ফেসবুকে সুন্দরী ললনাদের প্রতারণার রমরমা ব্যবসা ! নগদে ইনকাম (?) । সাধু সাবধান !
লিখেছেন লিখেছেন এম আর মিলন ০৪ জুলাই, ২০১৩, ০৬:৫২:০৭ সন্ধ্যা
মধ্যপ্রাচ্যের এক প্রবাসী ভাই তমাল ( ছদ্মনাম) । বয়স ২৬ । কয়েক বছর হল তিনি কুয়েতে আছেন। দেশের মানুষের কারো দেখা পেলে ছাড়েন না এক মুহুর্তের জন্য । দেশের ভাল মন্দের খবর জানতে চান। একদিন তার এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি জানতে পারেন ফেসবুক হল সবচেয়ে সহজ ও সস্তা মাধ্যম দেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ করার ও দেশের খবর জানার । যেই কথা সেই কাজ তিনি সেই বন্ধুর পরামর্শে ফেসবুকে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে নেন।কাজের অবসর পেলে বা যখন সময় পান যোগাযোগ শুরু করেন দেশের মানুষের সাথে । ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় চেনা ও অচেনা অনেক মানুষের সাথে । কিন্তু ফেসবুকেও যে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে এক শ্রেণীর কুলাঙ্গার যুবক ও যুবতী তা তার জানা ছিল না । একদিন ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় কলেজ পড়ুয়া এক সুন্দরী মেয়ের সাথে। মানে প্রো পিকচারে খুব সুন্দরী মেয়ের ফটো আপডেট করা হয় প্রায়।
পরিচয়, অভিনয় ও মিষ্টি কথার মাধ্যমে মেয়েটির প্রতি অতি সহজেই দুর্বল হয়ে পড়েন তমাল। এমনিতে দেশের মানুষ তার উপর আবার সুন্দরী মেয়ে ! তমালকে এবার পায় কে ? বিদেশে বসে দেশী সুন্দরী ললনার সাথে প্রেম এরচেয়ে রোমাঞ্চ বলে আর কিছু আছে নাকি ? তাছাড়া দেশে ফিরে বিয়ে করার জন্য নতুন করে মেয়ে দেখার ঝামেলাটাও আর পোহাতে হবে না । যে সুন্দরী মেয়ে বাবা মা পছন্দ না করে এবার যাবে কোথায় ? মেয়েটা অতি অল্প দিনেই তমালের সাত সাগরের রানী হয়ে যায় !
আহা ! মেয়েটা ক্রমেই একদিন জানায় তার পরিবারের অবস্থা ভাল না । পরীক্ষার ফি, ভর্তি, মোবাইল কিনা ও বিভিন্ন ওকেশনে তমালের কাছে টাকা চায়। আর মেয়েদের সম্পর্কে জানেনই তো ওদের চাহিদার শেষ নেই । তমাল মেয়েটাকে নিজের ভবিতব্য বউ মনে করে টাকা পাঠায় ।সমস্যা কি দুদিন পরেই তো বউ !
যাইহোক, এভাবে দিন যায়, মাস যায় আর তমালের টাকাও যায়। একদিন কি কারণে যেন মেয়েটা তমালকে পাত্তা দেয় না । ভুলে যেতে বলে, কিন্তু যে প্রেম বুকের মধ্যে বাসা বেধেছে তা কি আর ভুলে যাওয়া যায় সহজে তা আবার নাকি প্রথম প্রেম !
যাক, তমালের পিড়াপিড়িতে মেয়েটা তার এক বড়সড় রোগের কথা জানায় । যার জন্য অনেক টাকা দরকার । ৭-৮ লাখ তো হবেই । শুনে তমালের মাথা চক্কর দিয়ে উঠে । যাকে এত ভালবাসে , যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন তার কাছে কি সহজেই হার মানবে তমাল ? না, হার মানার পাত্র সে নয় । তার জন্য সে জীবনও দিতে পারে আর এতো সামান্য টাকা !
টা কা প য় সা সেতো আজ আছে কাল নেই । তাছাড়া তমাল তো ইনকাম করতেছেই ।আগে তো বাঁচাতে হবে প্রিয়ার জীবন । যেই কথা সেই কাজ তমাল পাঠিয়ে দেয় তার জীবনের সঞ্চিত এক বড় অংশ !
তারপর ? তমাল সেই রাতে ফেসবুক অন করে দেখে সেই মেয়ের আইডি আর ওপেন হচ্ছে না আর সেই সুন্দরী ললনার ফটোও আর দেখা যাচ্ছে না । সে প্রথম মনে করল এটা ফেসবুকের কোন ত্রুটি । তাই সে চুপ করে রইলো কিন্তু এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর সে বুঝতে পারল ফেসবুকের ত্রুটি নয় তাকে ব্লক করেছে মেয়েটি। সে মেয়েটির নাম্বারে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়েছে কারণ সে নাম্বারও Rejected ! আরো কিছুদিন পরে দেখা গেল সেই আইডিও উধাও ! মানে আইডি ডিলিটেড !
এটা একটা সত্যি ঘটনা । এক প্রবাসী তরুণের সে কি হাউ মাউ কান্না ! তার বর্ণনাকৃত কিয়দংশ এখানে বিবৃত করা হলো । শুধু ঐ ৭-৮ লাখ টাকা নয় । ঐ মেয়েটা মাসের পর মাস ধরে তার কাছে এর আগেও অনেক টাকা নিয়েছে যা ছিল তার কয়েক বছরের উপার্জনের একটা বৃহত্তর অংশ । বলা যায় তিনি নি:স্ব হয়ে গেছেন এর মাধ্যমে !!!
শুধু একজন তমাল নয় । আমাদের গ্রাম বাংলার সহজ সরল এরকম হাজারো তমাল আজ নি:স্ব এই প্রতারক চক্করের খপ্পড়ে পড়ে। অনেকেই আছে নি:স্ব হওয়ার পথে । কয়েকমাস আগে মানবজমীনে এরকম একটা রিপোর্ট পড়েছিলাম । অবশ্য সেখানকার প্রতারক ছিল একজন ছেলে কিন্তু আইডি ইউজ করত মেয়ের নামে।সে আবার মেয়েলী কণ্ঠে কথাও বলতে পারত।সে এভাবে অনেক ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবিকে পটিয়ে নগদ ইনকাম (?) করেছে লক্ষ লক্ষ টাকা ।
অনেকেই আবার প্রবাসীদের দেশ প্রেমের কাতু কুতু দিয়ে বিভিন্ন চ্যারিটি, দুস্থদের সাহায্যের কথা বলে চাঁদা নেয় । পরে দেখা যায় ওসবই ভুয়া । কয়েক মাস আসে ফেসবুকে আমি নিজেই দেখেছি একজনকে মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে ও উনার চিকিৎসার জন্য একটা কমিটি করে বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে সাহায্যের আবেদন করা হয়েছিল । পরবর্তীতে এই ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ঘটনারা সবৈর্ব মিথ্যা ও বানোয়াট । শেষ পর্যন্ত অনলাইন মাধ্যমেও প্রতারণা ছড়িয়ে পড়েছে । এ বিষয়ে সবার সচেতনতা জরুরী । ব্যাপার এখন এমন হয়ে দাড়িয়েছে সত্যিকার কেউ সাহায্য প্রার্থী হলে তাকে সাহায্য করাও সম্ভবর হয়ে উঠবে না ।
যাইহোক, সচেতনার কোন বিকল্প নেই । কাউকে কোন কিছু দেওয়ার আগে একটু খোজ খবর নিন । যা দিচ্ছেন সেটা যেন জলে না যায় সেইদিকটাও খেয়াল রাখা জরুরী।
আসুন ফেসবুক বা অনলাইনে কোন সুন্দরী ললনার আইডি দেখে প্রেমে হাবুডুবু না খাই । তাই পরিচিত মেয়ে না হলে রিকুয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করারও দরকার নেই যদি সুন্দরী ললনার প্রতি আপনার অতি মাত্রায় দুর্বলতা থাকে।আর সাধারণত এসব আইডি বেশি ফেক হয় । তাই পরে সাবধান হওয়ার চেয়ে আগে ভাগেই সাবধান হওয়া ভাল । আম ও ছালা দুটোই বাঁচবে।
বিষয়: বিবিধ
২২০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন