বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার সনদ : সাইরাস সিলিন্ডার
লিখেছেন লিখেছেন এম আর মিলন ১৬ জুন, ২০১৩, ০২:২১:১৫ রাত
সাইরাস সিলিন্ডার : সামনের দিক।
আপনারা অনেকেই সাইরাস সিলিন্ডারের নাম বোধ হয় শুনেছেন । এই সাইরাস সিল্ডিারই হল পৃথিবীর প্রথম মানবাধিকার সনদ। পার্সিয়ান ( ইরান) সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট ৫৩৯ খৃষ্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলন দখলের পর এটা তৈরী করেন।এতে সম্রাট সাইরাসের প্রশংসা, পরাজিত ব্যবিলন রাজা নাবনিডুসের নিন্দা ও নীপিড়ক হিসাবে বর্ণনা এবং এতে পার্সিয়ান সাম্রাজ্য জুড়ে উপাসনার স্বাধীনতা এবং নির্বাসিত লোকজন দেশে ফিরে আসার অনুমতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত আদেশ উৎকীর্ণ রয়েছে। এটি পোড়া মাটির তৈরি একটি সিলিন্ডার যা আকাডিয়ান কিউনিফর্ম হরফে লেখা এবং সম্রাট সাইরাসের নামে নামাঙ্কিত।
ইরাকের ব্যবিলন নাম শহরে এক খননকার্যে ১৮৭৯ সালে সিলিন্ডারটি উদ্ধার করেন ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক ও কূটনীতিক হরমুজদ রাসাম ।
সিলিন্ডারটি দুই হাজার ছয়শত বছরের পুরোনো ও দেখতে এটি ঠিক পিপার মত।পিপা আকৃতির সিলিন্ডারটি ব্যাবিলনের ভিত্তিস্তম্ভে ব্যবহার করা হয়েছিল।এর আকার হল ২২.৫ সেন্টিমিটার x ১০ সেন্টিমিটার । এটি রয়েছে ৫২ নং রুম, ব্রিটিশ মিউজিয়াম, লন্ডনে।
পিছনের দিক ।
সিলিন্ডারটির কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে তারপরেও ৪৫ লাইনের টেক্সট পাওয়া গেছে। দলিলের শুরুর দিকে কিছুটা ভেঙ্গে গেছে। এই ৪৫ টি লাইনকে ছয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১-১৯ লাইনে ব্যবিলিয়নের পূর্বের রাজা নাবনিডুসের নীপিড়নমূলক শাসন ব্যবস্থা, জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও জনগণের প্রতি বল প্রয়োগর বর্ণনা । ২০-২২ লাইনে সাইরাসের প্রশংসা, রাজবংশ ও তার শান্তিপূর্ণ ব্যবিলনের প্রবেশের বর্ণনা।শুরুটা এরকম-"I am Cyrus, king of the world, great king, powerful king..........। ২২-৩৪ লাইনে ব্যবিলিয়নে সাইরাসের নীতি ও কর্মপদ্ধতি।৩৪ -৩৫ লাইনে ব্যবিলিয়নের দেবতা মারদুকের প্রতি সাইরাস ও তার পূত্রের জন্য প্রার্থনা ।৩৬-৩৭ লাইনে শান্তিপূর্ণ জীপন যাপনের জন্য সাইরাসের প্রতি জনগণের সমর্থন ও জনগণকে ঈশ্বরের প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করা।৩৮-৪৫ ব্যবিলিয়নে সাইরাসের নির্মাণ কার্যের বর্ণনা।
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতীক সাইরাস সিলিন্ডারের একটি কপি বা প্রতিকৃতি নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ ভবনে প্রদর্শিত হচ্ছে।
সাইরাসের জীবনীর ওপর ভিত্তি করে গ্রিক চিন্তাবিদ জেনোফন লিখেছেন সাইরোপিডিয়া। জোনোফন লিখেছেন সাইরাস কীভাবে সহিষ্ণুতার ওপর ভিত্তি করে একটি বৈচিত্র্যময় সমাজ শাসন করতেন। বইটি (গ্রিক ও লাতিন ভাষায়) ইউরোপে ১৭৬৭ সালে প্রকাশিত হয়। একটি কপি স্থান পেয়েছে ওয়াশিংটন ডিসির বিশেষ প্রত্নপ্রদর্শনীতে। আরেকটি কপি ছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের সংগ্রহে, যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত রয়েছে।
কিউনিফর্ম স্ক্রিপ্ট এ সাইরাস সিলিন্ডার ।
এমনকি ইরানিরা নিজেই অর্থাৎ ইরানের জাতীয় জাদুঘর ২০১০-২০১১ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে তাদের তৈরি মহামূল্যবান ও প্রাচীনতম মানবাধিকার সনদটি ভাড়া নিয়ে তাদের নিজ দেশে প্রদর্শন করে । সেখানে প্রায় দশ লক্ষ লোক এই প্রাচীনতম মানবাধিকার সনদটি পরিদর্শন করেন। শুধু তাই নয় মার্কিন যুক্তরাস্ট্রও তাদের দেশে এটা প্রদর্শনের জন্য বিট্রিশ মিউজিয়াম থেকে ভাড়া নিয়েছে। সেই সূত্রে বর্তমানে এটি যুক্তরাস্ট্রে রয়েছে এবং এটা বর্তমানে যুক্তরাস্ট্রে প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রদর্শনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি’র স্মিথসোনিয়ানস্ আর্থার এম স্যাকলার গ্যালারি হিউস্টনের মিউজিয়াম অব সাইন আর্র্টস, নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়িাম অব আর্ট, সানফ্রানসিস্কোর এশিয়ান আর্ট মিউজিয়াম এবং লস এঞ্জেলেসের জি.পল জেট্টি মিউজিয়াম। ৮ মাস ব্যাপী এই সফর ২০১৩ সালের অক্টোবরে সমাপ্ত হবে।
ব্রিটিশ মিউজিয়াম ইন লন্ডন সাইরাস সিলিন্ডার ।
সাইরাস সিলিন্ডার এবং এতে উৎকীর্ণ বৈচিত্র্য ও বিশ্বজনীন মানবাধিকারের প্রতি এর বার্তা বর্তমানে আমাদের সকলের জন্য সময়োপযোগী। এগুলো স্থান ও কাল অতিক্রম করে অনন্য উপায়ে বক্তব্য তুলে ধরতে সক্ষম।
বিষয়: বিবিধ
১১৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন