তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি আসন্ন ? না কি এক মহাযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এই বিশ্ব ?
লিখেছেন লিখেছেন এম আর মিলন ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:২১:৪৭ দুপুর
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি আসন্ন ?! শুরু হচ্ছে সিরিয়া ও যুক্তরাস্ট্র দিয়ে । পরিপূর্ণ বিশ্বযুদ্ধ না হলেও এটা হলফ করে বলা যায় সিরিয়া আক্রান্ত হলে আমরা একটা মহাযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ! সিরিয়া আক্রান্ত হওয়ার পরপরই লেবানন, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল যোগ দিবে । হয়তো ইসরায়েল এই মোক্ষম সুযোগে তার চিরশত্রু ইরানে আক্রমন চালাবে । তারপরে যোগ দিবে ইরান ও সৌদি ! কারণ ইরান সরাসরি যোগ দিলে সৌদিও বসে থাকবে না । আর সিরিয়ার পর লেবানন আক্রান্ত হলে ইরানের যোগ না দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না ।কারণ লিবিয়াতে যেরকম তেল স্বার্থ ছিল পশ্চিমাদের সিরিয়াতে তেমন স্বার্থ নেই । আর যে সৌদি আরব দেশগুলিতে গণতন্ত্রের জয় দেখলে আতংকে শিহরে উঠে সে সৌদি কেন সিরিয়াতে তথাকথিত গণতন্ত্র কায়েমের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ! সেই কারণ আর কিছুই নয় । এটা হলো ইরান আক্রমনের পুর্ব প্রস্তুতি । কারণ ইরান আক্রমন করতে হলে ইরানের অন্যতম প্রতিরোধ শক্তি হিজবুল্লাহ ও সিরিয়াকে ধ্বংস করতে হবে। এটাই হল যুদ্ধ শুরুর মূল কথা । ঐ সব রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগর গল্প সব বানানো । আর যদি রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ হয়েও থাকে সেটা প্রয়োগ করেছে সৌদি, ইসরায়েল শক্তি বিদ্রোহীদের দ্বারাই ।সৌদি প্রিন্স এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে পুতিনকে সিরিয়ার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের বিনিময়ে ঘুষের প্রস্তাব দেন , কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট তা প্রত্যাখান করেন ।তখন প্রিন্স বলেন তাহলে সিরিয়ায় সামরিক হামলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই । এরপরেই সৌদি আরব আমেরিকায় নিযুক্ত তার রাস্ট্রদুতকে নির্দেশ দেয় আমেরিকার কংগ্রেস ও প্রশাসনকে সিরিয়ায় হামলার যৌক্তিকতা বুঝানোর । আর এরপরেই সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার ঘটনা ঘটে ! তবে সৌদি যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করবে এই শর্তে আমেরিকা শেষ পর্যন্ত সিরিয়ায় হামলা করতে রাজি হয়েছে , এ কথা গতকালকে নিশ্চিৎ করেছেন জন কেরী মার্কিন সিনেটে সিরিয়ার সম্ভাব্য যুদ্ধের শুনানিকালে । কারন এই মুহুর্তে যুক্তরাস্ট্র যুদ্ধ করার মত অবস্থায় নেই । হিজবুল্লাহ যুদ্ধ প্রস্তুতি হিসাবে সিরিয়া সীমান্তে তার বাহিনী মোতায়েন করেছে ও হিজবুল্লাহর সকল সদস্যের ছুটি বাতিল করেছে ! আর রাশিয়া প্রথমদিকে পরোক্ষভাবে থাকলে শেষে প্রত্যক্ষযুদ্ধে যোগ দিতে বাধ্য হবে ।এর বহুবিধ কারণ আছে । অথবা রাশিয়া শেষ র্পন্ত সরাসরি অংশগ্রহন না করলেও সিরিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করা অব্যহত রাখবে সেটা পরিষ্কার করে বলেছেন পুতিন । ইতিমধ্যেই রাশিয়া ঘোষনা করেছে যে আমেরিকা সিরিয়া আক্রমন করলে আমরা সৌদিতে হামলা চালাব । রাশিয়া সত্যিকারভাবে সৌদিতে হামলা চালাবে কি না সেটা নিশ্চিৎ না হলেও এই প্রথমবারের মত রাশিয়ার মত পরাশক্তি সৌদিতে হামলা চালানোর হুমকি তাৎপর্যপূর্ণ বটে ! চীন সরাসরি জড়িত হয়তো হবে না ।কারন এই যুদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকা একক পরাশক্তির মর্যাদা হারাবে আর একক পরাশক্তি হিসাবে উঠে আসবে চীন ! তুর্কি এই যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করবে কি না সেটা পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না যদিও তুরস্ক সর্বদাই আমেরিকা ইসরায়েলের মিত্র হিসাবেই কাজ করে এবং এই যুদ্ধেও থাকবে । এই যুদ্ধে সবচেয়ে লাভবান হবে ইসরায়েল । কারণ এতে হিজবুল্লাহ, ইরান, সিরিয়ার শক্তি অনেকাংশে বিনাশ হবে । আর এটাই ইসরায়েলের পরম চাওয়া ও পাওয়া । বাদ বাকি আরব ও মুসলিম রাস্ট্রগুলিও তো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রনেই আছে । বৃহত্তর ইসরায়েলে বাস্তবায়নে এই তিনটি শক্তিই বর্তমানে ইসরায়েলের পথের কাটা । তাই আপাতত যুদ্ধ স্থগিত করার সম্ভবনা নেই । ওবামা যুদ্ধ করতে না চাইলেও ইসরায়েল লবি সেটা করতে ওবামাকে সুযোগ দিবে না । তাই ওবামা এই আসন্ন যুদ্ধের প্রতিরোধকামী শক্তির প্রস্তুতি দেখেই ডেটলাইন ঘোষনা করার পরেও পিছু হটেছেন এই কারণে যে এতে কংগ্রেসেরে অনুমতি না নিলে হয়তো পরে তিনি অভ্যন্তরীনভাবে বিপদে পড়বেন । তাই যুক্তরাস্ট্রের অভ্যন্তরীণভাবে সবাইকে শামিল করাতে কংগ্রেসের অনুমতি নেওয়া একটা উদ্ধেশ্য । ইসরায়েল ও সৌদি যেভাবেই হোক আমেরিকাকে বাধ্য করবে সিরিয়া আক্রমন করতে । কারন ইসরায়েল ও সৌদি মরিয়া হয়ে উঠেছে উঠতি পরাশক্তি ইরানকে ঠেকাতে ।এই দুই দেশের লক্ষ সিরিয়া নয় , লক্ষ্য ইরান ।তাই সিরিয়া হবে শুরুমাত্র ।অবাক করার বিষয় এ যুদ্ধে আমেরিকা ও ইসরায়েলের প্রধান সহযোগী আল কায়েদা ! বিষয়টা আসলে অবাক মত কিছুই নেই কারণ আল কায়েদার সৃষ্টিই হলো পশ্চিমাদের হাত ধরে । এই গ্রুপটি নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দ্বারাই আমেরিকার স্বার্থ হাসিল করে দিচ্ছে । আফগানিস্থানে, লিবিয়ায় ও সিরিয়ায় এদের ভুমিকা সবার কাছে পরিষ্কার । আল কায়েদা যে কত বড় ভয়ংকর বিশ্ব মানবতার জন্য তা যে কোনো সুস্থ মানুষের শরীরই শিহরে উঠার কথা ! আর এরাই হলো ইসরায়েলের মত আমেরিকার অন্যতম সহযোগী । তবে পার্থক্য হলো আমেরিকা এদের ব্যবহার করে টয়লেটে পেপারের মত ! কাজ হাসিল হলে ওদেরকেই হত্যা করতে উদ্যত হয় যাতে মানুষজন বুঝতে পারে আমেরিকা সন্ত্রাসের বিপক্ষে ! তবে পারমানবিক অস্ত্র প্রয়োগ করা ছাড়া ইসরায়েল, আমেরিকা ও সৌদির ইরা্ন-সিরিয়া্র বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই ! আড়াই বছর ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধই তার প্রমান । সেখানে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে আমেরিকা, সৌদি, তুরস্ক, কাতার ও ইসরায়েল তারপরেও সিরিয়ার আসাদ সরকার বহাল কবিয়তে এখনো টিকে আছে । সিরিয়া আক্রান্ত হলে পারমানবিক অস্ত্র বানানো ছাড়া ইরানের সামনে কোনো বিকল্প নেই বা হয়তো থাকবে না ! কারণ এই যুদ্ধে ইরান নিশ্চিৎ শিকার হতে যাচ্ছে পারমানবিক অস্ত্রের যা হবে হিরোসীমা ও নাগাসাকির চেয়ে শতগুণে ভয়ংকর ! দু বছর আগেই ইরানে পারমানবিক অস্ত্র প্রয়োগের ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন ফিডেল ক্যাস্ট্রো । তাই মনে করি ইরানের পারমানবিক অস্ত্র বানা এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র !ইরান পারমানবিক অস্ত্র বানাবে তবে প্রয়োগ করবে কিনা সেটা প্রশ্ন নয় । ইরানকে বানাতে হবে যাতে সে পারমানবিক অস্ত্র দ্বারা আক্রান্ত না হয় । আর পারমানবিক অস্ত্র ইরান প্রয়োগ করতে পারবে কিনা এটা ইরানের মহাকাশ ও মিসাইল প্রযুক্তি থেকে বোঝা যায় । এটা ইরানি নেতারা হয়তো অচিরেই উপলব্ধি করবেন ! সো ওয়েট টু সি অ্য নিউক্লিয়ার ওয়ার !
তবে আমেরিকা সিরিয়া আক্রমন না করলে এসবের কিছুই হবে না । অবসান ঘটবে সকল জল্পনা কল্পনার । আমরা শান্তিকামী মানুষ সেটাই চাই । অবসান ঘটুক সকল জল্পনা কল্পনার । জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানুষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না । আর কোনো যুদ্ধ নয় সেটা সীমীত আকারের হলেও । যুদ্ধ নয় শান্তিই আমাদের কাম্য । গর্জে উঠুক সবার কন্ঠ-ওবামা. ওলাদ হাত গুটাও সিরিয়া থেকে !
বিষয়: আন্তর্জাতিক
২৯৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন