কুরআনে বর্ণিত 'রিবা' এবং ব্যাংক প্রদত্ত 'ইন্টারেস্ট' কি একই জিনিস?
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী ২৩ জুন, ২০১৫, ০৬:৩৫:৩০ সন্ধ্যা
কুরআনে বর্ণিত 'রিবা' এবং ব্যাংক প্রদত্ত 'ইন্টারেস্ট' কি একই জিনিস? জানা থাকরে বলবেন প্রিজ?
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৬ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
http://imranhosein.org/books/480-the-prohibition-of-ribah-in-the-quran-and-sunnah.html
কেন যে মানুষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে! নাকি শতভাগ প্রতারক প্রতিষ্ঠান এ টাকা আমানত রেখে সময়ের পরিক্রমায় অতিরিক্ত লভ্যাংশ! নিয়েও তাকে সুদ বলে, আর কেনই বা ব্যবসায়ীরা টাকা ধার নিয়ে সময়ের আবর্তে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সে টাকাকে সুদ বলে আর কেনই বা ব্যাংক ঐ নিজের কোন ক্যাপিটাল ছাড়াই কোন পন্য কিংবা সেবা ছাড়াই আমানতকারী ও ঋনগ্রহনকারীর টাকার হিসাব ও সংযোগের মাধ্যমে আমানতকারীর চেয়ে লিটারেলী ১০০০% বেশী লাভে! লাভবান হয়ে ও সে লাভকে সুদ বলে?
আসলে সময় এসেছে সুদকে লভ্যাংশ বলার মত ছেলেকে মেয়ে ডাকা আর মেয়েকে ছেলে সম্ভোধন করা।
Interest শব্দের উৎপত্তি মধ্যযুগীয় ল্যাটিন শব্দ Interesse থেকে। এর অর্থ ঋণ দিয়ে আসলের ওপর বেশি নেয়া। Usury ল্যাটিন শব্দ। Usury থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। Usury মানে হচ্ছে প্রদত্ত ঋণ থেকে অর্জিত উপভোগ (enjoyment); ক্যানন ল’তে এর
মানে হচ্ছে অর্থ ধার দিয়ে তার বিনিময়ে আসল পাওনার ওপর অতিরিক্ত গ্রহণ করা। অর্থাৎ ঋণ দিয়ে আসলের ওপর বেশি নেয়া। Encyclopaedia of Religions and Ethics এ বলা হয়েছে Usury ও Interest
শব্দ দু’টি এক ও অভিন্ন অর্থে অতীতে ব্যবহার করা হতো। সুদকে ব্যবহারিক অর্থে বাংলায় কুসিদও বলা হয়। রিবার অর্থও ঠিক তাই। আল কুরআন ও আস সুন্নাহয় ব্যবহৃত
রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে প্রবৃদ্ধি, পরিবৃদ্ধি, পরিবর্ধন, পরিবর্ধক, সম্প্রসারণ, স্ফীত, আধিক্য, উদ্বৃত্ত, বৃদ্ধি, বিকাশ, অতিরিক্ত বা বেশি হওয়া, মূল থেকে বেড়ে যাওয়া, বিকাশ ঘটা ইত্যাদি। সুপরিচিত
আরবি অভিধান লিসান আল আরব রিবার শাব্দিক অর্থ লিখেছে, ‘বৃদ্ধি, বাড়তি, অতিরিক্ত, সম্প্রসারণ বা প্রবৃদ্ধি। আল্লামা ইমাম রাগিব আল ইস্পাহানী লিখেছেন, রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে প্রবৃদ্ধি, বেশি, স্ফীত, ক্রমশ বড় হওয়া, কয়েকগুণ
বেশি হওয়া, আসলের বাড়তি ও বৃদ্ধি হওয়া, বিনিময় ছাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি তাফসিরকার ও ফিকাহবিদগণ রিবার অর্থ করেছেন অতিরিক্ত, বৃদ্ধি, বিনিময়হীন বৃদ্ধি, একদিকে বৃদ্ধি অপর দিকে বৃদ্ধি ছাড়াই ইত্যাদি। বিশিষ্ট কতিপয় বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘প্রতিমূল্য নেই এমন
প্রতিটি বৃদ্ধিই হচ্ছে রিবা ড. এম. উমর
চাপরা লিখেছেন, ‘রিবার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি, অতিরিক্ত, সম্প্রসারণ বা প্রবৃদ্ধি।
আল্লামা মুহাম্মদ আসাদের (১৯০০-১৯৯২) মতে, ‘ভাষাগত দিক থেকে রিবা শব্দ দ্বারা কোন জিনিসের মূল আয়তন
বা পরিমাপের ওপরে বেশি হওয়া বা বৃদ্ধিকে বুঝায়। ড. এম এ মান্নান লিখেছেন, রিবার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি পাওয়া বা প্রবৃদ্ধি। তবে ইসলামে সকল বৃদ্ধিকেই ‘রিবা’ বলা হয়নি। এক বিশেষ অর্থে ইসলামে ‘রিবা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। ইসলামে ঐ বৃদ্ধিকে ‘রিবা’ বলা হয় যা প্রদত্ত ঋণের ওপর ঋণের শর্ত হিসেবে অতিরিক্ত কিছু আকারে বা কোন
সুবিধা ধার্য করে আদায় করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের ঋণের
বিনিময়ে পূর্ব নির্ধারিত হারে বা পূর্ব নির্ধারিত
না থাকলেও প্রদত্ত ঋণের অধিক অর্থ বা সুবিধা আদায় করলে এবং সামগ্রিক ক্ষেত্রে সমজাতীয় পণ্যের কম
পরিমাণের বিনিময়ে বেশি পরিমাণ নেয়া হলে অর্থ বা পণ্যের ঐ অতিরিক্ত অংশকে রিবা বা সুদ বলা হয়। সুদের ফলে ঋণের আসল পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং সময়ের অনুপাতে আসল বৃদ্ধির পরিমাণ বা হার নির্ধারিত হয়।
সুতরাং রিবা, সুদ, Interest, Usury এর অর্থ এক ও অভিন্ন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন