ভালো বন্ধু কে হবে?
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাঈশা ১০ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৩০:২৫ সকাল
সেদিন আমার কাজে এক বাঙ্গালী কাষ্টমার আইপ্যাড কিনতে এলে ভাষা দুর্বলতার কারনে আমাকে সাহায্য করার জন্য ডাকা হয়। বাংলা ভাষাভাষি লোকদের সাথে আমার ও কথা বলতে ভালো লাগে। কানাডা এসেছে মাস ছয়েক হবে। দুই ছেলে। বড়টি ক্লাস সিক্সে আর ছোটটিকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। ছেলে দুইটাই পটাপট ইংলিশ বলে। আমি বাংলায় বললে উত্তর দেয় ইংরেজিতে। আমার কাছে ভালোই লাগে আমার দেশী এই বাচ্চা কাচ্চার ভাষা প্র্যাক্টিস। আই টিউন ব্যাবহারের জন্য ওদের কে আমি একটি একাউন্ট খুলতে সাহায্য করছিলাম। ইনফরমেশনের এক পর্যায়ে যখন সিকিউরিটি প্রশ্নের সময় আসে আমি গ্রেড সিক্সে পড়া বাচ্চাটিকে জিজ্ঞেস করলাম What is your best friend name? ছেলেটির উত্তর শুনে আমার মনে হলো আমার চেয়ে তার বাবা মা ই একটু লজ্জা বেশী পেয়েছে। আমি বাচ্চাটার বাবা মার দিকে তাকিয়ে আর বাচ্চার বাবা মা বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে। সিচুয়েশনটা হঠাত কেমন ঘুমোট আকার ধারন করলো। কানাডা আমেরিকায় এটাই স্বাভাবিক যে একটি ১২/১৩ বছরের ছেলের ভালো বন্ধু একটি মেয়ে হবে। কিন্তু সদ্য বাংলাদেশ থেকে আসা একটি ছেলের ভালো বন্ধু একটি মেয়ে হবে ব্যাপারটি নিয়ে আমার কৌতুহলের শেষ থাকলো না। আমার চার পাশে আমার এই বয়সে কারা আমার ভালো বন্ধু ছিলো? অনেক চেষ্টা করলাম স্মৃতি খুঁজে কোন মেয়ের নাম পেলাম না। পরে মনকে বুঝালাম এটাই মনে হয় শাহবাগী সাংস্কৃতির প্রভাব।প্রত্যহ এমন অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার আমাদের হতে হয়। আমি যখন টরন্টো ছিলাম আমি ১০/১২ জন টিনএজার ছেলেদের একটি হালাকা চালাতাম। আর মসজিদে আসা যাওয়ার কারনে অনেক বাংলাদেশী মুসলিমদের সাথে আমার পরিচয় ছিলো। সেখানে ও এমন অনেক ঘটনা আমার চোখের সামনে হয়েছে যা আমাকে মাঝে মাঝে ভবিষ্যত বাবা হওয়ার ব্যাপারে খুবই দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। একবার এক বাংলাদেশী ভদ্রলোক আমাকে এসে বললেন আমি যেন তার ছেলের সাথে একটু পরিচয় হয়ে নেই আর আমাদের হালাকায় আসার জন্য তার ছেলেকে একটু অনুপ্রানিত করি। ছেলের বাবা কে তার ছেলের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উদাস ভাবে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলো। পরে বুঝলাম বেচারা কে লজ্জা দিয়ে লাভ নেই। একদিন জুম্মায় তিনি তার ছেলেকে নিয়ে এলে বুঝতে পেরেছিলাম কেন সেদিন তিনি আমার দিকে উদাস ভাবে তাকিয়ে ছিলেন। ছেলের ড্রেসাপ থেকে শুরু করে ইউ হুয়াসসাপ যে পর্যায়ে তাতে আমার কাছে মনে হলো আমিতো দুরের কথা তার বাবার ও এই মুহুর্তে আর কিছুই করার নেই। ছেলের কথা বার্তা চলা ফেরা পুরাই পাংখা। মোটামুটি বলতে গেলে কানাডিয়ান আট দশটা পোলাপান ও তার কাছে ফেল। আলহামদুলিল্লাহ তার বিপরীত দিকে ও অনেক ভালো ছেলে পেয়েছি যারা নিয়মিত ফজর নামাজে আসতো। বিশেষ করে আমার এক স্যার (ডঃ মাসুদুল আলম চৌধুরী) যিনি ইকোনোমিক্সে পিএইচডি করা। কানাডায় ছিলেন ৩৫ বছরের উপরে। তিনি আমাদের ইউনিভার্সিটিতে উইকেন্ডে এম এস এ তে প্রায়ই দারস দিতেন। মাঝে মাঝে দারসের মধ্যখানে কোনকিছু ভুলে গেলে পাশে বসে থাকা ১৩/১৪ বছরের ছেলে নাবাকে জিজ্ঞেস করতেন আর সে ও তা বলে দিতো। আমি অবাক হয়ে চেয়ে থাকতাম। কানাডায় জন্ম নেয়া তারপর কোনদিন ইসলামিক স্কুলে না যেয়ে এটা কিভাবে সম্ভব!
বিষয়: বিবিধ
১৪২৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন