ঈদ সালামী নস্টালজিয়া
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাঈশা ১৭ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:৫৩:৪৬ সকাল
সকালে বিলেতি এক ভাইয়ের স্ট্যাটাস এ ঈদ সালামির ব্যাপরে কমেন্ট করতে গিয়ে নিজের ফেলে আসা কিছু সুন্দর অতীতের কথা সারাদিন মনে পড়ছিলো। ভাবলাম এই নিয়ে একটা পোস্ট করে প্রিয়জন কে সেই ভালোবাসার কথা জানান দিলে মন্ধ হয়না।
সাত ভাই এক বোনের সংসারে আমার অবস্থান সর্বনিম্ন হওয়ায় সালামীর পরিমান আলহামদুলিল্লাহ ভালোই ছিলো। ছয় ভাই, ছয় ভাবী, একবোন আর দুলাভাই সবমিলিয়ে যেন ঈদের জন্যই আমার অপেক্ষা করা। বড় হওয়ার পর আমার ঈদ সাধারনত দুটি যায়গায় সীমাবদ্ধ ছিলো এক আমার গ্রামের বাড়ি আর দ্বিতীয়টা আমার হাই স্কুল কাল যেখানে কেটেছে- দেবিদ্বার। বিশেষত আমার প্রিয় বন্ধু রতনের সাথে ঈদ করার আনন্দই ছিলো আলাদা পাশাপাশি স্কুল বন্ধুদের সাথে ঈদ আনন্দ শেয়ার করা। ফ্যামিলিতে এর জন্য আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। আম্মা মাঝে মাঝে অনেক রাগ করতো। অনেক সময় দু-তিন পর্যন্ত দেবিদ্বার কাটিয়ে বাড়ি ফিরলে আম্মা অভিমান করে বলতো আমি তোর মা না রতনের মা ই তোর মা। যা ওখানে যা। বুঝতাম আম্মার উপর দিয়ে অনেক ধ্বকল গিয়েছে। আর রাগ করার ই কথা কারন একমাত্র আম্মাকেই জানিয়ে ঈদের দিন বিকেলে চুঁপে চুঁপে গ্রাম ছাড়তাম। কারন ভাইয়রা জানলে কখনো বিষয়টা মেনে নিতোনা। শত হোক মায়ের মন দু একটা মিস্টি কথা আর দেবিদ্বারের পাশে আমার একমাত্র খালাকে দেখে এসেছি বললে সব ঠিক হয়ে যেতো। ছোট হওয়ার কারনে সালামী শুধু পেতাম ই কিন্তু দেয়ার ক্ষেত্রটা খুব ছোট ছিলো। এই ব্যাপারে একটা যায়গায় বরাবর ই ধরা খেতাম বন্ধু রতনের ছোট দুই ভাইবোনের কাছে। অনেস্টলি আমার কোন ছোট ভাই বোন না থাকায় এদেরকে খুবই আদর করতাম। আর বান্দর দুইটা ষোল আনা বুঝে নিতো। আমার ও খুব ভালো লাগতো। নিজেকে কেমন যেন বড় বড় মনে হতো। এখনো মাঝে মাঝে যখন মানিকের সাথে কথা হয় সালামীর আশ্বাসটা আগের মতোই দেই। বলি দেশে আসলে কড়ায় গন্ডায় পুষিয়ে দেবো। মনোর বিয়ে হয়েছে তাছাড়া সরকারী জব, স্বামী সন্তান নিয়ে মহা ব্যাস্ত। কথা বলার সুযোগ খুব কম। এখানেই অবশ্যই বলে রাখা দরকার রতনের বড় বোন নাজমুন আপা কিন্তু সেসময় ইনকাম না থাকলেও আমার সালামী মিস দিতোনা। তাছাড়া খালা খালু তো ছিলোই। আমি আসলে এই একটা ফ্যামিলি তে এতো বেশী এনজয় করেছি যে মাঝে মাঝে মনে হয় আবার যদি ফিরে পেতান সেই দিন গুলো। রতনের আব্বাকে খালু বলে ডাকতাম। খালুর মতো এতো ফ্রেন্ডলি মানুষ আমি জীবনে আর একটি গার্ডিয়ানকে ও দেখিনি। অথচ এই মানুষটার ভয়ে আমাদের ক্লাসের আর কোন ছেলে রতনের এতো ভালো বন্ধু হতে পারেনি। আমি যখন ই রতনদের বাড়ীতে গিয়েছি খালুর সাথে আমাকে একটা নির্দিষ্ট সময় কাটাতে হতোই। ফ্যামিলির সব কিছু আমার সাথে শেয়ার করতো যদিও আমি ফ্যামিলির কোন মেম্বার ছিলাম না। খালুকে দেখলে বুঝা যায় আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধারা কি রকম সাহসী ছিলেন। এই সামান্য মানুষটি কোন দলের ছত্রছায়ায় না থকলেও দেবিদ্বারের এম পি থেকে শুরু করে সবাই উনাকে ভয় আর রেসপেক্ট করতো। আর আমাদের স্কুলের ম্যানিজিং কমিটির মেম্বার থাকার কারনে স্কুলের টপ টু বটম সবাই খালুকে ভয় পেতো। আর আমি সেই ব্যাক্তিটির কাছ থেকে ও সালামী আদায় করে ছাড়তাম।
আলহামদুলিল্লাহ আজ প্রায় এক যুগের ও বেশী হলো আমাদের বন্ধুত্ব আরো অনেক গভীর হয়েছে। আমার বন্ধু এ বছর হজ্ব করেছে। খালুর জীবনটা আমার বন্ধু শতভাগ সার্থক কর্যতে পেরেছে। উনার খুব ইচ্ছে ছিলো তার ছেলে ডাক্তার হবে আর রতন ও তাই হয়েছে।
এই ঈদে প্রিয় বন্ধুর হজ্বে যাওয়া, সালামী, আর খালুর ভালোবাসা আমাকে আবারো এক যুগের অধিক সময় আগের নস্টালজিয়া কিছুটা সময়ের জন্য হলেও আমার ফেলে আসা প্রিয় কিছু মুহুর্ত কে ফিরিয়ে দিয়েছে অন্তত কিছুক্ষনের জন্য হলেও।
বিষয়: বিবিধ
১৮৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন