নিরীহ প্রাণী বা গাছ হত্যার জন্য চাই মৃত্যুদণ্ড বিধান।
লিখেছেন লিখেছেন জ এ লিপু ৩০ মার্চ, ২০১৩, ০৪:১৩:০১ রাত
সভ্য সমাজে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকা উচিৎ কি নয় সে নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে যে সমাজে শুধুমাত্র ভিন্ন মতের জন্য মানুষ গুম হয়, খুন হয় যেখানে মৃত্যুদণ্ড তো নস্যি। আমি মৃত্যুদণ্ডের বিধানের পক্ষে হলেও মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করি না। এ কথার মানে হল আমাদের আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বহাল রেখেও দণ্ড হিসাবে মৃত্যুদণ্ড প্রদানে বিরত থাকতে পারি। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রী যদি শিক্ষকদের নির্দেশনা দিতে পারেন যে এস এস সি পরীক্ষার খাতা নমনীয় ভাবে দেখার জন্য যাতে বেশী বেশী এ প্লাস বা পরীক্ষায় পাশের হার বেড়ে গিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় তবে কেন সরকারী ভাবে বলা যাবে না যে অহরহ মৃত্যু দণ্ড প্রদান যাতে আদালত প্রদান না করে। অবশ্যই সরকার সেটা পারে। পুরোপুরি মৃত্যুদণ্ড উঠিয়ে দিলেই দেশে সভ্য হয় না বা সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায় না। মনস্তাত্ত্বিক কারণে হলেও আইনে মৃত্যুদন্ডের বহাল রাখা প্রয়োজন আছে।
দুর্বল সরকার ব্যবস্থার কারণে সুশাসন ও ন্যায় বিচারের সংকট হয়। সেখানে আইন যত কঠিনই হোক অপরাধী আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বের হয়ে যেতে সক্ষম হয়। আর যে কারণে আইনের কঠিন শর্ত গুলো সাধারণত দুর্বল মানুষ গুলোর জন্যই প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ সবার জন্য আইন সমান এ কথাটি সেখানে অকার্যকর। আর সে জন্যই আমাদের মত দেশে আইনে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ মানবিক নয়।
একটি বিষয় বুঝাতে গিয়ে আজ আমি একটি মুসলিম রাষ্ট্রের উদাহরণ টানছি। আমরা অবশ্য মুসলিম দেশ গুলোর কথা উঠলেই নাক সিটকাই। সত্যি বলতে উদাহরণ হিসাবে মুসলিম দেশ গুলো বড়ই দুর্বল। আমরা আমেরিকা, ব্রিটেন আর ভারতের উদাহরণ গুলো কে বেশী পোক্ত মনে করি। এটা আমাদের মানুষিক দুর্বলতা। আমরা মুসলমানরা নিজেরাই নিজেদেরকে শ্রদ্ধা করি না। এর কারণ অনুসন্ধান করা এই মূহুর্তে সম্ভব নয় সম্ভবত: এর জন্য মনোবিজ্ঞানীর প্রয়োজন হতে পারে কারণ এই সঙ্কটের শিকড় অনেক গভিরে।
আরব আমিরাতে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন মানুষ মারা গেলে চালক কে ৫০ হাজার দিরহাম জরিমানা এবং জেল দুটোই বা একটি হতে পারে। আবার একটি উট দুর্ঘটনায় মারা গেলে চালক কে ৭০ হাজার ও জেল এবং একটি একটি পাখি (ফেলকন) কেউ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত হত্যা করলে ১ লাখ দিরহাম (বাংলায় প্রায় ২২ লক্ষ টাকা) জরিমানা বা জেল দুটোই হতে পারে। এখন আমরা বলে বসব এটা অন্যায়। একটা পশু বা পাখির জীবন কখনও একটা মানুষের জীবনের চেয়ে বেশী মূল্যবান হতে পারে না। এটা আরব দেশ বলেই সম্ভব ব্রিটেন, আমেরিকা বা ভারত হলে এটি কখনোই হত না। আসলে আমরা যুক্তি প্রায়ই বুঝতে চাই না। আমাদের বুঝতে হবে যে একজন সাধারণ চালক কখনই একজন মানুষকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করবে না, মানে সে সতর্ক থাকবে। কিন্তু একটি উট বা একটি পাখির জীবন অনেকেই মূল্যহীন মরে করে অসাবধানতা বা অবহেলা করে হত্যা করে ফেলতে পারে আর এই জন্যই তাদের আইন গুলো গোঁজামিল মনে হলেও সেগুলোই বাস্তব ও ন্যায় সম্মত। আমাদের মত গোবর মস্তিষ্ক দিয়ে তারা দেশ শাসন করে না। এটি হয়তো দেশে বসে অনেকেই আমরা জানি না। উপরের এই একটি উদাহরণ থেকেই কিছুটা আন্দাজ করা যায়।
হত্যাকাণ্ড অনেক ধরনের হয়ে থাকে। পরিকল্পিত, ধীরেসুস্থে বা ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড প্রফেশনাল কিলার বা বিকৃত মস্তিষ্কের লোকেরা ঘটিয়ে থাকে। তাৎক্ষণিক বা দুর্ঘটনায় হত্যাকাণ্ড একজন খুনি বা অতি সাধারণ লোকের দ্বারাও সংঘটিত হতে পারে সেটিই সমাজে বেশী ঘটে।
আমরা হত্যাকাণ্ডের কঠিন সাজাগুলো শুধু মানুষ হত্যার জন্যই রেখে দিয়েছি। অনেক আগে ফেসবুকে দেখেছি শত্রুতা বসত নরপশুরা একটি গরু বা মহিষ কে কুপিয়ে তার চামড়া মাংস ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছে আর দাঁড়ানো অবস্থায় সেই অবুঝ জীব টা মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। দেখে যে কারো চোখে পানি আসতে বাধ্য। আমদের দেশের আইন প্রণেতারা একটা সামান্য পাখি হত্যার কঠিন সাজার কথা চিন্তাই করবে না। আর এ জন্যই চলে নির্বিচারে অতিথি পাখি নিধন। তবে সুখের বিষয় হল অতিথি পাখি নিয়ে চিন্তা করার বা লিখার মত অনেক মানবতার ধ্বজাধারীরা ব্যক্তিরা বসে আছে। হয়ত সেগুলো বিদেশী পাখি বলে।
সবচেয়ে বড় চিন্তার ব্যাপার যেটি হওয়া উচিত ছিল সেটি হল আমরা প্রায়শই পত্রিকায় দেখতে পাই পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ হত্যা, গৃহপালিত পশু হত্যা, শত্রুতা বসত গাছ কর্তন। এসব ক্ষেত্রে মামলা হলেও কোন বিচার হয় কি না আমার সন্দেহ আছে। অথচ আমি মনে করি এর জন্যই দরকার মৃত্যুদণ্ড। আর এই জন্যই দরকার মৃত্যুদণ্ডের বিধান। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব মানুষ হত্যার জন্যই আমরা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখেছি কিন্তু অন্য প্রাণী হত্যার জন্য নয়। আমি মনে করি নিরীহ প্রাণী হত্যা বা গাছ হত্যার উপযুক্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সেটিই বাস্তব ও ন্যায় সম্মত। আশা করি আমাদের সরকার একটু এদিকে দৃষ্টি দিবেন।
বিষয়: বিবিধ
১১৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন