বিয়ের সময় আইশা (রাঃ) এর বয়স ৬/৯ বছর হবার বর্ণনাটি ভুল, তার প্রকৃত বয়স ছিল ১৯ বছর।
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ২২ জুন, ২০১৭, ০৪:৪৮:০৪ রাত
Pedophilia (sexual feelings directed toward children) বা শিশুকাম হল অন্যতম একটি বিকৃত যৌন অভ্যাস। যেখানে, একজন অপ্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়েশিশু এমন বিকৃত মানুষিকতার প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষ দ্বারা যৌন নিপিড়ন অথবা অপব্যবহারের শিকার হয়, যে ব্যক্তি কণ্যাশিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অস্ট্রেলিয়াতে এর প্রকোপ অনেক বেশি। শাইখ ইমরান নজর হুসেইন একবার তার একটি লেকচারে একটি স্পর্শকাতর প্রশ্নের জবাবে বলছিলেন, ধরুন মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড নির্বাচনে জয়ী হল আমেরিকা তখন কি করবে? তারা ব্রাদারহুডকে চাপ দিবে, তোমরা এখনো শরীয়া আইন বাস্তবায়ন করছোনা কেন? ব্রাদারহুড শরীয়া আইন বাস্তবায়ন করল। হটাৎ দেখা গেল, মিশরে একজন ৫৫ বছরের পুরুষ একজন ৬ বছরের কণ্যাশিশুকে বিয়ে করল কিন্তু এটার বৈধতা নিয়ে আদালতে যাওয়া হল। আদালত এখন শরীয়া আইন মেনে চলে এখন তাহলে "আদালত কি রায় দিবে?" আদালত বলবে, এটা বৈধ! কারণ বুখারী শরীফে একটি হাদিসে এসেছে রাসূল (সাঃ) ৬ বছর বয়সে আয়েশা (রাঃ) কে বিয়ে করেছিলেন। এমনটি যদি হয় তবে অস্ট্রেলিয়া নামক দেশটির সরকার খুব বিপদে পরে যাবে কারণ সেখানে আইন করে একদল পুরুষকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে যারা Pedophilia বা শিশুকামে আসক্ত, তারা তখন মুসলিম হতে চাইবে কারণ তারা যখন মুসলিম হবে, তখন দেশের আইনের সাথে শরীয়া আইনের সংঘর্ষ বাঁধাতে পারবে এবং নিজেদের কাজের পক্ষে ইসলামকে ব্যবহার করতে চাইবে। তো ভাইয়েরা, আপনারা কি আপনাদের সেই মুসলিম ভাইদের সাহায্য সমর্থন দিতে রাজি আছেন?? হে ভাইয়েরা! হে বোনেরা! আপনারা কি এটুকু বোঝার মত অবস্হায় নেই যে, এই হাদিসটি একটি মনগড়া হাদিস, বানানো হাদিস যা পরবর্তীতে কেউ ঢুকিয়ে দিয়েছে? কারণ এই হাদিসটির বক্তব্য সরাসরি কুরআনের আয়াতের সাথে সংঘর্ষ তৈরী করে??
ভূমিকাটা এর চাইতে সুন্দর করতে পারতামনা বলেই ঘটনাটা টানলাম। দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিদেশে,অনলাইনে অফলাইনে ইসলাম বিদ্বেষী চক্র ক্রমাগত প্রচারণা চালাচ্ছে যে, কুরআন যাকে বলেছে, সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী, মুসলমানদের সেই নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন মূলত একজন শিশুকামী (নাউযুবিল্লাহ) কারণ তিনি ৬ বছর বয়সী আইশা (রাঃ) কে বিয়ে করেছিলেন যার প্রমাণ বুখারীর একটি হাদিস। এই দলিলটি মুসলিমদের বিভ্রান্ত করতে, ইসলামকে অপমান করতে ও মুসলিম মেয়েদের ইসলাম ত্যাগ করার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে দারুণ টনিক হিসাবে কাজ করে। ইসলাম বিদ্বেষীরা এই ব্যাপারটি চমৎকার একটি অস্ত্র হিসেবে এর ব্যবহার করে চলেছে। অথচ বাস্তবতা হল এটাই, এই হাদিসটি কুরআনের বেশ কিছু আয়াত, সীরাহগ্রন্হে বর্ণিত ঐতিহাসিক দলিলাদি, এমনকি খোদ বুখারী শরীফে বর্ণিত সহীহ হাদিস- ইত্যাদি সবকিছুর সাথেই এই হাদিসটি চরমভাবেই সাংঘর্ষিক।
সহীহ বুখারীতে হিসাম ইবনে উরওয়াহ (রহঃ) এর একটি বর্ণনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যার বক্তব্য হল: তিনি আইশা (রাঃ) এর কাছে শুনেছিলেন যে, রাসূল (সাঃ) তাকে ৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন এবং ৯ বছর বয়সে তার সাথে বাসর করেন, অথচ এই তথ্য "বর্ণনাসূত্র এবং ঐতিহাসিক ঘটনাপঞ্জি" দুদিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ।
হাদিসটিও আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ও বর্ণনা করেননি। আমরা জানি, ইসলামিক আকিদার মূল ভিত্তি হল দুটি-
১. কুরআন।
২. হাদিস।
#কুরআন: আল্লাহর প্রেরিত মহাগ্রন্হ, এটি কোন মানব রচিত গ্রন্হ নয় তাই এটি নির্ভূল।
# হাদিস: আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর কথা, কাজ ও অনুমোদনকে হাদিস বলে। আর আল্লাহর রাসূল এর কোন কাজ কুরআন এর বিরুদ্ধে যেতে পারেনা। যেমন, আইশা (রাঃ) কে রাসূল (সাঃ) এর চরিত্রের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন, তোমরা কি কুরআন পড়োনা? পবিত্র কুরআনই ছিল তার চরিত্র। পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াত আইশা (রাঃ) এর বক্তব্যকে সঠিক প্রমাণ করে। আয়াতসমূহ নিম্নরূপ:
আর সে (মুহাম্মাদ) যদি কোন কিছু (নিজে) রচনা করে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করত,
আমি অবশ্যই তার ডান হাত ধরে তাকে পাকড়াও করতাম,
তারপর অবশ্যই তার হৃদপিন্ডের শিরা কেটে দিতাম ,
অতঃপর তোমাদের মাঝে এমন কেউ নেই যে, (আমাকে) বাঁধা দিতে পারত। ( সুরা হাক্কাহ ৬৯, আয়াত: ৪৪-৪৬)
আর স্পষ্ট প্রমাণ ও গ্রন্থসহ তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দাও, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে। (সুরা নাহল:১৬, আয়াত: ৪৪)
কাজেই কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা হলেন আল্লাহর রাসূল (ﷺ ) এবং তার কথা, কাজ ও অনুমোদনের বাইরের কোন কিছুই ইসলামের অংশ নয়,
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ তাই এর সাথে নতুন কিছু যোগ হবেনা আর কোন কিছু কাটছাটও হবেনা।
যেমন আল্লাহ বলেন,
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন(জীবন ব্যবস্থা) হিসেবে মনোনিত করলাম” -(আল-কুরআন,সূরা মায়িদা: আয়াত:৩)
এজন্য আল্লাহর রাসূলের কোন কাজ কখনোই কুরআনের বিপক্ষে যেতে পারেনা কারণ তার কথা, কাজ, অনুমোদন সরাসরি আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি কোন সাধারণ মানুষের মত নিজ খেয়াল খুশির অনুসারী ছিলেন না (সূরা আনআম:১১৬নং আয়াত পড়ুন) আর সেটি তার পক্ষে সম্ভবও ছিলনা।
কোরআনের সাথে হিসাম ইবনে উরওয়া বর্ণিত হাদিসের সংঘর্ষিক দিক:
কুরআনে বর্ণিত আয়াতসমূহ:
পিতৃহীনদেরকে পরীক্ষা করতে থাকো, যে পর্যন্ত না তারা বিবাহযোগ্য হয়। অতঃপর তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখলে, তাদের সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তারা বড় হয়ে যাবে বলে অপচয় করে ও তাড়াতাড়ি করে তা খেয়ে ফেল না। যে অভাবমুক্ত, সে যেন যা অবৈধ তা থেকে নিবৃত্ত থাকে এবং যে বিত্তহীন, সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে। আর তোমরা যখন তাদেরকে তাদের সম্পদ সমর্পণ করবে, তখন তাদের উপর সাক্ষী রেখো। হিসাব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট। (সুরা নিসা:৪, আয়াত: ৬)
আর তোমরা যদি আশংকা কর যে, পিতৃহীনাদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিবাহ কর (স্বাধীন) নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশংকা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে (বিবাহ কর) অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত (ক্রীত অথবা যুদ্ধবন্দিনী) দাসীকে (স্ত্রীরূপে ব্যবহার কর)। এটাই তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর নিকটবর্তী। ( সুরা নিসা, আয়াত: ৩)
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আরও একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতা সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সুরা রূম:৩০, আয়াত: ২১)
এবং যারা প্রার্থনা করে যে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদেরকে করুন মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য। (সুরা ফুরকান:২৫, আয়াত: ৭৪)
আমরা এসব আয়াত নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাবনা শুধু আলোচনা সংশ্লিষ্ট বিষয়টুকুর সাথে প্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলো উল্লেখ করব।
ইবনে শিহাব (রহঃ) সুরা নিসার এই আয়াতসমূহ নাজিলের কারণ বা শানে নুযুল সম্পর্কে আইশা (রাঃ) প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এই আয়াত এমন এতিম বালিকার ব্যাপারে নাজিল হয় যে ছিল নাবালিকা এবং সে বাগান ও অন্য সম্পদের মালিক ছিল (পৈতৃক সূত্রে) এবং বাবা না থাকায় সে এমন লোকের অভিভাবকত্বে লালিত পালিত হচ্ছিল যেই ব্যক্তি তার সুন্দর চেহারা ও তার সম্পদের ব্যাপারে আকৃষ্ট ছিল। আবার এদিকে সে তাকে বিয়ে করতে চাইলেও নামমাত্র মোহর দিয়ে তাকে স্ত্রী বানানোর দুষ্ট চিন্তা করছিল তখন এই আয়াত নাজিল হয় এবং সেই এতিম নাবালিকা মেয়েকে বাদ দিয়ে অন্য নারীকে বিয়ে করতে বলা হয়। আরও বলা হয় এতিম যখন সাবালিকা বা জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন হবে এবং বিয়ে করার উপযুক্ত বয়সে পৌছাবে তখন যেন তার সম্পত্তি তাকে পূর্ণমাত্রায় ফেরৎ দেয়া হয়। তবে তাকে লালন পালনকারী ব্যক্তি যদি অভাবী হয় তবে শুধুমাত্র যতটুকু একান্তই প্রয়োজন হয়, ততটুকুই যেন খরচ করে এবং বাকিটুকু এতিম যখন প্রাপ্তবয়ষ্ক হবে ও বিবাহযোগ্য হবে তাকে ফেরৎ দিয়ে দেয়। অর্থাৎ এটি বুঝতে সমস্যা হবার কোন কারণ নেই যে, অপ্রাপ্তবয়ষ্ক কোন মেয়েশিশুকে বিয়ে করা ইসলামে হারাম। সাবালিকা হবার পর বিয়ের বয়সে পোছালেই কেবল তাকে পূর্ণ দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করা যাবে।
এরপর আমরা দেখছি, সুরা রূমে যখন বলা হচ্ছে, "তিনি তোমাদের মাঝ থেকেই তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন ও তোমাদের মাঝে ভালবাসা, মায়া-মমতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন", তখন এটি বোঝা সহজ হয়ে যায় যে, একজন নারীর বিয়ের জন্য পাত্র হল এমন এক পুরুষ যার সাথে তার বাবা মায়ের মত রক্ত সম্পর্ক নেই। সেই পুরুষের ভালবাসা, মায়া-মমতা নামক বোধগুলি বোঝার মত বয়স ও বিচার-বুদ্ধি একজন নারীর থাকা আবশ্যক যখন তাকে বিবাহ করা হবে। এসব বোধগুলি কোন কণ্যাশিশুর মাঝে জন্মায় না, প্রাপ্তবয়ষ্ক নারীর মাঝেই জন্মায়।
সুরা ফুরকানে বলা হচ্ছে, মুমিনরা প্রার্থনা করে- "হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান সন্ততি দান করুন যারা হবে নয়নপ্রীতিকর" তখন বোঝা যায়, বিয়ের জন্য এমন নারীই উপযুক্ত বয়সের যে সন্তান ধারণে সক্ষম, কোন কণ্যাশিশু না। তাই কোন কণ্যাশিশুকে বিয়ে করা কুরআন মতে সঠিক নয়, হারাম।
হাদিসের সাথে হিসাম ইবনে উরওয়া (রহঃ) এর বর্ণনার সাংঘর্ষিকতা:
বুখারী, মুসলিম, তীরমীযী ও অন্যান্য সহীহ হাদিসগ্রন্হের বিবাহ অধ্যায়ে রাসূল (সাঃ) হতে আবু হুরাইরা (রাঃ) ও আইশা (রাঃ) একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে অথবা কোন কুমারী নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন ভাবেই বিবাহ দেয়া যাবেনা। বরং বিবাহের পূর্বে তাদের কাছ থেকে এই ব্যাপারে মৌখিক সম্মতি নিতে হবে। আইশা (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কুমারী মেয়েরা তো বিয়ের কথা শুনতে লজ্জা পায় তাদের সম্মতি কিভাবে নিব? আল্লাহর রাসূল জবাব দিলেন, তারা যদি বিয়ের ব্যাপারে জানার পর চুপ থাকে তবে বুঝবে তাদের এতে আপত্তি নেই।
রাসূল (সাঃ) এর কাছে খানসাআ বিনতে খিদাম আনসারীয়্যাহ (রাঃ) নামক এক নারী সাহাবী এসে অভিযোগ করল, তার বাবা তাকে জোর করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েছে। রাসূল (সাঃ) তার পিতাকে ডেকে আনলেন এবং অভিযোগের সত্যতা পেলেন এবং সেই বিয়ে বাতিল করে দিলেন। সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: ৬/বিবাহ, হাদিস নং: ২০৯৭, পাবলিশার ইফাবা)
কাজেই এটি স্পষ্ট যে, একজন নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ দেয়া হারাম এবং একজন নারী তখনি নিজের বিবাহের ব্যাপারে মৌখিক সিদ্ধান্ত জানাতে পারে বা হ্যা, না বলতে পারে, যখন সে বিচার বুদ্ধি সম্পন্না হয়, সাবালিকা হয়, বিবাহের উপযুক্ত বয়সের হয়। এজন্য যখনই বলা হয়, রাসূল (সাঃ) আইশা (রাঃ) কে ৬ বছর বয়সে বিবাহ করেন, তখন সেটা খোদ রাসূল (সাঃ) এর নিজের কথা ও কাজের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। আর আরো প্রশ্ন এসেই যায়, যখন রাসূল (সাঃ) আইশা (রাঃ) কে বললেন, কোন নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া যাবেনা, তার অনুমতি নিতে হবে, তখন আইশা কেন এই যুক্তি আনলেননা না যে, কিন্তু হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কেন আমাকে ৬ বছর বয়সে বিয়ে করলেন, যখন আমার অনুমতি দেয়ার মত বয়স হয়নি? হাদিসে কোথাও এমন বক্তব্য নেই। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে হিসাব ইবনে উরওয়া (রহঃ) বর্ণিত ঘটনাটি কতটা ত্রুটিযুক্ত। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি "কেন রাসূল (সাঃ) এর কাজ কুরানের বিপক্ষে যেতে পারেনা?" এবং তার কথা ও কাজ মুনাফিকের মত দ্বীমুখী হতে পারেনা।
রিজালশাস্ত্র এবং হিসাম ইবনে উরওয়া (রহঃ)
রিজালশাস্ত্র কি?
যে জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে হাদিসের সনদে উল্লেখিত প্রত্যেক বর্ণনাকারীর নাম, বংশ পরিচয়, জন্ম-মৃত্যর স্থান ও তারিখ, নৈতিক ও মানসিক অবস্থা, তার পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষা-দীক্ষা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, আল্লাহভীতি, হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে তার অবস্থান, তার শিক্ষক ও ছাত্রের পরিচয়, তার স্মৃতিশক্তি কেমন ছিল, শেষ বয়স পর্যন্ত তার স্মৃতিশক্তিতে কোন রদবদল হয়েছে কিনা, তার নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বস্ততা কতখানি, তিনি ভ্রান্ত আকীদাবলম্বী কিংবা বিদআ’তী কিনা, তার সময়কার রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল, তার সম্পর্কে তৎকালীন বিজ্ঞজনের অভিমত কি, তার ভ্রমণ ও প্রস্থান প্রভৃতি ব্যক্তিজীবনের খুঁটিনাটি বিষয়াবলী সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় তাকে রিজালশাস্ত্র বলে।
হযরত আইশার বয়স সম্পর্কিত হাদিসটি ৫টি সনদে আছে আর সবগুলো সূত্রে হিশাম ইবনে উরওয়া রয়েছেন। তাই রিজালশাস্ত্র এক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রমাণ দেয় যে, তার বর্ণনা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। রিজালশাস্ত্রে তার ব্যাপারে আমরা জানতে পারি যে, তিনি তার জীবনের ৭১ বছর মদিনায় কাটান কিন্তু এই সময় তার স্মৃতিশক্তি লোপ পায় আর তিনি তখন ইরাকের কুফায় বসবাস শুরু করেন। বার্ধক্যের জন্য স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়াতে তিনি হাদিস বর্ণনার সময় প্রায়ই ভুল বলতেন, তার বক্তব্য পরিবর্তিত হত আর চমকপ্রদ ব্যাপার হল, আইশা (রাঃ) এর বয়স সংক্রান্ত হাদিসগুলো তিনি ইরাক থাকতেই বর্ণনা করেন। মদিনায় থাকাকালীন তার নিকট থেকে এসব হাদিস কেউ শোনেনি তাই দেখা যায়, এই হাদিস হিসামের বর্নিত এই ৫-টি সনদে মদিনার কোনো রাবীর (বর্ণনাকারী) সংশ্লিষ্টতা নেই বরং হাদীসটির বর্ণনাকারীদের অবশিষ্ট সকলেই ইরাকের অধিবাসী।
ইমাম মালিক বিন আনাস, যিনি হিশাম ইবনে উরওয়ার ছাত্র ছিলেন, তিনি ইরাকিদের মাধ্যমে বর্ণিত হিশামের হাদীসগুলোকে সন্দেহ করে সেগুলো বাতিল করে দেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় ইরাকি রাবী থেকে হিশামের কোনো রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য নয়। (তথ্যসূত্র- ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) লিখিত "তাহযীবুত তাহযীব")
এব্যাপারে প্রাচীন আলেমদের আরো বহু বর্ণনা পাওয়া যায় কিন্তু আমরা সুবিস্তারিত বর্ণনা উল্লেখ করতে চাইনা যারা এব্যাপারে আগ্রহী তারা ইচ্ছা করলেই এই ব্যাপারে অনেক তথ্য পেয়ে যাবেন।
সীরাহ বা রাসূল (সাঃ) এর জীবনীগ্রন্হে উল্লেখিত ইতিহাসের সাথে হিসাম ইবনে উরওয়া বর্ণিত তথ্যের সাংঘর্ষিকতা:
রাসূল (সাঃ) এর জীবনীর উপর যেসকল প্রাচীন গ্রন্হ বা সীরাহ লেখা হয়েছে, তার মাঝে আলেমদের নিকট বিশুদ্ধতার বিচারে সবচেয়ে সেরা হল "সীরাতে ইবনে হিসাম" এর পরই ইতিহাসগ্রন্হ হাফিজ ইবনে কাসির রচিত "আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া" এর কদর। এই দুটি গ্রন্হে আইশা (রাঃ) সম্পর্কিত যেসকল তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা এই হাদিসটির বিপক্ষে যায়। সীরাতে ইবনে হিসামে "প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী" অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নবুয়তের প্রথম ৩ বছর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) গোপনে ইসলামের প্রচার চালান এবং নবুয়তের প্রথম বছরে যেসকল নর নারী ইসলাম গ্রহণ করেন ইবনে হীসাম তার একটি তালিকা লিপিবদ্ধ করেছেন এবং উক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সেখানে ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মাঝে আবু বকর (রাঃ) ৩য় ব্যক্তি এবং তার দাওয়াতে যেসকল নারী পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করে সেই তালিকায় তার দুই কণ্যা আসমা (রাঃ) ও আইশা (রাঃ) যথাক্রমে ১৮ ও ১৯ তম মুসলিম। উল্লেখ করা হয় এসময় আইশা (রাঃ) অল্পবয়ষ্কা ছিলেন। আরো উল্লেখ করা হয় উমার (রাঃ) তার অনেক পরে মুসলিমদের আবিসিনিয়ায় হিজরত পরবর্তী সময়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য উমার (রাঃ) ৬১৬ খৃষ্টাব্দে ইসলাম গ্রহন করেন অন্যদিকে আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন ৬১০ খৃষ্টাব্দে। অথচ হিসাম ইবনে উরওয়া এর বর্ণিত তথ্যকে প্রাধান্য দিলে দেখা যায়, আয়েশা (রাঃ) নবুয়তের ৪র্থ বছরে জন্মগ্রহণ করেন অথচ ঐতিহাসিক তথ্যে তাকে ১৯ তম মুসলিম হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে যিনি নবুয়তের প্রথম বছরে (৬১০ খৃস্টাব্দ) তার পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। আমরা এবার আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্হে তাকালে দেখতে পাই, ইবনে কাসির (রহঃ) হিসাম ইবনে উরওয়া বর্ণিত আইশা (রাঃ) এর ৬ বছরে বিয়ে সংক্রান্ত তথ্যটি উপস্হাপন করার পরই আবার একই গ্রন্হে এটিও উল্লেখ করছেন যে, আসমা (রাঃ) আইশা (রাঃ) এর থেকে ১০ বছরের বড় ছিলেন এবং তিনি ৭৩ হিজরীতে ১০০ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। এই ১০ বছর বয়সের ব্যবধানের ব্যাপারটি ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) সহ মোটামোটি সকল বর্ণনাকারীই উল্লেখ করেছেন।হিজরতের সময় তিনি ছিলেন গর্ভবতী এবং মুহাজিরদের মাঝে তার সন্তান আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) হল প্রথম মুসলিম সন্তান যিনি মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। এই হিসাবে ১লা হিজরীতে তাঁর বয়স দাড়ায় ২৭বছর কাজেই ১০ বছরের ছোট বোন আইশা (রাঃ) এর বয়স যে তখন ১৭ বছরের এর কম ছিলনা, তা বুঝতে কষ্ট হয়না। আইশা (রাঃ) এর সাথে রাসূল (সাঃ) এর বিয়ে হয় তৃতীয় হিজরী সনের শাওয়াল মাসে বা ৬২৩-৬২৪ খ্রিস্টাব্দে। হিসাবে তার বয়স দাড়ায় ১৮-১৯ বছর। অধিকাংশ বর্ণনাকারির মতেই, হযরত আইশা (রাঃ) বদরের যুদ্ধ (৬২৪ খৃষ্টাব্দে) এবং ওহুদের যুদ্ধ (৬২৫ খৃষ্টাব্দে) উভয়টিতে অংশগ্রহন করেছেন অথচ উভয় যুদ্ধতেই যারা ১৫ বছর বয়সের নীচে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন। তাই আইশা (রাঃ) যদি এসময় ১০-১১ বছর বয়সের হয়ে থাকেন, তবে কোনভাবেই তিনি এ যুদ্ধসমূহে অংশগ্রহণ করার অনুমতিই পেতে পারেননা।
সুরা কামার ৫৪ তম অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং বুখারী শরীফে সুরা কামার এর ৪৬ নং আয়াত নাজিল প্রসঙ্গে আইশা (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিসটি হল:
ইবরাহীম ইবনু মুসা (রঃ).... আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। আইশা (রাঃ) বলেন, بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَىٰ وَأَمَرُّ অর্থাৎ- বরং কিয়ামত তাদের শাস্তির নির্ধারিতকাল আর কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর। এই আয়াতটি মক্কায় আবতীর্ণ হয় আমি তখন কিশোরী ছিলাম, খেলাধুলা করতাম (বুখারী, অধ্যায় ৫২/তাফসীর, সুরা কামার, ৮ম খন্ড, হাদিস নং: ৪৫১২ পাবলিশার ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ )
উল্লেখ্য ৫৪ তম উক্ত অধ্যায় নাজিল হয় ৬১২ খৃষ্টাব্দের দিকে। সে হিসাবে বিয়ের সময় হযরত আয়েশা (রাঃ) বয়স ৬২৩-৬২৪ খৃস্টাব্দে কোনভাবেই ৬/৯ বছর হয়না।
এছাড়াও রিজালশাস্ত্র ও সীরাহ এর বিভিন্ন গ্রন্হাদির ইতিহাস ঘাটাঘাটি করলে আমরা আরো এমন প্রচুর তথ্যাদি পাই যা প্রমাণ করে হিসাম ইবনে উরওয়া এর বর্ণিত তথ্যটি কোনভাবেই সঠিক নয়।
আর যেহেতু এসকল বর্ণনার কোনটির উৎসই স্বয়ং রাসূল (সাঃ) নন এবং তা কুরান-হাদিস ও ঐতিহাসিক তথ্যাদির সাথে সাংঘর্ষিক তাই আমরা এসকল বর্ণনাগুলিকে কোনভাবেই সঠিক বলতে পারছিনা। আমরা আরো একটি বর্ণনা পাই যে, খাদিজা (রাঃ) এর মৃত্যুর পর খাওলা বিনতে হাকিম (রাঃ) রাসূল (সাঃ) কে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হন এবং রাসূল (সাঃ) কে উৎসাহিত করেন এবং তার কাছে কুমারী আইশা (রাঃ) ও বিধবা সাওদা (রাঃ) এর কথা উল্লেখ করেন। রাসূল (সাঃ) দুজনের পরিবারের কাছেই বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য তাকে বলেন। তিনি আবু বকর (রাঃ) এর কাছে যান এবং আইশা (রাঃ) এর সাথে রাসূল (সাঃ) এর বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন তার স্ত্রী উম্মু রুম্মান জানান, তার বিয়ে তো ঠিক হয়ে গেছে মুতয়ীম ইবনে আদীর পুত্রের সাথে আবু বকর কথাও দিয়ে ফেলেছেন। তখন আবু বকর (রাঃ) মুতয়ীম ইবনে আদীর বাড়িতে যান এবং বিয়ের প্রসঙ্গ উঠালে তার স্ত্রী উম্মুস সাবী জবাব দেয়, তোমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিলে তো আমার ছেলেটাকেও মুসলিম বানিয়ে ছাড়বে, মুতয়ীমও অনুরূপ কথা বলে এবং বিয়ের কথা প্রত্যাহার করে নেয়। তখন আবু বকর (রাঃ) রাসূল (সাঃ) এর সাথে তার মেয়ের বিয়ে দেন।
এটা বোঝার মত জ্ঞান অবশ্যই আমাদের আছে যে, একজন পুরুষ যিনি সমাজ সংষ্কারক ৫০ বছর বয়সে তার স্ত্রীকে হারানোর পর ঘর ও বাচ্চাদের দেখাশোনা, উপার্জন, সাথে সাথে সমাজ সংষ্কারক হিসেবে দায়িত্ব পালন তার জন্য মারাত্নক কঠিন হয়ে যায়। তাই একজন আত্বীয়া তার এমন অবস্হায় তার কষ্ট লাঘবের জন্য এমন কারো সাথেই বিয়ে দিতে চাইবে যে বয়সে যুবতী- তার ঘর সংসার দেখাশোনা করতে পারবে, তাকে বিপদে অভয় দিতে পারবে এবং জৈবিক চাহিদার ব্যাপারটিও ফেলনা নয়। তাই একজন ৬ বছরের বাচ্চাকে বিয়ের জন্য হাজিরের ব্যাপারটি হাস্যকর কারণ সে এই পুরুষের পরিবার ও তার জন্য কোন দায়িত্বটি পালন করতে পারবে? বা জৈবিক চাহিদা পূরণ করতেও কি সে কোনভাবে সক্ষম? আবার যখন মুতয়ীম ইবনে আদীর পুত্রের সাথে আইশা (রাঃ) বিয়ে হয়ে যাবার কথা পাকাপাকি ছিল, এমন বর্ণনা আমরা পাই, তখন এটাও বুঝতে সমস্যা হয়না যে, সে সময় আইশা (রাঃ) বিয়ের উপযুক্ত ছিলেন কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করার জন্য সেই বিয়ে ভেঙ্গে যায়। কিন্তু আগের বর্ণনার মত এই বর্ণনাটিকেও আমরা গুরুত্ব দিতে চাইনা কারণ আমরা সবচেয়ে সঠিক বক্তব্যটি পাই সরাসরি রাসূল (সাঃ) এর কাছ থেকে। তিনি আইশা (রাঃ) কে বলেন, আমি তোমাকে স্বপ্নের মাঝে দেখেছি। একজন ফেরেশতা তোমাকে রেশমী চাঁদরে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে এসে বলল, এই হচ্ছে আপনার স্ত্রী। এরপর আমি তোমার মুখমন্ডল থেকে চাঁদর সরিয়ে ফেলার পর দেখতে পেলাম সে হচ্ছ তুমি। তখন আমি বললাম, যদি যদি আল্লাহর পক্ষ হতে ফায়সালা হয়ে থাকে, তবে তা আল্লাহ অবশ্যই কার্যকর করবেন। তাকে পরপর ৩ রাতে এই একই স্বপ্ন দেখানো হয়েছে বলে আল্লাহর রাসূল জানান। (বুখারী- অধ্যায় ৫৪/বিবাহ, হাদিস নং: ৪৭৪৯, ইফাবা)
অর্থাৎ- এই বিয়েটি সরাসরি আল্লাহ সম্পন্ন করে দিয়েছিলেন, কোন মানুষ না। আর আমরা এই এর পক্ষে প্রমাণও পাই কারণ এই বিয়েতে কোন ওলীমার আয়োজন করা হয়নি অথচ রাসূল (সাঃ) অন্য সব বিয়েতেই ওলিমার ব্যবস্হা করেছিলেন।
তবে এরপরও আমরা একটি হাদিস পড়ে আবারো বিভ্রান্ত হই এবং মনে হতে পারে হিসাব ইবনে উরওয়ার বক্তব্য সঠিক, বক্তব্যটি নিম্নরূপ-
হযরত আইশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর উপস্থিতিতে পুতুল নিয়ে খেলা করতাম আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলত। যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বাড়ীতে প্রবেশ করতেন, তখন ওরা পুতুলগুলো লুকিয়ে নিত। কিন্তু তিনি (সাঃ) তাদেরকে আমার সাথে একত্রে খেলতে বলতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬১৩০ ; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৪৪০)
কিন্তু আরেকটি হাদিস এই সংশয় দূর করে, তা নিম্নরূপ-
একবার রাসুল (সাঃ) ঘরে কিছু পুতুল দেখতে পেয়ে আয়িশা (রাঃ) কে বললেন, এগুলো কি? তিনি বললেন, এগুলো আমার পুতুল। এগুলোর মধ্যে একটি পাখাওয়ালা ঘোড়া ছিল। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২২৮১৩]
এটার সংক্ষেপ উত্তর হল এই, প্রথম হাদিসটি আইশা (রাঃ) এর বিয়ের আগের ও তার বাবার বাড়িতে ঘটা ঘটনা। কারণ ছোট বয়সে বাবার বাড়িতে থাকাকালীন সময়েই মেয়েদের বান্ধবীদের সাথে মেলামেশা ও খেলাধুলার সুযোগ থাকে, বিয়ের পর পতির বাড়িতে কেউ পুতুল খেলেনা আর বান্ধবীরাও হাজির হয়না, সেটি সম্ভব না। আবু বকর (রাঃ) এর বাড়িতে আল্লাহর রাসূলের সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল। তখন আইশা (রাঃ) অল্পবয়ষ্কা ছিলেন এবং তার বান্ধবীদের নিয়ে পুতুল খেলতেন কিন্তু রাসূল (সাঃ) কে দেখে তার বান্ধবীরা লজ্জা পেত কিন্তু তিনি তাদের অভয় দিতেন, আইশা (রাঃ) এর সাথে খেলতে বলতেন। আর ২য় হাদিসটি ছিল তার বিয়ে পরবর্তী ঘটনা যেটি ঘটে রাসূল (সাঃ) এর ঘরে। হাদিসের বক্তব্যটি শুনলেই বোঝা যায়, বিয়ের পর তিনি স্মৃতিস্বরূপ কিছু পুতুল আলমারি বা সেলফে সাজিয়ে রাখছিলেন তখন রাসূল (সাঃ) সেটি দেখতে পেয়ে জিঙ্গেস করেন, এগুলো কি? তিনি উত্তর, আমার পুতুল যার মাঝে একটি পাখাওয়ালা ঘোড়া ছিল। এখানের বক্তব্যে কোন খেলার কথাও আসেনি।
বর্তমান সময়ের বিখ্যাত আলেম ও ইসলামিক স্কলারদের মাঝে শাইখ আদিল সালাহি, শাইখ ইমরান নজর হুসাইন, জামাল বাদাবী, ডাঃ জাকির নায়েক সহ অনেকেই একমত বিয়ের সময় আইশা (রাঃ) এর বয়স মোটেও ৬ বছর ছিলনা। বিভিন্ন তথ্যাদিতে আমাদের কাছে এটাই প্রতীয়মান হয় বিয়ের সময় তার বয়স ছিল প্রায় ১৯ বছর।
আইশা (রাঃ) সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী ব্যক্তিদের মাঝে ২য় তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২২১০ টি। তিনি ছিলেন কুরআনের হাফেজ, কুরআন লিপিবদ্ধকরণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। বিখ্যাত তাবেয়ীদের অনেকেই তার ছাত্র ছিলেন। শরীয়াহ এর এক চতুর্থাংশ সম্পূর্ণরূপে তার নিজস্ব গবেষণা হতে এসেছে এবং তার বর্ণিত হাদিসগুলো দ্বারা তিনিই প্রমাণ করেছেন, তার সাথে রাসূল (সাঃ) এর বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল মধুর। তিনি রাসূল (সাঃ) জীবিত বা মৃত কোন অবস্হাতেই তার ব্যাপারে কখনো খারাপ কিছু বলেননি, কোন অসন্তুষ্টির প্রকাশ করেননি বরং তিনি তার ব্যাপারে ছিলেন মুগ্ধ। রাসূল (সাঃ) তার প্রত্যেক স্ত্রীকে সুযোগ দিয়েছিলেন, যদি কেউ চায় তবে সে রাসূল (সাঃ) এর সাথে বিয়ে বিচ্ছেদ করতে পারে এবং দুনিয়ার জীবনের চাকচিক্যকে বেছে নিতে পারে- জবাবে আইশা (রাঃ) সাথে সাথে বলেছিলেন, এমন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে? আমি তো আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকেই দুনিয়া ও আখিরাতে কামনা করি।
বিশেষ অনুরোধ: আমার অনেক লেখাই এর আগে অনেক নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন এটা অনৈতিক। একজন লেখকের গবেষণাধর্মী লেখাগুলোর পেছনে অনেক ঘুমহীন রাত জড়িয়ে থাকে, অনেক পড়াশুনা করে দিনের পর দিন তথ্য প্রমাণ বের করতে হয়, অনেক কাজ বাদ দিয়ে লেখা নিয়ে পরে থাকতে হয়। হতাশা, কষ্ট অনেক কিছুর সাথে পাল্লা দিতে হয় কিন্তু চুড়ান্ত লেখা নিজের নামে চালিয়ে দিতে শুধু কপি পেস্ট করার মত অনৈতিক দক্ষতা থাকলেই চলে। লেখাটি শেয়ার করুন, গবেষণায় কাজে লাগান কিন্তু নিজের নামে চালিয়ে দিবেন না।
জাঝাক আল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম।
.
বিষয়: বিবিধ
৭২১৬ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকিল্লাহ খাইর
Excellent and best.Apu, Keep going on.
বিবি আয়েশা (রাঃ)কে বিয়ের পর নবীজী যে আরও বিয়ে করেছিলেন বিয়ের প্রাক্কালে কি আগের স্ত্রীদের অনুমতি নিয়ে নিতেন ?
ম্যাডাম কি নিজেই ঘুমিয়ে আছেন আর আপনাকে প্রক্সি দিতে বলেছেন?
১। কেন মুসলিমদের কে কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক একটি হাদীসের তথ্যকে কোরানের উপর স্থান দিতে হবে?
২। কেন একজন মুসলিম গবেষনা করতে পারবে না কিংবা জরুরী মনে করবে না -
যদি বোখারীর কোন তথ্য বোখারীর অন্য হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক হয়?
৩। কোরায়েশ রা ৬ বছরের মেয়েকে বিয়ে করত এবং ৯ বছরের মেয়েকে তুলে আনতো এর পক্ষে আপনার কোরানিক কিংবা হাদীসের ইভিডেন্স কোথায়? অথচ আপনি স্বাভাবিক বলছেন। কোন রেফারেন্স এর ভিত্তিতে?
৪। বন্কিমের লিখা তথা গল্প উপন্যাসের অবতারনা করে আপনি কি কোরান ও হাদীস এর তথ্যকে ভুল কিংবা দূর্বল করলেন না?
৫। সবশেষে মার্কিন উদাহরন - আপনার মত ওয়েল ইডুকেটেড মানুষের কাছ হতে শুনে ট্রুলী কষ্ট পাচ্ছি।
আমার অনুরোধ থাকবে লিখাটি আবার পড়ার।
তিনি বলছেন, হে নবী! আর যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল, তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে চলে এবং তারা কেবল অনুমানভিত্তিক কথাবার্তাই বলে থাকে।
আমি আমার লেখাতেই স্পষ্ট কুরানের আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করেছি এটা বোঝানোর জন্য যে, আল্লাহর রাসুলের প্রতয়েকটি কথা, কাজ ও অনুমোদন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ছিল। তিনি অন্য মানুষের মত নিজ বিচার, বুদ্ধি, মন-মানষিকতা দ্বারা চালিত ছিলেন না। কাজেই রবিন্দ্রনাথও তো ৯ বছরের মেয়েকে বিয়ে করেছিল, ইংল্যান্ডের অমুক রাজাও তো ১০ বছরের মেয়ে বিয়ে করেছিল এটা যখন বলা হয় তখন সেটা ভুল। আল্লাহর রাসুলের সাথে কোন অমুসলিমের তুলনা করা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য না। ইসলামে প্রেম হারাম। কারণটা স্পষ্ট। পুরুষদেরকে চোখের হেফাজত করতে বলা হয়েছে কোন নারীর দিক তাকাতে নিষেধ করা হয়েছে কারণ একজন পুরুষ যখন কোন সুন্দরী নারীর দিক তাকাবে, তার শরীরের হরমোনাল ফাংশনগুলো তার রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেমকে উত্তেজিত করে তার মাঝে যৌন ইচ্ছা জাগায়। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) দুজন নর নারীকে একসাথে বসতে ও গোপনে মিলিত হতে নিষেধ করেছেন কারণ শয়তান তাদের মন্দকাজগুলিকে তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে দেখায় অতঃপর তাদের ব্যাভিচারের রাস্তায় পরিচালিত করে। প্রেমে পরার সাথে যৌনতা সম্পর্কিত, আবেগ সম্পর্কিত বিয়ে শাদি নয়। বিয়ে একটি ফরজ ইবাদত যার মূল উদ্দেশ্য মোটেও শুধুমাত্র যৌনতা নিবারণ নয়, তাকওয়া অর্জন। তাই বন্কিম এর প্রেমের সাথে রাসূল (সাঃ) এর আইশা (রাঃ) এর বিয়েকে তুলনা করা কোনভাবেই সঠিক না কারণ রাসূল (সাঃ) ৬ বছরের কোন মেয়ের সুন্দর চেহারা দেখে প্রেমে পরে তার বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেননি। তিনি অন্য মানুষের মত নিজ খেয়াল খুশির অনুসারী ছিলেন না। আমরা জানি কুরআন একজন সাধারণ মুসলিম পুরুষকে সর্বোচ্চ ৪টি বিয়ের অনুমতি দিয়েছিল কিন্তু রাসূল (সাঃ) ১১ অথবা ১৩ জন নারীর সাথে সংসার করেছেন কিন্তু তার এই ব্যতিক্রম ব্যাপারটি কোনভাবেই কুরানের বিপক্ষে যায়নি কারণ আমরা সুরা নিসাতেই দেখছি আল্লাহ নিজেই বলেছেন, এরপর আর অন্য কোন নারীকে বিবাহ করা আপনার জন্য বৈধ নয়। আর্থাৎ তার ৪ এর অধিক বিয়ে ছিল, সরাসরি আল্লাহর নিজেরই সিদ্ধান্ত। কিন্তু আল্লাহ যেখানে বলছেন নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে করা যাবেনা সেখানে কি আলাদাভাবে এমন কোন অনুমতির আয়াত আল্লাহ নাজিল করেছেন, যা আল্লাহর রাসূলকে বলা হচ্ছে, তবে নাবালিকা মেয়ে বিয়ে করা স্পেশালি আপনার জন্য বৈধ?? যেহেতু এমন কোন আয়াত কুরানে নেই, এমনকি এই ব্যাপারে ওহীর পরোক্ষজ্ঞান রাসুল (সাঃ) এর পক্ষ থেকে কোন হাদিস পর্যন্ত নেই- তখন তিনি যদি ৬ বছরের মেয়েকে বিয়ে করেছেন বলে ধরে নেয়া হয়, তবে তা স্পষ্টভাবে কুরানের বিপক্ষে যায়। এটার উত্তর একটাই- এই হাদিসটি মূলত ভুল। মার্কিন আইন মনুষ্যসৃষ্ট আল্লাহ কর্তৃক নিধারিত না। আপনারা কেন বারবার মনুষ্য আইন, মনুষ্য কর্মকান্ড, মনুষ্য ধ্যান-ধারণা দিয়ে ইসলামকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে আগ্রহী?? আল্লাহ কি বলেননি, তবে কি তারা আল্লাহর আইনের বিকল্প হিসেবে মনুষ্যসৃষ্ট, মূর্খতাপূর্ণ বিধি বিধান কামনা করে? ইসলামের ব্যাখ্যা আসবে কুরান, হাদিস থেকে অথবা শুধুমাত্র দীনি আলেমদের ইজমা ও কিয়াস থেকে। জাপানে গ্রোপিং নামক জঘন্য কালচারটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। অধিকাংশ স্কুল যাতায়াতকারী বাচ্চা মেয়েরা পুরুষদের দ্বারা প্রতিদিন এই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আর মজার ব্যাপার হল, জাপানী সমাজ এটাকে কোনভাবেই অপরাধ মনে করেনা। বিদেশী চাপে জাপান এর বিরুদ্ধে আইন করলেও তার প্রয়োগ নেই কারণ এটি সমাজ কর্তৃক স্বিকৃত। মনুষ্য আইন আজ বলবে, বিয়ের বয়স ১৮, কাল বলবে ২০, পরশু হয়ত ৪০। আপনি কি জানেন আমেরিকার নিউ জার্সির ল-তে অজাচার বৈধ এবং রক্ত সম্পর্কের মাঝে বিয়েও বৈধ? কাজেই মনুষ্য আইন কোন আদর্শমান হতে পারেনা, কারণ মানুষ তার খেয়াল খুশির অনুসারী। কাজেই এসব বিষয়কে কোনভাবেই উদাহরণ হিসেবে টানা যায়না।
৬১০ খ্রিস্টাব্দে রাসুল (সাঃ) ইসলাম প্রচার শুরু করেন এবং সুরা কামারের ৫৪ তম অধ্যায় নাজিল প্রসঙ্গে খোদ বুখারী শরীফের হাদিসেই আইশা (রাঃ) বলছেন, আমি তখন কিশোরী ছিলাম যা ৬১২ খ্রিস্টাব্দে নাজিল হয়। অথচ হিসাম ইবনে উরওয়া এর বর্ণনাকে হিসেবে আনলে তিনি ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। আর এমন একজন ব্যক্তির বর্ণনাকে কিভাবে সহীহ বলা সম্ভব যখন তিনি স্মৃতিশক্তির দূর্বলতা নিয়ে ৭১ বয়সে ইরাকে গমণ করে ভুলভাল হাদিস বর্ণনা করছেন?
ইসলামে বিয়েরে শর্ত হল ৩ টি
১. প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়া। ১০ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে তাকে প্রহারের কথা বলা হয়েছে। এই সময়ে মেয়েদের মাসিক শুরু হয়। কাজেই বিয়ে হতে হবে এই বয়সের পরে কারণ তখন বুঝ আসে। সুরা নিসার আয়াত পড়ুন।
২. রাসূল (সাঃ) ১৫ বছরের নীচের কাউকে যুদ্ধে নিতেন না এবং পরবর্তীতে খেলাফতের আমলেও সব গভর্নরকে এই নির্দেশনা প্রদান করা হত যে ১৫ বছরের নীচে কাউকে যেন যুদ্ধে না নেওয়া হয়। রাসূল (সাঃ) তার মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) এর বিয়ে দেন ১৫ বছর বয়সে। হাদিসের জিহাদ সংক্রান্ত অধ্যায়গুলো পড়ুন।
৩. সন্তান জন্ম দেওয়ার বয়সে পোছানো ও শারিরিক সক্ষমতা অর্জন করা।
৪. নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার অভিভাবক তার মৌখিক অনুমতি ছাড়া কোনভাবেই তার বিয়ে দেয়ার অধিকার রাখেনা, যদি এমন বিয়ে হয়েও যায় এবং সেই নারী আদালতে অভিযোগ দাখিল করে, তবে সেই বিয়ে বাতিল হয়ে যাবে। সুরা ফুরকান পড়ুন। সুরা রূম পড়ুন। কাজেই একজন ৬ বছরের শিশু কোনভাবেই বিয়ের উপযুক্ত হতে পারেনা। আর তার বাবা মাও নিজের ইচ্ছার জোড়ে, তার অনুমতি নেয়ার বয়স হয়নি এমন অনুহাতে মেয়ের বিয়ে দিতে পারেননা। এগুলো বাস্তবতা। আপনি ডানে বামে কেন যুক্তি খুঁজে চলেছেন?
ভালো লাগলো , অনেক ধন্যবাদ
জ্ঞানের পরিধি গভীর। আশা করি আগামীতে আমাদের জন্য আরো লিখবেন। আপনি এবং সাদা মেঘ , জ্ঞান যথেষ্ট, ভাল লিখেন, ময়দানে সংগঠন নেই। দাওয়াত রইলো, http://islamisomaj.org/
আমার লিখাটি খুঁজে পাচ্ছিনা। তাই আপনার লিখায় আসেনি কিন্তু আমার লিখায় ছিল এমন দু'টি পয়েন্ট দিচ্ছি - এই প্রত্যাশায় যে আপনার লিখাটিতে আরো কিছু ফ্যাক্টস্ এর সংযোজন হবে হয়তো।
রেফারেন্সঃ বোখারী ভলিউম ১, বই ৮, নং ৪৬৫, ভলিউম ৩, বই ৩৭, নং ৪৯৪, হাদীসদু'টিতে আয়েশা রাঃ বলছেন 'ওনার সাবালকত্বের বয়স হতে উনি ওনার পিতামাতাকে ইসলামের উপরেই দেখেছেন'। আর তারপর তিনি যে বিষয় তথা আবু বকর রাঃ কে তার নিজের উঠানে মসজিদ নির্মান করতে ও এ সংশ্লিষ্ট যে সব খুঁটিনাটি বিষয়ের কথা বলতে দেখছি - তা নিশ্চিত প্রমান করে - আয়েশা রাঃ আবিসিনিয়াতে প্রথম হিজরত কালীন সময়ে অলরেডি নারীতে পরিনত হয়েছিলেন।
২। রেফারেন্সঃ বোখারী ভলিউম ৭, বই ৬২, নং ১১৮, ভলিউম ৭, বই ৬২, নং ১৬৩,
আয়েশা রাঃ এর ভাগিনা উরুয়া রঃ ওনার বিয়ের বয়স নিয়ে প্রশ্ন করলে তার উত্তরে আয়েশা রাঃ সরাসরি কোন বয়স বলতে পারেন নি। আর বিয়ে কালীন ওনার বয়স বোঝাতে - তিনি বিয়ে পরবর্তি ঘটনার বর্ননা দিয়েছেন - এ হাদীস সমূহে, যা হতে যেন উরুয়া রঃ ওনার বয়স অনুমান করতে পারেন।
যদি আয়েশা রাঃ ওনার বিয়ের বয়স তথাকথিত ৬ ও ৯ এর কথা ডেফিনিটলী জানতেন - তবে অমন বর্ননার দিকে যেতেন না।
আমাদের দাদাদাদিকে তাদের বিয়ের বয়স জিজ্ঞেস করলে এমনকি আমাদের বয়সের অনেক মানুষই এক্সেক্টলী জানে না তাদের বয়স কত - সে ক্ষেত্রে আয়েশা রাঃ নিজের নিজের বয়স এ্যাক্সেক্টলী জানবেন এবং তা অমন করে একজন হাদীস বর্ননাকারীর কাছে - অবাস্তব।
বরং ঐ ৬ - ৯ বছরের বিষয়টি যে ভাবে ড্রামাটিক্যালী বোখারীতে পাই - তা বরং প্রমান করে ওটা কোন কালো হাতের কাজ।
আল্লাহ ভাল জানেন।
------------------------
পুতুল সংশ্লিষ্ট হাদীসের দ্বিতীয়টিতে আপনার মতামত, তথা রাসুলুল্লাহর সঃ মদীনার হুজরাতে পুতুল সাজিয়ে রাখা হয়েছে বলে যে মতামত দিয়েছেন - আমার তা কনফ্লিক্টিং মনে হয়। কারন আমরা হাদীস হতে এভাবে জানি যে, রাসুলুল্লাহ সঃ আয়েশা রাঃ কে বালিশের কাভার এ, অন্য জায়গায় বলা হয়েছে পর্দায় ছবি থাকায় - তা সরাতে বলেছেন কিংবা রুম এর বাহিরে চলে গিয়েছিলেন। আবার আমরা এও জানি যে ঘরে ছবি কিংবা পুতুল আছে সেখানে নামাজ না পড়তে বলা হয়েছে অথচ রাসুল সঃ ঐ ঘরে নামাজ পড়তেন।
সো পুতুল সংশ্লিষ্ট হাদীস সমূহ মক্কার সাথে ক্লিয়ারলী সংশ্লিষ্ট বলে মনে হয় - যখন রাসুল সঃ নবুওয়াতের পর সকাল বিকাল মক্কায় আবু বকরের ঘরে যেতেন - এবং বিধি বিধান তখন ও নাযিল হয় নি।
আল্লাহ ভাল জানেন।
আমেরিকার অনেক বিশ্ব বিদ্যালয়ের অ্যারোবিক এবং ইসলামী স্টাডি বিভাগের প্রধানরা ,ইহুদী এবং খৃষ্টান। যথেষ্ট পড়াশুনা রয়েছে ইসলামের উপর।
ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
This ummah needs more writers like you!
মন্তব্য করতে লগইন করুন