Terrorist when Justice

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী ০৪ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৫৮:০১ দুপুর

১৯৮৯ সাল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু) নির্বাচন। নির্বাচনে জাসদ-ছাত্রমৈত্রীর মুন্না-বাবু পরিষদ। বর্তমানে রাগীব আহসান মুন্না ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও ব্যবসায়ী আর রুহুল কুদ্দুস বাব হাইকোর্টের বিচারপতি। ছাত্রদলের রিজভী-হারুন পরিষদ। বর্তমানে রিজভী আহমেদ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব এবং দপ্তর সম্পাদক আর হারুন-অর-রশিদ চাঁপাই নবাবগঞ্জের সাবেক এমপি আলোচিত মহিলা এমপি পাপিয়ার স্বামী। ছাত্রশিবিরের লতিফ-রফিক পরিষদ। বর্তমানে আবদুল লতিফ ব্যারিস্টারী করে লন্ডনে আছেন আর রফিকুল ইসলাম খান জামায়াতের ঢাকামহানগীর আমীর এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী।

আমার জন্ম রাজশাহী চিনিকল এলাকায় যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে এবং মতিহার থানায় অবস্থিত। রাজশাহী চিনিকলের আবাসিক অনেক ছেলেই রাবিতে অধ্যয়ন করে সেজন্য এখানেও রাকসু নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে। মুন্না, বাবু, লতিফ, রফিক, রিজভী, হারুন সবাই এলাকায় আসত, ব্যাপক পোস্টারিং, দেওয়াল লিখন, ব্যানার ইত্যাদি। আমি সেময় ৩য় শ্রেনীতে পড়ি। প্রতিদিন বিকালে গোল্লাছুট আর রাত্রে বিদ্যুৎ গেলে আমরা বাড়ির পাশে মাঠে লুকো-চুরি খেলি।

রাকসু নির্বাচনকালীন সময়ে একদিন আমার ছোটবেলার খেলার সাথী মুন্না, বাবু, খাইরুল, শামিম, স্বপন যাদের সবার বয়সই ১০-১২ বিকালে কড়ইগাছের নীচে বসে গল্প করছি। কড়ই গাছে 'মুন্না-বাবু পরিষদ' এর একটা পোস্টার লাগানো ছিল। বন্ধু বাবু বলল, এটা আমার নামের পোস্টার, মুন্না বলল, এটা আমার নামের পোস্টার এভাবেই কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে মুন্না কড়ই গাছে লাগানো পোস্টারে বাবুর নাম ছিড়ে ফেলল, বাবুও মুন্নার নাম ছিড়ে ফেলল। আমার বন্ধু খাইরুল বলল তোরা পোস্টার নিয়ে ঝগড়া করছিস 'যা মুন্না-বাবু কারও নাম থাকবে না" এ বলে সে পোস্টার ছিড়ে ফেলল। রাতে আমরা খেলছি এসময় রুহুল কুদ্দুস বাবুর নেতৃত্বে আমাদের এলাকার সিদ্দিক, আরজু আরও অনেক মৈত্রীর ছেলেরা ভোট চাইতে এসেছে। কড়ই গাছের নিচে দাড়ানো অবস্থায় দেখে পোস্টার ছেড়া। বাবু, জিজ্ঞেস করল কে পোস্টার ছিড়েছে। আমি ঘটনা বললাম, রুহুল কুদ্দুস বাবু ভিলেনি হাসি দিয়ে কি ইশারা করল আর অমনি সিদ্দিক বন্ধু খায়রুলের গলা টিপে ধরল। আমরা ভয়ে চিৎকার করছিলাম। অনেকেই কান্না করছিল। খাইরুলও বুকফাটা চিৎকার করছিল কিন্তু করার কিছুই ছিল না। একটা পোস্টার ছিড়ার জন্য সন্ত্রাসী রুহুল কুদ্দুস বাবুর নেতৃত্বে ১০-১২ বছরের শিশুদের নির্যাতন এখনও দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়ায়। সেদিন থেকে আমার খেলার সাথীরা কেউ আমার সাথে খেলত না, কারণ খাইরুলের নাম আমিই বলেছিলাম। রুহুল কুদ্দুস বাবুরা ছিল ভয়ঃকর সন্ত্রাসী এবং দুস্চরিত্ত্রের অধিকারী। রুহুল কুদ্দুস বাবুরা এলাকার সন্দুরী মেয়েদের সাথে শারিরিক সম্পর্ক তৈরী করে ব্লাকমেইল করত। এই সন্ত্রাসী রুহুল কুদ্দুস বাবু ১৭ নভেম্বর, ৮৮ শিবিরের লতিফ হল সভাপতি আসলাম হোসাইনকে বন্ধ ঘরের দরজা ভেঙ্গে হত্যা করে আর তার সাথীদের মারাত্বকভাবে যখম করে, পরের দিন হত্যা করে ৩ বছরের শিশু আফিফার পিতা আসগর হোসেন কে। ১৮ এপ্রিল,৮৯ রাগীব আহসান মুন্না এবং রুহুল কুদ্দুস বাবুর নেতৃত্বে শিবিরের মতিহার হল সেক্রেটারী শফিক কে হত্যা করে। শফিক ছিল ক্লাসে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট ছাত্র। ২২ জুন,৯০ রুহুল কুদ্দুস বাবুর নেতৃত্বে হত্যা করা হয় আমীর আলী হলের খলিলুর রহমান কে। এই বাবু খলিলকে হত্যার পর গলায় রশি ঝলিয়ে তিন তলা থেকে ডাইনিং এ নিয়ে এসে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করেছিল। সেদিন হলের অনেক শিবির কর্মীকে রাকসুর জিএস পরিচয় দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নির্যাতন করেছিল। উপরন্তু খলিলকে হত্যার পর এই রুহুল কুদ্দুস বাবু তাকে নিজের কর্মী পরিচয় দিয়ে মতিহার থানায় মামলা করেছিল।

ইতিহাসের নির্মম পরিহাস শিশু নির্যাতনকারী, নারী নির্যাতনকারী, বহু হত্যামামলর আসামী একজন সন্ত্রাসীকে আওয়ামী লীগ সরকার হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে হাইকোর্টের পবিত্রাঙ্গন কলংকিত করেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File