সূরা কাহাফ ও আধুনিক বিশ্ব- ইয়াজুজ মাজুজ ও আমাদের হৃদয়ের অন্ধত্ব।
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ০৬ জুন, ২০১৬, ১১:৫৭:৪৭ রাত
তোমাদের পালনকর্তার নিকট হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ অবশ্যই এসে গেছে। সুতরাং যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেরই উপকার করবে, এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের সংরক্ষক/পাহারাদার নই। (সূরা আনআম: ৬:১০৪)
পবিত্র কুরআন ও অহীর দ্বারা মহান আল্লাহ পৃথিবী ও পৃথিবীবাসীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎের প্রতিটি গোলকধাঁধাই প্রকাশ করে দিয়েছেন আর কোন কিছুই অপ্রকাশ্য নেই। অথচ আমাদের মাঝে পবিত্র কুরআন, সমস্ত বিশুদ্ধ হাদিসগুলি বিদ্যমান থাকার পরেও আমাদের চোখ আজ সত্য প্রত্যক্ষে ব্যর্থ, মস্তিষ্ক বাস্তবতার ব্যাপারে চিন্তা করতে অক্ষম এবং হৃদয় প্রকৃত রহস্য বোধগম্যে অপারগ, শ্রবণশক্তির মাঝে কোন সাবধান বাণীর শব্দই পৌছায় না, মোটকথা ''আমরা বিভ্রান্ত''!! এর প্রকৃত কারণ কি?
স্মরণ করুন, সেই ব্যক্তির কথা যাকে পবিত্র কুরআন খিজির (আঃ) বলে উল্লেখ করেছে। মহান আল্লাহ মূসা (আঃ) কে তার এক মনোনিত বান্দা খিজির (আঃ) এর ব্যাপারে অবগত করেন এবং জানালেন, সে আমার অনুগত, সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং তোমার চাইতে অনেক বেশি জ্ঞানী দুই সমূদ্রের মিলনস্হলে তার সাথে সাক্ষাৎ কর। কুরআনের ভাষায়:-
অতঃপর তারা { মূসা (আঃ) ও তার সাথীরা) সাক্ষাৎ পেল আমার বান্দাদের মাঝে একজনের (খিজির), যাকে আমি আমার নিকট হতে আনুগ্রহ দান করেছিলাম এবং আমার নিকট হতে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।
মূসা তাকে বলল, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা হতে আমাকে শিক্ষা দিবেন, এই শর্তে আমি কি আপনাকে অনুসরণ করতে পারি?
সে বলল, আপনি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না, যেই বিষয়ের জ্ঞান আপনার আয়ত্তের মাঝে নেই সে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করবেন কিভাবে?
মূসা বলল, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করবোনা (সূরা কাহাফ: ১৮:৬৫-৬৯)
কিন্তু ঘটনাক্রমে আমরা সত্যিই দেখলাম মূসা (আঃ) অহীপ্রাপ্ত হবার পরেও, আল্লাহর মনোনিত নবী হয়েও তিনি তার অহীর জ্ঞান দিয়ে খিজির (আঃ) এর কাজকর্মের রহস্য উৎঘাটনে ব্যর্থ হচ্ছিলেন এবং তার কাজে বারবার আপত্তি জানাচ্ছিলেন!! খিজির (আঃ) এর উক্তি সত্য হল আর অবশেষে খিজির (আঃ) মুখ খুললেন এবং প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন করলেন ফলাফলে, মুসা (আঃ) তাকে প্রকৃতঅর্থেই সত্যের উপর পরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত ও তার সামনে নিজের জ্ঞানকে বিশাল সমূদ্রের মাঝে এক ফোটা জল হিসেবেই পেলেন।
কাহাফ এমন এক সূরা যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সেসব গুটিকয়েক দূর্বল মুমিন যুবকদের কথা, যাদের কোন সক্ষমতাই ছিলনা নিজেদের প্রতাপশালী আল্লাহদ্রোহী জাতির বিরুদ্ধে নিজেদের ঈমান নিয়ে দাড়াবার। কারণ তাদের জাতি নিজেদের প্রবর্তিত ব্যবস্হার বিপরীতে এসব যুবকের আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কথা জানতে পারলে তাদের বাধ্য করত ঈমান ত্যাগ করে তাদের প্রবর্তিত সামাজিক ব্যবস্হা মেনে নিতে, আল্লাহর সাথে শিরক করতে- যদি তারা অমান্য করত এই রাষ্ঠ্রীয় আদেশ- তবে জনসম্মুখে পাথরছুড়ে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হত। (সূরা কাহাফ: আয়াত ২০) তাই যৌবন ও আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকার পরেও ঈমান বাঁচাতে, জীবন বাঁচাতে তারা কাছের মানুষ, শহরের উন্নত জীবন-জীবিকা, এর বিলাসীতা-আরাম-আয়েশ, সুযোগ-সুবিধা ও সমস্ত মায়া-মমতা ছেড়ে দুর্গম এক পাহাড়ি গুহায় আশ্রয় নেয়। (মহান আল্লাহই তাদের মনে এই বাসনা জাগ্রত করে দেন- ১৬ নাম্বার আয়াত) এই জীবন ছিল অনিশ্চিত ও অজানা। হয়ত স্বাভাবিক মানবদৃষ্টিতে কম্পিউটারের সামনে বসে তাদের এই সিদ্ধান্তকে আমাদের কাছে নিছক বোকার মতই কাজ মনে হয়!! কারণ শারিরিক ও আর্থিক সক্ষমতা থাকার পরেও শুধুমাত্র ঈমান বাঁচানোর জন্য, শিরক থেকে মুক্তির জন্য শহর জীবনের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা, আরাম-আয়েশ, জীবন-জীবিকা ইত্যাদি ত্যাগ করে নির্জন পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়া যথেষ্ট বোকামিই বটে, হয়ত অল্প বয়সী যুবকদের ছেলেমানুষী বলেই প্রতীয়মান হয়!! আমাদের যুক্তিতে এটাই আসে- ''খাবার, পানিয়, কাপড়, বাসস্হান, চিকিৎসা ইত্যাদি ছাড়া এক দুর্গম পাহাড়ি গুহায় তারা কতদিন বেঁচে থাকতে পারবে?''
তাহলে শুনুন, সম্ভবত আপনারা আবারো মূসা (আঃ) এর মতই ব্যর্থ হচ্ছেন সত্য অনুধাবনে যা এই যুবকেরা দেখতে, শুনতে, চিন্তা করতে ও বুঝতে সক্ষম। তাদের শক্তি ছিল ঈমান, তাদের গন্তব্য ছিল জান্নাত, তাদের অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক ছিলেন মহান আল্লাহ।
তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও রাকিমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মাঝে বিস্ময়কর?
যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ হতে আমাদের অনুগ্রহ দান কর, এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্হা কর। (সূরা কাহাফ, আয়াত: ৯-১০)
সূরা কাহাফ আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় চরম ক্ষমতাধর ন্যায়পরায়ণ মুমিন শাসক যুলকারনাইন ও একইসাথে চরম কলুষিত, অভিশপ্ত মানব সম্প্রদায় ইয়াজুজ মাজুজের সাথে। সূরা কাহাফের ৮৩ থেকে ১০২ নাম্বার পর্যন্ত কুরআনের আয়াত আমাদের নিয়ে যায় তার আরো কাছাকাছি। যেই ইতিহাস অধিকাংশ মানব সম্প্রদায়ের কাছে ছিল অজানা আর গ্রীক, পারস্য, ইহুদি-খৃষ্টানদের কাছে বিকৃত, মনগড়া তথ্যের পুথিবিন্যাস ও কথিত সাহিত্য- কিন্তু মহান আল্লাহই অবশেষে ইতিহাসের প্রকৃত সত্য মানবজাতির সামনে উন্মোচন করলেন।
তারা তোমাকে যুরকারনাইন সম্পর্কে জিঙ্গাসা করছে, বল (কুরাইশদেরকে), আমি তোমাদের কাছে তার বিষয় বর্ণনা করবো।
আমি তো তাকে (যুলকারনাইন) পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম (অর্থাৎ তার বিপুল পরিমাণ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবণ ক্ষমতা ছিল)। (৮৩-৮৪)
কিন্তু পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তরের সমস্ত মানবসভ্যতার উপর কর্তৃত্ব, বিশাল সেনাবাহিনী, প্রযুক্তিজ্ঞান ও উদ্ভাবন ক্ষমতা- এত শক্তিমত্তার অধিকারী হয়েও তিনি কোন মানবগোষ্ঠীর উপর জুলুম করেননি- তার কথা ছিল একটাই:-
যে কেউ সীমালংঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দিব, অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে, এবং তিনি তাকে শাস্তি দিবেন।
তবে যে ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তার জন্য (আমার পক্ষ থেকে) পুরস্কারস্বরূপ আছে কল্যাণ (তাকে আমি বহুগুণ বাড়িয়ে পুরস্কার দিব) এবং তার সাথে আমি নম্রভাবে কথা বলব ও ব্যবহারে হব কোমল।( আয়াত: -৮৭-৮৮)
আমরা বারবার দেখছিলাম তিনি আদিম জনগোষ্ঠীগুলোকে পেছনে ফেলে নতুন পথ ধরছেন, কোন জোড়-জুলুম খাটাচ্ছেন না। অবশেষে আমরা দেখলাম তিনি উত্তরে কৃষ্ঞসাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী এলাকায় দুই পর্বতের মাঝে অবস্হিত বর্তমান জর্জিয়ার ককেসাস পর্বতমালার রুশ-জজির্য়া সীমান্তের দারিয়াল পাস এলাকায় প্রবেশ করলেন এবং সেখানে বসবাসকারী ক্ষুদ্র এক জনপদকে পেলেন। যারা তার কথা বুঝতে পারছিল না ( কারণ তৎকালীন জর্জিয়ান ভাষা আজকের যুগেও পৃথিবীর অন্যতম দুর্বোদ্ধতম কঠিন ভাষা হিসেবে স্বিকৃত এবং এটি অন্যান্য ভাষা থেকেও একদমই আলাদা) এবং তিনিও কোনভাবে তাদের ভাষা বুঝতে পারছিলেন না তথা, তার অধীনস্ত দোভাষীরাও এই ভাষা জানতোনা। অর্থাৎ এরা এমন এক পাহাড়ি উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা সভ্য মানব জগত থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। শিক্ষাদীক্ষা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান, সভ্য জগতের সাথে যোগাযোগ ইত্যাদি থেকে তারা ছিল বঞ্চিত। প্রকৃতির উপর নির্ভর করে আদিম পদ্ধতিতে তারা জীবনযাপন করত। যুলকারনাইন ইচ্ছা করলে এদের অসভ্য, জঙ্গলি হিসেবে চিহ্নিত করে হত্যা ও বন্দী করে দাসে পরিণত করতে পারতেন কিন্তু তিনি এই জাতির প্রতি পরম ভালবাসা ও সহানুভূতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্হাপন করলেন। এজন্য তারাও তাকে আপন করে নিল। তারা যখন দেখল তিনি বিশাল সেনাবাহিনীর অধিনায়ক, তার প্রযুক্তিজ্ঞান ও উদ্ভাবন কৌশল অসামান্য, তখন তারা তার কাছে নিজেদের কষ্টের ব্যাপারে অভিযোগ করল।
হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ মাজুজ তো জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করছে। আমরা কি আপনাকে অর্থ দিব যে, আপনি আমাদের ও তাদের মাঝে এক প্রাচীর গড়ে দিবেন? (আয়াত: ৯৪)
কিন্তু যুলকারনাইন লোভী ছিলেন না, তার অর্থলিপ্সা ছিলনা, তাকে মহান আল্লাহ প্রাচুর্যতা দান করেছিলেন এবং তার অর্ন্তদৃষ্টি মোটেও অন্ধ ছিলনা এজন্য ইয়াজুজ মাজুজের ভয়াবহতার ব্যাপারে তিনি সজাগ ছিলেন তাই তিনি জবাব দিলেন,
আমার প্রতিপালক আমাকে এই বিষয়ে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তাই উৎকৃষ্ট (আমার অর্থের কি দরকার?) সুতরাং তোমরা আমাকে (তোমাদের) শ্রম দ্বারা সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের (ইয়াজুজ মাজুজ) মাঝে এক মযবুত প্রাচীর নির্মাণ করে দিব। ( আয়াত: ৯৫)
তিনি লোহার ইট ও তামাকে গাথুনি হিসেবে সিমেন্টের মত ব্যবহার করে বিশাল উচু ও পুরু মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করেন যার ফলে দারবেন্ত থেকে দারিয়াল পাস দিয়ে বের হবার একমাত্র গিরিপথটি বন্ধ হয়ে যায় এবং ইয়াজুজ মাজুজ হয়ে পরে অবরুদ্ধ।
প্রশ্ন এসেই যায়, সূরা কাহাফে ফ্যাসাদ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারায় মহান আল্লাহ ফ্যাসাদকে হত্যার চাইতেও ভয়াবহ বলেছেন!! ''ফ্যাসাদ কি? এর প্রকৃত ব্যাখ্যা কি?'' উত্তর হল:
প্রবল ক্ষমতার স্বাদ পেলে সাধারণত মানুষ স্বেচ্ছাচারী, চরম অত্যাচারী হয়ে ওঠে। ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সা তাদের চোখকে অন্ধ, কানকে বধির, মস্তিষ্ককে অকেজো ও মনকে দুষিত করে তোলে- ফলাফলে, তারা হয়ে পরে মানুষিকভাবে মনের দিক থেকে অন্ধ ও নিকৃষ্ট পর্যায়ের। তারা নিজেদের স্রষ্টার আসনে বসায়, সম্রাজ্য বিস্তারই থাকে তাদের প্রধান লক্ষ্য- তাই এরা মানব সম্প্রদায়কে নিজেদের ইচ্ছামাফিক পরিচালিত করতে চায়। কিন্তু ২ শ্রেণীর লোক তাদের বশ্যতা মানতে চায়না:-
১. আদিম জীবনাচরণে অভ্যস্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি।
২. সৎকর্মশীল মানুষ
তাই তারা আদিম জীবনাচরণে অভ্যস্ত মানুষের উপর গনহত্যা চালিয়ে তাদের নিঃশেষ করে দেয়, তাদের ভূমি দখল করে সেখানে নিজেদের কর্তৃত্ব-স্হাপনা গড়ে তোলে আর কিছু জীবিতদের দাসে পরিণত করে। কিন্তু সৎকর্মশীল মানুষদের প্রথম ধাপেই নিঃশেষ করে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ এরা সভ্য, সমাজে বাস করে তারা মানুষের প্রতি নিজেদের দয়া ও দায়িত্বের ডানা মেলে ধরে তাই এদের প্রতি সাধারণ মানুষের মনে সহানুভূতি-ভালবাসা কাজ করে। এজন্যই সম্রাজ্যবাদীরা জনবিদ্রোহ এড়াতে সর্বপ্রথম সৎকর্মশীল মানুষের বিশ্বাসের উপর আঘাঁত হানে। নানান উপায়ে তাদের বিশ্বাস ও কাজকর্মকে সমাজের চোখে বিতর্কিত করে প্রকাশ করা হয়। ফলাফলে সৎকর্মশীলরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে আর সম্রাজ্যবাদীরা ঠিক এটাই কামনা করে সৎকর্মশীলদের কাছ থেকে। তাদের আচরণ হয়ে আরো কঠোর সৎকর্মশীলদের প্রতি। সৎকর্মশীলরা এবার বিদ্রোহ করতে শুরু করে আর সম্রাজ্যবাদীরা এটাকেই সুযোগ হিসেবে লুফে নেয়। তারা বিদ্রোহ দমণের নামে শুরু করে সৎকর্মশীলদের প্রতি মারাত্নক অত্যাচার-নির্যাতন, দমণ-পীড়ন, হত্যা-ধর্ষণ, বহিষ্কার-লুন্ঠন। এটাকেই বলা হয় ফ্যাসাদ-যা হত্যা থেকেও ভয়াবহ। ফ্যাসাদ সৃষ্টিই হল ইয়াজুজ-মাজুজের বৈশিষ্ট। ফ্যাসাদের প্রথম অংশটি তারা আদিম জনগোষ্ঠীর উপর প্রয়োগ করেছে এবং দেয়াল ভেঙ্গে মুক্ত হবার পর ২য় বারে তারা সৎকর্মশীলদের উপর তার ২য় অংশ প্রয়োগ করবে। প্রশ্ন আসে ''যুলকারনাইন কেন তার সেনাবাহিনী দিয়ে ইয়াজুজ মাজুজকে যুদ্ধে পরাজিত করলেন না? এর ইঙ্গিত কুরআনেই দেয়া হয়েছে আর সরাসরি উত্তর রাসূল (সাঃ) নিজেই দিয়েছেন:- তাদেরকে ধ্বংশ করার ক্ষমতা মহান আল্লাহ যুলকারনাইনকে দেননি বরং তারা এমনই ক্ষমতাধর জাতি যারা মুক্তি পাবার পর সারা পৃথিবীর মানুষের উপর ভয়াবহ এক হত্যাযজ্ঞ চালাবে, সমগ্র মানব সভ্যতা তাদের বশীভূত হবে এরপর তারাই হবে আরব ভূমি ও আরব জাতিগোষ্ঠীসমূহ ধ্বংসের কারণ যদিও তাদের মাঝে পূণ্যবান ও নিঃপাপ মানুষ বিদ্যমান থাকবে। আর আরব তথা মুসলিমদেরও কোন শক্তি থাকবেনা তাদেরকে যুদ্ধে পরাজিত করার। এরপর ইয়াজুজ মাজুজ আসমানের দিক তীর ছুড়বে আল্লাহ ও তার ফেরেশতাদের হত্যার জন্য। অবশেষে মহান আল্লাহ তাদের সমূলে ধ্বংশ করবেন আর কিয়ামতের দিন প্রতি ১০০০ মানুষের মধ্যে ৯৯৯ জনই হবে জাহান্নামী হবে। এই ৯৯৯ জন ব্যক্তিই ইয়াজুজ মাজুজ সম্প্রদায়ভূক্ত। ( সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ৫০/আম্বিয়া কিরাম, হাদিস নং: ৩১০৯ ও ৩১১১, পাবলিশার: ইফাবা)
আমরা যখন শুনি তারা আসমানের দিক তীর ছুড়বে, তখন মনে ভেসে ওঠে- এরা হয়ত গন্ডমূর্খ কোন আফ্রিকান জংলী টাইপ সম্প্রদায়!! কিন্তু নিছক জংলীদের উপর মহান আল্লাহ কেন এত অসন্তুষ্ট হবেন যে, তাদের ৯৯৯ জনকেই জাহান্নামের আগুনে পোড়াবেন?? হ্যা! এরা মোটেও কোন জংলী জাতিগোষ্ঠী নয়। এক জংলী জাতি তীর ধনুক দিয়ে আধুনিক যুগের ক্ষেপনাস্ত্র, একে ৪৭ সেভেন, যুদ্ধ বিমানে সজ্জিত আর্মির মোকামেলা করে তাকে পরাস্ত করছে অতঃপর সমস্ত মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে- এমন কল্পনা হাস্যকর নয়কি?? এই তীর ছোড়া দ্বারা এটাই প্রকাশ করে যে, তারা আল্লাহকে অস্বীকার করবে, তার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং পৃথিবীকে নিজেদের করায়ত্ত করবে, তাদের প্রবর্তিত নতুন বিশ্বব্যবস্হায় পৃথিবীবাসীকে চলতে বাধ্য করবে, যেখানে আল্লাহ, গড বা স্রষ্টার কোন তদারকি সহ্য করা হবেনা।
অর্থাৎ সূরা কাহাফ আমাদের সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয় ইয়াজুজ মাজুজ নামক দুটি মানব গোত্র সম্পূর্ণরূপে যুলকারনাইন, খিজির (আঃ) ও রাকিমের অধিবাসীদের বিপরীত। যারা আল্লাহকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে, আল্লাহকে হটিয়ে নিজেরাই পৃথিবীবাসীর রব বা পালনকর্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা চায়, মানুষকে বাধ্য করে শিরক মেনে নিতে।
রাসূল (সাঃ) জীবিত থাকাকালীন সময়েই একদিন ভয় ও শঙ্কা নিয়ে উদ্বিগ্ন চোখে বলেছিলেন, অচিরেই আরবদের ধ্বংশ অনিবার্য কারণ আজ ইয়াজুজ মাজুজের দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙ্গে গিয়েছে!! আজ পৃথিবীর মাথার উপর দিয়ে ১ হাজারের অধিক স্যাটেলাইট ক্যামেরা ঘুরছে, গুগল আর্থ দিয়ে সারা পৃথিবীর প্রতিটি এলাকা জুম করে দেখা যায় কিন্তু ককেসাস পর্বতমালার দারিয়াল পাসে শুধু একটি লোহার দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়না!!! তাহলে এই মানব সম্প্রদায় আজ কোথায়? আমরা যখন গত কয়েকশ বছরের মানব ইতিহাস ঘাটি তখন দেখতে পাই- আমেরিকার প্রকৃত জনগণ রেড ইন্ডিয়ান, আস্ট্রেলিয়ার আদিম জনগোষ্ঠী এবরিজিয়ান ও আফ্রিকার মূল জনগোষ্ঠী নিগ্রোদের উপর অন্য আরেক মানব সম্প্রদায় নির্মমভাবে গনহত্যা পরিচালনা করে তাদের সমূলে উৎখাত করে, তাদের জীবিতদের দাসে পরিণত করে, তাদের ভূমি অন্যায়ভাবে দখল করে সেখানে নিজেদের কর্তৃত্ব ও স্হাপনা গড়ে তুলে। বিস্ময় জাগে!! ''এইসব আদিম, জংলী জনগোষ্ঠীর উপর এই শক্তিশালী জাতিগোষ্ঠীর এত ঘৃণার রহস্য কি??''
আমরা যখন দেখি, এই সম্প্রদায় নিজেদের শরীর থেকে ধর্মের আবরণ পুরোপুরি খুলে ফেলে গডলেস এক ওয়াল্ড অর্ডার সৃষ্টি করে, সৎকর্মশীল খৃষ্টানরা পর্যন্ত তাদের টার্গেটে রূপান্তরিত হয় অতঃপর এরা মুসলিম ভূমি থেকে খেলাফত বিলুপ্ত করে, নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে ফিলিস্তিন দখল ও তার প্রকৃত দাবিদার আরব মুসলিম ও খৃষ্টানদের নিজেদের ভূমি থেকে বহিষ্কার করে আর আরব তথা মুসলিম ভূমিতে ভয়ানক ফ্যাসাদ ছড়িয়ে দেয়, জোড় করে তাদের উপর একের পর এক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় আর মুসলিমরা বিভ্রান্তের মত ঘুরপাক খায়, তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, ''তবে কি রাসূল (সাঃ) এর সেই ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী সেই কলুষিত জাতিই পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করছে যারা হবে আরবদের ধ্বংসের কারণ??''
জানি, অনেক কিছু লিখে ফেলেছি সম্ভবত আপনাদের ধৈর্যে চিড় ধরছে, গোকলধাঁধা তৈরী করলাম কিনা জানিনা!
সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে আর তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকেই শরীক না করে। ( সূরা কাহাফ সর্বশেষ আয়াত)
জাঝাক আল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম।
বিষয়: বিবিধ
৩২১২ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি আগে ভাবতাম হয়তো সাদ্দে ইস্কেন্দারী মঙ্গােলিয়ায় অবস্থিত, প্রায় সময় মনে হতো চিনের প্রাচির হয়তো।
কিন্তু আপনি সব ধারনায় গুড়োবালি দিলেন। আপনার ব্যখ্যার উৎস কি জানাবেন? প্লিজ।
ইয়াজুজ মাজুজ ধ্বংসের আরো বিস্তারীত জানতে আগ্রহী। যদি কখনো সময় সুযোগ হয় আরকি!
অনেক কষ্টসাধ্য লিখাটি উপহার দেওয়ায় শুকরিয়া। জাযাকিল্লাহ।
এই বয়সে পড়া লিখা!!!!
সুন্দর পরামর্শের জন্য শুকরিয়া হে জনাবা।
দুনিয়ার ধান্ধা তো এখনো শুরুই করিনি। মাত্র ৫ বছর প্রবাসী জীবন, বাবা মা ও পরিবার নিয়ে খেয়ে বেচে আছি মাত্র।
আচ্ছা আরেকটি কথা: ইয়াজুজ মাজুজ কি ঐ দেয়ালের ওপারে খোলা জাগায়? নাকি কোন বিশাল গর্তে?
বর্তমানে তো ওপারেও মানুষের বসতি আছে। জানা থাকলে বিস্তারিত জানাতে কৃপণতা করবেন না। আমি না হয় অলস, বড় বোন হিসেবে আপনি আছেন না! এটাইতো ভরসা।
মানুষকে তো খুব ধৈর্য্যের কথা বলেন। কিন্তু আপনি কতটা ধৈর্য ধরেন? খুব তো ধাউন্না মরিচের মত জ্বলে উঠেন।
এক সময় আবেগে কাইন্দা দেন, আরেক সময় এতো রিজার্ভ হয়ে যান যে………
থাক, আমার কিছু বলার নাই গো, না না, আমার কিছু বলার নাইগো।
ঘুম খুব কম সময়ই স্বস্তিতে থাকতে পারে।
ব্লগ ছাড়ার ঘোষণা কবে শুনবো? খুব ইচ্ছে করছে শুনতে। শুনব আর খুট খুট করে হাসবো, যেতে কিন্তু দেবো না।
মহান আল্লাহ
এই রমজানে আমাদেরকে সব ভেদাভেদ ভুলে একতা বদ্ধ হবার তৈফিক দিন।
امين يارب
ছোট মুখে একটা বড় কথা বলি,
সালামটা আগে জানালে ও মনে হয় লেখার তাৎপর্য কোন অংশে কমতো না।
আপনার কোরান হাদিসের আলোকে লিখাটা খুব ভালো লাগলো, ধন্যবাদ আপনাকে
লেখাটা কি শুধু ভাল লাগার জন্যই, নাকি কিছু দায়িত্ববোধ জাগানোর জন্য? আমাদের একটু হিসাব করা প্রয়োজন আমরা আসলে কোন দিকে ছুটছি? কাদের পেছনে ছুটছি? কেনই বা ছুটছি? যে ইসলামের গুণগান গাইছি তা আদৌ ইসলামের কোন উপকারে আসছে কিনা? আমি জাস্ট ইশারাই করেছি। জাঝাক আল্লাহ প্রিয় ভাইয়া।
সুন্দর হয়েছে। প্রিয়তে রেখেছি, আবার একসময় পড়বো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আপনার নেক হায়াত বৃদ্ধি করে দিক। আমীন। আমার জন্য দোয়া করবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন