র্যাব গডফাদার জিয়াউল আহসান

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী ২৭ জুন, ২০১৪, ০৭:২০:০৫ সকাল



জিয়াউল রক্ষা মিশন : র্যাব গডফাদার গ্রেফতার হলে সরকার টেকে না

স্টাফ রিপোর্টার

« আগের সংবাদ 22 পরের সংবাদ»

এখনও বহাল তবিয়তে আছেন র্যাবের আলোচিত অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়া উল আহসান। নারায়ণগঞ্জে অপহরণের পর চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস সাতখুনের ঘটনায় ওই র্যাব কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার গুরুতর অভিযোগ পাওয়ার পরও তার টিকিটি ছুতে পারেনি। র্যাব-১১ এর সাবেক সিওসহ তিন র্যাব কর্মকর্তার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সাতখুনের ঘটনায় লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসে। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জে আলোচিত খুনের ঘটনা আগে থেকেই জানতেন র্যাব সদর দফতরের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা।

কিন্তু এতসব গুরুতর তথ্যপ্রমাণ হাতে থাকার পরও সরকারের কোনো সংস্থা জিয়া উল আহসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বরং এ ঘটনায় গঠিত ছয়টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেই র্যাবের সংশ্লিষ্টতাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের এত অভিযোগের পরও কেন ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? এমনকি অভিযোগ ও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পরও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে-তা হলে জিয়াউল আহসানের খুঁটির জোর কোথায়? কেন তাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে? তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, জিয়াউল আহসানের কাছে এমন তথ্য রয়েছে যা ফাঁস হলে সরকার টেকে না। এ কারণেই দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সাত খুনের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে খোদ সরকারই! তাই সাত খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে অন্য আসামি গ্রেফতার হলেও জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি তাকে যেন গ্রেফতার করা না হয় সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া আছে। যে কারণে এ বিষয়ে কোনো সংস্থা এগিয়ে আসছে না।

সংশ্লিষ্টদের মতে, শেখ হাসিনা যে তিন পিলারে ভর করে ক্ষমতার মসনদ আগলে রেখেছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে র্যাব। আর এই বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসান। র্যাবের নীতিনির্ধারণীর অন্যতম একজন। র্যাবের অভিযান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আটকসহ গুুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। সূত্রমতে শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন এই কর্মকর্তাকে এক বছর আগে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে র্যাব সদর দফতরে গোয়েন্দা উইংয়ের প্রধান ছিলেন।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশে শুরু হয় গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। দেশে প্রতিদিন গড়ে ১২ জন করে মানুষ খুনের পাশাপাশি গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র প্রতিবাদের পরও গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করেনি সরকার। আর গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে শুরু থেকেই র্যাবের প্রতি ইঙ্গিত তোলা হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে র্যাবকে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড থেকে সরে আসতে বলা হয়। র্যাবের প্রশিক্ষণ প্রদান বন্ধসহ র্যাব নিষিদ্ধেরও দাবি করে আন্তর্জাতিক অঙ্গন। কিন্তু এতে কর্ণপাত করেনি শেখ হাসিনার সরকার ও র্যাব। অভিযোগ আছে, জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে রয়েছে গুম-খুন ও অপহরণ বাণিজ্যের মতো জঘন্য অভিযোগের পাহাড়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তার সরাসরি নির্দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতাদের অপহরণ করে গুম করে ফেলা হয়। কারো লাশ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর নৃশংস কায়দায় খুন করে লাশ সীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়ে গুম করার চেষ্টার নায়কও তিনি। কিন্তু ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় র্যাবের ওই অতিরিক্ত মহাপরিচালকের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া র্যাব ১১-এর সাবেক সিও লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেছেন তিনি র্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নির্দেশেই সাত খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। সর্ব শেষ গত ১৯ জুন র্যাব ১১ এর সাবেক সিও সাঈদ তারেক নারায়ণগঞ্জ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী তিনি কাজ করেছেন।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও আদালত সূত্র জানায়, সাবেক র্যাব কর্মকর্তা তার জবানবন্দিতে সদর দফতরের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলতে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারেক সাঈদ ৬ দফায় ৩২ দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষে আদালতে আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর নূর হোসেন তার কাছে নজরুলকে হত্যার প্রস্তাব নিয়ে এলে তিনি তাকে র্যাবের ওই মহাপরিচালকের কাছে পাঠান। পরে র্যাব সদর দফতরে নূর হোসেনের সঙ্গে ওই র্যাব কর্মকর্তার বৈঠক হয়। ওই কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং সব তথ্য সদর দফতরে ওই কর্মকর্তাকে জানানো হয়। তদন্তে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাত খুনের দেড় মাস আগে র্যাবের ওই অতিরিক্ত মহাপরিচালক র্যাব ১১-এর সিওকে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামকে আটকের নির্দেশ দেন। গত ২৭ এপ্রিল নজরুল ও চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ, খুন ও গুমের পর রাত ৩টায় সদর দফতরে ঊর্ধ্বতন র্যাব কর্মকর্তার সঙ্গে তারেক সাঈদ, আরিফ ও এমএম রানাসহ ১১ র্যাব সদস্যের বৈঠক হয়।

সূত্র মতে, সাবেক তিন কর্মকর্তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ায় ওই কর্মকর্তা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর থেকেই নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান র্যাব ১১-এর সিওসহ সদর দফতরের ওই অতিরিক্ত মহাপরিচালক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দাবি করে আসছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, নিজেকে রক্ষা করতে নূর হোসেনকে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালকই সীমান্ত পারি দিয়ে ভারতে পালাতে সহায়তা করেন।

তবে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত র্যাবের সাবেক দুই কর্মকর্তা র্যাব ও এডিজিকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার খবর মিডিয়ায় খবর বেরিয়ে আসার পর র্যাব সদর দফতর থেকে বিভিন্ন মিডিয়ায় একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। কিন্তু এরপর র্যাব ১১ এর সাবেক সিও সাঈদ তারেক সর্বশেষে একই ধরনের স্বীকারোক্তি দেয়ার পর আর কোনো প্রতিবাদ পাঠানো হয়নি।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন-নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক গ্রেফতার করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

বিষয়: বিবিধ

১৫৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File