@দেশী ও বিদেশী জেল খানার তফাৎ নিজ অভিজ্ঞতা থেকে@
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল গাফফার ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:৩০:০৪ রাত
জেল কী? জেল কাদের জন্য?মোটামুটি আমাদের সবারই জানা । জেল হচ্ছে সংশোধনের এমন এক আশ্রয়স্থল যেখানে অপরাধীরা অপরাধ ভেদে দীর্ঘ বা স্বল্প মেয়াদে অবস্থান করেন।জেলের ভিন্নতা দেশ ভেদে ভিন্ন হতে পারে।দেশীয় জেলের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে না জানলেও দৃশ্যমান অবস্থা থেকে যে কেও অনুমান করতে পারে । তাছাড়া সেই সময় এত অপরাধ প্রবণতা ছিল না যখন দেশে ছিলাম । ঐ সময় বড় কোন অপরাধ ছাড়া কাউকে জেলে যেতে হত না । এখন অবশ্য একদম উল্ট । অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও সত্য যে প্রবাস জীবনে আমি কিছু দিন জেলে ছিলাম ।সেই সুবাদেই জেলের অভিজ্ঞতা টুকু শেয়ার করতে সাহস করছি।
১৪ এপ্রিল ২০০৮ রাত ৪.৩০ মিনিটে হটাৎ কোন এক শব্দে আমার ঘুম ভেংগে যায় । উপর থেকে নিচে চেয়ে দেখি ৮/১০ টা পুলিশের গাড়ি, কয়েকটা পুলিশ উপরে আসার জন্য নিচের দরজা খোলার চেষ্টা করছে । আমি যেয়ে খুলে দিতেই ৮/১০ পুলিশ উপরে ছুটা ছুটি করছে । এরই মধ্য সবার ঘুম ভেংগে গেছে, দরজা খুলতেই দাঁড়িওয়ালা কাউকে দেখা মাত্র চর খাপ্পর কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পাচ্ছিলাম না । আমার মুখেও দাঁড়ি ছিল তবে আমাকে অমন করেনি কারণ আমি যে বিভোর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়েছি তারা সেটা বুঝতে পেরেছিল । সাহস করে প্রশ্ন করি কি চাস তোরা? এখানে এমন করছিস কেন? উত্তরে এখানে নাকি অল্প কিছুক্ষণ আগে একটি হারামি ঢুকেছে।হারামির মুখে দাঁড়ি ছিল,এত গুলো মানুষের ভীড়ে দাঁড়িওয়ালা সেই লোকটিকে চিহ্নিত করতে না পেরে চলে যায় ।
সবাই যার যার মত করে আবার ঘুমাতে গেল, ১৫ মিনিট পর আবারো পুলিশের গাড়ি। সাথে স্টার যুক্ত উচ্চ পদস্থ পুলিশ ।আমার রুমটা প্রথমে থাকায় আর দাঁড়ি থাকায় আমাকে সন্দেহ করে সেই লোকের বাসায় নিয়ে যাওয়া হল যে ফোন করেছিল পুলিশকে।পুলিশ বলছে এই নাকি ? সৌদি সদ উত্তর না দিয়ে আল্লাহই ভাল জানে, মনে হয় এই ছেলে । পাশে বসা ইন্দোনিশী কাজের মেয়ে । পরে জানতে পারলাম ওই মেয়েটির সাথে কারো অনৈ্তিক সম্পর্ক ছিল,বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার সময় সে দেখেছ আমার মত দাঁড়িওয়ালা এক ছেলে ভিলার ভিতরে যেতে । অবশেষে থানায় নিয়ে যাওয়া হল । থানায় অনেক যেরা অতঃপর সব রেকর্ড করে আমাকে বন্ধী রাখা হলো। আমার সুপারভাইজারকে ফোন করে জানিয়ে ছিলাম সেও ৩০মিনিট পর এসে আমাকে সাহস দিয়ে চলে যায় । সেন্সেটিভ অপরাধে অপরাধীদের আমাদের দেশের গ্রাম্য সালিশের ন্যায় মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা এখানেও করা হয় ।নিয়ে যাওয়া হল পর দিন সেই স্থানে যেখানে একজন উকিল আসামীর উল্লেখিত অপরাধ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করবেন। যদি নিশ্চিত হোন অভিযোগটি হয়রানি মূলক তবে তাকে মুক্তি দেয়া হবে। অপরাধ গুরুত্বর মনে হলে বড় হাই কুটে চালান। উকিল সাহেব আমার সব কথা বিশ্বাস করে মুক্তি দিতে বলেন । মুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল আকামার ডেট নেই আর আমার সুপারভাইজারো খুজ নিতে আসলো না । আমি নির্দোষ এর বড় প্রমাণ উক্ত রাতে আমাকে নিয়ে আসার পর সকালে প্রকৃত অপরাধী ভিলা থেকে পালিয়ে যায় । শেষ পর্যন্ত সুপারভাইজারের গাফিলতি আর আকামার সমস্যার কারণে আমাকে ১৪ দিন পর বড় জেলে প্রেরণ করা হয় । এখন আইনি ভাবে আমাকে মুক্তি পেতে হবে । হাইকুটে আরবিতে মহকুমা বলা হয় । মহকুমা থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার ডাক না আসে ততো দিন আমাকে সাজাপাত্তদের সাথেই থাকতে হবে ।আর এই জেলে যাদের প্রবেশ তাদের আর সহজে মুক্তি মেলে না । আমি অপরাধী নয় আমি মুক্তি পাব এই বিশ্বাসের পতন দেখে একবার ভেবেও ছিলাম সহজেই যখন বের হতে পারলাম না আইনি লড়াই করে মুক্তি আর মনে হয় হবে না । আল্লাহর রহমতে আইনি ভাবেই মুক্তি পেয়েছি ।
সেই জেলে গ্রেটে পৌছার পর ভর্তি রেজিস্ট্রারে আমার নাম নিবন্ধন করা হয়। জমা রাখা হয় আমার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন টাকাসহ ভেতরে নেয়ার অনুমতি নেই এমন জিনিসপত্র। পরে পাঠিয়ে দেয়া হয় উক্ত কারাগারের ৫ নং ওয়ার্ডে । স্থায়ী জেলের কয়েদি হিসাবে আমার নামে কম্বল বালিস বরাদ্দো করা হল । সাথে সাথে একটা কার্ড । এই কার্ড দিয়ে প্রত্যকের ন্যায় আমাকেও সরকার থেকে ২৫০ রিয়াল করে দিবে প্রতি মাসে ।আমি ওদের মাঝে নতুন মেম্বার হিসাবে যোগদান দিতেই সবাই আমাকে সাদরে গ্রহণ করলো, সাথে সাথে খাবারের ব্যবস্থা । সত্যিই আনন্দে আত্তহারা এত ভাল মানুষ এখানে কেন ? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি । খাওয়া দাওয়া মাসাল্লাহ অভাবনীয় সকালে কেক, কলা, ডিম,দুধ , ফল দুপুরে রাতে খেপছা । ভিতরে ফ্রিজ ফলমূল দিয়ে ভরা । স্থায়ী অস্থায়ী মিলে ৭০ জনের মত হবে কয়েদি । কারো কারো ২৫/৩০ বছর পর্যন্ত সাজা । সব এক সাথে । পাশে মসজিদ প্রতি ওয়াক্তে নামাজ । টিলিভিশন তো আছেই সাথে কেরাম বুট সহ হাটাহাটির ব্যবস্থা । যারা ছাত্র তারা ইচ্ছা করলে লেখা পড়াও চালিয়ে যেতে পারবে । যাদের স্ত্রী আছে তাদের সপ্তাহে ১/২ দিন স্ত্রীর সাথে জেল খানায় থাকার ব্যবস্থা করা আছে । ১ সপ্তাহ পর পর ভলি বল খেলার সুযোগ আমি নিজেও খেলেছি । আছে কুরআন পড়ার ব্যবস্থা , যারা এখানে এসে কুরআনের হাফেজ হতে পারবেন তাদের ৫ বছরের সাজা মওকুফ সাথে ৫০০০ রিয়াল বুকশিস । প্রতি বছর যাকাতের টাকা থেকে ওই সমস্ত কয়েদিদের কাছে পাওনা ওলাদের টাকা পরিশোধ করে বাদশা সাজা কমিয়েদেন । এসব জেলে এসে বেনামাজি নামাজি হয় । অমসলিম মুসলিম হয় । কুরআনের হাফেজ হয় ।নিজ অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয় । মুক্তি পাবার পর তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে উৎসাহী হয় । ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ কারাগারের এই স্লোগান আমাদের কেন্দ্রীয় কারাগারে লেখা থাকলেও বাস্তবতা তা বলেনা । উল্লেখ্য গতকালকের মানব জমিনে কারা অভ্যন্ততরে কোটি টাকার বানিজ্য নিয়ে লেখা পড়তেই গা শিউরে উঠলো ।২৬৮২ জন কয়েদি ধারণ ক্ষমতা কেন্দ্রীয় কারাগারে
গত ১০ ডিসেম্বর বন্দির সংখ্যা ছিল ৮২৪১ জন।গোসল করার এক বালতি পানি নেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা গুনতে হয় ।টাকা নেই এমন গরীবদের করা হয় অমানবিক নির্যাতন । সরকারি সুযোগ-সুবিধা বণ্টনে বৈষম্য চরমে।ভুক্ত ভোগীদের ধর্ম কর্ম পালনে প্রতিবন্ধকতা। সুশাসনের মাধ্যমে এই সব সমস্যা দ্রুত সমাধান না গেলে।দেশে যে কোনও সময় এসব কারাগারে মানবিক বিপর্যয় অস্বাভাবিক নয় ।
বিষয়: বিবিধ
২৭৭৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি ভালো মানুষটিকে ওরা ভূল করে জেলে নিয়েছে। ওদের ক্ষমা করে দিবেন।
বাংলার জমিনে এমন জেলখানা কল্পনাতিত। সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।
অন্য দেশের জেলখানার অবস্হা শুনেছি মোটামুটি ভাল হয়! কিন্তু বাংলাদেশের জেলখানায় প্রকৃতই শুধুই শাস্তি দেয়ার জন্যেই! এখানে শুধরানোর চেয়ে আরো ভয়ংকর অপরাধী বানানো হয় যেন!
এক বাংলাদেশী প্রবাসী ছেলে কোন এক এলাকা দিয়ে যাবার সময় কোন এক বিল্ডিংয়ের ছাদে একজন মেয়েকে দেখে সে দিকে তাকায় । মেয়েটিও দেখে যে ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে আছে ।
সেই মেয়েটি নাকি পুলিশে খবর দেয় এবং পুলিশ এসে ছেলেটিকে ধরে নিয়ে যায় । পরে নাকি মেয়েটির দিকে তাকানো অপরাধে ছেলেটির ফাঁসি হয়ে যায় ।
ঘটনাটা কি আপনারা শুনেছেন ? এটা কি সত্য কোন ঘটনা ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন