা ইচ্ছা করলে মিলন মেলার ব্লগ বাড়ীতে গিয়ে মিলন মেলা পোষ্ট (০৫) বিষয়ঃ গনহত্যা পড়ে আসতে পারেন।
এসবির মিলন মেলাতে রাজনৈতিক বিষয় এড়িয়ে চলা হতো। কিন্তু টুডেতে রাজনৈতিক বিষয়কেই আলোচ্য বানিয়ে উপস্থাপন করা হয়। যা ব্লগারদের পুলকিত করে। এবারের মিলন মেলাতে কবিতার চর্চা লক্ষ্য করা যায় এবং যা সাধারণ মাত্রাকে হার মানায়। তাই যারা কবিতা লিখতে অভ্যস্ত নন বা কবিতার ব্যাপারে আগ্রহী নন, তাদের কাছে মিলন মেলা আবেদনহীন হয়ে পড়ে। কোন কোন ব্লগার ফেইস বুক বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেনঃ ওদিনের মিলন মেলা বাক প্রবাস, প্যারিস থেকে আমি আর আবু আশফাক সিন্ডিকেটের নিকট বন্দি হয়ে যায়। আমরা অবশ্য বিষয়টাকে নেগেটিভ দিক থেকে গ্রহণ করিনি। আরেকটা বিষয় আমরা লক্ষ করি যে, উপরোক্ত ব্লগারদের সার্বক্ষণিক অবস্থানের কারণেই মিলন মেলা জমজমাট হয়ে উঠে। তবে যে কোন বিষয় হওয়া চাই সার্বজনীন এবং নাতিচর্চিত।
এবার মিলন মেলার বিষয় গনহত্যা নিয়ে আগত অতিথি গন যে সব মন্তব্য করেন, তার সারসংক্ষেপ
১. উপরোক্ত ঘটনা গুলোকে সমবেত ব্লগাররা একমত হযে গণহত্যা বলে আখ্যা প্রদান করেন এবং এর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে পুরোপরি দায়ী করেন। তারা মনে করেন যে এসব হত্যাকান্ডের বিচার বর্তমান সরকারের সময় হবেনা। যদি সরকার বদল হয়, তাহলে বিচার হবে। কিন্তু কেউ কেউ আবার বলেন যে, ৪২বছর পর যদি যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিচার বসানো যায়, তাহরে ঐসব গণগত্যার বিচারও হবে। অনেকে অবশ্য এই সব পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর একটা ভূমিকা প্রত্যাশা করেছিলেন। গনহত্যার ঘটনা সমূহকে অনেকে ভারত ইসরাঈল এবং আমেরিকার ত্রিদেশীয় পরিকল্পনা বলে মনে করেন।
২. ২৮শে ফেব্রুয়ারী গনহত্যা সংগে আলোচনায় চলে আসে যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রসংগ। অনেকেই এই বিচারকে একটি নাটক নামে আখ্যা প্রদান করেন। তারা মনে করেন যে, ৭১ সালে যারা যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিল, সেই সব প্রকৃত অপরাধীদের বিচার না করে বাংলাদেশের ভাল মানুষগুলোকে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে এবং তাদের বিচার করা হচ্ছে। এ প্রসংগে বলা হয় যে, সাঈদী কেবল একজন জামায়াত নেতা নন, তিনি বাংলাদেশের সকল মানুষের নেতা। তার জনপ্রিয়তা এমন যে, যা শেখ মুজিব ও জিয়াউর রাহমান সহ সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। যার কারণে এই দুইজন নেতার মৃত্যুর পর কেউ হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষনা করতেই দুই শত লোক মারা যায়। তারা বলেনঃ যেখান আদালতে প্রমাণিত যে রাজাকার দেলু ওরফে দেইল্যা এই অপকর্ম করেছে এবং যার বাবা রসুল সিকদার। সেখানে মাওলানা ইউসুফ সাঈদীর পুত্র দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদীকে সাজা দেয়া হবে কেন?
৩. যোদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসংগে অভিমত পেশ করা হয় যে,
ক. প্রকৃত যোদ্ধাপরাধী যারা তাদের বিচার হোক।
খ. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার মতো নিরপেক্ষতা বর্তমান সরকারের নেই।
গ. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে রাজনৈতিক হয়নারীন বন্ধ হোক।
ঘ. বিচারকে বিচারের দৃষ্টি কোন থেকে দেখা হোক, দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে নয়।
৪. বিডিআর হত্যাকান্ডকে সবাই দূ’টি দৃষ্টিকোন থেকে দেখেন।
ক. পাদুয়ার রৌমারীতে বিডিআর কর্তৃক বিএসএফকে রুখে দেয়ার কারণে বিডিআর এর শক্তি ভারতের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং এই শক্তি ভারত তাদের জন্য হুমকী বলে মনে করে। আর সেজন্যই তারা পরিকল্পিত ভাবে বিডিআর এর চৌকষ নেতৃত্বকে খতম করে দেয়।
খ. সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক, চৌকষ ও শিরদাড়া সম্পন্ন নেতৃত্ব বর্তমান সরকারের পথের কাঁটা। ঐ কাঁটা দূর করে নির্বিগ্নে শাসন পরিচালনার জন্য ঐ সব অফিসারদেরকে বিডিআরে ট্রান্সফার করা হয় এবং পরিকল্পিত ভাবে তাদের হত্যা করা হয়। এখন সরকার জঘন্য কর্মকান্ড এমন কি গণহত্যা চালালেও বাঁধা দেয়ার মতো শিরদাড়া নেতৃত্ব নেই।
তবে বিডিআর হত্যাকান্ড সম্পর্কে একজন ব্লগার একটি চমকপ্রদ তথ্য প্রদান করেন। তিনি বলেনঃ জঙ্গি তত্পরতার অভিযোগে জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রাহমানকে ফাঁসি দেয়া হয় গত আমলে। আর শায়খ আব্দুর রাহমানকে গ্রেফতারে নায়কের ভূমিকায় ছিলেন সেনা কর্মকর্তা গুলজার। আর শায়খ আব্দুর রাহমান ছিলেন মীর্জা আযমের ভগ্নিপতি। তাই ভগ্নিপতি হত্যার প্রতিশোধ নিতে মীর্জা আজমের পরিকল্পনায় বিডিআর হত্যাকান্ড হয়েছে।
৫. শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যাকে গোঠা দেশের কলংক বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয় যে, আড়াই হাজার মানুষকে খুন করার পরও মানুষ কিভাবে নিরবে থাকে। বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে অনেকে বিষয়টা আল্লাহর কাছে সপে দেয়ার কথা বলেন। আবার অনেকে মনে করেন যে, আল্লাহ এই ভাবে সপে দিলে কোন সাহায্য করবেন না। কারণ আল্লাহর সাহায়্যের একটা নিয়ম আছে। নিয়ম হলো ঈমান রক্ষার জন্য ঘরের কোনে বসে না থেকে ময়দানে নামতে হবে। আল্লাহর সাহায্য ময়দানে এসে থাকে।
৬. সাভার ট্রাডেজী আমাদের রাজনৈতিক পচনের একটি নমুনা বলে উল্লেখ করা হয়। এবং বলা হয় যে, রাজনৈতিক কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। কারণ রাজনৈতিক কারণে বিল্ডিং তৈরীতে অনিয়ম হয় এবং ঐ দিন শ্রমিকদের কাজে পাঠানো হয়।
সমবেত ব্লগাররা আরো যা বলেনঃ
- সরকারের এখনকার কার্যক্রমও একটি মানবতা বিরুধী অপরাধ। ছাত্রলীগের অছাত্রদের সীমাহীন অপরাধ আর বিশ্বজিত হত্যাকান্ড এ গুলোরও বিচার হতে পারে মানবতা বিরুধী অপরাধ বিবেচনা করে।
- দেশের মানুষের মাঝে অন্যায় আর ন্যায় বোধ নাই। তাই ওরা গণহত্যা আর আলেম হত্যাকারীদের পিছনে ছুটে। মানুষের মাঝে ন্যায় আর অন্যায়ের বোধ সৃষ্টি মাধ্যমে এসব অপকর্মের জবাব দিতে হবে।
- কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে,বিচার হতে পারে। তবে বিচার হতে হবে স্বচ্ছ। তবে তার আগে সিউর হতে হবে যে, যে অভিযোগ করা হচ্ছে সে অভিযোগের ব্যাপারে অভিযোক্ত ব্যক্তি উনি না অন্য কেউ? অন্যের দোষ নিরাপরাধ মানুষের উপর আসছে কিনা?
- অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে হবে। আর মানুষ ঘোষনা দিয়ে নামেনা। যে কোন সময় মানুষ জেগে উঠতে পারে।
- অন্যায়ের প্রতিবাদে আসা মানষকে হত্যা একটি গণহত্যা।
- আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ওয়াজ করা আর জিহাদের ময়দানের বুলেটের মোকাবেলায় বজ্র কঠোর অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন দুইটি বিষয়। প্রথমটি খুবই সহজ কাজ। কিন্তু দ্বিতীয়টি অনেক অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা।
- যে যার স্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে। যে কোনো মূল্যে দেশ, মাটি, মানুষ আর ঈমানকে রক্ষা করতে হবে।
- বিরোধি দলকে শায়েস্তা করতে সরকার যতটা সময় ব্যয় করেছে ততটা সময় এবং সামর্থ যদি দেশ গড়ার কাজে ব্যয় করত তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একক দাবীদার দল আওয়ামিলীগকে অন্তত ক্ষমতা হারবার ঝুকিতে থাকতে হত না।
মিলন মেলাতে দু’টি ব্যতিক্রমী কবিতা উপহার দেন ব্লগার প্যারিস থেকে আমি এবং বাকপ্রবাস। আমরা যা নিম্নে পত্রস্ত করলাম।
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আজকের মিলন মেলায় যারা হাজির তাদেরকে নিয়ে:
মিলন মেলার আড্ডার আসর
আজকে বসলো যখন
কবি মানুষ কাব্য নিয়ে
বাক প্রবাস আসলেন তখন।
গণহত্যার বিষয় ছিলো
আজকের আসরে
ছড়া/কবিতা মাথায় আসছেনা
বললেন আবু আশফাকে।
সিটিজি৪বিডি এসে
দিলেন আশার বাণী
গণহত্যার বিচার হবে
ক্ষমতায় এলে রানী।(১৮দল)
রানী যদি না আসে ভাই
ফিরে ক্ষমতায়
ক্যামনে আবার বিচার হবে
মিলন মেলা জানতে চায়।
একটু পরেই এলাম যখন
প্যারিস থেকে আমি
মধ্য মনি হয়ে গেলাম
সবাই দিলো চুমি।(মজা করলাম)
আবদুল্লাহ শাহীন প্রবাসী হয়েও
আছেন সবার সাথে
মন্তব্য আর জবাব দিলেন
সবাই বুঝেন যাতে।
চারটি গণহত্যা দেখেছেন তিনি
বললেন ইবনে হাসেম
আবু আশফাক চাইলেন আবার
আসুক ইবনে কাশেম।(সিন্ধু বিজয়ী)
আধা শিক্ষিত মানুষ তিনি
নয়তো পুরা শিক্ষিত
সব আসরে থাকেন তিনি
করতে মোদের দীক্ষিত।
বিচারের ভার আল্লাহর উপর
রাখলেন শেখের পোলা
এমন ভাবে বললেন তিনি
যেন আগুনের গুলা।
মানবাধিকারের চেয়ারম্যান মিজান
হাসিনার কোলে
এই খবরটা জানিয়ে দিতে
তিতুমীর মাথা তুলে।
আবু জারির কথা বললেন
দার্ষনিকের মত
তার কথাই মেনে নিলাম
আমরা ছিলাম যত।
সবার শেষে আব্দুল গাফ্ফার এলেন
চকলেট হাতে নিয়ে
সবাই খেলাম মজা করে
মেলার আসর জমিয়ে।
মিষ্টি হাতে জারা এলেন
এলেন অনেক পরে
তখনকার মত মিলন মেলার
আড্ডা গেছে মরে।
মিলন মেলার আসর বসে
প্রতি শনিবার
বাংলা সময় সন্ধা ৭ টায়
সবাইকে সাগত বারবার।
বাকপ্রবাস লিখেছেন :
মিলন মেলার পরে আবার
জমল কবির মেলা
প্যারিস থেকে আমি যেন
কবিয়ালের চেলা
ছন্দের জাদুকর
আবু আশফাক ভাই
কথায় কথায় ছন্দ মেলায়
যার তুলনা নাই
আজকের মেলাতে
ছিলেন তুলনাহীন
সে-যে আর কেহ নন
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন
আধাশিক্ষিত ভাই
পুরা ফাঁকিবাজ
মেলাটা জমে যখন
বেড়ে যায় কাজ
জারীর ভাই আজও
মেরেছিলেন ঢু
সংগী সাথি না পেয়ে
উড়ে গেলেন ছোঃ
খেয়েছেন নাকি খেজুর
সিটিজি৪বিডি
গাফ্ফার ভাই বিয়ে দিলাম
পাত্রি গোলাপি
দরজাটা খোলা পেয়ে
রসিক শেখের পোলা
আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলেন
গণহত্যার মামলা
জারার হাতের মিষ্টি দেখে
তরিকুলের হাত ধরে
তিতুমীরও এসেছিল
বাঁশেরকেল্লা ছেড়ে
মিলন মেলার পরের মেলা
জমে গেছে ভাই
ঘুমের বালিশ ডাকছে আমায়
এবার বিদায় চাই
মিলনমেলায় ছিলেন যারা
টাটা বাইবাই
আবার হয়তো হবে দেখা
শনিবারের মেলা।
সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দেখা হবে আগামী শনিবারে ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন