দুঃখের স্মৃতি

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাঈশা ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০৪:৪৬ রাত

সেদিন হঠাত করেই সুমনের কথা মনে পড়লো। অনেকদিন ধরে কোন যোগাযোগ নেই। মাঝখানে যখন কথা হয়েছিলো তখন বলছিলো যে আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ অনেকদিন পর তাকে একটি পুত্র সন্তান দিয়েছেন। এই দিক দিয়ে আমাদের দুজনের অনেক মিল। আমারও ঠিক একই অবস্থা। আমার ছেলের জন্ম আমাদের বিয়ের প্রায় ৮ বছর পর। ইদানিং ছেলের কাম কান্ড দেখে এতো ভালো লাগে যে মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কারো সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করি। আর সেই চিন্তা করেই সুমন কে কল দেয়া। ও ইংল্যান্ডে থাকে আজ প্রায় ১০/১২ বছর। আমার নেংটা কালের বন্ধুর সংজ্ঞায় সুমনই অবশিষ্ট। ও আমার এক ক্লাস নিচে পড়তো। আমাদের মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল হুজুরের সাথে থাকতো। দেশের বাড়ী ব্রাম্মন বাড়ীয়া আহরন্দ। এক সময় আমাদের ভাইস প্রিন্সিপাল হুজুর সুমনদের বাড়ীতে লজিং থাকতো। সেই কারনেই হুজুরের সাথে করে সুমনের আমাদের গ্রামের মাদ্রাসায় পড়তে আসা। যতটুকু মনে পড়ে ও তখন ক্লাস ফোরে পড়ে। আমার দেখা সুপার ব্রিলিয়ান্ট যাকে বলে পাশাপাশি সুপার বদ ও ছিলো। আমাদের মাদ্রাসায় প্রতি রবিবার সব ছাত্রদের নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা হতো। অনেকদিন আগের কথা যদিও পুরোপুরি মনে নেই সেখানে জোড় বেজোড় দুই গুপে সিগার প্রতিযোগিতা হতো। একগ্রুপ একটি বাক্য বললে আরেক তার উত্তর বের করতে হতো। সুমন ক্লাস ফোরে পড়লেও তার সাথে কেউ পেরে উঠতো না। এমন কি ক্লাস টেন কিংবা ইন্টারের ভাইরা ও ফেল মারতো। মাদ্রাসা শেষ করে প্রায়ই আমার সাথে আমাদের বাড়িতে আসতো। আমার পরিবারের সবাই তাকে খুব আদর করতো। বিশেষ করে আমার মা খুবই আদর করতেন। সবাই তাকে আদর করে মসনদা ডাকতো! ও প্রায়ই ব্রাম্মন বাড়ীয়ার ভন্ড হুজুরদের বিভিন্ন কাহিনী আমাদের পরিবারের সবাইকে অভিনয় করে দেখাতো। সেখানে একটা চরিত্র ছিলো মসনদা। আমার মা সুমনকে দেখলেই বলতো একটু মসনদার অভিনয়টা দেখানোর জন্য। আমরা বার্ষিক পরিক্ষার শেষের ছুটিতে একে অপরকে চিঠি লিখতাম। সেই চিঠি নিয়ে আমাদের দুই পরিবারের ইমিডিয়েট ভাই বোনেরা খুব হাসা হাসি করতো। চিঠিতে দুজনেই অনেক গ্রামের শুলক টাইপের জিনিস লিখতাম। আমার বড় ভাইকে নিয়ে সুমনদের বাড়িতে অনেকবার বেড়াতে ও গিয়েছি। কিন্তু ক্লাস সেভেনে আমি চিটাগং চলে আসার পর তার সাথে আমার আর কোন যোগাযোগ থাকেনা। আমি যখন ইউনিভার্সিটি পড়ি হঠাত একদিন আমার হোস্টেলে এসে সুমন হাজির হয়। আমি প্রথমে তাকে চিনতেই পারিনা! সে যাই হোক অনেকটা সিনেমার গল্পের মতো নেংটাকালের বন্ধুকে ফিয়ে পেয়ে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হয়। তারপর মাঝে মাঝে আমাদের অনেকটা অনিয়মিত যোগাযোগ আছে।

সেদিন যখন তাকে আমার ছেলের দুষ্টুমি গুলি শেয়ার করার জন্য কল দিলাম যা শুনলাম তা শুনে যে কারোরই কষ্ট লাগার কথা। বললো গত দুই মাস হয় তার ছেলে হার্টের রোগে মারা গিয়েছে । জন্মের পর আড়াই মাস বেঁচে ছিলো। এরপর থেকে আমার নিজের কাছে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিলো। কিন্তু অবাক করার মতো সুমনই আমাকে সান্তনা দিয়ে বলে ওটা আল্লাহর মেহমান ছিলো আল্লাহ নিয়ে গিয়েছেন সুতরাং কষ্ট পেয়ে কি লাভ! আমার বাল্যকালের একটা ভালো সময় জুড়ে সুমনের বিচরন থাকলেও তার এই দুঃসংবাদটা অনেক দেরিতেই পেতে হয়। মাঝে মাঝে ভাবি এই ছোট্র জীবনে আরো কতকিছু হয়তো মুখোমুখি হতে হবে! আল্লাহর কাছে সুমন আর তার পরিবারের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে এই শোক সইবার তাওফিক দেন।

বিষয়: বিবিধ

১২৫৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381300
১৬ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০১:৩৭
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আপনার লেখা পড়ে সুখ এবং দুঃখের অনুভূতি হল।
তবে লেখাটা খুব সাদামাটা হয়ে গেছে। আরো একটু গুছিয়ে লিখলে বেশ শ্রুতিপাঠ্য হত। ধন্যবাদ
১৬ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০৩:২৪
315372
আবু মাঈশা লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন...সময় করতে পারাটা একটা ব্যাপার! তাই রিভিউ দেয়ার কিংবা ভাববার সূযোগ নেই। জাজাকাল্লাহ
381303
১৬ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ০৯:৫০
আবু নাইম লিখেছেন : আমার ই-মেইলে আপনার ইমেইল নম্বরটা দিন
381335
১৮ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০৮:১৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! মহান আল্লাহ আপনার বন্ধু পরিবারকে সবরে জামিলা দান করত, সেই সন্তানকে তাদের জন্যে জান্নাতের উছিলা বানিয়ে নিন। আমিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File