মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান ও বড় হওয়ার আনন্দ
লিখেছেন লিখেছেন কুশপুতুল ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:০৩:৫৫ সন্ধ্যা
মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। সারাদিন ব্যস্ত।
কলেজের অনুষ্ঠান শেষ করে এলাম বাড়ি।
কলেজের অনুষ্ঠানগুলো উপস্থাপনার দায়িত্বটা মাঝে মধ্যে আমারই ওপর পড়ে। আজকেও উপস্থাপন করলাম। আজকেরটা একটু অন্যরকম হলো। তাই শেয়ার করছি।
অনুষ্ঠানে বড় নেতা এলেন। অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে। এমন সময় অধ্যক্ষ স্যার এসে বললেন, 'তুমি পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করবে ছড়ায় আর ছন্দে।'
আমি বললাম, 'একি সম্ভব স্যার! আগে কিচ্ছু জানি না। কোনো প্রিপারেশান নেই!'
স্যার বললেন, 'আমি অতিথিকে বলেছি তোমার কথা।'
'কী বলেছেন স্যার?'
বলেছি, 'যে মেয়েটি আজকের অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করবে, সে কথায় কথায় সুন্দর সুন্দর ছড়া-ছন্দ বানিয়ে ফেলতে পারে। তখন অতিথি খুশিতে বলে ফেললেন, 'তাই নাকি! তো আজকের অনুষ্ঠানটি ছড়ায় ছন্দে হোক।' এই হলো ব্যাপার। বুঝতে পেরেছ, এখন আমার কিছু বলার নেই। চেষ্টা করো, তুমি পারবে।' বলে স্যার দ্রুত চলে গেলেন। আমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রিপারেশান ছিল এক রকম আর এক মুহূর্ত আগে এই খবর।
শীতের মধ্যে আমার শরীর ঘেমে গেলো। এখনই শুরু হতে যাচ্ছে অনুষ্ঠান। মঞ্চে গিয়ে উঠতে হবে। উপস্থাপন করতে হবে মহান বিজয়ের অনুষ্ঠান। স্যার আমার মাথায় একটা টেনশান ঢুকিয়ে দিলেন। একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেলাম। অধ্যক্ষ স্যার অতিথির সাথে বসে কথা বলছেন। রাগে আমার শরীর কাঁপছে।
সবার অজান্তে ওড়নার তলে আমার দুটি হাত মোনাজাতের ভঙ্গিতে চলে গেল। 'হে মহান প্রভু! আজকের এই মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তুমি আমার ও প্রিন্সিপাল স্যারের সম্মান রক্ষা করো। আমার ওপরে যে দায়িত্ব পড়েছে আমি যেন সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারি। আমি খুব মিনতি করে আজ এই মুহূর্তে তোমার করুণা ও সাহায্য প্রার্থনা করছি। ফি আমানিল্লাহ্।' বলে মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালাম। অসংখ্য মানুষের করতালিতে মুখরিত কলেজ মাঠ। আমার মুখের সামনে মাইক।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম কতক্ষণ। মুখে কথা নেই আমার। পুরো মাঠ নীরব নিস্তব্দ।
হঠাৎ করেই মুখ থেকে মিছিলের মতো ছড়া-ছন্দ বেরিয়ে এলো। ছড়া-ছন্দে উপস্থাপনা শুরু করে দিলাম। আমার ঘাম শুকালো। সাহস পেলাম। শুরু করলাম এভাবেই..
মিথ্যার কাছে নোয়াবো না মাথা, সত্যরে করি জয়
আমরা বাঙালি, মুক্ত স্বাধীন, আমরা নির্ভয়
কেমন হয়েছে জানি না। তবে মাঠের মানুষের হাততালি আর মুখ দেখে আমি খুব আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলাম।
এসেছ তুমি, মহান অতিথি, মহান বিজয় দিনে
আমরা খুশি, পড়েছি বাধা, কৃতজ্ঞতার ঋণে...
এখনই সময়, প্রধান অতিথির, দিবেন তিনি ভাষণ
দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানাই, ছাড়িয়া নিজের আসন
এলেন প্রধান অতিথি। বললেন, 'আমার পেটে বোমা মারলেও একটা ছড়ার লাইন বেরুবে না। অথচ আজ অনর্গল ছড়া শোনালো আজকে উপস্থাপক। আমার অন্যরকম অভিজ্ঞতা হলো। সময় কোনদিক দিয়ে গেলো টের পাইনি। আমি আনন্দিত, গর্বিত এবং অনেক খুশি।' আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে আমার হাতে ব্যক্তিগতভাবে একটি উপহার দিলেন। আর আশীর্বাদ করে বললেন, 'মা তুমি অনেক বড় হও।"
আমি বড় হওয়ার আনন্দ নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৬ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
খুশির ঠেলায় তোমার পেটে দিলাম একটা ঘুষি!
অাস্তে দিছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন