এক মুক্তিযোদ্ধার চোখে দেখা

লিখেছেন লিখেছেন বুলেট ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:০৬:০০ রাত



মা,প্রিয় জন্মভূমি; বাংলা মা; সবুজের মাঝে রক্তের লাল ছোপ লাগা শাড়ি পরা মা;তুমি কেমন আছো?

কতদিন তোমাকে দেখিনি।দেখি কি করে তুমিই বলো?

তোমাকে রক্ষা করতে গিয়ে৪১ বছর আগে সবকিছু হারিয়েছি,হারিয়েছে দুটি চোখ,সবাই আমাকে কানু ফকির বলে সম্বোধন করে।আসলে আমার নাম ছিল রহিম মিয়াঁ।মুক্তিযুদ্ধে বোমার ছ্যাকায় ঝলসে গিয়েছিলো দ্মুখ, চোখ দুটিও নষ্ট হল।তারপর ও হাত বুলিয়ে তোমাকে অনুভব করি,কান খাড়া করে ধানখেতের সরসর শব্দ শুনি। এছাড়া আর কিইবা করার আছে বলো মা

শুনেছি যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল তাদের ভাতা দেয়া হয়,কিন্তু এ সামান্য ভাতা,কোটা এ সামান্য কিছুর জন্য তো জীবনের ঝুকি নিইনি মা,

তবে একটু দু:খ হয় যখন আমার মত অভাগা মুক্তিযোদ্ধা রহিম মিয়াঁ থেকে কালের আবর্তনে কানু ফকির হয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করে।

আর পাকিস্থানের দালালেরা বুক ফুলিয়ে বাংলার বুকে বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব লাগিয়ে গলাবাজি করে,তোমার বুক কাঁপায়।নিরীহ মানুষকে রাজাকার বানিয়ে হেনস্থা করা হয়,ফাঁসিতে ঝোলানোর অপচেষ্টা করে মানুষ রূপী হায়েনারা নিজেদের দোষ ঢাকতে…

এসব দেখার আগেই অন্ধ হয়েছি তাতেও সুখ।

হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি ,আর আজ মুসলমান পাকিস্তানের দালাল;হিন্দু ভারতের

কারা জানি ধম্ম-কম্ম বোঝেনা,বলে আল্লাহ বলে কেউ আছে নাকি; ওরাই নাকি দেশপ্রেমিক। হায়রে কলিকাল!আওয়ামীলীগ করতাম বলে যুদ্ধ করিনাই,যুদ্ধ কুরেছি জয় বাংলাকে ভালবাসতাম বলে।এখন দেখি সবাই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে আওয়ামীলীগএ যোগ দেয় নিজেকে বাচানোর জন্য।মনে হয় সকলেই মুক্তিযোদ্ধা আর আমার মত হাজার হাজার রহিম মিয়াঁ ওরফে কানু ফকির যুদ্ধে ফকির হয়ে পথে পথে ভিক্ষা করে।

ভিক্ষা করতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।আমার প্রিয় জায়গা,কোন এ্ককালে এখানকার ছাত্র ছিলাম মনে পড়লে হাসি পায়।আপনারা আবার শরম পাইয়েন না।

বসতাম কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে, কিন্তু এখন আর পারিনা।কারণ কয়দিন যাবৎ কি জানি হল মানুষের ছেলে-বুড়ো সকলেই শাহবাগ মোড়ে জমা হচ্ছে। কার নাকি ফাসি চায়।তুই রাজাকার! তুই রাজাকার! শ্লোগানে মুখরিত হয় আকাশ বাতাস। শরীর আবার চাঙ্গা হয় । মনে হয় আমি ফিরে গেছি ৪১ বছর আগে; আমি ২৫ বছরের এক টগবগে যুবক।কিন্তু একি! আন্দোলন থেকে মেলায় রুপান্তর। আর আন্দোলনের সার্বিক সহযোগিতায় সরকারী দলের লোকজন। মজাদার বিরিয়ানি, বিশুদ্ধ পানি, গাজাঁ এমনকি ভ্রাম্যমান টয়লেট ও দিয়েছে সরকার। কেউ কি কখনো এমন শুনেছে। যাদের ফাসির দাবি করছে তারা রাজাকার না নিরপরাধ সে বিচার নাইবা করলাম, কিন্তু যারা তখন পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরী করেছে, পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছে, শহীদের রক্তের উপর পেশাব করেছে তাদের মধ্য থেকে চিহ্নিত ১৯৫ জনকে বঙ্গবন্ধু ক্ষমা করে দিয়েছিলেন দেশের স্বার্থে কাজ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে।তার উদার মনে প্রশ্ন জাগেনি মা হারা সন্তান,স্বামী হা্রা স্ত্রীর ধর্ষিতা নারীর দাবী কি?

তারা ক্ষমা করবে কিনা? এখন দেখছি যাদের ফাসির দাবী করা হচ্ছে তাদের নাম কখনোই কালো তালিকায় ছিলোনা নতুন তালিকায় তারা যুদ্ধাপরাধি।তার মানে দাঁড়ায় এরা বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করেননা। ৪১ বছর পর আজ যদি নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় তাহলে কাউকে না কাউকে তো রাজাকার বানাতেই হবে তাইনা? নইলে খেলা যে জমেনা।

যাই হোক আমি আর ওই এলাকায় ভিক্ষা করিনা, কেন জানেন? দুটি ভয়ে।প্রথমত; দীর্ঘদিনের অযত্নে বেড়ে ওঠা দাড়ি দেখে ‘কানু ফকিরের ফাসি চাই’ ইত্যাদী বলতে কতক্ষণ। দ্বিতীয়ত; আমার সহকর্মীদের মত বিরিয়ানি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’ শ্লোগান দিতে বাধ্য করে। তারপর হাতে একটি জালানো মোমবাতি দিয়ে ক্যামেরা ক্লিক ক্লিক। ভিক্ষার টাকা দিয়ে মোমবাতি কিনে আন্দোলনে শরীক হলেন কানু ফকির।

মা,

ক্ষমা করে দিও যদি

ভুলচুক হয়,

যা দেখেছি বহুত বহুত

আর নয় আর নয়।

তোমার অন্ধ ছেলে

বিষয়: বিবিধ

১০৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File