পীর ব্যাবসার সত্য কাহিনী

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাঈশা ১২ জুলাই, ২০১৬, ০২:২৬:১৯ রাত

পীরসাবদের মৌসুমী ব্যবসা এবার খুব ভালো যাবে মনে হচ্ছে! পীস টিভি বন্ধ করাটা তাদের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল। এই ব্যাটা জাকির নায়েক এসে মৌসুমী ওয়াজিনদের বারোটা বাজিয়েছে। এলাকার চেংড়া পূলাপান এখন কোরান হাদিস থেকে কূট সহ মেসাল দেয়। পীর সাহেবদের এই ব্যাবসার সাথে আমি খুবই পরিচিত তাই ভাবলাম সবার সাথে একটু শেয়ার করি। আমার ফ্যামিলি সেই দাদা পরদাদার কাল থেকে পীর ভক্ত ছিলো। আমাদের গ্রামে প্রতি বৎসর একটা মাহফিল হতো। ফুরফুরার এক পীর এসে সেই মাহফিলে বক্তৃতা করতেন। আমরা নেংটা বয়সের পোলাপান সেই পীর সাহেবকে স্বাগত জানানোর জন্য নিশান নিয়ে হুজুরের গাড়ি থেকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসতাম। সাথে সাথে তাকবীর থাকতো।ব সবাই মিলে নারায়ে রেসালাত ইয়া রাসুলুল্লাহ, পীর সাহেবের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম, আল্লার ওলির আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম, আল কোরানের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো, আল হাদিসের আলো ঘরে ঘরে জ্বালো, সহ আরো অনেক শ্লুগান দিতাম। হুজুরের ওয়াজের মূল বিষয় বস্তু থাকতো উনার দাদা পীরসাহেবের কিছু কেচ্ছা কাহিনী আর কিছু জিকিরের ফর্মূলা।মাহফিলের মাঝখানে চোখ বন্ধ করে বাম স্তনের দুই আঙ্গুল নিচে কলবের দিকে রজ্জু হয়ে একটা জিকির করতে বলতো। আমি এখনো মাঝে মাঝে বাম স্তনের দুই আঙ্গুল নিচে হাত দিয়ে দেখি আসলেই ক্বলব লাফায় কিনা! সে যাই হোক। হুজুরের হুজরা খানা আমাদের ঘরেই থাকতো। হুজুরের স্পেশাল খেদমতে আমি থাকতাম। কারন আমি খুব আস্তে আস্তে পা টিপতে পারতাম যা হুজুর খুব পছন্দ করতেন। এই কারনে হুজুর আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। আমার মা লোক মারফত হুজুরের কাছে খবর পাঠাতেন যে আমার মেজাজ একটু গরম হুজুর যেন এই ব্যাপারে একটু কেয়ার করেন। বিদায় বেলায় বিনা পয়সায় হুজুর আমকে একটা স্পেশাল তাবিজ দিয়ে যেতেন। হুজুর ওযু করতে কুসুম কুসুম গরম পানি পছন্দ করতেন। আমার মা হুজুরের খেদমতে সবসময় তা আঞ্জাম দিতেন। সকাল বেলা শুরু হতো হুজুরের তাবিজ দেয়া, আর পানি পরা দেয়ার পালা। আমি পানি পড়ার টেবিলের দায়িত্ব থাকতাম। সবাই পানি নিয়ে এসে টেবিলের উপর রাখতো। আমি সেটা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতাম। হুজুর ঘুম থেকে ৮/৯ টার দিকে উঠে সেই পানিতে ফুক দিতেন। হুজুরের তাবিজের হাদিয়া ছিলো খুবই ইউনিক! ১৯ টাকা ২৫ পয়সা, ৪১ টাকা ৭৫ পয়সা টাইপ। একজন তাবিজ লেখক ছিলেন। তার আরবী লেখা খুবই সুন্দর ছিলো। তাবিজ লেখক, ড্রাইবার, আর একজন খেদমত দার হুজুরের সাথে সবসময় থাকতেন। তারা বেশীর ভাগই যশোরের ছিলেন। তাদের ভাষা আমার খুব ভালো লাগতো। হুজুরের খানার মেন্যু ছিলো খুবই সাদাসিদে ছিলো। লাউয়ের সাথে কচি মোরগ আর ছোট চাউলের নরম ভাত। হুজুর খেয়ে যা থাকতো তা খাওয়ার জন্য ভক্তকুল সবাই ব্যাকুল থাকতো কিন্তু বেশীরভাগ সময়ই হুজুর সেটা আমাকে দিতেন। আমার মা তা নিয়ে অনেক গর্ব করতেন। আমার মা ভাবতেন আমার মাঝে নিশ্চয়ই এমন কিছু আছে যা একমাত্র হুজুর দেখতে পেয়েছেন! ওই মৌসুমে আমার কদর মোটামুটি ভালো থাকতো।পাড়ার লোকজন আমাকে আলাদা সম্মান করতো। যাবার সময় হলে হুজুরকে বিশাল অংকের টাকা দেয়া হতো। আমি প্রায়ই দেখতাম হুজুর টাকা পয়সা নিয়ে একটু দর কষাকষি করতেন। আমার বাবা আর চাচাত ভাই এই টাকা কালেকশনের দায়িত্বে থাকতেন। গ্রামের বেশীরভাগ মানূষ তখন গরিব ছিলো। হুজুরকে দেয়ার জন্য যে টাকা কালেকশন হতো তা তুলতে আমার বাবা এবং চাচাত ভাই অনেক সময় হিমসিম খেতেন। এই পীরদের অনেকেই আমাদের ঢাকায় বাসায় এসেও থাকতেন। এখন আর এই পীরসাহেবদের তেমন ক্বদর নেই। ডঃ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর সেই পীরদের একজনের মেয়ে বিয়ে করেছেন। যিনি মীরপুর দারুসসালামের পীর ছিলেন। আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী। তিনি শেষ কালে ডঃ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এর কারনেই বলবো এই ব্যাবসার বিরুদ্ধে বলে গেছেন। আমাদের গ্রামে যে পীর আসতেন তিনি এই ব্যাপারে খুবই নাখোশ ছিলেন। আমি একবার ঐ পীরকে বলতে শুনেছি যে 'বাবাগো আমার বড় ভাই নষ্ট হয়ে গেছে, জামাতিরা উনাকে নষ্ট করে ফেলেছেন!'

এই পীরদের লাইন আপ বাংলাদেশের সব পীরদের সাথে জড়িত। শর্শিনা, আড়াইবাড়ি, সোনাকান্দা, যৈনপুর, ধামতী, সহ সব পীরদের দাদা পীর হলেন এই ফুরফুরার পীররা। আমার যতটুকু জানা এই পীরদের ক্বদর এখন আর আগের মতো নাই!

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

374431
১২ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:২৬
শেখের পোলা লিখেছেন : এই মহা শক্তিধর পীরদের জজমান সরি মুরিদান বাড়িতে আগমন, নজরানা আর মৌসুমী হুজুরদের কন্ট্রাক্টের ওয়াজ জনাব জাকির নায়েকের পিস টিভি ধ্বংস করে গর্দানের চর্বী শুকিয়ে দিয়েছে। আর কতকাল তারা সহ্য করবে। বিশেষ করে যখন শক্তিধর সরকারের সমর্থন পেয়েছে তখন সুযোগ নিয়েছে। তা যাই হোক আল্লাহ তার দ্বীনকে এগিয়ে নেবেনই। ধন্যবাদ।
374436
১২ জুলাই ২০১৬ সকাল ১০:১৭
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানবেন। ঠিক বলেছেন, আবদুল কাহহার সিদ্দীকি জামাইবাবার সংস্পর্শে সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছিলেন।
374439
১২ জুলাই ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ফুরফুরার প্রথম পি আবুবকর সিদ্দিকি সাহেব একজন প্রকৃত আলিম ছিলেন। উপমহাদেশের স্বাধিনতা সংগ্রামেও তার অবদান আছে। তার ইন্তেকালের পর এটা ব্যবসায় রুপান্তরিত হয়ে যায়। তবে তাদের পরিবারে আরো কয়েকজন ভাল আলিম আছেন।
374441
১২ জুলাই ২০১৬ সকাল ১১:২৫
আবু মাঈশা লিখেছেন : আপনার মতো এই ধারনা পেয়ে আমি ও বড় হয়েছি। আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী সাহেব ছাড়া আমার জানা মতে সবাই পীর ধান্দায় ব্যাস্ত.।.।.। দাদার নাম বেঁচে খাচ্ছেন। আল্লাহু আ'লাম।
374447
১২ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০১:২৯
ক্রুসেড বিজেতা লিখেছেন : দেশের অধিকাংশ মুসলমান নামাজ কালাম ঠিকমতো পড়তে চায় না,,, আগে ফরজ কায়েম হোক তারপর অন্য ধান্দা ও স্পর্শকাতর বিষয়ে মতভেদ দূরীকরণের চেষ্টা করা উচিত। ওয়াজ/তাফসীর মহফিলে পীর হুজুরগন "দাদা হুজুরের কিচ্ছা কাহিনী,ও জিকির আজকার" নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন। সহমত। উনাদের উচিত "ফরজ নামাজ না পড়ার ভয়াবহ শাস্তি ও সুদ,যিনা'র গুনাহ এবং সর্বোপরি সময় স্রোতে আগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের করণীয় ও উপযুক্ত জ্ঞানগরিমায় সমৃদ্ধ করে তোলার প্রয়াস চালানো। তা না করে অন্য মুসলিম ভাইদের বিপরীতে ফতোয়া ও বিভেদ উস্কানিতে খুব পটু কিছু পীর হুজুর ও ওনাদের অনুরাগীরা।
374454
১২ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০২:৩১
নাবিক লিখেছেন : পীর ব্যবসা বড় ব্যবসা

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File