যারা আপনার হটাৎ বদলে যাওয়া নিয়ে হাসি তামাশা করছে, তাদের বলুন, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট।
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৯:২৫:০৭ রাত
আপনি আপনার পূর্বের জীবনে যা করেছেন, তার অধিকাংশ হয়ত ভুল ছিল, বাড়াবাড়ি ছিল আর এজন্যই আজ আপনি নিজেকে পাল্টে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর আপনি চেষ্টা করছেন বলেই আজকে আপনি যেই পরিচ্ছন্ন জীবনটার স্বাদ উপভোগ করছেন, সেটাই আপনার বর্তমান পরিচয় এবং সেটাই আপনি। আপনার পূর্বের কর্মকান্ড আপনার বর্তমান অবস্হানকে represent করেনা কারণ সেটা বর্তমানের মানদন্ডে নিছকই ভুলেভরা অতীত বা দুঃখভরা স্মৃতি। অতীতে ফেরা সম্ভব না, আপনি এখন বর্তমানে, আপনি অতীতে অবস্হান করছেননা, সময় পার হয়ে গেছে অনেক তাই বর্তমানটাই বাস্তব। আপনার অতীত ভুল ছিল বলেই আপনি সেটাকে ত্যাগ করেছেন, আঁকড়ে ধরে বর্তমানে তাকে টেনে আনেননি। আপনি আজ চিন্তা করছেন ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই বর্তমান জীবনবোধটাকে আঁকড়ে ধরে তা ভবিষ্যতের জন্য নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। কিন্তু কিছু মানুষ থাকবেই এরা আপনার এই হটাৎ বদলে যাওয়াকে ভালো চোখে কখনোই দেখতে পারেনা। কারণ তারা হল লেজকাটা শেয়ালের মত একেকটি জীবন্ত উদাহরণ। তারা মন্দকে আঁকড়ে ধরে সব কিছুই নষ্ট করেছে এবং সেই মন্দ অতীতকে বর্তমানেও আঁকড়ে ধরে বসে আছে, লালন-পালন করে বড় করছে। অথচ "তারই মত অন্য কেউ তারই চোখের সামনে পাল্টে যাচ্ছে, অতীতকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলছে"- এটা সহ্য হয়না তাদের। তাই তারা খুব জঘন্য ও নিকৃষ্টতম পন্হায় পাল্টে যাওয়া মানুষটার পেছনে লাগে। তার অতীত জীবনের ভুলগুলো মানুষের সামনে প্রকাশ করে তাকে হেয়-প্রতিপন্ন করে, অতীতের ভুলের সাথে বর্তমানের তুলনা করে হাসি-তামাশা করে, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে, তার মনোবল ভেঙ্গে দেয়, তাকে খারাপ প্রমাণ করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় এরা লিপ্ত হয়ে যায়- যেন সে তার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়। মানুষের চোখে আরো বেশি ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয় এবং তার বর্তমান ভাল কাজগুলি, ভাল প্রচেষ্টাগুলি মানুষের চোখে নিছকই ধোঁকাবাজি, ভাওতাবাজি, অভিনয়-ভান বলে প্রতিয়মান হয়। আপনি যদি এমন কেউ হন, আপনাকে বলব,প্লিজ! মন খারাপ করবেননা।
আল্লাহর রাসূলের একজন সাহাবীর গল্প মনে পরে গেল। হ্যা! তিনি ছিলেন মূর্তিপুজারক, তিনি ছিলেন পাপী। কিন্তু যখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মক্কায় ইসলামের দাওয়াত সবার কাছে পৌছে দিচ্ছিলেন, তখন সেই পাপীই তার অতীতের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন যদিও তিনি জানতেন এর জন্য তাকে মক্কাবাসীর হাতে চরমভাবে অপমান-অপদস্ত হতে হবে, অত্যাচার-নির্যাতন ভোগ করতে হবে। মুসলিম হবার পূর্বে একজন চরিত্রহীনা নারীর সাথে তার গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং তিনি সেই নারীকে বিবাহের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু মুসলিম হবার পর তিনি যেমন তার অতীত জীবন ত্যাগ করলেন, পাপের রাস্তা ত্যাগ করলেন এবং ঠিক সেভাবেই চরিত্রহীনা প্রেমিকার সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেন যদিও তিনি তাকে ভালবাসতেন। সেই প্রেমিকা জেনে গেল তিনি মুসলিম হয়ে গেছেন এজন্যই তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকছেন। তাই একদিন হটাৎই সেই প্রেমিকা পথের মাঝে সেই সাহাবীকে আটকালো এবং তাকে জিঙ্গেস করল, তুমিতো আমাকে ভালবাসতে, আমাকে বিয়ে করার কথা ছিল, আমার জীবনের ভাল-খারাপ কোন ব্যাপারেই তোমার আপত্তি ছিলনা- তবে আজ কি হল যে মুসলিম হয়েই তুমি পাল্টে গেলে?? ভালবাসার কথা, অতীতের কথা কিভাবেই বা ভুলে যেতে পারলে?? সাহাবী তার কথায় আবেগী হয়ে পরেন। তিনি রাসূল (ﷺ) এর কাছে সব কিছু খুলে বলেন এবং "তাকে বিয়ে করা যাবে কিনা?" জানতে চাইলেন। তখন মহান আল্লাহ জানিয়ে দেন, মুমিন যেন বিয়ে করে শুধুমাত্র মুমিনকেই, তাকেই, যে চরিত্র সংশোধন করেছে। অমুসলিম, চরিত্রহীন, মুনাফিক তার জন্য অবৈধ যদিও সে তোমাদের কাছে কাম্য হয়।
সাহাবী (রাঃ) আর সেই বাজে অতীত ও তার চরিত্রহীনা প্রেমিকাকে জীবনে টানেননি বরং ত্যাগ করেছিলেন সারা জীবনের জন্য। ত্যাগ করেছিলেন সেই নারীর প্রতি তার আবেগ।
জীবনটা এমনই। আপনি বাজে অতীতকে যতই বিদায় জানাতে চাইবেন, অতীত অন্যকথায় শয়তান ততই নতুন কোন জাল বিছিয়ে আপনাকে অতীতের জীবনে পাকড়াও করে নিয়ে যেতে চাইবে, কিছু লোক আপনার পেছনে লেগে থাকবেই। আপনার নতুন জীবন, নতুন রূপ তারা কিছুতেই সহ্য করতে পারবেনা। আপনার ভাল কাজ-কর্ম তাদের চোখে অভিনয় মনে হবে। আপনাকে শান্তনা দেয়ার জন্য শুধু কোরানের এই আয়াতটাই শোনাবো:
অতএব; তুমি ধৈর্যধারণ কর, যেমন ধৈর্যধারণ করেছিল দৃৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ। আর তুমি তাদের জন্য তাড়াহুড়ো করোনা। তাদেরকে যেই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তারা যেদিন নিজ চোখে তা দেখবে, সেদিন তাদের মনে হবে, তারা দিবসের এক দন্ডের বেশি পৃথিবীতে অবস্হান করেনি। এটা এক ঘোষণা পাপাচারী সম্প্রদায়কেই ধ্বংশ করা হবে। (সূরা আহকাফ, আয়াত: ৩৫)
স্বরণ করুন নবী পত্নী ও উম্মুল মুমিনীন আইশা (রাঃ) এর কথা। যখন তার চরিত্রে অপবাদ দেয়া হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট তিনি উত্তম বিচারক। আমি নবী ইউসুফ (আঃ) এর মতই ধৈর্যধারণ করলাম কারণ তাকেও আমার মত অপবাদ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি ছিলেন নিষ্পাপ।
মহান আল্লাহ নিজে কুরআনে ঘোষণা দিলেন আইশা (রাঃ) নিষ্পাপ। তিনি আইশা (রাঃ) কে সন্মানিত করেছিলেন এবং যারা এই অপবাদ রটিয়েছিল ও যেসব নারী-পুরুষ তাতে কান দিয়েছিল, আল্লাহ সকলকেই অপদস্ত করেছিলেন। তাই ধৈর্যধারণ করুন এবং আজ যে বা যারা আপনার হটাৎ বদলে যাওয়া নিয়ে হাসি তামাশা করছে তাদের বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। সুতরাং, তাদের সামান্য হাঁসতে দাও, অতঃপর তারা অনেক বেশি কাঁদবে, এটা হল তাদের (কৃতকর্মের) পুরস্কার যা তারা উপার্জন করতো। (সুরাহ তওবাহ, ৮২)"
বিষয়: বিবিধ
২০৩২ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব সুন্দর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লিখেছেন,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
সেই সাথে দোয়া করি তিনি আপনার জন্য ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটের ব্যবস্থা করে দেন- যদি তা কল্যানকর হয়!!
হাহাহাহা ভাইয়া খুব মজা পেলাম।
জুতার ফিতাটা ছিঁড়ে গেলে বা হাতের লাঠিটা মাটিতে পড়ে গেলে সেটাও আল্লাহতায়ালার কাছে চাইতে বলেছেন প্রিয়নবী মুহাম্মাদﷺ
আল্লাহতায়ালার কাছে চাওয়ার মজাই আলাদা- নিশ্চিত পাওয়া যায়, হয় দুনিয়াতেই, নাহলে আখেরাতে, অথবা তার বদলে উত্তম কিছু!!
অতএব, খুশীতে গড়াগড়ি খেতে থাকুন!!
বেশিরভাগ সময়ে সেটা থাকে একান্ত নিজের মধ্যে। হয়তো ছাপার হরফ হয়ে সেটা ঠাই পায়না ব্লগের পাতায়! হয়তো টুকে রাখি স্মৃতির খাতায়। নীরবে নিভৃতে দোয়া করি ইয়া রব্ব তোমার এই বান্দাগনকে হেদায়াত এর উপর এস্তেকামাত রাখো।
কেউ মুসলমান হলে নিজে নিজেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া প্রকাশ করি! কেউ বখে গেলে আফসোস করি এবং আল্লাহর কাছে পানাহ চাই আল্লাহ আমাকে এমন হওয়া থেকে বাঁচান।
দুটো ঘটনা প্রচণ্ড ভাবায় আমাকে;
সেই ব্যাভিচারিণী মহিলা যাকে একটা কুকুরকে পানি পান করানোর জন্য মহান রব্ব ক্ষমা করেছেন।
বলয়াম বিন বউরা এতবড় বুযুর্গ হওয়া সত্ত্বেয় বেয়াদবির কারণে কুকুরের মত জিহ্বা বের করে মরেছে।
ক্ষমা মহান আল্লাহর হাতে এবং সেটা ব্যাপক তাই মহান রবের কাছে সবার জন্য মাগফিরাত এর দোয়া করি। আমিন।
আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর লিখাটির জন্য
একজন মানুস যখন খারাপ পথ ছেড়ে ভাল পথে আসে তখন সমাজের সবার উচিত তাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরনা দেয়া যাতে ভাল পথে চলা তার জন্য স হজ হয় ।
কিন্ত আমাদের সমাজে এর বিপরীদ টা করা হয় ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আপনি ছেলে কি মেয়ে, তা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আপনার লেখা, তার উদ্দেশ্যই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবুও আমি আপনাকে বোন বলে সম্বোধন করায় এক ব্লগার আপনার লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তখনি আমার খটকা লাগে। তাই বলব, একটা পরিচয় নির্ধারণ করুন যদি তাতে আপনার অসুবিধা না হয়। ধন্যবাদ।
আগের সময়ে আপলোড করা সেই আপত্তিকর ছবিগুলোতো এখন ছড়িয়ে গেছে ।
আপনার সেই দ্বীনি বোন এখন সেই আপত্তিকর ছবিগুলোকে মিটিগেট করতে তার হিজাব পড়া , নিকাব পড়া , নামাজ রত , ক্বুরআন তেলাওয়াত রত থাকা অবস্থার ছবি দিতে পারে ।
মেয়েরা আধুনিক অবস্থায় নিজের অবস্থান ও পজিশন জানান দিতে ফেসবুকে কি রকম ভঙ্গি দিয়েই না ছবি তোলে !!
সে এখন আলোর পথে এসেছে , সেরকম কিছু ছবি দিলেই তার সাবেক ফেসবুক বন্ধু (অধুনা হিংসাকারী) দের চেহারা ভচকিয়ে দিতে পারে ।
এরকম না করলে এটা কি বিরোধীরা বুঝে নেবে না যে- সে দ্বীনি পথে গিয়ে রক্ষনাত্মক হয়ে গেছে । আগেরমত আক্রমনাত্মক নেই ।
০ মাশা আল্লাহ ! সুন্দর বলেছেন
ধন্যবাদ আপনাকে
লেখাটা অনেক অনেক ভাল হয়েছে, যদিও বরাবরই ভাল লিখেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন