জামায়াত-ধানের শীষ-বিএনপি
লিখেছেন লিখেছেন আবু নিশাত ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:৩৩:৪৮ রাত
দুজন মহিলার মধ্যে খুবই ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান । একজন হিজাব এবং বোরকা পরিহিত এবং অপরজন হাতে শাখা, কপালে লাল টিপ এবং মাথায় সিদুর । এই দুইজন মহিলা তাদের নিজ নিজ পরিচিতি আমাদের না বললেও আমরা বুঝে নিতে পারি তাদের চিন্তাধারা, সংস্কৃতি কী হতে পারে । ধরুন হিজাব এবং বোরকা পরিহিত মহিলাকে আপনি দুপুরে আপ্যায়ন করলেন এবং সে আপ্যায়ন আপনি গরুর মাংস দিয়ে করলেন, কিন্তু একই আপ্যায়ন কি আপনি হাতে শাখা, কপালে লাল টিপ এবং মাথায় সিদুর পরা মহিলাকে করতে পারবেন ? নিশ্চয়ই না । কেন না ? এর উত্তর হলো হাতে শাখা, কপালে লাল টিপ এবং মাথায় সিদুর এটি একটি ভিন্ন আদর্শ এবং ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতীক । এখানে হিজাব ও বোরকা এবং হাতে শাখা, কপালে লাল টিপ এবং মাথায় সিদুর এই দুটি প্রতীক দুই মহিলার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছে, যদিও তাদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক বিদ্যমান ।
আশা করি সচেতন পাঠকরা আমার বক্তব্য বুঝতে সক্ষম হয়েছেন । জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রতীক ছিল দাড়িপাল্লা। জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ ছিল সমাজে আল্লাহর আইন কায়েম করা, সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠা করা । জামায়াতের এই আদর্শই অতি সংক্ষেপে প্রকাশ পেয়েছে ‘দাড়িপাল্লা’ প্রতীক দ্বারা । জামায়াতের এই আদর্শকে পশ্চিমা বিশ্ব খুবই ভয় পায় । তাই তারা জামায়াতকে মৌলবাদী দল হিসাবে চিহ্নিত করে । পশ্চিমা বিশ্ব চায়, মুসলিম দেশে মডারেট মুসলিম দল থাকুক, কিন্তু কোনভাবেই মৌলবাদী দল নয় । তাই তাদের টার্গেট হলো, যে কোনভাবেই জামায়াতকে ধ্বংস করা অথবা জামায়াতকে নিয়ে এমনভাবে কাজ করা যাতে জামায়াত নেতৃত্বের মগজ ধোলাই হয়ে যাবে এবং তারা মডারেট মুসলিম দলে পরিণত হবে ।
জামায়াত ২০০১ সালে মাত্র ২টি মন্ত্রিত্ব পেয়ে ক্ষমতার যে স্বাদ পেল, সেই স্বাদে নেতা-কর্মীরা হলেন আহ্লাদিত । ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেবের গুরুত্ব বাড়তে থাকল । কারণ তার মাধ্যমে জামায়াত নেতৃত্ব বিভিন্ন দূতাবাসে যাবার এবং কথা বলার সুযোগ পেল । পশ্চিমা সাদা চামড়ার মুরুব্বিরা জামায়াতের বক্তব্যকে বাহ্যিকভাবে খুবই গুরুত্ব দিতে লাগল এবং জামায়াতকে মডারেট মুসলিম দল হিসাবে স্বীকৃতি দিল । আর জামায়াত নেতৃত্ব খুশীতে টগবগ করে বিভিন্ন সময় নিজেদের মডারেট মুসলিম দল হিসাবে পরিচয় দেয়া শুরু করলেন, আর ভাবলেন পশ্চিমা বিশ্ব তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে, এখন আর পশ্চিমা বিশ্ব জামায়াত সম্পর্কে কোন এলার্জি দেখাবে না, এরা জামায়াতের বন্ধু হয়ে যাবে । জামায়াত ভুলে গেল, কোরআনের সেই বাণি, ইয়াহুদী-খৃস্টানরা কখনও তোমাদের বন্ধু হতে পারবে না । শেষ পর্যন্ত নিজ শীর্ষ নেতৃত্বের ফাঁসী কার্যকরের মাধ্যমে জামায়াত সেই ভুলের মাশুল দিল । জামায়াত মনে করেছিল অর্থের বিনিময়ে কিছু লবিষ্ট নিয়োগ করে পশ্চিমা বিশ্বের নিকট যুদ্ধাপরাধী বিচারের বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি তুলে ধরে পশ্চিমা বিশ্বের চাপে বাংলাদেশ সরকার কোন অন্যায় রায় দিতে পারবে না । কিন্তু শহীদ কামরুজ্জামান জেলে থেকে ঠিকই বলেছিলেন, পশ্চিমারা বিচারের সমালোচনা করবে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে চাইবে জামায়াত নেতৃত্বের ফাঁসী হয়ে যাক ।
পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামের জিহাদকে কলংকিত করার জন্য বিভিন্ন যায়গায় মুসলিম নামধারী কর্তৃক বোমা হামলার দায় ইসলাম ধর্মের উপর চাপিয়ে দিল । তারা বিষয়টাকে এমনভাবে প্রচার করল যে, যারা ইসলামী রাষ্ট্রের কথা বলবে, তারা সবাই জিহাদি অর্থাৎ সন্ত্রাসী । অথচ তামিল টাইগাররা যখন শ্রীলংকাতে প্রথম আত্মঘাতী হামলা শুরু করল, তখন তার দায় কিন্তু হিন্দু ধর্মের (তামিলরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী) উপর যায়নি । আবার আইরিশ লিবারেশন আর্মিদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনও খৃস্ট ধর্মের সাথে সম্পর্কিত হয়নি । একই বক্তব্য আমেরিকায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বা নাইট ক্লাবে যখন খৃস্টান ব্যক্তি গুলি করে মানুষ মারে, তখন তার দায়ও খৃস্ট ধর্মের উপর যায় না । কিন্তু ইরাক, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন এর জাতীয়তাবাদী সহিংস আন্দোলন এবং সিআইএ, র ও মোসাদের পরিকল্পনার দায় সরাসরি চলে যায় ইসলাম ধর্মের উপর । জিহাদকে পশ্চিমা বিশ্ব সন্ত্রাসী শব্দ হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করল । বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ল । পুলিশ শিবিরের কিছু বই জব্দ করে বলল, বইগুলো জিহাদী বই । সাথে সাথেই শিবির এক কেন্দ্রীয় নেতা বিবৃতি দিলেন, পুলিশ পরিকল্পিত ভাবে শিবিরের বইকে জিহাদী বই হিসাবে চালিয়ে দিচ্ছে । শিবিরের নেতার বিবৃতি হতে বুঝলাম, জিহাদী বই রাখা ভাল না । এখন জামায়াত-শিবিরের শ্লোগানে জিহাদ শব্দ নাই, আছে গণতন্ত্র । বিষয়টি ২০০৬ সালের পর আরও প্রকট আকার ধারণ করে । নির্বাচন কমিশনের কথায় জামায়াত তার গঠনতন্ত্র হতে ‘নিয়মতান্ত্রিক পথে’ শব্দ বাদ দিয়ে ‘গণতান্ত্রিক’ শব্দ যোগ করল এবং বিনা প্রতিবাদে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন সাধন করল। পশ্চিমা বিশ্ব জামায়াত নেতাদের মাথায় মডারেট মুসলিম শব্দটি এমনভাবে গেঁথে দিয়েছে, যে কোন ভাবেই হউক গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে মডারেট হতে হবে, কোনভাবেই মৌলবাদী হওয়া যাবে না । নির্বাাচন কমিশন পেল আরও সুযোগ । তার বারবার জামায়াতকে চেপে ধরল এবং বলা শুরু করল এটা পরিবর্তন কর, ওটা পরিবর্তন কর । জামায়াতও বিনা বাক্য ব্যয়ে পরিবর্তন করতে লাগল । কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে (হুদা কমিশন) সন্তুষ্ট করা যায় না । তাদের চাওয়া আরও বেশি । সুযোগ পেয়ে তারা একসাথে জামায়াতকে স্যাকুলার দলে পরিণত করতে চায় । কিন্তু মডারেট জামায়াত নেতাদের তখনও পর্যন্ত স্যাকুলার দলে পরিণত হওয়ার মত মগজ ধোলাই হয়নি । তাই আল্লাহ সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার অধিকারী, এই বাক্যটি তারা কাটতে রাজী হলেন না । একপর্যায়ে বিষয়টি চলে গেল আদালতে । আদালতের আপীল বিভাগে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দিল । জামায়াত এই সিদ্ধান্তের একটি প্রতিবাদ পাঠিয়ে তার দায়িত্ব শেষ করল । এক্ষত্রে অত্যন্ত কৌশলী জামায়াত এমন কৌশল অনুসরণ করল, যাতে তাকে কেউ মৌলবাদী সংগঠন না বলে, সে যাতে মুসলিম মডারেট দল হিসাবে থাকতে পারে । আমার এ কথার অর্থ বুঝতে হলে নিবন্ধন বাতিলের যে প্রতিবাদ জামায়াত দিয়েছে, তার প্রতিটি শব্দ আপনারা ভালভাবে বিশ্লেষণ করুন । দেখবেন সেখানে লেখা আছে আদালতে বিচারাধীন বিষয় ----------- ইত্যাদি । জামায়াত একবারও জনগণের কাছে হাইলাইট করে নাই যে, ‘আল্লাহ সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার অধিকারী’ এই কথাগুলো বাদ না দেয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে । যদিও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা এই বিষয়টি ফেসবুকে ঝড় তুলেছেন, কিন্তু নেতারা থেকেছেন নীরব । কেউ কী বলতে পারবেন, নির্বাচন কমিশন ‘আল্লাহ সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার অধিকারী’ এই বাক্যটি না কাটলে জামায়াতকে নিবন্ধন দেবে না, এই বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্য জামায়াত সেমিনার, মানব বন্ধন, হরতাল কোন কর্মসূচী কি নিয়েছে ? অথচ জামায়াত বিভিন্ন বিষয়ে অনেক হরতাল দিয়েছে । কিন্তু গত ১০ বছর ধরে ‘আল্লাহ সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার অধিকারী’ এই শব্দটি ৯০% মুসলিম জনগণের দেশে, কোন সংগঠন কেন তার গঠনতন্ত্রে রাখতে পারবে না, তার জন্য জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে জামায়াত কোন হরতার বা কর্মসূচী দেয়নি । এর কারণ একটাই, সরাসরি ইসলামের পক্ষে কোন কর্মসূচী দিলে আপনি মৌলবাদী হয়ে যেতে পারেন । জামায়াত নেতারা এমনভাবে ঘুমিয়ে আছেন যে, তারা এটি অনুধাবন করতেই পারছেন না, ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিকরা তাদেরকে সবসময় মৌলবাদী হিসাবেই চিহ্নিত করবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র ইকামতে দ্বীনের ধারণা থাকবে ।
জামায়াত তার প্রতীক হারিয়েছে বেশ কয়েক বছর হলো । জামায়াত এর নিবন্ধন বাতিল হবে, এটিও নিশ্চিত ছিল এবং নির্বাচনের আগে ঠিকই জামায়াত তার নিবন্ধন হারালো। জামায়াত যেহেতু নির্বাচন করবেই, তাহলে সেই জামায়াত কেন একটি নতুন দল এবং প্রতীক নির্ধারণ করে রাখল না ? অথবা একই আদর্শের নিবন্ধিত কোন দলের সাথে জামায়াত প্রতীকের বিষয় নিয়ে সমঝোতা কেন করল না, এটি একটি বড় প্রশ্ন । মাঠে একটি কথা প্রচলিত আছে, কিছু নিবন্ধিত দল, প্রকৃতপক্ষে জামায়াতেরই তৈরি । যদি তাই হয়, তবে জামায়াত কেন তাদের প্রতীক ব্যবহার করল না ?
প্রতীক হারিয়ে, নিবন্ধন হারিয়ে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিল, তারা এবারও নির্বাচন করবে । ২৫ টি সিটে তারা জোটেরও সম্মতি পেয়েছে । ধরলাম এর মধ্যে ১৫ বা ২০ সিটে জামায়াত (বাস্তবে ফেয়ার ইলেকশন হবে কিনা সন্দেহ) জয়ী হলো । লাভটি কী হবে ? বিএনপি যাদের সাথে ঐক্যফ্রন্ট গড়েছে, তারাই জামায়াত নেতাদের বিচার এর নামে হত্যা করার জন্য মাঠ তৈরি করে দিয়েছিল । সেই বিভৎস হত্যাকারীরাও বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচিত হবে । সোজা কথা হলো ধানের শীষের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে যারা আসবে, তারা ঐক্য ফ্রন্টের লোক, যারা জামায়াত নেতাদের ফাঁসীতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে, জামায়াতের লোক এবং বিএনপির লোক, যারা সুযোগ পেলেই জামায়াতকে ধাক্কা মারার জন্য প্রস্তুত । এ ধরনের খিচুড়ি মার্কা আদর্শহীন লোক, যারা নিজ দল আওয়ামিলীগ হতে প্রত্যাখ্যাত, কিন্তু হৃদয়ের ভিতরে
জয়বাংলা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও নাস্তিকতা বিদ্যমান, তাদের নিয়ে নির্বাচিত হয়ে কি জামায়াত তার শহীদ নেতাদের হত্যার বিচার কি করতে পারবে ? অবশ্যই না । জামায়াত ১৫ বা ২০টি আসনে নির্বাচিত হয়ে ইসলামী আইন কি কায়েম করতে পারবে ? উত্তর নিশ্চয়ই না । তাহলে প্রতীক ও নিবন্ধন হারানো একটি দল নির্বাচন করে কী লাভ ? জামায়াত ত বলতে পারত, যেহেতু ‘আল্লাহ সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার অধিকারী’ এই বাক্যটি থাকার কারণে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠির দেশে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, সেহেতু এর প্রতিবাদে এই নির্বাচন জামায়াত করবে না এবং জনগণ বুঝার চেষ্টা করুন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক পদগুলো মুসলিম নামধারী ভিন্ন সংস্কৃতির এবং অন্য দেশের আনুগত্যকারীরা দখল করে আছে ।
কারো কারো যুক্তি হলো, জামায়াত নির্বাচনমুখী দল । তাই অবশ্যই জামায়াত নির্বাচন করবে । আমরাও ধরে নিলাম জামায়াত নির্বাচন করবে । তবে সেই নির্বাচন হতে হবে আত্মসম্মান বজায় রেখে । ২০০৮ সালে জামায়াত যে কয়টি সিটে নির্বাচন করেছে, এবারও জামায়াত সেই কয়টি সিটে নির্বাচন করতে চাইবে । যদি বলা হয়, জামায়াতের নিবন্ধন নাই, প্রতীক নাই, অতএব জামায়াত বেশি দাবী করতে পারবে না । এর উত্তর হলো নিবন্ধনহীন, প্রতীকহীন জামায়াত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রায় বিএনপির সমান সিট পেয়েছে । অতএব জামায়াতকে যদি আলাদা নির্বাচন করতে হয়, তবে জামায়াতের কোন ক্ষতি নাই, সব ক্ষতি হলো বিএনপির । কারণ জামায়াত যা হারানোর তা হারিয়ে ফেলেছে, সে তার শীর্ষ নেতৃত্ব হারিয়েছে । সে আর কী হারাবে ? এরপরও জামায়াত টিকে আছে । উপজেলা নির্বাচনই তার প্রমাণ । কিন্তু বিএনপি যদি এবার ক্ষমতায় না আসে, তবে তাদের সংগঠন বিলীন হয়ে যাবে । ২০১৯ সালে বিএনপির নেতা-কর্মী আর থাকবে না, সবাই আওয়ামিলীগ হয়ে যাবে । তাহলে বেশি ক্ষতি কার ? কিন্তু দূর্ভাগ্য জামায়াত এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শক্ত অবস্থান নেয়ার মত ক্ষমতা নেই । এরা সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য ব্যাকুল । এই নেতৃত্বের অধঃপতন এতটুকু হয়েছে যে, যারা জামায়াত নেতৃত্বের ফাঁসীর জন্য কাজ করেছে, তারা তাদেরকে পরোক্ষ সমর্থন দিচ্ছে । একেই বলে তথাকথিত রাজনীতি । শহীদ মতিউর রহমান নিজামীর সমালোচনা করে টক শো তে ঝড় তুলতেন আবু সাঈদ । এই আবু সাঈদ জামায়াত নেতাদের বিচারের জন্য মাঠ তৈরি করেছিলেন । শহীদ নিজামীর সাথে নির্বাচনে একাধিকবার পরাজিত হওয়া যে কুখ্যাত আবু সাঈদ ট্রাইবুনাল গঠনের পক্ষে ছিল, তার জন্য জামায়াত শহীদ নিজামীর পাবনার আসনটি ছেড়ে দিল ! জামায়াতের লোকরা কীভাবে এই কুখ্যাত লোকের জন্য আসন ছেড়ে দেয়াটা মেনে নিল ? তারা কি এখানে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী দিতে পারেনি? একই বক্তব্য এ কে খন্দকারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । এই ব্যক্তিই গণ আদালত, ট্রাইবুনাল গঠন ইত্যাদির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে । জামায়াত কীভাবে এ সমস্ত প্রার্থীকে সমর্থন দিবে ? এদের বিরুদ্ধে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী দাড় করানো উচিত ছিল । কিন্তু এই জামায়াত এখন আর সেই জামায়াত নয়, গণতন্ত্রের সুধা পান করে ম্যাকিয়াভ্যালির রাজনীতি আয়ত্ত করে মডারেট জামায়াত খুব সহজেই সংগঠনের জন্য যারা রক্ত দেয়, তাদেরকে ভুলে যায় । কয়েকটি আসন পাওয়ার জন্য তাকিয়ে থাকে বিএনপির দিকে, অসন্তুষ্ট করতে চায় না আবু সাঈদ, একে খন্দকারদের, কারণ ওরা তথাকথিত সুশীল সমাজের লোক । মডারেট জামায়াতের নিকট কোন গুরুত্বই নেই আমীরে জামায়াত শহীদ নিজামীর নির্বাচনী এলাকার প্রতি, কারণ তারা ১৫ বা ২০টি সিটে জয়লাভ করে বাংলাদেশে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করে শহীদদের হত্যার বদলা নেবে !
বিএনপি যার অর্থ হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল । নামের ভিতরই দলটির পরিচয় রয়েছে । দলটি জাতীয়তাবাদী, শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ, যার উৎস হলো জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি । এই প্রতিটি বিষয় প্রকাশ করার জন্য বিএনপি বেছে নিয়েছে, ধানের শীষ প্রতীক । ধানের শীষ প্রতীক হলো জাতীয়তাবাদ, ধানের শীষ প্রতীক হলো জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস, ধানের শীষ প্রতীকের অর্থ হলো, সরকার পরিচালিত হবে কোন ধর্ম অনুযায়ী নয়, জনগণের মতানুযায়ী (যার অর্থ হলো ধর্মনিরপেক্ষ) । এর কোনগুলিই ইসলামী আদর্শের সাথে সম্পর্কিত নয় । বরং এইসব বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে জাহান্নামই হবে নিজ ঠিকানা । তবে জন্মের পর হতেই দলটি মুসলিম জনগোষ্ঠির বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয় । এ দেশের জনগণের মাতৃভাষা বাংলা এবং আরবী ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে ধার্মিক হওয়া সত্তেও ইসলামের বিশ্বাসের সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক ‘জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি’ ও ‘জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার’ কী ধরনের ভয়ানক তা বুঝতে সক্ষম নয় । তাই ব্যক্তিগতভাবে ধার্মিক লোকেরা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকেন । ফলে জামায়াতের সাথে বিএনপির মোটামোটি একটি আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে । সম্পর্কটা আমার আলোচনার শুরুতে দুজন মহিলার উদাহরণ এর সাথে মিল খায় । অর্থাৎ একজন হিজাব এবং বোরকা পরিহিত এবং অপরজন হাতে শাখা, কপালে লাল টিপ এবং মাথায় সিদুর দেয়া মহিলা । সোজা কথা দুটি দলের সম্পর্ক আছে, কিন্তু আদর্শ সম্পূর্ণ ভিন্ন ।
আবারও আসি দুই মহিলার কথায় । প্রায় ২৭ বছর (মাঝখানে কিছু অভিমান ছিল) দুজন একসাথে চলার পর হঠাৎ দেখা গেল, হাতে শাখা, কপালে লাল টিপ এবং মাথায় সিদুর দেয়া মহিলার সাথে হিজাব এবং বোরকা পরিহিত মহিলা নেই । পরিবর্তে আছেন, আরও একজন হাতে শাখা, কপালে লাল টিপ এবং মাথায় সিদুর দেয়া মহিলা । ১ম মহিলাকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনার খুবই কাছের লোক হিজাব এবং বোরকা পরিহিত মহিলা কোথায় ? তিনি মুচকি হেসে বললেন, আমার পাশে হাতে শাখা, কপালে লাল টিপ এবং মাথায় সিদুর দেয়া যে মহিলা দেখছেন, তিনিই সেই হিজাব এবং বোরকা পরিহিত মহিলা । রং পরিবর্তন করা মহিলাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার এই পরিবর্তন কেন ? তিনি উত্তর দিলেন কৌশল বা হেকমত । তাকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি গরুর গোস্ত খান কি ? উত্তর আসল না । প্রশ্ন করা হলো কেন ? উত্তর আসল কৌশল বা হেকমত ।
লেখা শেষ করছি, একটি ওয়াজ মাহফিল দিয়ে । ওয়াজ মাহফিলে একজন হুজুর ওয়াজ করতে গিয়ে হঠাৎ করে চুপ মেরে গেলেন । তাকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কথা বলছেন না কেন ? হুজুর উত্তর দিলেন, আমি আমার ওয়াজে যে শব্দটি বলতে চেয়েছিলাম, দেখছি শব্দ ভান্ডারে সেই শব্দ নাই ? জিজ্ঞেস করা হলো কেন নেই । হুজুর বললেন শব্দভান্ডারে এই শব্দ যতগুলো ছিল, তার সবই একটি দল নিয়ে গেছে । সবাই জানতে চাইল শব্দটি কী ? হজুর বললেন, ভাই শব্দটি হলো কৌশল বা হেকমত ।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন