সুরা কাহাফ, দাজ্জাল ও গ্লোবাল ভিলেজ। ১ম পর্ব...
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ১৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:২৮:০০ দুপুর
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
#কাহাফ শব্দের অর্থ হল "পাহাড়ি গুহা" আর সুরা কাহাফ গুহাবাসী ৭ যুবকসহ মোট চারটি চমৎকার গল্পের সংমিশ্রণ। মানুষের স্বাভাবজাত বৈশিষ্ট হল তারা গল্প শুনতে ভালবাসে কারণ গল্পের মাঝে থাকে মানুষের জন্য সুন্দর সুন্দর শিক্ষা ও সঠিক দিকনির্দেশনা। ছোট বাচ্চাদের আমরা গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াই আর মুখে খাবার তুলে দিই। স্কুলে বাচ্চাদের গল্পের বই পড়ানোর মাধ্যমে ভাষার জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো হয় এবং নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া হয়। শিক্ষকরা অনেক কঠিন বিষয় আলোচনার সময় গল্পের দ্বারা রূপক অর্থ প্রকাশ করে ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ ফীরিয়ে আনেন, কঠিন ব্যাপারগুলিকে গল্পের ছলে ছলে খুব সহজভাবে বুঝিয়ে দেন। সুরা কাহাফ হল মানব সৃষ্টিকর্তা ও সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক মহান আল্লাহ কর্তৃক উপস্হাপিত মানুষের জন্য চমৎকার চারটি গল্পের উপমা, যেন তারা এর দ্বারা ভয়ানক ও কঠিন এক বাস্তবতাকে চোখ দিয়ে দেখতে, কান দিয়ে শ্রবণ করতে, মস্তিষ্ক দিয়ে ভাবতে ও হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় এবং তা থেকে বাস্তব শিক্ষা নিয়ে নিজেদের কর্মপন্হা ঠিক করে। আর পৌছাতে পারে সবচেয়ে পবিত্রতম স্হানে, আল ফিরদাউস, আল আ'লায়।
#সুরা কাহাফ ৪টি গল্পে বিভক্ত-
১. গুহায় আশ্রয় নেয়া ৭ যুবক ও এক উত্তম কুকুর।
২. কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞ দুজন কৃষক।
৩. নবী মুসা (আঃ) ও রহস্যময় মানব খিজির (আঃ)
৪. পরাক্রমশালী ন্যায়নিষ্ঠ বাদশাহ যুলকারনাইন ও কলুষিত ইয়াজুজ এবং মাজুজ মানব সম্প্রদায়।
#আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, সুরা কাহাফ হল দাজ্জালকে চিনতে পারার প্রধান হাতিয়ার। দাজ্জালের ব্যাপারে ধারণা নেয়ার জন্য এর ১ম ১০ টি আয়াত অথবা শেষের ১০ টি আয়াত পাঠ করার ব্যাপারে হাদিসের দুটি বর্ণনাই বিশুদ্ধ।
#দাজ্জাল হবে এক একচোখ কানা ইহুদি যুবক, যার কপালে কাফির লেখা থাকবে এবং মুমিনরা তা পড়তে পারবে। অর্থাৎ- তার কিছু দৃশ্যমান শারিরিক বৈশিষ্ট দেখে খুব সহজেই মুসলিমরা তাকে চিনে ফেলতে পারবে, এটাই আমাদের স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধিতে আসে।
##তাহলে প্রথম প্রশ্ন: যাকে তার কিছু শারিরিক স্পষ্ট নিদর্শন বা বৈশিষ্ট দেখে খুব সহজেই চিনে ফেলা যায়, তাকে চিনতে পারার জন্য আবারো সুরা কাহাফ পড়ার প্রয়োজনীয়তা কি???
##এটাও কি বিস্ময়কর না যে, এমন একটি সুরা যেখানে ৪ টি গল্পের কোথাও দাজ্জালের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আলোচনা করা হয়নি, তার নাম উচ্চারণ হয়নি অথচ সেই ৪টি গল্প দিয়ে দাজ্জালকে চেনা যাবে?? এর সাথে দাজ্জালের সম্পর্ক কি?
অর্থাৎ, দাজ্জাল নামক ব্যাপারটার গভীরতা আর সাধারণ বিচার বুদ্ধি দিয়ে সমাধান করে ফেলা যাচ্ছেনা। রাসূল (সাঃ) এর পরবর্তী বক্তব্যগুলো আমাদের আরো চিন্তা করতে বাধ্য করছে। যেমন-
#আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন যে, এমন কোন নবী প্রেরিত হননি যিনি তার উম্মতকে এই কানা মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, সে কিন্তু কানা, আর তোমাদের রব কানা নন। আর তার দুই চোখের মাঝখানে কাফের শব্দটি লিপিবদ্ধ থাকবে।
##কেউ যদি আইফোন এর সাথে আইফোন স্রষ্টা স্টিভ জবস এর তুলনা করে, তবে সেটা হাস্যকর। কারণ সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তা উভয় কোনভাবেই সমান হতে পারেনা। একইভাবে দাজ্জাল নিঃসন্দেহে আমাদের মত একজন মানুষ আর একজন মানুষের সাথে কোনভাবেই আল্লাহর তুলনা চলেনা কারণ একজন স্রষ্টা, অন্যজন সৃষ্টি, উভয়ে কখনো সমান না। অথচ আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সেই তুলনাই করছেন!! আর প্রত্যেকে নবী-রাসূল তাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন, কিন্তু কেন?
#উত্তর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) নিজেই দিয়েছেন, কিয়ামতের আগ পর্যন্ত মহান আল্লাহ পৃথিবীতে যতগুলো ভয়ানক, মারাত্নক ফিৎনা উন্মুক্ত করে দিবেন, তার মাঝে সবচাইতে বড় ও ধ্বংসাত্নক হল দাজ্জালের ফিৎনা। আর এত কিছু বলার পরেও আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আফসোস করে বিমর্ষচিত্তে সাহাবীদের বলছিলেন, শোন, এরপরেও তোমরা দাজ্জালকে চিনতে পারবেনা, তোমাদের কেউ যদি তার ব্যাপারে শ্রবণ করে তবে সে যেন তার থেকে দূরে সরে যায় কেননা তোমাদের মাঝে যারা তার সাক্ষাৎ পাবে, তারা তাকে সঠিকপথে প্রতিষ্ঠিত বলে বিশ্বাস করবে এবং তার অনুসারী হয়ে যাবে, বিশেষ করে নারীরা হবে এক্ষেত্রে অগ্রগামী। তার আসার নিদর্শন হল- মসজিদের মিম্বর থেকে তার ব্যাপারে আলোচনা হারিয়ে যাবে, তোমাদের আলেমরা আর তাকে নিয়ে কথা বলবেনা।
#দাজ্জাল ফেৎনার পাজল ও সচিত্র সমাধান সুরা কাহাফ
অর্থাৎ- কপালে কাফির লেখা কানা যুবক ইহুদি দাজ্জাল সম্পর্কে আমরা সাধারণ বিচার বুদ্ধি দিয়ে যেই সাধারণ চরিত্র আঁকি, সেটা মোটেও তার বাস্তব রূপ বা প্রকৃত অবস্হান না, যা তাকে স্রষ্টার কাতারে নিয়ে যেতে পারে!! আর আমরাও তাকে এত সহজে চিনতে পারবোনা। সে এক গোলকধাঁধাঁ বা ফেৎনার পাজল। আর কাহাফ- ই হল সেই সুরা যা এই দাজ্জাল ফেৎনা পাজলের সচিত্র সমাধান। প্রতি জুমআর দিন এজন্যই সুরা কাহাফ নিয়ে বসতে বলা হয়েছে।
আসুন আমরা সুরা কাহাফে উল্লেখিত ৪টি গল্পের গভীরে প্রবেশ করি।
৭জন গুহাবাসী যুবক ও এক পাহাড়াদার উত্তম কুকুর:
সুরা কাহাফ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সেই ৭জন দূর্বল মুমিন যুবকদের কথা, যাদের কোন সক্ষমতাই ছিলনা নিজেদের প্রতাপশালী আল্লাহদ্রোহী জাতির বিরুদ্ধে নিজেদের ঈমান নিয়ে দাড়াবার। কারণ তাদের জাতি নিজেদের প্রবর্তিত শিরকি ব্যবস্হার বিপরীতে এসব যুবকের আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কথা জানতে পারলে তাদের বাধ্য করত ঈমান ত্যাগ করে তাদের প্রবর্তিত সামাজিক ব্যবস্হা মেনে নিতে, আল্লাহর সাথে শির্ক করতে, মূর্তির পায়ে মাথা নত করতে- যদি তারা অমান্য করত এই রাষ্ঠ্রীয় আদেশ, তবে জনসম্মুখে পাথরছুড়ে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হত। তাই যৌবন ও আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকার পরেও ঈমান বাঁচাতে, জীবন বাঁচাতে তারা কাছের মানুষ, শহরের উন্নত জীবন-জীবিকা, এর বিলাসীতা-আরাম-আয়েশ, সুযোগ-সুবিধা ও সমস্ত মায়া-মমতা ছেড়ে শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে দুর্গম এক পাহাড়ি গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করে। এই জীবন ছিল চরম অনিশ্চয়তায় ভরপুর। স্বাভাবিক মানবদৃষ্টিতে কম্পিউটারের সামনে বসে তাদের এই সিদ্ধান্তকে আমাদের কাছে নিছক বোকার মতই কাজ মনে হয়!! কারণ শারিরিক ও আর্থিক সক্ষমতা থাকার পরেও শুধুমাত্র ঈমান বাঁচানোর জন্য, শিরক থেকে মুক্তির জন্য শহর জীবনের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা, আরাম-আয়েশ, জীবন-জীবিকা ইত্যাদি ত্যাগ করে নির্জন পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়া যথেষ্ট বোকামিই বটে!! তারা ইচ্ছা করলে হয়ত তাদের সম্প্রদায়ের সাথে আপোস মিমাংসা করে এই সমস্যা এড়াতেও পারত। এই অল্পবয়সী আবেগী যুবকেরা খাবার, পানিয়, কাপড়, বাসস্হান, চিকিৎসা ইত্যাদি ছাড়া এক দুর্গম পাহাড়ি গুহায় কতদিন বেঁচে থাকতে পারবে, শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে? কুরআনের ভাষায়:-
আমাদেরই এই স্বজাতিগণ, তাহার পরিবর্তে বহু ইলাহ (উপাসক) গ্রহণ করেছে। এরা এই সমস্ত উপাস্য সম্পর্কে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্হিত করেনা কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে?
তোমরা যখন বিচ্ছিন্ন হলে তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের উপাসনা করে তাদের থেকে, তাহলে তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর। তোমাদের প্রতিপালক (আল্লাহ) তোমাদের জন্য তার দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজমর্ককে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্হা করে দিবেন। (সুরা কাহাফ:১৮- আয়াত: ১৫-১৬)
কৃতজ্ঞ কৃষক ও অকৃতজ্ঞ ধনী কৃষক
(হে নবী!) তুমি তাদের নিকট উপস্হাপন কর দুজন ব্যক্তির উপমা: তাদের একজন কে আমি দিয়েছিলাম দুটি আঙ্গুরের বাগান এবং আমি এই দুটি (বাগানকে) খেজুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্ঠিত করেছিলাম এবং এই দুইয়ের মধ্যবর্তী স্হানকে করেছিলাম শস্যক্ষেত্র।
উভয় উদ্যানই ফলদান করত এবং তাতে কোন ত্রুটি করত না আর উভয়ের মাঝে আমি প্রবাহিত করেছিলাম ঝর্ণাধারা।
এবং তার প্রচুর ধনসম্পদ ছিল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সে তার বন্ধুকে বলল, ধনসম্পদে আমি তোমার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং জনবলে তোমার থেকে অধিক শক্তিশালী।
এইভাবে নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার উদ্যানে প্রবেশ করল। সে বলল, আমি মনে করিনা যে, এসব কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে।
আমি মনে করিনা যে কিয়ামত হবে; (কিন্তু যদি কিয়ামত হয় )আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হই, তবে আমি তো নিশ্চয়ই এটা (আমার সম্পদ) অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্হান পাবো।
জবাবে তার বন্ধু বলল, তুমি কি তাকে (আল্লাহকে) অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি ও পরে শুক্রবিন্দু হতে তারপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মানব আকৃতিতে?
সেই আল্লাহই আমার প্রতিপালক, আমি কাউকে আমার প্রতিপালকের শরীক করিনা। (৩২-৩৮)
ধ্বংস তার ফল-ফসলকে ঘীরে ফেলল আর সে তাতে যা খরচ করেছিল তার জন্য আক্ষেপ করতে লাগল যখন তা ছিন্ন ভিন্ন অবস্হায় ভূমিসাৎ (মাটিতে মিশে যাওয়া) হয়ে গিয়েছিল। সে বলতে লাগল, হায়! আমি যদি কাউকেই আমার প্রতিপালকের শরীক না করতাম!
আর আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোন লোকজন ছিলনা এবং সে নিজেও এর প্রতিকার করতে পারল না।
এক্ষেত্রে কর্তৃত্ব আল্লাহরই, যিনি সত্য। পুরষ্কার দানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ।( ৪২-৪৪)
মুসা (আঃ) ও রহস্যময় মানব খিজির (আঃ)
স্মরণ করুন, সেই ব্যক্তির কথা যাকে পবিত্র কুরআন খিজির (আঃ) বলে উল্লেখ করেছে। মহান আল্লাহ মূসা (আঃ) কে তার এক মনোনিত বান্দা খিজির (আঃ) এর ব্যাপারে অবগত করেন এবং জানালেন, সে আমার অনুগত, সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং তোমার চাইতে অনেক বেশি জ্ঞানী। দুই সমূদ্রের মিলনস্হলে তার সাথে সাক্ষাৎ কর। কুরআনের ভাষায়:-
অতঃপর তারা { মূসা (আঃ) ও তার সাথীরা) সাক্ষাৎ পেল আমার বান্দাদের মাঝে একজনের (খিজির), যাকে আমি আমার নিকট হতে আনুগ্রহ দান করেছিলাম এবং আমার নিকট হতে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।
মূসা তাকে বলল, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা হতে আমাকে শিক্ষা দিবেন, এই শর্তে আমি কি আপনাকে অনুসরণ করতে পারি?
সে বলল, আপনি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না, যেই বিষয়ের জ্ঞান আপনার আয়ত্তের মাঝে নেই সে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করবেন কিভাবে?
মূসা বলল, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করবোনা (সূরা কাহাফ: ১৮:৬৫-৬৯)
কিন্তু ঘটনাক্রমে আমরা সত্যিই দেখলাম মূসা (আঃ) অহীপ্রাপ্ত হবার পরেও, আল্লাহর মনোনিত নবী হয়েও তিনি তার অহীর জ্ঞান দিয়ে খিজির (আঃ) এর কাজকর্মের রহস্য উৎঘাটনে ব্যর্থ হচ্ছিলেন এবং তার কাজে প্রতিবারই আপত্তি জানাচ্ছিলেন!! অর্থাৎ খিজির (আঃ) এর অনুমান সত্যি হল, যে ব্যাপারে তিনি সতর্ক করেছিলেন। অবশেষে খিজির (আঃ) মুখ খুললেন এবং একে একে প্রতিটি ঘটনার সন্তোষজনক জবাব দিলেন, প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন করলেন ফলাফলে মুসা (আঃ) তাকে প্রকৃত অর্থেই সত্যের উপর পরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত ও তার সামনে নিজের জ্ঞানকে বিশাল সমূদ্রের মাঝে এক ফোটা জল হিসেবেই পেলেন অথচ তিনি নবী ছিলেন অহীপ্রাপ্ত!
যুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজ:
তারা তোমাকে যুরকারনাইন সম্পর্কে জিঙ্গাসা করছে, বল (কুরাইশদেরকে), আমি তোমাদের কাছে তার বিষয় বর্ণনা করবো।
আমি তো তাকে (যুলকারনাইন) পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম (অর্থাৎ তার বিপুল পরিমাণ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবণ ক্ষমতা ছিল)। (৮৩-৮৪)
কিন্তু পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তরের সমস্ত মানবসভ্যতার উপর কর্তৃত্ব, বিশাল সেনাবাহিনী, প্রযুক্তিজ্ঞান ও উদ্ভাবন ক্ষমতা- এত শক্তিমত্তার অধিকারী হয়েও তিনি কোন মানবগোষ্ঠীর উপর জুলুম করেননি- তার কথা ছিল একটাই:-
যে কেউ সীমালংঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দিব, অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে, এবং তিনি তাকে শাস্তি দিবেন।
তবে যে ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তার জন্য (আমার পক্ষ থেকে) পুরস্কারস্বরূপ আছে কল্যাণ (তাকে আমি বহুগুণ বাড়িয়ে পুরস্কার দিব) এবং তার সাথে আমি নম্রভাবে কথা বলব ও ব্যবহারে হব কোমল।( আয়াত: -৮৭-৮৮)
পবিত্র কুরআন তার ৩ টি যাত্রার বর্ণনা দিয়েছে। প্রথম যাত্রাটি ছিল পশ্চিমে। সূর্য ডোবার মুহূর্তে তিনি কালো, অস্বচ্ছ, ঘোলা পানির জলাশয়ের তীরে হাজির হন এবং এর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপরদিক যাত্রা শুরু করেন অর্থাৎ পূর্বে। পূর্বদিকে চলতে চলতে সূর্য উদয়কালে তিনি বাঁধাপ্রাপ্ত হন আরেকটি সাগরতীরে। এবার তিনি যাত্রা শুরু করেন উত্তরে এবং হাজির হন এক পাহাড়ি উপত্যকায় এবং চলতে চলতে দুই পাহাড়ের গীরিপথে এসে থামেন। সন্ধান পান সেখানে বসবাসকারী ক্ষুদ্র এক জনপদের। যারা তার কথা বুঝতে পারছিল না এবং তিনিও কোনভাবে তাদের ভাষা বুঝতে পারছিলেন না। অর্থাৎ তার সেনাবাহিনীর অধীনস্ত দোভাষীরাও এই ভাষা জানতোনা। এরা ছিল এমন এক পাহাড়ি উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা সভ্য মানব জগত থেকে এত দূরে ছিল যে, শিক্ষাদীক্ষা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান, সভ্যতার আলো কোন কিছুই তাদের মাঝে প্রবেশ করেনি। প্রকৃতির উপর নির্ভর করে আদিম পদ্ধতিতে তারা জীবনযাপন করত। অবশেষে যুলকারনাইন তাদের সাথে কথা বলতে সক্ষম হলেন, কারণ আল্লাহ তাকে নানান উপায় উপকরণ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান দান করেছিলেন। যুলকারনাইন ইচ্ছা করলে এদের অসভ্য, জংলি হিসেবে চিহ্নিত করে হত্যা ও বন্দী করে দাসে পরিণত করতে পারতেন কিন্তু তিনি এই জাতির প্রতি পরম ভালবাসা ও সহানুভূতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্হাপন করলেন। এজন্য তারাও তাকে আপন করে নিল। তারা যখন দেখল তিনি বিশাল সেনাবাহিনীর অধিনায়ক, তার প্রযুক্তিজ্ঞান ও উদ্ভাবন কৌশল অসামান্য, তখন তারা তার কাছে নিজেদের কষ্টের ব্যাপারে অভিযোগ করল।
হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ মাজুজ তো জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করছে। আমরা কি আপনাকে অর্থ দিব (এই শর্তে) যে, আপনি আমাদের ও তাদের মাঝে এক প্রাচীর গড়ে দিবেন? (আয়াত: ৯৪)
সে বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে এই বিষয়ে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তাই উৎকৃষ্ট (আমার অর্থের কি দরকার?) সুতরাং তোমরা আমাকে (তোমাদের) শ্রম দ্বারা সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের (ইয়াজুজ মাজুজ) মাঝে এক মযবুত প্রাচীর নির্মাণ করে দিব।
তোমরা আমার নিকট লোহার পাতসমূহ নিয়ে আস। অবশেষে (দুই পাহাড়ের) মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে যখন তা দুই পাহাড়ের সমান হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই।
অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতে ও সক্ষম হল না।
যুলকারনাইন বললেনঃ এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য।
সেইদিন আমি তাদের ছেড়ে দিব এই অবস্হায় যে, একদল আরেকদলের উপর তরঙ্গের ন্যায় পতিত হবে এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে আনব।( ৯৪-৯৯)
প্রথম পর্বের সমাপ্তি।
ইনশাআল্লাহ! পরের পোস্টেই সম্পূর্ণ শেষ করব কারণ লেখা বড় করে পাঠকদের বিরক্তি বাড়াতে চাইনা।
জাঝাক আল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম।
বিষয়: বিবিধ
৩২২১ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিক্ষণীয় একটি বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপিত করার জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান।
অনেক ভাল লাগলো।
ইজরাঈলের প্রতিষ্ঠা হবে মদিনার অমঙ্গলের কারণ। যখন ইজরাঈলের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে মদিনা তখন গুরুত্বপূর্ণ হীন হয়ে পরবে, তার আর কোন গুরুত্ব থাকবেনা। যখন মদিনার এমন হাল দেখা দিবে তখন মালহামা বা মহাযুদ্ধ শুরু হবে আর মালহামা শুরু হলে তুরষ্ক মুসলিমদের হাতছাড়া হয়ে যাবে, আর সিরিয়ায় শুরু হবে এমন ভয়ানক যুদ্ধ যে যুদ্ধে প্রতি ১০০ জন মুসলিমের ৯৯ জনই মৃত্যুবরণ করবে। কিন্তু মুসলিম সেনাবাহিনী তুরষ্ক পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হলে দাজ্জাল রাগে মানবরূপে বের হয়ে আসবে যার কেন্দ্রভূমিই হল ইজরাঈল কিন্তু ইসা (আঃ) এর হাতে দাজ্জাল নিহত হলে ইয়াজুজ মাজুজ ইজরাঈলের নিয়ন্ত্রণ নিবে কিন্তু তারা সফল হবেনা আল্লাহ তাদের ধ্বংস করবেন। কাজেই ট্রাম্পেরা আসমানী ভবিষ্যৎবাণীগুলো বাস্তবায়নের কুশিলব হিসেবেই কাজ করছে আর এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে মূলত ইয়াজুজ মাজুজই। কারণ তারা চায় আল্লাহর আইনের বিপরীতে নিজস্ব আইন দিয়ে পুরো পুরো গ্লোবাল ভিলেজকে এক করে ইসরাঈলে বসে তা শাসন করতে যার নেতৃত্ব দিবে দাজ্জাল।
আপনার প্রশ্নটি আম জনতার কাছে সত্যিই মজাদার ও হাসির খোরাক সৃষ্টি করবে। কিন্তু ইয়াজুজ ও মাজুজ নামক ''ফ্যাসাদ করনে ওয়ালারা'' হাঁসার মত কোন কিছু না। কারন বোখারীর হাদীস অনুযায়ী এরা মানব জাতির, আদম সন্তানের প্রতি ১০০০ এ ৯৯৯ কে আদম আঃ এর হাতে দোযখে ফেলা নিশ্চিত করবে।
আমার মনে হয় আমরা যদি প্রশ্নটি এভাবে করতে পারি, ''আমি কি ইয়াজুজ ও মাজুজে পরিনত হয়েছি কিনা''? তাহলে হয়তো দোযখের আগুন হতে বাঁচার নিমিত্তে কিছু কাজ করবার করতে পারি, নিজের রাশ টেনে ধরতে পারি।
কারন ইয়াজুজ ও মাজুজের অন্যতম কাজ হল ফ্যাসাদ করা - যার মিনিং করা হয় স্রষ্টার ''সৃষ্টি'' কে করাপ্ট করা; মানে আম জনতার সামনে সৃষ্টি ও স্রষ্টার ব্যাপারে কনফিউশান সৃষ্টি করা। কয়েকটা উদাহরন দিচ্ছি আপনার চিন্তা করার জন্য ও আলোচনাটির গভীরে যাবার জন্য।
১। কিছু মানুষকে ঠিক কি কারনে স্রষ্টার সৃষ্ট নারীকে হরমোন চেইন্জ করে পুরুষ বানাতে হবে দাড়ি গজাতে হবে এবং ইউরো ভিশন এ ফার্স্ট বানাতে হবে। একইভাবে কেন পুরুষকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে নারী বানাতে হবে এবং সে পুরুষের পেটে কেন বাচ্চা পয়দা করাতেই হবে?
২। কেন স্রষ্টার সৃষ্ট ''জীবন'' ও ''মৃত্যু''র পরিবর্তে ''ক্লিনিক্যালী ডেড'' নামক আর একটি টার্ম কিংবা ''লাইফ সাপোর্ট'' নামক টার্ম মানুষের মধ্যে স্টাবলিশ করতে হবে - যাতে আমার মত সাধারন মানুষ নিজের চোখে দেখতে পাই রোগীটির জীবন ও মৃত্যু মূলতঃ ডাক্তার ব্যাটার হাতে?
৩। কেন আপেল ও কুল কে এক করে নতুন আর একটি ফল ''আপেল কুল'' বানাতেই হবে - যাতে করে আমার ছেলে বলতে পারে আপেল আর কুল ঐ দুটো ফল আল্লাহ বানালেও আপেল কুল বানিয়েছে বাকৃবি?
৪। আল্লাহ নিশ্চিত করেছে মানুষ শাষিত হবে তার স্রষ্টার কিংবা রবের আইন দ্বারা এবং তা হয়ে ও আসছিল। কিন্তু ঠিক কি কারনে আমি আপনি আমরা এখন শেখ হাসিনার আইন দ্বারা শাসিত হয়ে মনে করছি ''কোত্থাও এতে কোন সমস্যা হচ্ছে না'' অথচ নিজেদের বলছি মুসলমান কিন্তু আল্লাহ সেই আমাদের বলছেন না যদি তোমরা আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কারো আইন দ্বারা শাসন কর, বিচার কর কিংবা অন্যভাবে বললে মেনে নাও, নতি স্বীকার কর সে আইনে, এ্যাগ্রি কর, সাপোর্ট কর তবে তোমরা কাফের, ফাসেক, জালেম।
সো এমনতর হাজারো ফ্যাসাদ যেখানে আপনার আমার চারপাশে বর্তমান - তখন ঠিক কি কারনে আমরা শিওর হব যে ইয়াজুজ ও মাজুজ আপনার ও আমার চারপাশে এসে যায় নি কিংবা আমি বা আপনি ইয়াজুজ ও মাজুজ এ পরিনত হই নি?
এটা কি সত্য নয় যে শয়তান জিন ছাড়াও মানুষ হতে পারে শয়তানের কারেকটার নিজের মধ্যে ধারন করলে, তবে আমি কিংবা আপনি ইয়াজুজ ও মাজুজের কারেকটার ধারন করলে আল্লাহ কেন আমাকে কিংবা আপনাকেও ইয়াজুজ মাজুজ কাউন্ট করবেন না; ইন এডিশান টু জুলকারনাইনের আঃ দেয়ালের ওপারের চোখ ছোট ভাবলেশহীন ইয়াজুজ মাজুজের বাহিরে?
ধণ্যবাদ।
পিলাচ
পিলাচ
পিলাচ
একই চিন্তাধারা লোক গুলো নিয়ে ময়দানে একটা দল থাকা দরকার আপু। আপনার চিন্তাধারা নিয়ে ইসলামী সমাজ কাজ করে যাচ্ছে। ওনাদের মহিলা সংগঠন রয়েছেন।
ধন্যবাদ আপনাকে
দুটি বিষয় আপনার নজরে আনতে চাইছিলাম ফারদার চিন্তা ভাবনা করার জন্য।
১। কোথাও দাজ্জালের ডান চোখ, আবার কোথাও বাম চোখ আবার কোথাও উভয় চোখ অন্ধের কথা বলা আছে। কোথাও তাকে বেঁটে, কোকড়া চুল (মূলতঃ অনুবাদটি জুলফিযুক্ত চুল হবে হয়তো) এর বলা হলেও অন্যত্র বলা হয়েছে সে দীর্ঘদেহী আবার অন্যত্র বলা হয়েছে সাগরের পানি তার হাটু কিংবা টাকনুর সমান, পৃথিবীতে দাজ্জাল এর অবস্থান সম্পর্কে বলা হয়েছে ৪০ দিন (কাবা তৈরী হতে এবং সলোমন টেম্পলের প্রতিষ্ঠা পার্থক্য হিসাবে বলা হয়েছে ৪০ বছর - অথচ তা প্রায় ২৫০০ বছর প্লাস মাইনাস) যেখানে তার দিন কিংবা পেইজ ১ কে বলা হয়েছে মানুষের বছরের ন্যায়, পেইজ ২ কে বলা হয়েছে মাসের ন্যায় ----- ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি - এর আলোকে কি এভাবে কনক্লুশান ড্র করা যায় কিনা, একটা নির্দিষ্ট সময়কাল অবধি দাজ্জাল একটা ''ফোর্স'' ''ট্রেন্ড'' ''ইনভিজিবল'' ফর্মে মানুষকে ফিতনায় ফেলবে আর তা ১ দিন ইক্যুয়াল টু সপ্তাহ পেইজ এর পর; যখন আমাদের দিনের মত দিনে প্রবেশ করবে তখন সে নিজেকে জেরুজালেম এ আবিষ্কার করবে এবং নিজেকে মসীহ ক্লেইম করে মানুষের আকৃতি নিবে কিংবা ইনভিজিবল হতে ভিজিবল হবে এবং তার বর্ননা রাসুলুল্লাহ সঃ করেছেন মসীহ উদ দাজ্জাল এ? কি কি কারনে এমন ভাবনা টা ভুল হতে পারে কিংবা কনফিউজিং হতে পারে? কিংবা অন্যভাবে বললে সে ভাবনা কতটা হাদীস সমূহের সাথে কনফর্ম হবে আর না ভাবলে কতটা হবে?
২। আপনি বলেছেন আদম আঃ হতে সকল নবী রাসুল আঃ দাজ্জাল নিয়ে বলেছেন, আমার মনে পড়ছে তা সম্ভবতঃ নূহ আঃ হতে সকল নবী রাসুল হবে। যদি একটু ভ্যারিফাই করেন। এটা এ জন্য ইমপর্ট্যান্ট বোখারীতে যে চারটা হাদীসে রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন প্রতি ১০০০ এ ৯৯৯ জন দোযখ এ যাবে সেখানে ইয়াজুজ মাজুজ এর সাথে ট্যাগ করা হয়েছে আদম আঃ কে আর দাজ্জালের সাথে নূহ আঃ কে করার সম্ভবতঃ অন্য কোন মিনিং হবে। সো তাতে হয়তো কনটামিনেশান হতে রাসুলের হাদীস কে রক্ষা করতে পারবো এবং এর মাধ্যমে কেউ কোন একটা ক্লু পেতে পারেন আগামীতে।
ধন্যবাদ - কঠিন বিষয়ে লিখার জন্য - অথচ উম্মাহ র জন্য দরকার এ বিষয় সমূহ উন্মোচিত হওয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন