ডেভোলপার কোম্পানীর প্রতারণা

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:০৭:৫৮ সকাল



বাংলাদেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ডেভোলপার কোম্পানী। অধিকাংশ ডেভোলপার কোম্পানীর প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন জমির মালিক, যারা ফ্লাট কিনছেন তারা, যারা ইট, বালু, সিমেন্ট সাপ্লাই দিচ্ছেন তারা সহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা। কয়েকটি কেস স্টাডি তুলে ধরছি।

কেস স্টাডি-১: "মাত্র ২০ লক্ষ টাকায় ১২০০ স্কয়ার ফিটের ফ্লাট" এই বিজ্ঞাপনটির সাথে ঢাকায় বসবাসকারী সবাই পরিচিত। কোম্পানীর নাম RSA Development মালিক গানের পাখি সবুর ওরফে চিটার সবুর। উত্তর বাড্ডায় আমার বন্ধুদের ১৮ কাঠার প্লট নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে সামান্য কিছু কাজ করে সব ফ্লাট স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে এই ব্যক্তি লাপাত্তা হয়ে গেছে। এখন যারা ফ্লাট ক্রয় বাবদ নিজেদের গচ্ছিত টাকা দিয়েছেন তাদের মাথায় বাজ পড়েছে। আর জমির মালিকরাও পড়েছে মহা বিপদে। তারা আগে ভাড়া পেত সেটাও বন্ধ হয়েছে, এপর্যন্ত লক্ষ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল গ্যাস, বিল বাকি হয়েছে, এই জায়গা না নিজেরা ডেভোলপ করতে পারবে না নতুন কোন কোম্পানীকে দিতে পারবে। আর দিলেও যারা ফ্লাট কিনেছে তাদের কি হবে? এরকম হাজারও সমস্যায় যারা ফ্লাট কিনেছে তারা এবং জমির মালিকরা পাগল প্রায়। জানা যায় সবুর মিয়া এরকম ৭০ প্রজেক্ট থেকে ৩-৪শ কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

কেস স্টাডি-২: জনাব ফিরোজ আহমেদ মগবাজারের মধুবাগে প্রায় ৭-৮ বছর পূর্বে ৮ কাঠার প্লট ডেভোলপার কোম্পানীকে দিয়েছে। ডেভোলপার কোম্পানী বিল্ডিং এর ছাদ পর্যন্ত কাজ করে সব ফ্লাট বিক্রি করে দিয়েছে। এর পর বিক্রি করা ফ্লাটের উপর ব্যাংক ঋণ নিয়েছে। এখন জমির মালিক ফিরোজ আহমেদ সাহেবও চেষ্টা করেও ডেভোলপার এর কোন খোঁজ পাচ্ছেন না। ডেভোলপারের মালিকের বিরুদ্ধে ৪টি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে কিন্তু তাকে পুলিশ ধরছে না।এদিকে যারা ফ্লাট কিনেছে তারা সব টাকা পরিশোধ করার পর আরও জরিমানা দিয়ে বিল্ডিং রেডি করবে তারও সুযোগ নাই কেননা এসব ফ্লাট ব্যাংকে মর্গেজ দেওয়া। জমির মালিকও আম-মোক্তার নামা বাতিল করেছে কিন্তু ডেভোলপারের সাথে একতরফা আম-মোক্তারনামা বাতিল করা যায় না। এখন জমির মালিক তার নিজের করা ফ্লাটগুলো রেডি করতেও প্রায় ১.৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ বেচারা তার জমির প্রায় ৫৫% ফ্রি ফ্রি বিভিন্ন মানুষকে দিয়ে দিলেন। এখন জামির মালিক-ফ্লাট ক্রয়কারীদের মধ্যে ব্যাপক গন্ডগোল দেখা দিয়েছে কিন্তু ডেভোলপার লাপাত্তা।

এভাবে ডেভোলপার কোম্পানীর প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ।জমি নিয়ে বছরের পর বছন কাজ না করা, কিছু কাজ করে ফ্লাট বিক্রি করে লাপাত্তা হওয়া সহ বিভিন্ন অপকর্ম করছে ডেভোলপার কোম্পানী। এক্ষেত্রে ডেভোলপার কোম্পাণীকে ধরার মত কোন আইন এদেশে নাই। আইনের সব ধারায় ডেভোলপার কোম্পানীর ফেভারে। ছোট ছোট কোম্পানীর মালিকে তাও ধরা যায় কিন্তু 'যমুনা', 'রুপায়ন' এর মত বড় বড় কোম্পানীর ম্যানেজারদের ধারে কাছেও যাওয়া যায় না। ফলে জীবনের সব সম্বল ডেভোলপার কোম্পানীকে দিয়ে হার্ট এ্যাটাক করে মারা যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই।

কি করবেন: ডেভোলপার কোম্পানীর সুন্দর অফিস, সুন্দরী রিসিপসনিস্ট, মিষ্টি কথা না শুনে নিজের মত চেষ্টা করুন।

জমির মালিক: আপনি যদি জমির মালিক হন তাহলে জমি ডেভোলপারকে না দিয়ে নিজেই নিজের বিল্ডিং করুন। যদি সে সক্ষমতা না থাকে তাহলে যারা ফ্লাট কিনতে ইচ্ছুক এমন কিছু ব্যক্তিকে একত্রিত করে নিজেরাই ডেভোলপ করুন এতে টাকাও খরচ কম হবে আপনার হ্যাসেলও কমে যাবে।

যারা ফ্লাট কিনবেন: অবশ্যই সস্তা বিজ্ঞাপন পেয়ে ফ্লাট কিনবেন না। যেমন সবুর মিয়ার "২০ লক্ষ টাকায় ১২০০বর্গফুটের ফ্লাট" অর্থাৎ ১বর্গফুট ফ্লাটের মুল্য ১৬৬৬.৬৬ টাকা। বর্তমানে ঢাকায় ৫০:৫০ রেশিও ছাড়াও জমির মালিককে কাঠা প্রতি স্থান ভেদে ৫-৭লক্ষ টাকা সাইনিং মানি দিতে হয়। অর্থাৎ কাঠা প্রতি সাইনিং মানি পরে প্রায় ৬৭৫ টাকা বিল্ডিং বানাতে খরচ ১২০০/বর্গফুট x ২ = ২৪০০+৬৭৫ = ৩০৭৫+অন্যান্য ২০০= ৩২৭৫ টাকা। এখন আপনিই বলুন সবুর মিয়া কি বাপের জমি বিক্রি করে আপনাকে ১৬৬৬ টাকা বর্গফুটে ফ্লাট দিবে? ফ্লাট ক্রয়ের সময় প্রায় রেডি এধরণের ফ্লাট কিনবেন এবং অবশ্যই শর্ত দিবেন যে আপনার টাকা দিয়ে ফ্লাটের বাকী কাজ শেষ করবে এবং ১০% টাকা ফ্লাটে উঠে পরিশোধ করবেন।

বিষয়: বিবিধ

১৯৯৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

294170
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৪২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই সেক্টর এই সব প্রতারক দের কারনে এখন ধ্বংসের মুখে। অথচ দেশের জনসংখ্যার বিবেচনায় বহুতল আধুনিক ভবন অতি প্রয়োজনিয়।
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২২
237748
মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
294181
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সত্য কথাই বলেছেন, মানুষদের কে সচেতন করতে ফ্লাট নিয়ে একটি রম্য রচনা আবার ফ্লাট ও প্লট নিয়েও আলাদ করে দুটো প্রবন্ধ আমি লিখেছিলাম। ফ্লাট নিয়ে রম্য রচনাটি আমার লিখিত রচনা হিসেবে দেশে বিদেশে সবচেয়ে বেশী মাত্রায় প্রকাশিত হয়েছে।

আমি যেহেতু এই ধরনের কাজের সাথে দীর্ঘ দুই যুগের বেশী সময় ধরে জরিত। আমার মত হল,

- যারা ফ্লাট করতে চায় এমন কিছু ব্যক্তি একত্রে মিলে ফ্লাট করাই্ উত্তম। নতুবা ফ্লাট না কিনে গরীব জীবন যাপন করাই উত্তম।

- কোন ফ্লাট বাড়ীর মালিক হতেও ফ্লাট কিনা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কেননা তিনি হয়ত ফ্লাট বানাতে দুই নম্বরী কাজের আশ্রয় নিবেনা, তবে তার একক ভাবে বেশী ফ্লাট থাকার কারণে তার জমিদারী সুভল মনোভাব যাবেন। পরবর্তিতে তিনিই মূল সমস্যার হোতা হয়ে উঠবেন।

- কোন ফ্লাট বাড়ীর মালিক যদি বলেন, আমি একটি অথবা দুটি ফ্লাট রাখব বাকী গুলো বিক্রয় করব, এক্ষেত্রে হয়ত চিন্তা করা যেতে পারে, কেননা সেক্ষেত্রে তার একক কর্তৃত্ব থাকে না।

- কোন ফ্লাট বাড়ীর একক কর্তৃত্ব থাকার সম্ভাবনা থাকলে সেটা পানির দরে হলেও সেখানে ফ্লাট কেনা উচিত নয়।

- আমাদের দেশে প্রফেশনার ডেভলোপার কোম্পনী হাতে গোনা। বুহ বছরের পুরানা না হলে সে সব কোম্পানীর পাশে যেতে নাই।

বস্তুনিষ্ট পোষ্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:২৮
237763
মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী লিখেছেন : আমিও এ ব্যবসার সাথে মোটামোটি জড়িত, চাঁদাবাজি, রংবাজির অন্যতম জায়গা ডেভলপার ও কনস্ট্রাকশন ব্যবসা। আপনি যে পরামর্শ দিয়েছেন, তা সুন্দর। ধন্যবাদ।
294251
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৭
মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী লিখেছেন : আমার বন্ধু যমুনা সিটেতে জমি কিনেছিল প্রায় ১৪ বছর আগে এখন জায়গারও খবর নেই, টাকারও খবর নেই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File