রমজানের ৭২০ ঘণ্টা আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমত
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল গাফফার ০৪ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৪০:৪২ রাত
পবিত্র রমজান চলছে সবার জন্য রইলো অসংখ্য আহলান ওয়া সাহলান।
চারিদিকে খুশির ফোয়ারা ছুটছে। শুধু আমাদের দেশ কিংবা বিশ্বজুড়েই নয়, আকাশের ওই ঊর্ধ্বজগতেও আনন্দধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কুল মাখলুকাত জুড়ে তাই উৎসবের আমেজ। পার্থিব কোনো লালসা কিংবা লোভের অর্জনে নয়, গোটা ভূমণ্ডল জুড়ে বিরাজমান এক পরম স্বর্গীয় পরিবেশ।
প্রিয় পাঠক, সওমের শুরু থেকে শেষ ৭২০ ঘণ্টা আমাদের ঘিরে রাখবে আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমত বরকত । একটানা একমাস রামজানের মূল্য স্বয়ং আল্লাহ পাকের কাছে অনেক দামি । পবিএ এমাসে আপনার আমল নামায় সওয়াব কয়েকগুণ করে বাড়িয়ে দিবেন । এ মাসের সবচেয়ে বড় সম্মান হচ্ছে পবিত্র কুরআন। কারণ এ মাসেই আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘‘রমজান মাস, যে মাসে অবতীর্ণ করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত
এমন সৌভাগ্যের মৌসুমে আজ থেকে বদলে ফেলুন নিজের দৈনন্দিন রুটিন। এই একটি মাসে যারা সত্যিই সমর্পিত হতে পারবেন, তারাই তো পরম ভাগ্যবান।
মাহে রামজানের বিশটি স্পেসাল আমল
১/তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখবে চাঁদ দেখে ঈদ করবে। -বুখারী ও মুসলিম
২/তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রমজান মাস পাবে, সে যেন রোযা রাখে। -সুরা বাক্কারা১৮৫
৩/যে ব্যক্তি রমজান মাসে রাতে জেগে নামায আদায় করবে আল্লাহ তার পিছনের গুনাহ মাফ করে দিবেন। -বোখারী ও মুসলিম
৪/মানুষ কল্যাণের মধ্যে থাকবে যাবত বিলম্ব না করে ইফতার করবে এবং শেষ সময়ে সাহরী খাবে। -বোখারী ও মুসলিম।
৫/মানুষ কল্যাণের মধ্যে থাকবে যাবত বিলম্ব না করে ইফতার করবে এবং শেষ সময়ে সাহরী খাবে। -বোখারী ও মুসলিম
৬/তিন ব্যক্তির দু’আ ফিরিয়ে দেওয়া হয়না।…রোযাদার ব্যক্তি-ইফতারের আগ পর্যন্ত।-তিরমিযি আহমদ ইবনে খুযাইমা ও ইবনে হিব্বান।
৭/যে ব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করলো না, তার উপবাস থাকায় আল্লাহর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। -আহমদ আবু দাউদ তিরমিযি।
৮/কেউ তাকে (রোযাদারকে) গালি দিলে বা ঝগড়া করলে সে যেন বলে আমি রোযাদার।-বোখারী ও মুসলিম।
৯/যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, তাকে রোযাদারের সম পরিমাণ ছওয়াব দেওয়া হবে। তবে রোযাদারের ছওয়াবে কোন কর্তন করা হবে না।-তিরমিযি
১০/রমজানের প্রতি রাতে জিবরীল আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাত করতেন এবং তাকে কুরআনের দারস দিতেন।-আহমদ, বোখারী। ১১/সকলের মধ্যে আল্লাহর রাসুল ছিলেন সবচেয়ে দানশীল আর তিনি রমজানে অধিক দানশীল হতেন যখন তার কাছে জিবরীল আগমন করতেন।-বোখারী ও মুসলিম।
১২/আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রোযা রেখে মিসওয়াক করতে দেখেছি। তার সংখ্যা গুনে আমি শেষ করতে পারবো না। -বোখারী ১৩/রমজান মাসে উমরা করা হজ্জের সমতুল্য।–বোখারী ও মুসলিম। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে আমার সাথে হজ্জের সমতুল্য।
১৪/আল্লাহর রাসুল (রমজানের) শেষ দশকে (ইবাদতে) যে পরিমাণ পরিশ্রম করতেন অন্য কোন সময় তা করতেন না। শেষ দশক এলে তিনি কমর বেঁধে নিতেন, রাত জাগতেন এবং পরিবারের লোকদের জাগিয়ে দিতেন।–মুসলিম
১৫/আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করতেন। -বোখারী ও মুসলিম।
১৬/তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত সমূহে শবে কদর অন্বেষণ করো।–বোখারী।
১৭/আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর ধার্য করেছেন রোযাদারের অনর্থকতা ও পাপাচার থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকিন ব্যক্তিদের খাদ্য হিসেবে। যে ব্যক্তি তা ঈদের নামাযের পূর্বে আদায় করবে তা গ্রহণযোগ্য এবং যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পরে আদায় করবে তা সাধারণ সাদকা বলে গণ্য হবে।– আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ।
১৮/আর (এই মাসে) অনেক লোককে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নাম হতে মুক্ত করেন। আর তা প্রতি রাতে।–সহীহ ইবনে খুযাইমাহ আহমদ ও ইবনে মাজাহ। অন্য হাদীসে এসেছে-আল্লাহর রাসুল বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান পেল অথচ তার গুনাহ মাপ হয়নি, অত:পর জাহান্নামে প্রবেশ করলো…। ইবনে হিব্বান ইবনে খুজাইমাহ বাইহাকী ও সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব।
১৯/রমজানের প্রথম রাতে একজন ঘোষক ঘোষণা দেয়, হে সৎ কর্মেচ্ছুক, অগ্রসর হও, হে মন্দ কর্মেচ্ছুক, বিরত থাক। -তিরমিযি ইবনে মাজাহ।
২০/তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। -বাকারা ১৮৩
খুব সংক্ষেপে আসুন জেনে নেওয়া যাক । ৭২০ ঘণ্টায় ইফতারে ও সেহেরীতে কি খাবেন ?
ইফতারঃ খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা যেতে পারে। ঠান্ডা পানি বা লেবুর শরবত পান করা ভালো।
ইফতার বা সেহ্রিতে ঘরে তৈরি খাবার খাওয়া সবচেয়ে ভালো। দোকানের ভাজিজাতীয় খাবার বদহজম, পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে। রোজা রাখার পর শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সুষম খাবার খেতে হবে। শর্করা, আমিষ ও চর্বিজাতীয় খাবারের পরিমিত সংমিশ্রণে সেহ্রি, ইফতার ও রাতের খাবার খেতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাপ্তবয়স্কদের ইফতার থেকে সেহ্রি পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত।
যাঁরা ডায়াবেটিসের রোগী, তাঁরা ইফতারে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাবেন না, শরবতের বদলে পাতলা দুধ বা পরিমিত ডাবের পানি ভালো; এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া ভালো। যাঁদের পেপটিক আলসার, তাঁরা একেবারে পেট ভরে খাবেন না, পরিমাণে একটু কম খাবেন।
রোজার মাসে কারও কারও মুখে দুর্গন্ধ হয়। এটি কোনো জটিল সমস্যা নয়। সেহ্রি খেয়ে দাঁত ভালোভাবে মেজে যেকোনো মাউথওয়াশ দিয়ে গড়গড়া করলে দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাবেন। রাতের খাবারের পর একটা লবঙ্গ চিবোতে পারেন; আর সেহ্রি খাওয়ার পর উষ্ণ পানিতে একটু লবণ দিয়ে কুলকুচি করা ভালো।
বিষয়: বিবিধ
১৩২১ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাজাকাল্লাহ....। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন