তোমরা যারা জাতিয়তাবাদী........!!
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ২০ মার্চ, ২০১৪, ০৪:৫০:৩২ বিকাল
#কুতায়বা (রঃ)....আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর থেকে ফীরে আসার পথে যখন তিনি মদিনার প্রাচীরগুলোর দিকে তাকাতেন, তখন তিনি তার উটকে দ্রুত চালাতেন আর তিনি অন্য কোন জন্তুর উপর থাকলে তাকেও দ্রুত চালিত করতেন, মদিনার প্রতি ভালবাসার কারণে। (বুখারী:১৭৬৫, ইফাবা খন্ড:৩)
#বুখারীর ১৭৬৮ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে।( হাদিসটি অনেক বড় তাই উল্লেখ করলামনা) যেখানে স্বয়ং রাসূল (সাঃ), আবূ বকর (রাঃ) ও বেলাল (রাঃ) এর কথায় মাতৃভূমি মক্কার প্রতি আবেগ-ভালবাসা, আফসোস ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে। মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরতের সময় রাসূল বারবার মক্কার দিক অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকাচ্ছিলেন তাই আল্লাহ রাসূল (সাঃ) কে ওয়াদা করেছিলেন, আমি আপনাকে আপনার মাতৃভূমিতে একদিন ফীরিয়ে আনব। প্রথমদিকে মুসলিমরা বায়তুল মুকদ্দাসকে কেবলা করে নামাজ পড়লেও রাসূল (সাঃ) মন থেকে মক্কার কাবাকে কেবলা হিসেবে চাইতেন এবং আল্লাহ তায়ালা তার সেই মনের বাসনা পূরণ করেন। এখানেও মাতৃভূমির প্রতি রাসূল (সাঃ) এর টান প্রকাশ পায়।
#কোরানের বাণী: আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট স্পষ্টভাবে (ইসলামকে) ব্যাখ্যা করবার জন্য, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় ( সূরা ইবরাহিম, আয়াত:৪)
#আবার কোরানে বলা হয়েছে, আল্লাহ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ভাষা ও রঙ্গের বৈচিত্র এনেছেন যাতে মানুষেরা একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে পারে।__
তাই ইসলামের সাথে এই ভাষাগত পরিচয়, ভূখন্ডগত পরিচয় ইত্যাদির কোন সংঘাত নেই বরং নিজ ভাষা, ভুখন্ডের প্রতি ভালবাসা আল্লাহ প্রদত্ত এক নেয়ামত।
আপনি পৃথিবীর মধ্যে বাংলা নামক ভূখন্ডে (ভূখন্ড বলতে নিছক একটি জায়গার নাম বোঝায়, কিন্তু রাষ্ঠ্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় ভূখন্ড বলতে কোন দেশকে বোঝায় না) জন্মগ্রহণ করেছেন, আপনার মাতৃভাষা বাংলা_ এই পরিচয়ে আপনি একজন বাঙ্গালী। একইভাবে অন্য একজন ব্যক্তি জাজিরাতুল আরবে জন্ম গ্রহণ করেছেন, তার মাতৃভাষা আরবী, তিনি আরবীতে কথা বলেন তাই তিনি আরব। এতে কোথাও সমস্যা নেই।
#কিন্তু বিতর্ক ঠিক সেই মুহূর্তেই চলে আসে যখন আপনি একজন মুসলিম হবার পরেও নিজের পরিচয় দেন যে, আপনার দেশ বাংলাদেশ (রাষ্ঠ্রবিজ্ঞানের ভাষায় যার রয়েছে স্বাধীন নিজস্ব ভূখন্ড, নিদিষ্ট সীমানা বা বর্ডার, জাতীয় পরিচয় বহণকারী পতাকা, আলাদা জাতীয়তা), আপনি বাংলাদেশ নামক দেশের নাগরিক, আপনার রাষ্ঠ্রীয় ভাষা বাংলা। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনার পরিচয় আপনি একজন বাংলাদেশী, আপনার রাষ্ঠ্রীয় ভাষা বাংলা তাই আপনি একজন বাঙ্গালী। আপনার পতাকাই আপনার পরিচয় বহন করে আর আপনার জাতীয়তা আপনাকে অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মুসলিম নাগরিকদের পরিচয় থেকে আপনার পরিচয় পৃথক করে দেয়। ঠিক একইভাবে সৌদি আরব, ইরাক, মিশর, কাতার, ওমান, তিউনিসিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশগুলোর আরব মুসলিমরা আরবী ভাষায় কথা বললেও, একইরকম কালচার, ধর্মের অনুসারী হলেও স্বাধীন ভূখন্ড,রাষ্ঠ্রীয় বর্ডার, জাতিয়তা, পতাকা ইত্যাদি জিনিসগুলো তাদের পৃথক করে আলাদা আলাদা পরিচয়তে বা জাতিয়তাতে, পৃথক করে অন্যান্য আরব দেশের মুসলিম নাগরিকদের পরিচয়ের সাথে। আর এই পৃথকীকরণ প্রক্রিয়াটা রাষ্ঠ্রবিজ্ঞান নামক পশ্চিমা থিওরী দ্বারা সংজ্ঞায়িত ও নিয়ন্ত্রিত।আর আজ প্রত্যেকটি দেশের মুসলিমই তাদের এই নিজস্ব দেশ, জাতিয়তা, পতাকা ও পৃথক পরিচয় নিয়ে গর্ব-অহংকার বোধ করছে। আর ঠিক এই জায়গাটাতেই ইসলামের সাথে এই জাতিয়তার সংঘাত। ইসলামে এই পৃথক পরিচয় ভিত্তিক অহংকারের কানাকড়ি মূল্য নেই।
#কারণ রাসূল (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলেছিলেন: "জেনে রাখ, এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই এবং সকল মুসলিমকে নিয়ে এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসমাজ। যদি কোন হাবশী ( অনারব হাবশার অধিবাসী, বর্তমান ইথিওপিয়া) গোলামও তোমাদের খলিফা হিসেবে মনোনিত হন তবে তোমরা তার আনুগত্য করবে। আরব বা অনারব হবার মধ্যে কোন গৌরব নেই। মনে রেখ, আল্লাহর কাছে প্রতিটি মানুষ চিরুণীর প্রতিটি সমান্তরাল কাঠির মতই সমান আর তোমরা সকলে আদম সন্তান আর আদম ছিলেন মাটির তৈরী।
#মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই (সূরা হামিম: আয়াত:১০, পারা ২৬)
#১০৩: তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্বরণ কর: তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা তো অগ্নিকুন্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ উহা হইতে তোমাদিগকে রক্ষা করিয়াছেন। এইরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাহার নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন যাহাতে তোমরা সৎ পথ পাইতে পার।
১০৪: তোমাদের মধ্যে এমন একদল হউক যাহারা কল্যাণের দিকে আহবান করিবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎকার্যে নিষেধ করিবে, ইহারাই সফলকাম।
১০৫: তোমরা তাহাদের মত হইও না যাহারা তাহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসিবার পর বিচ্ছিন্ন হইয়াছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করিয়াছে। তাহাদের জন্য মহাশাস্তি রহিয়াছে।(সূরা আল ইমরান)
# হ্যা! ইসলামের মূলভিত্তিই হল এই ভ্রাতৃত্ব, যার অধিকার বলে একজন আরব মুসলিম একজন আফ্রিকান মুসলিমের ভাই, একজন বাঙ্গালি মুসলিম একজন অবাঙ্গালি মুসলিমের ভাই। সকলেই এক আল্লাহতে বিশ্বাসী, এক নবীর অনুসারী ও এক ভ্রাতৃসমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ আর খেলাফত এই মুসলিম ভূখন্ডগুলিকে এক করে রাখে। আরব-আজমীর মধ্যকার ভূখন্ডগত পার্থক্য, ভাষার পার্থক্যকে ঘুঁচিয়ে দেয়। কিন্তু পশ্চিমা জাতিয়তাবাদ এমনই এক তত্ত্ব যা ইসলামের এই প্রধান ভিত্তির উপরেই সজোড়ে কুড়াল দিয়ে আঁঘাত করে। ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধনকে ভেঙ্গে চূরমার করে দেয়। আর পশ্চিমারা তাদের টাকায় কেনা গোলাম সেকুলার শাসক ও সেকুলার সেনাবাহিনীকে দিয়ে খেলাফত ব্যাবস্হা বিলুপ্ত করে মুসলিম ভূখন্ডকে ৫৭ টি ভাগে, ৫৭ টি রঙ্গীন পতাকায় আর ৫৭ টি জাতিয়তায় বিভক্ত করে। আর কিছু মডারেট ইসলামিস্ট জাতিয়তাবাদকে ইসলামীকরণের চেষ্টা করে আর সেই বিভক্ত মুসলিম জনতা নিজেদের সেই বিভক্ত জাতিয়তার মিথ্যা পরিচয় নিয়ে একে অন্যের সাথে গর্ব করে। হে মুসলিম! তোমার চোখে অন্য মুসলিমের পরিচয় হল: সৌদি, মিশরীয়, ইরাকি, আফগানী, পাকিস্তানী, তুর্কী, ইয়েমেনী, মালয়শিয়ান বা ইন্দোনেশিয়ান অথচ কি বিস্ময়!! নাস্তিক, মুশরিক, ইহুদী, খৃষ্টান সবার চোখেই তোমার পরিচয় শুধুমাত্র একটাই, তুমি মুসলিম!!!!
বিষয়: বিবিধ
১২১৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন