শাহবাগিদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। আমি আস্তিক ব্লগার, আমাকে কি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হবে? তবে নাস্তিক ব্লগারদেরকে কেন অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হবে?

লিখেছেন লিখেছেন হাসান কবীর ২৫ মার্চ, ২০১৩, ১০:৪৩:৩৩ সকাল

শাহবাগি ব্লগাররা এবার অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছেন। লাইসেন্স পাওয়ার ন্যূনতম কোনো যোগ্যতা না থাকলেও দলীয় বিবেচনায় বিতর্কিত এসব ব্লগারকে লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তৌহিদি জনতা শাহবাগি নাস্তিক ব্লগারদের প্রতিরোধের ঘোষণার বিষয়টিকে লাইসেন্স দেয়ার অন্যতম শর্ত হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার। ব্লগাররা ‘নিরাপত্তাহীনতার’ মধ্যে আছেন কারণ দেখিয়ে তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে শাহবাগি ব্লগাররা দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা থাকলেও তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ৭ ব্লগার পেয়েছেন গানম্যান আর ১৯ ব্লগার পেয়েছেন বিশেষ নিরাপত্তা। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বাকি ব্লগাররা আছেন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। অনেকে সরকারি গাড়িসহ পুলিশি প্রহরায় চলাফেরা করছেন। শাহবাগ আন্দোলনের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের মিডিয়া সেলের সরাসরি কর্মী ডা. ইমরান এইচ সরকার বিশেষ নিরাপত্তার জন্য এখন থাকছেন রাজধানীর পাঁচতারকা একটি হোটেলে। তাকে বহনকারী গাড়ির সঙ্গে সাত-আট পুলিশ সদস্য পাহারা দেন। স্লোগানকন্যা লাকী আক্তারও সার্বক্ষণিক পুলিশি প্রহরায় চলাফেরা করেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিচ্ছে অধর্শত ব্লগারকে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়া হলেও ব্লগাররা বাসায় থাকছেন না। ডা. ইমরানের মতো কয়েক ব্লগার থাকছেন রাজধানীর কয়েকটি পাঁচতারকা হোটেলে। বাকিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরামর্শ অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে থাকছেন। তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যতিব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এসব ব্লগারকে নিয়ে উদ্বিগ্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। পুলিশও পড়েছে বেকায়দায়। ব্লগারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশ থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও উদ্বিগ্ন থাকতে হচ্ছে। এত নিরাপত্তার মধ্যেও শাহবাগি ব্লগারদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে।

তথ্য মতে, চলতি মাসের শুরুতে অর্ধশত ব্লগার অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে। দিনে দিনে আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে একাধিক সূত্র দৈনিক আমার দেশকে জানিয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রসঙ্গে গতকাল আমার দেশকে বলেন, ‘মার্চের শুরুতে প্রায় পঞ্চাশ ব্লগার অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য অবেদন করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ তদন্তের স্বার্থে আবেদনকারীদের নাম বলেননি ওই কর্মকর্তা। তবে আবেদনকারীর মধ্যে সবাইকে লাইসেন্স দেয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

কথিত বিচারক, শাসকের দ্বৈত ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়া ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিত্সকদের সংগঠন স্বাচিপের নেতা ডা. ইমরান এইচ সরকারের কাছ থেকে এসব প্রসঙ্গে নানাভাবে চেষ্টা করেও বক্তব্য জানা যায়নি। তার ‘০১৭১১...৩৪১’ নম্বরে গতকাল বিকালে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। যোগাযোগ করলে ব্লগার আরিফ জেবতিক আমার দেশকে বলেন, ‘শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে আমি নেই। আমি অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করিনি। অন্য কেউ করেছেন কী-না, আমার জানা নেই। ব্লগারদের মধ্যে কেউ ব্লগার হিসেবে বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার কারণে অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন কী না, তাও আমার জানা নেই।’ শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ও আলোচিত-সমালোচিত ১৯ ব্লগারের একজন মোরসালিন মিজানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ৭ ব্লগার গানম্যান পেয়েছেন বলে জানা যায়। তারা হলেন ডা. ইমরান সরকার, অমি রহমান পিয়াল, আসিফ মহিউদ্দিন, মাহবুব রশিদ, লাকি আক্তার, মুক্তা বাড়ৈ ও মাহমুদুল হক মুন্সী। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ১৯ ব্লগারকে নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী ব্লগারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও গোয়েন্দা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন বলে তার কার্যালয় থেকে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেদিন ১৯ ব্লগারের নাম উল্লেখ করে তাদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে নির্দেশপত্র পাঠানো হয়। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসন থেকেও ব্লগারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর সাত ব্লগারকে গানম্যান দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার আগে তার কার্যালয়ে ১৯ ব্লগারের নামের একটি তালিকা পাঠানো হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব ব্লগারের নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো ১৯ ব্লগার হলেন ডা. ইমরান সরকার, অমি রহমান পিয়াল, আরিফ জেবতিক, প্রীতম আহমেদ, আসিফ মহিউদ্দিন, কামাল পাশা চৌধুরী, মাহবুব রশিদ, লাকী আক্তার, মুক্তা বাড়ৈ, শাকিল আহমেদ অরণ্য, মাহমুদুল হক মুন্সী, আলামিন বাবু, গোলাম রসুল মারুফ, কানিস আলমাস সুলতানা কিনু, জাকির আহমেদ রনি, মোরসালিন মিজান, ডা. রাশেদুল হাসান, পলাশ আহমেদ ও রাকিবুল বাশার রাকিব।

উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম নামের একটি সংগঠনের নামে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগে আন্দোলন শুরু হয়। প্রথম দিন থেকে এর নেতৃত্বে আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক বিভিন্ন বাম দলের নেতারা।

বিষয়: বিবিধ

১৩৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File