রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বাড়ি দখল করেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী ০২ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:০৬:৪৬ সন্ধ্যা



সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বাড়ি দখল করেছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। রক্ষীবাহিনীর উপপরিচালক আনোয়ার উল আলমের ‘রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা’ বইতে লতিফ সিদ্দিকীর বাড়ি দখলের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি। বইটির ১০৫ থেকে ১০৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বাড়ি দখলের ঘটনাটি উল্লেখ করেন লেখক। ২০১৩ সালের জুনে ‘প্রথমা প্রকাশন’ বইটি প্রকাশ করে।

লেখক তার বইয়ে উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার নাগবাড়ী গ্রামে অবস্থিত আবু সাঈদ চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি দখল করেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে রক্ষীবাহিনীর সহযোগিতায় লেখক সেই বাড়িটি তার কাছ থেকে দখলমুক্ত করেন।

তিনি তার বইয়ে বলেন, ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার পর কাজে যোগ দিয়ে আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে থাকি। কিছু দিন পর, একদিন সন্ধ্যায় আমি অফিসে কাজ করছি। এমন সময় আমাদের বাহিনীর পরিচালক এএনএম নূরুজ্জামান আমাকে ডেকে পাঠান। তার কাছে যাওয়ার পর তিনি আমাকে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সোফায় বসে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, ‘শোন, চৌধুরী সাহেবের পৈতৃক বাড়ি লতিফ দখল করেছে। ওই বাড়ি আজ রাতের মধ্যেই খালি করতে হবে।’ আমি কোন কিছু না ভেবেই সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে বললাম, ‘খালি হয়ে যাবে, স্যার।’ এরপর বঙ্গবন্ধু আমাকে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছ থেকে সব জেনে কাজ করতে বলেন। নিদের্শ দিলেন, ‘বাড়ি খালি করে পরদিন সকালে যেন তাকে রিপোর্ট করি।’

বাড়ি দখলমুক্ত করার ঘটনা বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, সাবেক রাষ্ট্রপতির পৈতৃক বাড়ি দখলদার সাংসদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে হবে। আমি কৌশল ঠিক করলাম, উদ্ধার অভিযানটা পরিচালনা করতে হবে সঙ্গোপনে। টাঙ্গাইল জেলায় কোনো দিন কোনো অভিযানে রক্ষীবাহিনী পাঠানো হয়নি। আশপাশে রক্ষীবাহিনীর কোনো ক্যাম্প ছিল না। কাছাকাছি ময়মনসিংহে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। সেখানে বাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন লিডার সরোয়ার হোসেন। তার বাড়ি ছিল কালিহাতী থানার পাশেই বাসাইল থানায়। মুক্তিযুদ্ধকালে সরোয়ার কালিহাতী এলাকায় যুদ্ধ করেন। ফোন করে তাকে নির্দেশ দিলাম দুই ট্রাক রক্ষী সদস্য প্রস্তুত করে রাত একটার মধ্যে নাগবাড়ী পৌঁছাতে এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বাড়ি ঘেরাও করে ভেতরে যাকেই পাওয়া যাবে তাদের সবাইকে ট্রাকে উঠিয়ে সরাসরি ময়মনসিংহে নিয়ে যেতে। আরও নির্দেশ দিলাম, ‘গভীর রাতে অপারেশন করার জন্য। গ্রামের লোকজন যাতে এ অপারেশনের বিষয়ে জানতে না পারে। তার জন্য নিরবে কাজ করতে হবে। কোনো গুলি করা যাবে না। তারপর ময়মনসিংহে ফিরে সকালেই আমাকে জানাতে হবে।’

আনোয়ার উল আলম বইতে উল্লেখ করেন, যেরকম নির্দেশ, সে রকম কাজ। সকাল ছয়টার দিকে ময়মনসিংহে ফিরে লিডার সরোয়ার হোসেন আমাকে ফোন করে জানালেন, ‘অপারেশন সফল। তারা নাগবাড়ীতে গিয়ে দেখেন গ্রামটি নীরব, নিস্তব্ধ। লোকজন সবাই ঘুমে, এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ি যারা দখল করে আছে, তারাও ঘুমে। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে তাদের সবাইকে (যতদূর মনে পড়ে ১৫-১৬ জন) ধরে কোনো হট্টগোল ছাড়াই রক্ষী সদস্যরা ফিরে আসেন।’ আমি সরোয়ারকে দুপুরের আগেই একটা রিপোর্ট লিখে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার জন্য বলি।

এরপর অফিসে গিয়েই আমি সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে ফোন করে জানাই, তার বাড়ি খালি হয়ে গেছে। সেখানে তার লোকজন যেতে পারে। তারপর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে রিপোর্ট করতে গণভবনে যাই। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি দখলমুক্ত হয়েছে জেনে তিনি খুব খুশি হন এবং নিজেই তাকে ফোন করেন।

এদিকে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী সকালেই খবর পেয়ে যান, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি থেকে তার লোকজনকে কে বা কারা রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে গেছে। এ খবর পেয়ে লতিফ সিদ্দিকী এদিক-সেদিক খোঁজ নিতে থাকেন। কিন্তু কোনো খবর পান না। কারণ, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) বা কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেউই বিষয়টি জানতেন না। দু-তিন দিন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ না পেয়ে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলীর সঙ্গে দেখা করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে জানান, তিনিও এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে তার কাছ থেকেই হয়তো লতিফ সিদ্দিকী খবর পান, বিষয়টি আমি জানি।

দু-তিন দিন পর একদিন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আমার বাসায় আসেন এবং বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। আমি তাকে বলি, ব্যাপারটা ঘটেছে অনেক উঁচু পর্যায়ের সিদ্ধান্তে। এর বেশি আমি জানি না। এটা জানতে হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে হবে। আমার কাছে সদুত্তর না পেয়ে লতিফ সিদ্দিকী অত্যন্ত রাগান্বিত হন। তারপর চলে যান আমার বাসা থেকে। আর কোনো দিন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সম্পত্তির ধারের কাছে যাননি তিনি।

বাড়ি দখলমুক্ত করার ঘটনাটি জানতে চেয়ে লেখক আনোয়ার উল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকা টাইমসকে জানানো হয় তিনি এখন নিউইয়র্ক আছেন।

বাড়ি দখলের বিষয়ে জানতে চেয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে কয়েকবার যোগযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়

বিষয়: বিবিধ

১৫৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File