আর্জন্টিনা বনাম ব্রাজিল নস্টালজিয়া
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাঈশা ১৬ মে, ২০১৪, ১১:৫৫:১২ সকাল
ঘটনাটা ২০০২ সালের ওয়ার্ড কাপের সময়। আমি আই আই ইউ সির হোস্টেলে-১ এ থাকি। হোস্টেলের পরিবেশটা অনেক মজার ছিলো। চিটাগং আমার বাসা থাকলেও হোস্টেলে থাকতাম শুধুমাত্র মজা করার জন্য। ওয়ার্ডকাপ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই আমাদের মধ্যে কথা কাটা কাটি, কে কার চেয়ে বড়, ম্যাড়াডোনা না পেলে এই নিয়ে ডাইনিং এ একটা আলোচনা সব সময় লেগেই থাকতো। আমার রুম ছিলো ডাইনিং এর পাশে যার কারনে আড্ডার যে গুরুত্বপুর্ন পার্ট আমি মিস করতাম না। আমরা যারা আর্জেন্টিনা সাপোর্টার ছিলাম সবাই মিলে চাদা তুলে সম্ভবত চাঁদগা আবাসিক থেকে সেই আগ্রাবাদ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পতাকাটা বানিয়েছিলাম। আমাদের উদ্যেশ্য ছিলো পুরা বিল্ডিং আর্জেন্টিনার পতাকা দিয়ে সাজিয়ে দেয়া। ব্যাপারটা অনেক ইজি ছিলো আমার জন্য। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার পতাকা বানানো অনেক সহজ। তাছাড়া টেড়িবাজারে আমাদের তখন পাইকারী দোকান ছিলো। আমার ইমিডিয়েট বড়ভাই যে কিনা নিজেও আর্জেন্টিনার একজন ডাইহার্ট সাপোর্টার তাকে গিয়ে সব কিছু খুলে বললাম আর তাছাড়া বড় পতাকা না হলে ব্রাজিল সাপোর্টারদের কে ক্ষেপানো ও সম্ভব ছিলোনা। ভাই তার এক বন্ধুর দোকানে নিয়ে গিয়ে পাইকারী দরে আকাশী আর সাদা কাপড়ের অনেকগুলো থান কিনে দিলেন এবং আমাদের এলাকার এক টেইলার্স কে দেখিয়ে দিলেন। টেইলার্স বেটা ও আর্জেন্টিনার সাপোর্টার থাকার কারনে টাকা দিতে চাইলে ও নিলোনা। আমাকে আর কে পায়। আমি আর আমার রুমমেট কামরুল এই ব্যাপারে খুবই ক্রেজি ছিলাম। আমাদের বড় পতাকা দেখে ব্রাজিল সাপোর্টাররা ও চাদা তুলা শুরু করে। হোস্টেলে এক বড়ভাই ছিলো যার নাম আক্তার ভাই। তখন আমাদের সিনিয়র জুনিয়র সবাই আক্তার ভাইকে নিয়ে খুব মজা করতাম। সহজ প্রকৃতির এই মানুষটিকে দেখলে আমার খুব কস্ট লাগতো। উনার প্রচুর টাকা ছিলো তাই পোলাপান সারাদিন উনাকে পাম্পের উপর রেখে উনার কাছ থেকে বিকালে বিভিন্ন চায়নিজ/খানাপিনা আদায় করতো। স্পোর্টস নিয়ে উনার সাথে আমাদের সব সময় লেগেই থাকতো কারন উনি ছিলেন ব্রাজিলের একজন কড়া সাপোর্টার। যা হওয়ার তাই হলো সবাই মিলে আক্তার ভাইকে ধরে ১৩০০ টাকায় ওরা একটা ১৩ হাত একটা পতাকা বানালো। ওরা টাকা আমাদের তুলনায় বেশী তুললেও পতাকা বড় বানাতে পারলোনা। যেহেতু ব্রাজিলের পতাকা বানানো একটু কঠিন ছিলো। আর্জেন্টিনা সাপোর্টারদের আর পায় কে...ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে হোস্টেল পর্যন্ত সবাই তখন ব্রাজিলের সাপোর্টার দেখলেই আমরা ওদের পতাকা নিয়ে মজা করতাম। সে যাই হোক আমাদের মজা করা বেশীদিন টিকলো না। যা হওয়ার তাই হলো। বরাবরের মতো আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলো। আর্জেন্টিনা সমর্থক গোষ্টির অবস্থা তখন ছেড়ে দে মা কাইন্দা বাচি। ফাইনালের আগে ব্রাজিলে সমর্থক গোষ্টির সবাই মিলে আক্তার ভাইকে দিয়ে ঘোষনা দেওয়ালো যে ব্রাজিল যদি কাপ জিতে তাইলে সবাই মিলে খাশি জবাই দিয়ে আনন্দ উদযাপন করবে। আমার তখন অবস্থা অনেকটাই ব্রোকেন। মনে মনে ফন্দি আটতে থাকলাম যে করেই হোক অন্তত খাশি জবাই বন্ধ করতে হবে। খেলা শেষে আক্তার ভাইকে আমাদের রুমে নিয়ে এলাম। এনেই আমি আর কামরুল মিলে খুব ঘনিষ্ট ভাবে কোলাকুলি করলাম। আমরা দুজন মিলে আক্তার ভাইকে বুঝালাম যে আমরা উনার সুহৃদ। আমরা সব সময়ই উনার ভালো চাই। পাশাপাশি বললাম যেহেতু উনি হোস্টেলের সকলের খুব প্রিয় তাই উনি কেন শুধু শুধু একা খাশী কিনে আর্জেন্টিনা সাপোর্টারদের অপ্রিয় পাত্র হবেন। ব্যাপারটা উনার মনে ধরলো। আরো বললাম খাশি যদি কিনতেই হয় তাহলে সবাই মিলে কিনবে। উনি আমাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। যেহেতু ব্যাপারটি ঘোষনা হয়ে গেছে সেহেতু একটা মান সম্মান এর ব্যাপার। আমি এই বলে পরামর্শ দিলাম যে খাশি কিনা হবে তবে আপনি হাফ দাম দিবেন বাকী হাফ সবাই মিলে দিবে। আক্তার ভাই আমার প্রস্তাব শুনে খুব খুশি হলেন এবং তাই করলেন। আমরা আগে থেকেই জানাতাম হোস্টেলের বাকী সব ব্রাজিল সাপোর্টাররা মিলেও খাশীর বাকী হাফের টাকা তুলা সম্ভব না। শেষ পর্যন্ত খাশী আর জবাই হয়নি। মনে মনে আমরা আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা খুশী হলাম।
আজকে অনেকদিন পর অনেকের কথাই মনে পড়ছে। আমরা কতো মজাই না করেছি। দিন পাল্টেছে সাথে সাথে সময় আর বয়স ও। তারপর ও সেই আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল ব্রাজিল মারপিট থামেনি। আগে হতো সরাসরি আর এখন হয় ফেসবুকে... আমার মনে হয় আমাদের বাংলাদেশীদের মতো এতো ক্রেজি সাপোর্টার পৃথিবীর অন্যান্য দেশে খুব কমই আছে। ভালোই লাগে অন্তত আনন্দ করার মতো একটা উপলক্ষ তো পাওয়া গেলো। যে হারে দেশে গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ধর্ষন বেড়েছে তাতে মানূষ এতটাই আতঙ্কিত যে গলা ছেড়ে একটু আনন্দ করবে সে সূযোগটি ও নেই!!
বিষয়: বিবিধ
১৭৬১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন