প্রসঙ্গ রাজনীতি : আমাদের বৃত্ত নয় সরল রেখায় গমন করতে হবে ও ‘না’ ভোটের দাবি।
লিখেছেন লিখেছেন এম আর মিলন ০৭ জুলাই, ২০১৩, ১০:৫০:১১ রাত
গতকাল রাতে একটি বেসরকারী টিভি টকশোতে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, স্যার ( এরশাদ) সমর্থন না দিলে আওয়ামী লীগ দুই লক্ষ ভোটের ব্যবধানে হারত। কথাটা কতুটু সত্য জানি না । কারণ গাজীপুরের নির্বাচনের আগে আগে সবাই জানেন এরশাদকে নিয়ে সে কি টানা হেঁচড়া ! কেউ বলেন এরশাদ আমাকে সমর্থন করেছেন আবার কেউ বলেন আমাকে দোয়া করেছেন । যাইহোক শেষ পর্যন্ত এরশাদ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন যদিও এনিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে এবং এজন্য জাতীয় পার্টির ভোটও নাকি বিভক্ত হয়েছে কারণ জাতীয় পার্টির সমর্থকগণ আগে থেকেই নাকি বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিল । তবে একটা স্থানীয় নির্বাচনে এরশাদকে নিয়ে দুই দলের এরকম টানা হেঁচড়া আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বই প্রকাশ পেয়েছে । গাজীপুরকে বলা আওয়ামী লীগের ঘাটি । সেই ঘাটিতে এরশাদের সমর্থন কেন আওয়ামী লীগের জন্য জরুরী হবে ?
অন্যদিকে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার খোকনকে দেখলাম খুবই উচ্ছসিত । তিনি বলেছেন, সারা বাংলাদেশে আর আওয়ামী লীগ নেই ! ৫ টি সিটি কর্পোরেশনের ফলাফল দেখে তারা এত উচ্ছসিত হতেই পারেন কিন্তু জনগণ তো আপনাদের সফলতার কারণে আপনাদের ভোট দেয়নি । এমনকি বিরোধী দল হিসাবেও আপনারা ব্যর্থ । জনগণের কোন সমস্যা নিয়ে আপনারা কোনদিন রাজপথেও নামেননি , সংসদে জনগণের সমস্যা নিয়ে কথাও বলেননি । । আপনারা যেটুকু রাজপথে সেটুকু আপনাদের ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে । আন্দোলন করেছেন তত্বাবধায়কের দাবিতে । এর মানে হল মুল উদ্দেশ্য ক্ষমতা।তত্বাবধায়ক সরকার দেন আমরা ক্ষমতায় যাই । জনগণ আসলে আপনাদেরও পছন্দ করে না সেটা আমরা বিগত নির্বাচনে দেখেছি । কিন্তু জনগণের এখন দাঁতের ব্যাথা তাই তারা আগের পেটের ব্যাথা ভুলে গেছে ।
আওয়ামী লীগ বলেছে, নির্বাচনে হারের পর আওয়ামী লীগ শিক্ষা নেবে। বাকি আছে আর অল্প কয়েকমাস । এই স্বল্প সময়ে সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময়ের ভুলগুলো শোধরানো সম্ভব ? এর আগে কি আওয়ামী লীগ হারেনি ? তারপরে কি আওয়ামী লীগ শিক্ষা নিয়েছিল ? নেয়নি । বিএনপিও কোন শিক্ষা নেয়নি । আসলে মানুষ বিএনপিকে ক্ষমতায় আনে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনে বিএনপির ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে । সহজ কথা কারো সফলতার কারণে কেউ ভোট পায় না । এভাবেই বাঙ্গালী পাঁচ বছর ধর্ষিত হয় আওয়ামী লীগের দ্বারা ও পরের পাঁচ বছর বিএনপির দ্বারা ।
এজন্য আমি মনে করি , ‘না’ ভোটের দরকার আছে ।বিগত তত্বাবধায়ক সরকার ’না’ ভোট চালু করেছিলেন । সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় দল বানালেই রাতারাতি ক্ষমতায় তারা যাবে বা তারা পরিবর্তন করবে বা করতে পারবে এরকম কিছু হওয়ার সম্ভবনা নেই । এখানে সিস্টেমটা এমনভাবে করা হয়েছে যেখানে আমাদের আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে কোন এক দলকে ভোট দিতেই হবে। আর ’না’ ভোট জয়যুক্ত হওয়া মানে দল, ব্যক্তি ও সিস্টেম এসবের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা । সেই ভয় থেকেই এটা বাতিল করা হয়েছে ।এমন কি ব্যক্তি নেই যে তার কোন প্রার্থী পছন্দ নয় ? এরকম তো অনেক আছে । তাহলে তারা কাকে ভোট দিবেন ? দেখা যাচ্ছে যে তারা ভোটই দিতে যায় না । কিন্তু তাহলে তো তিনি তার মত প্রকাশ করতে পারলেন না ? গণতন্ত্র মানে হল জনগণের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া । সেটা হতে পারে আস্থা বা অনাস্থা কিন্তু শুধু আস্থাই প্রকাশ করব মানে কাউকে না কাউকে ভোট দিতেই হবে যদিও সব প্রার্থী আমার অপছন্দ এরকম তো হতে পারে না ? যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের কাউকে আমি যোগ্য ও দক্ষ মনে করি না তা প্রকাশ করার তো সুযোগ দিতে হবে ?
যাইহোক, সামনে হয়তো বিএনপি ক্ষমতায় আসতেছে ।আমরা কি কোন পরিবর্তন পাব ? পাব না । আওয়ামী লীগের আমলে যা ছিলাম বিএনপির আমলেও তাই থাকব । কথাটা বলা যায় এভাবে, আগামী ৫ বছর পর কি হবে? তার ৫ বছর আগে যা ছিলাম । আসলে আমরা বৃত্তের মধ্যেই আছি । বার বার ঘুরে সেখানেই ফিরি যেখানে আগে ছিলাম । এই বৃত্তটা ভাঙ্গতে হবে বা বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের বৃত্ত নয় সরল রেখায় গমন করতে হবে।
বিষয়: রাজনীতি
১২৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন