না বুঝে "হেজবুত তওহীদ" নামের ভন্ডামিতে পা দিচ্ছেন নাতো?
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:০৫:৪৭ রাত
আদম (আঃ) হতে শুরু করে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত পৃথিবীতে ১,২৪,০০০ নবী রাসূল আগমণ করেছেন এবং তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ উম্মতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। রাসূল (সাঃ) তার প্রিয় উম্মাতকে দাজ্জাল সম্পর্কে শুধু সতর্কই করেননি, বরং তার সম্পর্কে বিস্তারিত তার উম্মাতকে জানিয়ে গিয়েছেন। দাজ্জাল কেয়ামত পূর্ব সময়ের সবচেয়ে বড় ফেতনার অন্তর্ভুক্ত। দাজ্জাল মানবীয় শরীর নিয়েই পৃথিবীতে আগমণ করবে এবং সর্বত্র ফেতনার সৃষ্টি করবে এ নিয়ে বিতর্কের কোন সুযোগ নেই। রাসূল (সাঃ) নিয়মিত সূরা কাহাফ পড়ার প্রতি জোড় দিয়েছেন। প্রথম দশটি আয়াত বা শেষ দশ আয়াত দ্বারা দাজ্জালকে চিনতে পারা যাবে। হাদিসে এসেছে, কেয়ামত পূর্ব সময়ে মসজিদের মিম্বর থেকে দাজ্জালের আলোচনা উঠে যাবে। আজ আমরা তার বাস্তব চিত্র দেখছি। সত্যি সত্যি মসজিদের মিম্বর থেকে দাজ্জালের আলোচনা হারিয়ে গেছে। দাজ্জাল সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি বা জানার তেমন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনা। আর ঠিক এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছেন আমাদের আলোচ্য সংগঠনের কথিত বায়েজিদ খান পন্নী। তার দাজ্জাল সম্পর্কিত ডকুমেন্টারী বা বই হয়ত অনেকেই পড়ে থাকবেন। "দাজ্জাল সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের অভাব" ঠিক এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের মত কিছু হাদিস ও কোরানের আয়াতের চরম অপব্যাখ্যা করেছেন এবং কিছু সত্য ও কিছু মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে একপর্যায়ে নিজেকেই ইমাম মাহদী বলে দাবি করেছেন। হতাশ ও ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্ত কিছু তরুণ-তরুণীকে দলেও ভিড়িয়েছেন তিনি। সাহাবীদের ব্যাপারে বেয়াদবীপূর্ণ কথাবার্তা ও ইবাদতের পদ্ধতির মাঝেও পরিবর্তন সাধন করেছেন আলোচ্য ব্যক্তি। ইসলামের এক অনন্য নীতি হল, শরীয়ত সম্পর্কিত পরিভাষা ও শব্দগুলো কোরআন-হাদিসে যেভাবে এসেছে ঠিক সেভাবেই উচ্চারণ ও ব্যাবহার করা। যেমন: ইসলাম, মুসলিম, মুমিন, মুশরিক ইত্যাদি। কিন্তু এ সংগঠনটির বৈশিষ্ঠ হল, তারা এসব শব্দগুলোকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্হাপন করে। যেমন: হেজবুত, মোমেন, মোসলেম, এসলাম ইত্যাদি। হয়ত এই পন্হাকে তারা নিজেদের মধ্যকার যোগাযোগের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। (আল্লাহ ও তারা ভাল জানেন)।
কথিত দাজ্জাল আবিষ্কারক ব্যক্তিটি কিন্তু কোন আলেম নন। তার ক্ষেত্রে এই হাদিসটি প্রযোজ্য:
"সাঈদ ইবনে তালীদ (রঃ)...উরওয়া(রঃ)থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)আমাদের এদিক দিয়ে হজ্জ্বে যাচ্ছিলেন।আমি শুনতে পেলাম,তিনি বলছেন যে,আমি নবী (সাঃ)কে বলতে শুনেছি,আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে যে ইলম দান করেছেন তা হটাৎ করে ছিনিয়ে নেবেন না বরং ইলমের বাহক উলামায়ে কিরামকে তাদের ইলেমসহ ক্রমশ তুলে নেবেন।তখন শুধুমাত্র মূর্খ লোকেরা অবশিষ্ঠ থাকবে। তাদের কাছে ফাতওয়া চাওয়া হবে।তারা মনগড়া ফাতওয়া দিবে।ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ঠ হবে,অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ঠ করবে। (বুখারী:৬৮০৯)"
# তবে কাদের অনুসরণ করব?
১. "ইরবায বিন সারিয়া (রাঃ)হতে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ)বলেন, আর আমার পর তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে বহূ(ইসলামে)মতভেদ দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নাত এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত অনুসরণ করা হবে তোমাদের অপরিহার্য কর্তব্য।এই সুন্নতকে খুব মজবুত করে দাঁত দিয়ে চেপে ধরবে। আর দ্বীনে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, (দ্বীনে)প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত জিনিসই হচ্ছে বিদ'আত।আর প্রত্যেক বিদ'আতই ভ্রষ্টতা। (তীরমিযী, নাসায়ী, আহমাদ, আবু দাউদ)"
২. উবায়দুল্লাহ ইবন মূসা (র)....মুগিরা ইবন শুবা(রাঃ)থেকে বর্ণিত। নবী(সাঃ)বলেছেন,আল্লাহর হুকুম অর্থাৎ কিয়ামত আসা পর্যন্ত আমার উম্মতের এক জামায়াত সর্বদাই বিজয়ী থাকবে। আর তারা হলেন(সেই দল যারা প্রতিপক্ষের উপর)প্রভাবশালী।(বুখারী: অধ্যায়: ৮১/ফিৎনা ও কিয়ামতের আলামত, হাদিস নং: ৬৮১৩)
৩. ইসমাইল (রঃ)...মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান (রাঃ)থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,আমি নবী(সাঃ)কে বলতে শুনেছি যে,আল্লাহ তায়ালা যার কল্যাণ চান,তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।আমি তো(ইলমের)বন্টনকারী মাত্র;আল্লাহ তা প্রদান করে থাকেন। এ উম্মতের কর্মকান্ড কিয়ামত পর্যন্ত কিংবা বলেছিলেন,মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম আসা পর্যন্ত (সত্যের উপর)সুদৃঢ় থাকবে।(বুখারী:৬৮১৪)
আসুন বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে নিজে সজাগ হই অন্য মুসলিম ভাই-বোনকে সচেতন করি।
বিষয়: বিবিধ
৩৩৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন