ভুলের সাগরে জামায়াতে ইসলামী
লিখেছেন লিখেছেন আবু নিশাত ০৩ জুলাই, ২০১৮, ১০:৪১:২৫ রাত
আজ ৩ জুলাই ২০১৮, অনেকদিন পর লেখতে বসলাম । লেখাটা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে । সরকারের শত নির্যাতনের পরও দলটি টিকে আছে, তার নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের একনিষ্ঠ ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আনুগত্যের উপর । জামায়াতের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো,তার আনুগত্যশীল জনশক্তি, যা বাংলাদেশের অন্য কোন দলে নেই । কিন্তু জনশক্তির এই অন্ধ আনুগত্য জামায়াত নেতৃত্বকে বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগীতা করেছে, যার সর্বশেষ নজীর হলো সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করা ।
জাতীয় নির্বাচন আর মাত্র কয়েক মাস পর, ডিসেম্বরে । শত নির্যাতন এবং নেতাদের ফাঁসী হওয়ার পরও, ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বি.এন.পি কর্তৃক কোন ধরনের প্রতিবাদ, সহমর্মিতা না থাকা সত্ত্বেও জামায়াত জোটের সাথে ছিল । তাহলে এই শেষ মুহুর্তে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন করার মাধ্যমে জোটে দূরত্ব সৃষ্টি করার কী অর্থ থাকতে পারে, মূলত এই বিষয়ে আজকের লেখাটা ।
প্রথম কথা হলো, এই সরকারের আমলে জামায়াতের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচন করাটা কী আদৌ ঠিক হবে ? ধরে নিলাম, সিটি নির্বাচনে জামায়াত মেয়র পদ পেয়ে গেল । তাহলে কী দাড়াবে ? সমস্ত মিডিয়া, নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবি, বিদেশী শক্তিগুলো মনে করবে, মূল নেতৃত্বকে ফাঁসী দিয়েও জামায়াতকে আটকানো যায়নি । অতএব জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তার মধ্য পর্যায়ের নেতৃত্ব ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ধ্বংস করে দিতে হবে । আবার বি. এন. পিও মনে করবে, তাদের জায়গা জামায়াত দখল করতে যাচ্ছে । তাই তারও এখন জামায়াত-শিবির নিধনে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পিছপা হবে না । অন্যদিকে মার্কিন লবী, ভারতীয় লবী মনে করবে, মৌলবাদী শক্তির ভিত্তি বাংলাদেশে অত্যন্ত শক্তিশালী, তাই তারাও চাইবে আরও কঠিনভাবে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে । নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এই সমস্ত বিপদ মোকবেলার জন্য জামায়াত নেতৃত্ব কী ধরনের পরিকল্পনা রেখেছেন ?
জামায়াত নেতৃত্ব ভাল করেই জানেন, সিলেটে মেয়র পদে জামায়াত প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারবেন না । তাহলে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার দায়ভার কেন জামায়াত নেবে ? জামায়াত নেতৃত্ব বলছেন,সব সিটিতে জামায়াত বি.এন.পিকে সমর্থন করেছে । তাই একটি সিটিতে বি.এন.পি জামায়াতকে সমর্থন করতে পারত । আমার প্রশ্ন হলো, জোট গঠনের পর বি.এন.পি কখনও জামায়াতের ব্যাপারে উদার নীতি গ্রহণ করেছিল ? ১৯৯১ সালে জামায়াত বি.এন.পি কে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে সরকার গঠনে সহায়তা করল । পুরুষ্কার হিসাবে বি.এন.পি জনাব গোলাম আযমকে জেলে দিল । ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর জনাব মতিউর রহমান নিজামীকে কৃষি মন্ত্রণালয় হতে অপেক্ষাকৃত ছোট মন্ত্রণালয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে আনা হলো, কিন্তু ভদ্রতার কোন ধার না ধারে একবারের জন্যও জামায়াতকে তা আগে জানানো হলো না । জামায়াত পত্রিকার মাধ্যমে জানল,তাদের সেক্রেটারী জেনারেল কৃষি হতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন । জামায়াত নেতৃত্বের ফাঁসী হলো, বি.এন.পি কী কোন প্রতিবাদ করেছে ? জামায়াত-শিবির কর্মীরা নির্দয়ভাবে মার খেল, মারা গেল, বি.এন.পি হতে কোন প্রতিবাদ এসেছে ? এতসব অপমান সহ্য করে জামায়াত বি.এন.পির সাথে জোটে আছে, এই যুক্তিতে যে, দেশকে আওয়ামী অপশক্তি হতে রক্ষা করতে হবে ।
মাথামোটা কিছু নেতৃত্ব বলছেন, সিলেটে একটি ভাল ভোট পেলে জাতীয় নির্বাচনে বি.এন.পি এর সাথে আসন নিয়ে দর কষাকষি করতে সুবিধা হবে । কিন্তু তারা একবারও ভাবলেন না, সিলেটের ভোট তাদের ইমেজ নষ্ট করতে পারে । এই নেতৃত্ব তাদের কর্মী ও রুকন এবং তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা হিসাব করে ভাবছেন, এই ভোটগুলো জামায়াতের বাক্সে পড়বে । কিন্তু রুকন ও কর্মীদের অনেকেই সিলেটে স্থায়ী নয়, তাদের নির্বাচনী এলাকা ভিন্ন, তাই তাদেরকে ভোটকে হিসাবে কিভাবে আনা যায় ? তাছাড়া বি.এন.পি প্রার্থী বর্তমান মেয়র আরিফ,তার দলের নেতা-কর্মীর কাছে যতটুকু জনপ্রিয়, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি জনপ্রিয় সিলেটের জনগণের নিকট, তার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য । রিক্সা চালক, সি.এন.জি ড্রাইভারসহ সবাই বর্তমান মেয়র আরিফের নাম জানে, সেখানে জামায়াত প্রার্থী জনাব এহসানুল মাহবুব যুবায়েরকে কয়জনে চিনেন ? যদিও ব্যক্তি হিসাবে, জনাব যুবায়ের অতুলনীয়, কিন্তু ভোটের জন্য জনগণের কাছে পরিচিতি থাকতে হবে ।
প্রথমে যে অন্ধ আনুগত্যের কথা বলেছিলাম, দূর্বল নেতৃত্বের কারণে সেই অন্ধ আনুগত্য বর্তমানে কিছুটা কমে এসেছে । আওয়ামী অপশক্তি দ্বারা মাঠ পর্যায়ের কর্মী ও সমর্থকরা এমনভাবে নির্যাতিত হয়েছে যে, তারা ভোট কাটাকাটির মাধ্যমে আওয়ামী মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হউক, এটা চান না । ফলে জামায়াত তার নিজের ঘরের ভোট হতেও বঞ্চিত হবে । সেই সাথে সাধারণ মানুষ, যারা আওয়ামী বিরোধী তাদের ভোটও জামায়াত পাবে না । যার ফলে খুবই স্বল্প সংখ্যক ভোট প্রাপ্তি জামায়াতের জন্য ইমেজ সংকটের কারণ হয়ে দাড়াবে । আর জাতীয় নির্বাচনের আসনের দর কষাকষির জন্য, সিলেটের ভোট দেখানোর প্রয়োজন নেই। কারণ প্রথম দুই ফেসে উপজেলা নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছিল, সেই নির্বাচনে জামায়াত এর পক্ষ হতে জয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এর সংখ্যার হিসাব দরকষাকষির জন্য যথেষ্ট ।
জামায়াত নেতৃত্ব কর্মীদের বুঝাচ্ছেন, আস্তে আস্তে আমাদেরকে বি.এন.পি বলয় হতে বেরিয়ে আসতে হবে । আর এটি শুরু হলো সিলেট হতে । আমার প্রশ্ন হলো, রাজশাহী, বরিশালে বি.এন.পিকে তালাক দেয়া হলো না কেন ? আর জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এ ধরনের হঠকারী চিন্তা কিভাবে মাথায় আসতে পারে ? এতে কী আওয়ামীলীগ লাভবান হবে না ?
২০০৯ হতে ২০১৮, এই সময়ের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের উপর যে অকথ্য নির্যাতন হয়েছে, রাজপথে তার জবাব জামায়াত-শিবির দিতে পারে নাই । সাধারণ মানুষের একটি ধারণা ছিল, রাজপথে জামায়াত-শিবির অনেক কিছুই করতে পারবে । কিন্তু মানুষের সেই ভুল ধারণা ভেঙ্গে গিয়েছে । আসলে রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে রাজপথে কেউ লড়াই করে পারবে না । রাষ্ট্রযন্ত্র এতটাই শক্তিশালী যে, মিশরের ব্রাদার হুডের জনসমর্থন থাকার পরও তারা ক্ষমতা হতে নেমে ফেরারী জীবন যাপন করছে । আলজিরিয়ায় ইসলামী সালভেশন ফ্রন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও ক্ষমতায় যেতে পারেনি, রাষ্ট্রযন্ত্রের কারণে । ব্রাদারহুড,সালভেশনফ্রন্ট যে জনসমর্থন পেয়েছিল, সেই ধরনের জনসমর্থন জামায়াতের নেই। আর জনসমর্থন পেলেও রাষ্ট্রযন্ত্র কী জামায়াতকে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দিবে ? হ্যাঁ, রাষ্ট্রযন্ত্র জামায়াতকে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দেবে, যখন সে মুসলিম জাতীয়তাবাদী দল হবে, কিন্তু প্রকৃত ইসলামী দল হিসাবে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই । একটি বিষয় ভাল করে মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি অংশ হলো সেনাবাহিনী, যা জাতিসংঘের উপর নির্ভরশীল (যা ১/১১ তে বুঝা গেছে) । আর জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিন লবী । তাই বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ মিশর ও আলজিরিয়ার মত হবে । বাংলাদেশের ইসলামী নেতৃত্ব এসব বিষয় মাথায় রেখে কী কাজ করেন ? না শুধু নির্বাচন আর নির্বাচন !
বিষয়: বিবিধ
১৮১৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যেখানে ভোট ডাকাতির মহড়া চলবে। এখানে কি ডাকাত আওয়ামীলীগ জামায়াতকে ছাড় দিবে? ধনবাদ
সমস্ত দল মানুষের শাসনে বিশ্বাসী। জামাত
ও গনতন্ত্রে বিশ্বাসী। গনতন্ত্র মানে, মানুষ সকল ক্ষমতার চাবিকাঠি। মানুষের আইন মানলে ঈমান হয় না। ঈমান হারিয়ে নির্বাচনে যাওয়া। গনতন্ত্র মানে শির্ক করা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন