না বলতে পারা কথাগুলো... প্রসঙ্গ পাকিস্তান।
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:৫৬:২৩ দুপুর
(বিঃদ্রঃ লেখক শুধুমাত্র বাস্তব পরিস্হিতিটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে মাত্র, কারো প্রতি সহানুভূতি বা বিদ্বেশ নিয়ে কিছুই লেখা হয়নি।)
নিঃসন্দেহে শিশুহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম জঘন্য দৃষ্টান্ত যা ইতিহাসের পাতায় বারবার লেখা হয়েছে।তবে প্রতিটি ঘটনার পেছনেই কিছু কথা থেকে যায় কারণ আমরা জানি, প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে অর্থাৎ Action=reaction. এটি নিউটনের গতির ২য় সূত্র।
আবার আমরা জানি, শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই, শক্তি কেবল একরূপ থেকে অপর এক বা একাধিকরূপে পরিবর্তিত হতে পারে। এক বা একাধিক বস্তু যে পরিমাণ শক্তি হারায়, অন্য এক বা একাধিক বস্তু ঠিক একই পরিমাণ শক্তি অর্জন করে।
বাংলায় আমরা বলি, ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়।
গতকালের খবর আমরা সবাই জানি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি স্কুলে তেহরিক ই তালিবান বা টিটিপি হামলা চালিয়েছে। ৬-৭ জন বন্দুকধারীর গুলিতে ১৪১ মানুষ মারা গিয়েছে যাদের অধিকাংশই ছিল শিশু। মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ, সোশ্যল মিডিয়ায় তর্ক-বিতর্ক। ইসলাম নিয়ে টানা হেঁচড়া সব কিছুই চলছে সমান তালে।
তবে......
ছোটকালে বাংলা সিনেমায় দেখতাম নায়িকার প্রেমে পরে লম্পট নায়ক ভাল মানুষ হয়ে গেছে নায়ক এখন চরিত্রবান। সে যখন খুশিমনে নায়িকার সাথে দেখা করতে এসেছে, যেই ঘরে ঢুকতে যাবে তখন নায়িকা অন্য কাউকে বলছে, একটা লম্পটকে কিভাবে ভালবাসি? নায়ক শুধু নায়িকার একথাটাই শুনতে পায়। তার আগের বা পরের কোন কথাই তার কানে পৌছায় না। তার আর ঘরে ঢোকা হয়না, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে। নায়ক ফীরে গিয়ে মদের আড্ডায় বসে মাতলামি করে, হ্যা! আমি লম্পট!!! আমি লম্পট!! কিন্তু নায়িকার পরের কথাগুলো ছিল, তবে ও আর সেই লম্পট নেই, আমার ভালবাসা ওকে আজ মানুষে পরিণত করেছে তাই আমিও ওকে ভালবাসি। কিন্তু যা ঘটার তাতো ঘটেই গেছে। শুরু হয়ে গেছে সিনেমায় নায়ক-নায়িকার মান-অভিমান।
বাস্তবতা হল: আমরাও ঐ নায়কের মতই ঘটনার আধা-অর্ধেক জেনেই আবেগে ফেটে পরি। মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ দেখে মাতলামি শুরু করি। আজ সিরিয়া টু আফ্রিকা- আফগানিস্তান টু পাকিস্তান জুড়ে যে যুদ্ধ-হানাহানি চলছে তার পেছনে রয়েছে হাজার হাজার না জানা বঞ্চনা, কান্না, হারানোর ইতিহাস যা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়না বা ইচ্ছে করে গোপন করা হয় অথবা এক সম্প্রদায়ের উপর অন্য সম্প্রদায়ের বর্বরতাকে যৌক্তিক বলে প্রমাণের চেষ্টা করা হয় যেন তা সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। যেমন ইজরাইল কর্তৃক ২০০০ ফিলিস্তিনি হত্যা মিডিয়ার চোখে যৌক্তিক, ইউরোপিয়ান-আমেরিকানদের কাছেও যৌক্তিক তবে হামাস কর্তৃক ইজরাইলে রকেট ছোড়া অন্যায়। তাই এক পক্ষের প্রতিহিংসাকে আমাদের কাছে বর্ববতা মনে হলেও অন্য পক্ষের বর্বরতা থেকে যায় অজানা। মিডিয়ার কল্যাণে গ্রহণযোগ্য হয়।
ইরাক-সিরিয়ার আইএস বা পাকিস্তানের তেহরিক ই তালিবানরা হটাৎ করেই জন্ম নেয়নি। তাই তাদের পেছনের কিছু ব্যাপারও জানার দরকার কেননা, মহান আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন: যখন তোমাদের কাছে কোন ফাসিক ব্যক্তি সংবাদ নিয়ে আসে, তখন তা অনুসন্ধান কর। যদি তোমরা না জেনে কোন জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড় তাহলে অবশেষে তোমরা যা করেছো তার উপর লজ্জিত হবে। (সূরা হুজুরাত-৬)
তেহরিক ই তালিবান যাদের জন্ম ওয়াযিরিস্তানে। যেটি উপজাতি বা গোত্রভিত্তিক এলাকা। পাকিস্তানের মূল জনগোষ্ঠীর সাথে রয়েছে তাদের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য। একারণে পাকিস্তানী শাসকদের দ্বারা তারা দীর্ঘদিন থেকেই শোষন-বঞ্চনা,নির্যাতনের শিকার এবং নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এজন্যই পাকিস্তানী শাসকদের সাথে রয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের সংঘাত। ঐতিহ্যগতভাবে তারা মুসলিম এবং পাকিস্তানের জাতিয়তাবাদী-সেকুলার জনগণের তুলনায় এদের ইসলামীয় আবেগটা স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। পাকিস্তানের সেকুলার শাসকদের শোসন-বঞ্চনার হাত থেকে তারা মুক্ত হতে চেয়েছিল আর আইন কাঠামোতে ইসলামকে আনতে চেয়েছিল। এমন অবস্হার পরিপেক্ষিতে সেখানে শুরু হয় তথাকথিত সন্ত্রাস দমণের নামে মার্কিন ড্রোন হামলা। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে এ অবস্হা। মানবাধিকার সংগঠন গুলোর হিসাবে ২০০৪ থেকে শুরু হওয়া ড্রোন হামলায় ৩০০০ এর অধিক মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর আধিক্য ছিল । কিন্তু পাকিস্তানী শাসকরা মার্কিনীদের থামানোর চেষ্টা না করে বরং তাদের সাহায্য করে যেতে থাকে। স্বজন হারানো মানুষের মাঝে দিন দিন ক্ষোভ জমতে থাকে আর সেই ক্ষোভ থেকেই জন্ম তেহরিক ই পাকিস্তান নামক সশস্ত্র গ্রুপের। প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে তারা। বেধে যায় এবার পাকিস্তানী সেনা-পুলিশ তথা পাকিস্তানী আইনশৃংক্ষলা বাহিনীর সাথে লড়াই, হামলা-পাল্টা হামলা। গত কয়েকমাস আগে যখন বর্বর ইজরাইলিরা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যায় মেতে ওঠেছিল ঠিক তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী-বিমানবাহিনীও একই কায়দায় ওয়াযিরিস্তানের উপর সর্বাত্নক হামলা অব্যাহত রেখেছিল। বিদ্ধস্ত ঘরবাড়ি, হাজারের উপর মানুষের মৃত্যু, মৃত নারী-শিশুদের রক্তাক্ত লাশ আর পালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার মানুষ, বিরান হয়ে যায় গোটা জনপদ। হ্যা! এই ছিল চিত্র।
আপনি আজ প্রশ্ন করছেন শিশুহত্যা কি ইসলাম সমর্থন করে? উত্তর: নাহ! কখনোই করেনা। কিন্তু সমস্যাটি হচ্ছে এই প্রশ্নটা আপনি তখন উত্তোলন করেননা যখন, আমেরিকা-ইউরোপ, শিয়া জোট ইরান-সিরিয়া-লেবানন-ইরাক ও পাকিস্তান কর্তৃক হাজার হাজার নিরীহ শিশু হত্যা করা হয়, নারীদের গণহারে ধর্ষণ করা হয়। আপনার ইসলামিয় আবেগ ঠিক তখনই মাথা চাড়া দিয়ে উঠে যখন সভ্য দেশের, সুবিধাভোগী কেউ বর্বরতার শিকার হয়।আপনার যেমন আবেগ আছে তাদেরও আবেগ আছে।
প্রতিশোধ জিনিসটা খুব ভয়াবহ হয়। মানুষ পাগল হয়ে যায় প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। নীতি-নৈতিকতা, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, ধর্ম মানুষ সব কিছুকেই বিসর্জন দেয়। ইসলাম-আল্লাহর ভয়, পরকালের বিচার সবকিছুই তখন মানুষের মস্তিষ্ক থেকে দূর হয়ে যায়। তার উপর যে অত্যাচার হয়েছে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সে তার থেকেও বড় অত্যাচার করে বসে অন্যের প্রতি। তাই দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের সময় বিহারীরা যেভাবে বাঙ্গালীদের উপরে নির্যাতন চালিয়েছিল দেশ স্বাধীন হতে না হতেই সেই বাঙ্গালীই তখন ঝাপিয়ে পরে বিহারীদের প্রতি এটাই বাস্তব। আজ ইরাকের আইএস এর সাথে শিয়া দ্বন্দের ব্যাপারটিও একইরকম। আইএসআইএস, তেহরিকরা হটাৎ করেই জন্ম নেয়না পেছনে থেকে যায় অনেক কথা। এই ভিডিওটা তেমন কিছু কান্নার নিরব সাক্ষী যা হয়তো আমাদের থেকে যায় অজানা।
null http://www.google.com/url?sa=t&rct=j&q=&esrc=s&source=web&cd=3&cad=rja&uact=8&ved=0CCMQtwIwAg&url=http%3A%2F%2Fwww.youtube.com%2Fwatch%3Fv%3DaSGCI5dsxqI&ei=hU6RVIKtIIadugSR5oKABQ&usg=AFQjCNHtsm70PPr1QR57MhJ4o--wSiJq5g&bvm=bv.82001339,d.c2E
রাষ্ঠ্রীয় সন্ত্রাসই বড় বড় সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। টিকে থাকে শুধু শোধ-প্রতিশোধের লড়াই। তবে আশা হারাতে নেই হয়তো একদিন সব কিছুরই আবসান হবে ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে আমার মাথায় আসে না ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্টায় ছোট ছোট এই কোমলমতি স্কুল শিশুরা কি বাঁধা হয়ে দাড়িছে? তাহলে কেন এমন বর্বরতা এই ছোট শিশুদের প্রতি?
এটা কি পাল্টা প্রতিশোধ?
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
মন্তব্য করতে লগইন করুন