ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং জনাব গোলাম আযমের ভুল !

লিখেছেন লিখেছেন আবু নিশাত ২৯ অক্টোবর, ২০১৭, ০৯:৩৯:৪৫ রাত

অধ্যাপক গোলাম আযমকে নিয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের স্মৃতিচারণ, পড়লাম বিডিটুডে নেটে । রাজ্জাক সাহেবককে নিয়ে আগেও সমালোচনামূলক লেখা লিখেছিলাম । এতে অনেকেই একটু কষ্ট পেয়েছিলেন । হয়ত এই লেখাটাও অনেককে (জামায়াত-শিবির) কষ্ট দিবে । কিন্তু অন্ধ আনুগত্য ও বিশ্বাস পরিত্যাগ করে রাজ্জাক সাহেবের লেখা বিশ্লেষণ করুন, দেখবেন একজন ধর্ম নিরপেক্ষ ও জাতীয়তাবাদীর লেখার সাথে,তার লেখার কোন মৌলিক পার্থক্য নেই ।

জনাব রাজ্জাক সাহেব, বলার চেষ্টা করেছেন, জামায়াতের ৭১ এর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল এবং মওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ভাষায় তা ছিল আবেগতাড়িত । কৌশলে বলার চেষ্টা করেছেন, ১৯৯৪ সালের ২৪ শে জুন বায়তুল মোকাররমের ভাষণে গোলাম আযমের উচিত ছিল, ৭১ এর ব্যাপারে সরাসরি ক্ষমা চাওয়া । আমার প্রশ্ন হলো, ৭১ এর জামায়াতের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, এই সরল সমীকরণের সমাধান জনাব রাজ্জাক সাহেব কোথায় পেয়েছেন ? যদি এই সমাধান, তিনি জাতীয়তাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষদের স্কুলে লেখা-পড়া করে এবং পাশ্চাত্য সাদা চামড়াদের সাথে উঠাবসা করে পেয়ে থাকেন, তবে ভিন্ন কথা । ধরে নিলাম, ৭১ এর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল । এখন যদি জনাব গোলাম আযমের ইমামতিতে শহীদ মিনারের পবিত্র ভূমিতে জামায়াত-শিবির ১০০ বার কান ধরে উঠা-বসা করে ক্ষমা চায়,তবে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও নাস্তিকরা জামায়াত-শিবিরকে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরবে, আর বলবে, ভাই তোমাদের সাথে আমাদের আর কোন বিরোধ নেই, এবার তোমরা নিশ্চিন্ত মতে ইসলাম কায়েমের সংগ্রামে কাজ করে যাও, আমরা তোমাদের কোন বাধা দিব না । রাজ্জাক সাহেব, ক্ষমা চাওয়ার সাথে সাথে যদি জামায়াত সম্পর্কে সমস্ত এলার্জি যদি দূর হয়ে যায়, তবে আমিও ১০০ বার নয় ১০০০ বার কান ধরে উঠা-বসা করব ।

আবার বলছি,ধরে নিলাম, ৭১ এ জামায়াতের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল । কিন্তু ৭১ এর পূর্বে ৭০ সালে পল্টন ময়দানে আওয়ামিলীগ কেন ৩ জন জামায়াত কর্মীকে হত্যা করেছিল ? কেন তোফায়েল সাহেবরা জনাব আব্দুল মালেককে হত্যা করেছিল ? তাহলে কী ৭১ এর পূর্বেই জামায়াতের লোকরা রাজাকার ছিল ?

আজ যদি সময়ের সাথে গা ভাসিয়ে প্রেস ক্লাবে গিয়ে ক্ষমা চান, তবে পরের দিনই সব মিডিয়া বলবে, আজ প্রমাণিত হলো জামায়াত শিবির ৩০ লক্ষ লোক হত্যা করেছে, আরও প্রমাণিত হলো, তারা ২ লক্ষ মহিলার সম্ভ্রমহানি ঘটিয়েছে । অতএব এই ক্ষমার কোন ক্ষমা নেই । তাই এ দেশে জামায়াত-শিবির বা অন্য কোন নামে তাদের সমস্ত তৎপরতা নিষিদ্ধ । জনাব রাজ্জাক সাহেব লন্ডনে বসে কোনটি চান,তা আল্লাহপাক ভালই বলতে পারবেন ।

রাজ্জাক সাহেব জনাব গোলাম আযমের বই হতে কাটপিছ এনে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন । যেমন তিনি বলার চেষ্টা করেছেন, পাকিস্তানকে সমর্থন করা জনাব গোলাম আযমের একক সিদ্ধান্ত ছিল । এ ব্যাপারে তিনি মজলিশে শূরার কোন বাঙ্গালি সদস্যের সাথে আলাপ করেননি, বরং আলাপ করেছেন উর্দু ভাষাভাষীর সাথে । ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামিলীগ যেভাবে বাঙ্গালী-অবাঙ্গালি বিভেদ সৃষ্টি করেছিল, একই কাজ করলেন জনাব রাজ্জাক সাহেব । যদি কোন বাঙ্গালি শূরা সদস্যের সর্মথন না থাকত,তবে জনাব আব্বাস আলী খান, জনাব ইউসুফ আলী কিভাবে ৭১ এ মালেক মন্ত্রি সভার মন্ত্রি হলেন ? কেন অসংখ্য নেতা সেসময় পাকিস্তানের পক্ষে বিবৃতি দিলেন ? আজ জনাব গোলাম আযম নেই, তাই রাজ্জাক সাহেবরা সুয়োগ পেয়েছেন, জনাব গোলাম আযমের প্রশংসার মাধ্যমে তার কিছু ভুল ধরে তাদের বিভ্রান্তিকর চিন্তা-ভাবনা জামায়াত-শিবিরের নতুন কর্মীদের ভিতরে প্রবেশ করানো, যারা ৭১ এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জ্ঞাত নয় ।

যুদ্ধাপরাধের কোন ন্যয় বিচার হবে না, এটি স্পষ্ট ছিল । কিন্তু এই রাজ্জাক সাহেব, মাননীয় আদালত, মাননীয় আদালত বলে আপিল বিভাগ পর্যন্ত বিচারে অংশগ্রহণ করিয়ে ফাঁসীর সুব্যবস্থা করে সাধারণ জনগণের কাছে একটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত করলেন, ট্রাইবুনাল হয়ত সরকারের পক্ষে কাজ করতে পারে, কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট ত নিরপেক্ষ । সুপ্রিম কোর্ট নিরপেক্ষ বলেই ত জামায়াত একেবারে শেষ পর্যন্ত রিভিউ পর্যন্ত করেছে । রাজ্জাক সাহেব নিজেই স্বীকার করেছেন, স্কাইপি ক্যালেংকারীর পর ঢাকার সব নামী-দামী উকিল বিচার পরিত্যাগ করার কথা বলেছিলেন । এমনকি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধূরীও তার উকিল ত্যাগ করে বিচারের প্রতি অনাস্থা দিয়েছিলেন । কিন্তু জামায়াত তার একমাত্র ব্যারিষ্টারের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে বিচার পরিত্যাগ করেনি । যদি জামায়াত বিচার পরিত্যাগ করত,তবে স্কাইপি ক্যালেংকারী বেশি বেশি করে প্রকাশ পেত এবং বিচার করাটা তখন অনেকটা কঠিন হত । এরপরও যদি তারা ফাঁসী দিত, তবে সাধারণ জনগণের নিকট অন্য ম্যাসেজ থাকত ।

জনাব রাজ্জাক এসব তথাকথিত বিচারপতিদের যথাসময়ে সাহায্য করেছেন, এটা তার লেখার মাধ্যমেই প্রকাশ পায় । যেমন তিনি লিখেছেন, ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইন সংবিধান পরিপন্থি প্রমাণ করতে হলে সংবিধানের ১ম সংশোধনী চ্যালান্জ করতে হবে । এজন্য রিট পিটিশন করা হলো । তিনি লিখলেন, যুক্তিগুলো সব পক্ষে ছিল । কিন্তু কোর্টের মনোভাব বুঝতে পেরে তিনি রিট পিটিশন প্রত্যাহার করেন । পিটিশন বিচারপতি কর্তৃক বাতিল হলে বা নিজে প্রত্যাহার করলে একই আইনে বিচার হবে । আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন তিনি রিট পিটিশন প্রত্যাহার করলেন ? অন্যায় রায় দিলে বিচারপতিদের ইমেজ ক্ষতি হত, এবং ভবিষ্যতের জন্য জামায়াতের লাভ হত । তাহলে পিটিশন প্রত্যাহার করে, তিনি কাদের ইমেজ রক্ষা করলেন ? আর এখান হতেই উচ্চ আদালতে বিচারপতিদের মনোভাব যখন বুঝতেই পারলেন,তাহলে বিচারের নাটক কেন মঞ্চস্থ করে লন্ডনে বসে কলাম লিখছেন ?

সবশেষে বলব, ৭১ কে বিচার করতে হবে, ঐ সময়ের আলোকে । বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ হিসাবে নয়। ৭১ এর আগে জনগণের পরিচিতি ছিল ভাষার দিক হতে বাঙ্গালি এবং রাষ্ট্রিয় দিক হতে পাকিস্তানি । পাকিস্তান ভাঙ্গার স্বপ্ন কিছু নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মধ্যে ছিল, সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল না । এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানও পাকিস্তান ভাঙ্গার চিন্তাও করেননি । শুনতে খুবই অদভূত লাগতে পারে । যদি সত্য জানতে চান,তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রির সহায়তায় বাংলা একাডেমি কর্তৃক ২০১৭ সালের মার্চে প্রকাশিত শেখ মুজিবুর রহমানের ডাইরি ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটির শেষের দিকে ২৬০ ও ২৬১ পৃষ্ঠায় চলে যান । দেখুন কী লেখা আছে ? শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, (ডাইরিতে মানুষ মনের কথা লিখে) “আমি পাকিস্তানের অমঙ্গল কামনা করি নাই। দুই অঞ্চলকে আলাদা করতেও চাই নাই। কারণ সংখ্যাগুরু অঞ্চল সংখ্যালঘুদের ভয়ে আলাদা হতে পারে না । আর এমন কোন নজির ইতিহাসে নাই ।” তাহলে জামায়াত বা জনাব গোলাম আযম এর অখন্ড পাকিস্তান এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ডাইরির মধ্যে পার্থক্য কোথায় ? শেখ মুজিবুর রহমান ত স্বাধীনতার ২ বছর পর পাকিস্তানে গিয়ে ভূট্টোর সাথে কোলাকোলি করলেন এবং ভূট্টোকে নিজ দেশে এনে লাল গালিচা সম্বর্ধনা দিলেন । সাধারণ জনগণ ১৯৭৪ সালে রাস্তায় দাড়িয়ে ভূট্টোকে সম্বর্ধনা দিল । যে জনগণ ৭১ দেখেনি, সেই জনগণ পাকিস্তান নামকে ঘৃণা করে, আর যে জনগণ ৭১ দেখেছিল,তারা ভূট্টোকে গণ সম্বর্ধণা দেয় । তাই বলি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, নাস্তিকদের ইতিহাস নয় সঠিক ইতিহাস জানার চেষ্টা করুন । তখন বুঝতে পারবেন তৎকালীন জামায়াত নেতারা কোন ভুল করেননি, কোনই ভুল করেননি । যারা ইতিহাস জানতে চান,তাদেরকে অনুরোধ করব নিচের লিংকে গিয়ে বইটি ডাউনলোড করুন - https://www.facebook.com/Bagi.Kungo/posts/1860332850856577:0

বিষয়: বিবিধ

২০৯৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384347
৩০ অক্টোবর ২০১৭ রাত ১১:১৫
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : যদি জামায়াত বিচার পরিত্যাগ করত,তবে স্কাইপি ক্যালেংকারী বেশি বেশি করে প্রকাশ পেত এবং বিচার করাটা তখন অনেকটা কঠিন হত । এরপরও যদি তারা ফাঁসী দিত, তবে সাধারণ জনগণের নিকট অন্য ম্যাসেজ থাকত,আমি একমত / আমি নিজেও শিবির করতাম ১৯৮২ পর্যন্ত। মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেবের কাজে জেনেছি। ঐ সময় বাচ্চু ভাই, রেজা ভাই ছিল। বর্তমানে ইসলামী সমাজের সূধী।
384358
৩১ অক্টোবর ২০১৭ বিকাল ০৫:০০
আবু জারীর লিখেছেন : ধন্যবাদ
384481
২৩ নভেম্বর ২০১৭ রাত ০১:২৩
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মাশা আললাহ খুবই ভালো লাগছে অনেক ধন্যবাদ
384876
০৮ মার্চ ২০১৮ রাত ০৮:৫০
আবূসামীহা লিখেছেন : মুশকিল! জাতীয়তাবাদের ভুত মাথায় চাপলে যা হয় আর কি!
385637
০৫ জুলাই ২০১৮ দুপুর ০২:২৫
মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী লিখেছেন : ঠিক বলেছেন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File