শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষনের ব্যবচ্ছেদ
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী ০৭ মার্চ, ২০১৫, ০৯:৩৯:১৮ সকাল
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ১৯ মিনিট ভাষন দেন। শেখ মুজিব ভক্ত ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা এটাকে 'ঐতিহাসিক ভাষন', 'স্বাধীনতার ঘোষনা', 'স্বাধীনতার ডাক', 'বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে দিকনির্দেশনা', ইত্যাদি বলে আভিহিত করেন। কিন্তু শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষনের ব্যবচ্ছেদ করলে দেখা যায় এটা ছিল 'দোষারোপের ভাষন', 'নির্জলা মিথ্যা ইতিহাস বর্ণনা', 'স্ব-বিরোধী ভাষন', 'ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উম্মদনা তৈরীর ভাষন', 'মিল-কারখানার মালিকদের হুমক-ধামকি দেওয়ার ভাষন'।
৭ মার্চের ভাষনে তিনি বলেন, 'আজ ঢাকা, চট্রগ্রাম....... আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত.....'।
প্রকৃত পক্ষে এ সময় সারা দেশে বাঙ্গালী-ননবাঙ্গালী দাঙ্গা শুরু হয়েগিয়েছিল এবং ননবাঙ্গালীদের কচু কাটা করা হচ্ছিল।
শেখ মুজিব বলেন, 'নির্বাচনে.... সম্পূর্ণভাবে আমাকে আওয়ামী লীগকে ভোট দেন.....'
প্রকৃতপক্ষে ৭০ এর নির্বাচন ছিল ভুয়া নির্বাচন। আওয়ামী গুন্ডা বাহিনী সাধারণ জনগনের ভোটাধিকার হরন করে এবং 'নৌকা' মার্কায় ভোট 'সীল' মেরে বাক্স পুরন করে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোন সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয়নি। ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী জনসভায় হামলা চালিয়ে পন্ড করে দেয় আওয়ামী লীগ'
এরপর শেখ মুজিব '২৩ বৎসরের করুন' মিথ্যা ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, '১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে পারি নাই'
ভাষনের এই অংশটুকু ছিলা ডাহা মিথ্যা বক্তব্য। প্রকৃতপক্ষে ১৯৫৪ সাল বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার মন্ত্রী হন। কিন্তু সে সরকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ কংগ্রেস, তফসিলি ফেডারেশন ও গণতন্ত্রী পার্টি সরকার গঠন করলে সে সরকারের চীপ মিনিস্টার নির্বাচিত হন আতাউর রহমান খান, আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন, সেই মন্ত্রী সভার বাণিজ্য, শ্রম, শিল্প ও দুনীর্তিদমনমন্ত্রী। ১৯৫৪ সাল বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার মন্ত্রী হন। কিন্তু সে সরকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ কংগ্রেস, তফসিলি ফেডারেশন ও গণতন্ত্রী পার্টি সরকার গঠন করলে সে সরকারের চীপ মিনিস্টার নির্বাচিত হন আতাউর রহমান খান, আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন, সেই মন্ত্রী সভার বাণিজ্য, শ্রম, শিল্প ও দুনীর্তিদমনমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানকে মার্শাল 'ল' জারি করার জন্য দোষারোপ করলেও তার জন্য মুলত দায়ী ছিলেন শেখ মুজিব ও তার সাঙ্গপাঙ্গরাই। এরাই এসেম্বেলীতে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে মেরে রক্তাক্ত করেন এবং ১৯৫৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মারা যান। ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীর হত্যাকান্ডের জের ধরেই প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা ও সেনা প্রধান আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করেন।
শেখ মুজিবের ভাষন থেকে জানা যায় জুলপিকার আলী ভুট্রো শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ তাকে (ভুট্রোকে) ও অন্যান্য পার্লামেন্ট মেম্বারকে হত্যা করতে পারে এ ধারণা পোষন করতেন। এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিব ভাষনে বলেন, "তিনি বললেন (ভুট্রো), পশ্চিম পাকিস্থানের মেম্বাররা যদি এখানে আসে তাহলে কসাইখানা হবে এসেম্বলী"। যেহেতু ইতোপূর্বে শেখ মুজিব পালার্মেন্টে স্পিকার হত্যার অভিজ্ঞতা ছিল সেজন্য ভুট্রোর এ আশংকা অমুলক ছিল না।
৭ মার্চের ভাষনে শেখ মুজিব, ইয়াহইয়া খান ও ভুট্রোর সাথে আলোচনা নিয়ে 'দ্বিমুখী' ও 'ধোকাবাজিপূর্ণ' বক্তব্য দেন। ভাষনের শুরুর দিকে তিনি "জনাব ভুট্রো সাহেব এখানে এসেছিলেন, আলোচনা করলেন........তাদের সঙ্গে আলাপ করলাম, আপনারা আসুন, বসুন আমরা আলাপ করে ... " অথচ একটু পরেই শেখ মুজিব রুপ পরিবর্তন করে বলেন, "আমিতো অনেক আগেই বলে দিয়েছি কিসের রাউন্ড টেবিল, কার সঙ্গে বসবো? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে তাদের সাথে বসবো?.... এটা ছিল জনগনের সাথে ধোকাবাজির তুল্য কেননা এই বক্তব্য দেওয়ার পরও শেখ মুজিব ২৪ মার্চ পর্যন্ত এদেশেই 'আলোচনা' চালিয়ে গেছেন।
ভাষনে শেখ মুজিবের প্রধান দাবীগুলো ছিল,
১। সামরিক আইন তুলে নিতে হবে।
২। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে।
৩। হত্যাকান্ডের তদন্ত করতে হবে।
৪। জনগনের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অর্থাৎ শেখ মুজিবকে পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে।
অথচ একই সাথে তিনি বলেন, "আমি, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না" এর চেয়ে দ্বিমুখী কথা আর কি হতে পারে?
এরপর তিনি হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু করে বলেন, ''২৮ তারিখে কর্মচারীরা যেয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। আর যদি বেতন দেওয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি.......ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল..... আমরা ভাতে মারব, পানিতে মারব..." অর্থাৎ কাজ না করেও তিনি জোরপুর্বক বেতন দেওয়ার জন্য বলেন। তিনি শিল্প মালিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, "আর এই সাতদিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছে, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌছে দেবেন"। ডিউটি না করেও 'বেতন' কি মাম বাড়ির আবদার।
ভাষনের শেষ অংশে তিনি বলেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম"
এটাও ছিল শেখ মুজিবের স্ব-বিরোধী ও স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালী ছাত্র-জনতার সাথে প্রতারণার শামিল। শেখ মুজিবের ৪টি দাবীর প্রধান দাবী ছিল তাকে পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী বানানো অপরদিকে তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামের দাবী করছেন।
এটা ঐতিহাসিক সত্য তিনি 'জয় বাংলা' এর সাথে 'জয় পাকিস্থান' বলেছেন। সুতরাং ৭ মার্চের ভাষন নিয়ে আওয়ামী শিবির যতই গুণ-কীর্তন করুন না কেন এটা ছিল একটি অগোছোলো, স্ব-বিরোধী, প্রতারণাপূর্ণ ভাষন।
বিষয়: বিবিধ
২০২৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১৯৫৪ সারে পুর্বপাকিস্তান এর যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা কার জন্য ভেঙ্গে ছিল সেটা জানতে আবুল মনসুর আহমদ এর "আমার দেখা রাজনিতির পঞ্চাশ বছর" আর আতাউর রহমান খানের "ওজারতির দুই বছর" পড়া দরকার সবার।
৭ই মার্চ এর ভাষন কোন নিতিনির্ধারনি ছিলনা একেবারেই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন