সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং সাম্প্রদায়িকতা ।
লিখেছেন লিখেছেন আবু নিশাত ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৪৬:৪১ রাত
একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন চলছে । আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘু নির্যাতন বলতে সাধারণত আমরা বোঝে থাকি, সংখ্যাগুরু মুসলমান কর্তৃক সংখ্যালঘু হিন্দু নির্যাতন । বর্তমান সময়ে দেশের পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলে যে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, তা হল সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং এই নির্যাতন নিয়ে নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের উদ্বেগের কারণ । কিন্তু একটিও পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল সংবাদ দিতে পারল না যে, মুসলমানদের হাতে একজন হিন্দু মারা গিয়েছে । সংখ্যালঘু নির্যাতনের সংজ্ঞা আমরা ভারত হতে পাই । সেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতন হল, মুসলমান নিধন, মুসলমান নারীকে ধর্ষণ, চাকুরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানদের দাবিয়ে রাখা । সমাজে একটি পরিবার সুখী না দুঃখী, তা বোঝার জন্য ঐ পরিবার তার প্রতিবেশির সাথে তুলনা করে । একইভাবে আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে কিনা, তা ভালভাবে বোঝার জন্য প্রতিবেশি দেশ ভারতের অবস্থা বিবেচনা করতে হবে । ভারতে প্রায় প্রতিদিন মুসলমানরা হিন্দুদের দ্বারা মার খাচ্ছে । গুজরাট, আসাম, কাশ্মীরসহ বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম নিধন চলছে, চলছে মুসলমান নারীদের ধর্ষণ, ভাঙ্গা হচ্ছে মুসলমানদের মসজিদ, কোন কোন এলাকায় মুসলমানরা গরু জবাই করার অধিকার পায় না, চাকুরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানদের পিছিয়ে রাখা হচ্ছে । ভারতের মুসলমানরা বস্তি এলাকা বা কলোনীতে বসবাস করে । অপ্রকাশ্য সাম্প্রদায়িক নীতির কারণে, তাদের জীবনযাত্রার মান অতি নিম্ন পর্যায়ের । এখন সংখ্যাগুরু মুসলমানদের দেশ বাংলাদেশে ভারতের মত অবস্থা আছে কিনা, তা পাঠকরাই বিবেচনা করবেন ? যদি থাকে তবে অবশ্যই বাংলাদেশেও সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে ।
আজ পর্যন্ত কোন পত্রিকা কি হেডিং দিতে পেরেছে, মুসলমান কর্তৃক এতজন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে, এতজন হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, চাকুরিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে আছে ? ভারতে বাবড়ী মসজিদ ভাঙ্গার পর পাইকারীভাবে মুসলামানদের হত্যা করা হল, তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে বাংলাদেশের কোন হিন্দু ভাই কি মারা গিয়েছেন ? চরম সাম্প্রদায়িক পত্রিকা ‘দৈনিক জনকন্ঠ’ হতে কি কেউ একটি উদাহরণ দিতে পারবেন ? বরং এ সমস্ত পত্রিকা একটিই হেডিং দিতে পেরেছে, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং মন্দির ভাংচুর। সংবাদের ভিতর কোন হত্যাকান্ড নেই এবং বাকী যে তথ্যগুলো আছে, তা মূল তথ্য হতে ১০০% অতিরন্জিত ।
ঐতিহাসিক সত্য হলো ১৯৪৭ সাল হতে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, মুসলমানরা মারা গিয়েছে, কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি এবং হিন্দুরা মারা যায়নি, যদিও এক শ্রেণীর নাস্তিক এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা মুসলমানদের বদনাম করার জন্য সবসময় সংখ্যালঘু নির্যাতনের কাহিনী রচনা করেছে ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি বড় দল হচ্ছে আওয়ামিলীগ এবং বি,এন,পি এবং মাঝারি মানের দল হচ্ছে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী । বি,এন,পি এবং জাতীয় পার্টি মুসলিম জনগণের সেন্টিমেন্টকে একটু গুরুত্ব দেয় বলে এবং জামায়াতে ইসলামী ইসলামপন্থি দল হওয়ার কারণে এরা মুসলিম জনগণের ভোট পায় । অন্যদিকে আওয়ামিলীগ ভারত নির্ভর একটি সংগঠন হওয়ার কারণে হিন্দু ভাইদের নিকট এ সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতা বেশি । বাংলাদেশে অন্য ধর্মের নাগরিক ১০% হলেও, এদের সবাই ভোট দেয় বলে ভোট কাস্টিং এর পরিমাণ হয় মোট ভোটের ১৮% । ফলে ভোটের নির্বাচনে শুরুতেই আওয়ামিলীগের বাক্সে ১৮% ভোট জমা থাকে । অন্যদিকে মুসলমানরা ৯০% হলেও ভোটে অনুপস্থিত থাকার কারণে কাস্টিং ভোটের ৮২% মুসলিম ভোট হয় । মুসলিম কাস্টিং ভোট ৮২% এর একটি অংশ আওয়ামিলীগ, বি,এন,পি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী পেয়ে থাকে । ৮২% এর মধ্যে আওয়ামিলীগের ভোট হল হল প্রায় ২১% । ফলে আওয়ামিলীগের মোট হল (অন্যধর্ম ১৮%+মুসলিম ২১%) = ৩৯% । বি,এন,পি পায় ৩৭%, জামায়াত পায় ১১%, জাতীয় পার্টি পায় ১০% এবং অন্যান্যরা পায় বাকী ৩% । তাই ভোটের রাজনীতিতে আওযামিলীগ এবং বি,এন,পি উভয়ের প্রয়োজন জামায়াত এবং জাতীয় পার্টির । কিন্তু আওয়ামিলীগের একটি সুবিধা হল, তারা উত্তরাধিকারসূত্রে সংখ্যালঘু ভোট পেয়ে থাকে । তাই তাদের রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের দায়িত্ব হল, জামায়াত-বি,এন,পি কর্তৃক সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রচার করা এবং এর বিনিময়ে সাধারণ সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন এবং ভোটের রাজনীতিতে লাভবান হওয়া ।
সংখ্যালঘুদের প্রায় সবাই আওয়ামি রাজনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত । ফলে আওয়ামিলীগের সাথে যখন অন্য কোন দলের সংঘাত বাধে, তখন যে সংখ্যালঘু ছেলেটি মারা যায়, সে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মারা যায় । সে সংখ্যালঘু হিসেবে মারা যায় না, বরং মারা যায় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে বা আওয়ামিলীগের কর্মী হিসেবে । অন্যদিকে বি,এন,পি বা জামায়াতের যে ছেলেটি মারা যায়, সে সংখ্যাগুরু মুসলমান হিসেবে মারা যায় না, বরং সে বি,এন,পি বা জামায়াতের কর্মী হিসেবে বা ছাত্রদল বা শিবিরের সদস্য হিসেবে মারা যায় । কিন্তু বড়ই দুর্ভাগ্য যে, রাজনৈতিক কারণে কোন সংখ্যালঘু মারা গেলে নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সাথে সাথেই ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেন । তারা তখন আওয়ামিলীগ কর্মী বরুণ চন্দ্র (কাল্পনিক নাম) নিহত হয়েছে না বলে বলেন সংখ্যালঘু বরুণ চন্দ্র নিহত হয়েছে । বরুণ চন্দ্রের বাড়ীতে আগুন দেয়া হলে বলা হয়, সংখ্যালঘুর বাড়ীতে আগুন দেয়া হয়েছে, কিন্তু একবারও বলা হয় না আওয়ামিলীগ কর্মী বরুণ চন্দ্রের বাড়ীতে আগুন দেয়া হয়েছে । এখানে নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা আর নাস্তিক বা ধর্মনিরপেক্ষ থাকতে পারে না, তারা তখন দলীয় পরিচয় বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িক পরিচয়কে হাইলাইট করে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের ভোট নিশ্চিত করতে চায় ।
বর্তমানে সরকার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের ১০০ এর উপর কর্মী মারা গিয়েছে । ধর্মের দিক হতে এরা সবাই মুসলমান ।নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা কি কখনও বলেছে, বাংলাদেশে আওয়ামি সরকার ১০০ এর বেশি মুসলমান হত্যা করেছে ? বরং বলছে, জামায়াত-শিবির মারা যাচ্ছে বা ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা মারা যাচ্ছে । মূল কথা হল, বাংলাদেশে নাস্তিকতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে থাকে । তাদের সাম্প্রদায়িকতা হল মুসলমানদের বিরুদ্ধে এবং এজন্য তারা সংখ্যালঘুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রচার করার চেষ্টা করছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়, দাড়ী-টুপি পড়া মুসলমানরা তাদের নির্বিচারে হত্যা করছে ।
বর্তমান সময়ে নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা বাংলাদেশে চরম সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে । বায়তুল মোকররম মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে পুলিশ টিয়ার সেল ছুরছে, জুতা পায়ে মসজিদে ঢুকে রুকু হতে মুসল্লীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, ভয়ে মুসল্লীরা ১/৩/২০১৩ ইং তারিখে বায়তুল মোকারমে জুম’য়ার নামাজ আদায় করতে পারল না, মসজিদের গেইট বন্ধ রাখা হল - মুসলমানদের উপর এ সমস্ত আঘাত কি সাম্প্রদায়িকতা হয় না ? এ ব্যাপারে নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা নিশ্চুপ । অন্যদিকে সারাদেশে একটি বা দুটি মন্দির ভাঙ্গা হলে, তারা বলা শুরু করেন সাম্প্রদায়িকতা শুরু হয়ে গেল । কিন্তু এই তথাকথিত সাম্প্রদায়িকতার পিছনে কারা ? এ সপ্তাহে উত্তর বঙ্গে মন্দির ভাঙ্গার কারণে শাসকগোষ্ঠি আওয়ামিলীগের কর্মী ধরা পরায়, মন্দির ভাঙ্গার রহস্য বের হয়ে যায় ।
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি বসবাস করছে । সম্পূর্ণ আলাদা সম্প্রদায় হয়েও তাদের ভিতর রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি । পাশাপাশি বসবাস করলে অনেক সময় বিভিন্ন কারণে বিবাদ হতে পারে । যে বিবাদ ভাইয়ে ভাইয়ে হতে পারে, পরিবারে পরিবারে হতে পারে, হতে পারে প্রতিবেশির সাথে । গ্রামীণ সংস্কৃতি হতে এই বিবাদগুলোর উৎপত্তি হয়েছে । কিন্তু বাংলাদেশের গ্রামে কখনও হিন্দু - মুসলিম বিবাদ হয়নি । বিবাদগুলো হয়, জমি নিয়ে, রাস্তা নিয়ে, গ্রামীণ মতপার্থক্যের কারণে । গ্রামের মাতব্বর বা ধনী শ্রেণীর লোক আইনের ফাঁকে যেমন সুরুজ আলীর জমি নিজ দখলে নিতে চায়, তেমনি দখলে নিতে চায় পরিমল মন্ডলের জমি । কিন্তু শহরের মধ্যবিত্ত সাম্প্রদায়িক নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা গ্রামের এ খবর জানতে পারলে, তাদের মিডিয়াতে প্রচার করে, বাংলাদেশের অমুক গ্রামের সংখ্যালঘুর জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে, কিন্তু একবারও বলে না, বাংলাদেশের অমুক গ্রামের সংখ্যাগুরুর জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে । গ্রামীণ সাধারণ বিবাদকে এরা সবসময় দেখে সাম্প্রদায়িকতার চোখে ।
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা নেই, এটি আমি গ্রামীণ সমাজের উদাহরণ দিয়ে বলেছি । কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজে একটি ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি রয়েছে । এই গোষ্ঠিটি বুদ্ধিজীবি ব্যানারে , কেউ সাংবাদিক হিসেবে মিডিয়ার ব্যানারে এবং কেউ সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে । এদের সাম্প্রদায়িকতার শিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসাধারণ । এই সাম্প্রদায়িক শক্তিটি উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার কারণে তাদের সাম্প্রদায়িকতার ধরন সাধারণ জনগণ ধরতে পারে না । তবে একটু স্থির এবং নিরপেক্ষ মন নিয়ে চিন্তা করলে এদের ভয়ংকর সাম্প্রদায়িকতা ধরা পড়ে ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা ইসলামী দলগুলোও ছাড়াও আরও অনেক রাজনৈতিক দল যেমন মুসলিম লীগ, চীনাপন্থি কম্যুনিস্ট দলগুলো করেছে । চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের উপজাতীয়রা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল । বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলেন । মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলেন, ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির’ প্রতিষ্ঠাতা জাহানারা ঈমাম, কবীর চৌধূরী, মুনীর চৌধূরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, কবি শামসুর রহমানসহ অনেকেই । কিন্তু আজ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের ছবি দেখানো হয়, মাথায় টুপি এবং মুখে দাড়ীওয়ালা লোকদের । শুধু তাই নয়, টুপি ও দাড়িওয়ালা লোক সাজিয়ে ছোট বাচ্চা দিয়ে মুখে জুতা মারা হচ্ছে । অর্থাৎ অত্যন্ত সুকৌশলে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত, মুসলমানদের লেবাস দাড়ী-টুপিকে অপমানিত করা হচ্ছে । সম্মানিত পাঠকরা, আপনারা কি কোনদিন দেখেছেন, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করার কারণে কাউকে বৌদ্ধ ভিক্ষু সাজিয়ে, তার মুখে ছোট বাচ্চা জুতা মারছে ? মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতার কারণে কোনদিন কি দেয়ালে দেখেছেন, বৌদ্ধ ভিক্ষুর বিকৃত ছবি । কিন্তু দেখা যায়, দাড়ী-টুপিওয়ালাদের বিকৃত ছবি । পতাকাতে চাঁদতারার ছবি থাকাটা পাকিস্তানীদের প্রতীক না মুসলমানদের প্রতীক ? মুসলমানদের ইবাদতের একটি অংশ চাঁদের গতিপথের সাথে সম্পর্কিত । তাই প্রায় প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রের পতাকায় চাঁদতারা দেখা যায় । কিন্তু নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সুকৌশলে চাঁদতারা প্রতীককে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী প্রতীক চিহ্নিত করে ঘৃণার জায়গায় নিয়ে এসেছে । তারা জন্তু-জানোয়ারের মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি এবং কপালে চাঁদতারা দিয়ে, কার অবমাননা করছে ? এগুলো কি জঘন্য সাম্প্রদায়িকতা নয় ?
রাসুল (সাঃ) অবমাননা করে প্রথম আলো কার্টুন ছাপায় । রাজীবের মত নাস্তিকরা যখন মোহাম্মদ (সাঃ) কে অকথ্য এবং কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ করে, তখন এই মিডিয়াগুলো তাকে ২য় মুক্তিযুদ্ধের ১ম শহীদ ঘোষণা করে, অতি সুকৌশলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে দাড় করানোর অপচেষ্টা করছে । এই মিডিয়াগুলো প্রতিনিয়ত মৌলবাদীতা, ধর্মান্ধতার আড়ালে ইসলামের বিরোধীতা করে যাচ্ছে । শাহরিয়ার কবীর, মঈনউদ্দিন খান বাদলসহ অনেকেই ইসলামকে ‘কল্লাকাটা’ হিসেবে প্রচার করছেন । মঈনউদ্দিন খান বাদল ৪/৩/২০১৩ ঈসায়ী তারিখে সংসদে বললেন, মোহাম্মদ(সাঃ) মদিনা রাষ্ট্রের ৬০০ লোকের কল্লা কেটেছেন । কোন ঘটনার বিবরণ না দিয়ে রাসুল(সাঃ) সম্পর্কে এ তথ্য প্রদান করে তাকে নিন্দিত করা কি সাম্প্রদায়িকতা নয় ?
নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজে সুকৌশলে ১লা বৈশাখের প্রবেশ ঘটায় এবং মিডিয়ার মাধ্যমে এটিকে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয় । এদের আবিষ্কৃত ১লা বৈশাখ এবং আবহমানকাল হতে গ্রাম বাংলায় পালিত ১লা বৈশাখের মধ্যে কোন মিল নেই । এই বুদ্ধিজীবিরা ১লা বৈশাখের মাধ্যমে উদাম নাচ-গান, গাঁজার আসর, অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিয়ে মিডিয়ার টকশোতে বলা শুরু করে ১লা বৈশাখে অশ্লীলতা নয়, দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে । ব্যক্তিগত জীবনে এ সমস্ত বুদ্ধিজীবিরা অনৈতিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত । তাই তাদের ছাত্ররাও একই পথের অনুসারী । শাহবাগের ব্লগাদের লেখার জায়গা ‘আমার ব্লগ’, ‘সামহোয়ার ব্লগ’ সার্চ করলে সাগরেদদের অবস্থা কী, তা ভালভাবেই বোঝা যায় । এখন ১লা বৈশাখে কাপড়ের ডিজাইন কী হবে , তা নিয়ে সাম্প্রদায়িক মিডিয়াগুলো প্রচার শুরু করে দেয় । ফলে নিম্ন মাথাপিছু আয়ের এ দেশের লোকেরা ১লা বৈশাখে কাপড় ক্রয় করা শুরু করে দিয়েছে । নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ভাল ভাবেই জানে, ১লা বৈশাখের কাপড় বিক্রীর পরিমাণ বাড়াতে পারলে ঈদে কাপড় বিক্রয়ের পরিমাণ কমবে । অর্থাৎ উৎসবটাকে কৌশলে ঈদ হতে ১লা বৈশাখের দিকে নেয়া হচ্ছে । একসময় এ দেশে ঈদের আনন্দ হারিয়ে যাবে, স্থান দখল করবে বিজাতীয় সংস্কৃতির ১লা বৈশাখ (হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ১লা বৈশাখ নিয়ে কোন দ্বিমত নেই ।) এবং সাম্প্রদায়িক নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা মুসলমানদের মূল পরিচয় নষ্ট করে মুচকি হাসবে এবং তাদের পরবর্তী কর্মসূচী গ্রহণ করবে ।
এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিরা সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারেও এ দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে । তারা এখন সারা দেশে আইডল খুঁজে বেড়াচ্ছে, খুঁজে বেড়াচ্ছে লাক্স সুন্দরী , চ্যানেল আই সুন্দরী । বিভিন্ন চ্যানেল এগুলো দেখাচ্ছে । মুসলমান মা-বাবার সাথে বসে ছোট শিশুটা এ ধরনের অনুষ্ঠান দেখে মনে মনে কল্পনা করে, সে আইডল হবে, সে লাক্স সুন্দরী হবে, সেখানে আইডল কোন নবী বা সাহাবী থাকবে না । নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা মুচকি হাসে এবং মনে মনে বলে, ‘মিয়া তুমি মুসলমান নামাজ পড়তে পার, কিন্তু তোমার বাচ্চাটারে পুরা নাস্তিক বানিয়ে ছাড়ব ।’
আমার শেষ কথা হল, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর হতে, আমাদের এ দেশে নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করে । তারা এ রাজনীতি করেছে , কখনও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের নামে,কখনও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে, এখন তারা শুরু করেছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে । তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উদ্দেশ্য হলো, মুসলমান শুধুমাত্র নামে মুসলমান থাকবে, কিন্তু তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের প্রভাব শূন্য করতে হবে । যদি নাস্তিকতাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা তাদের এ কাজে সফল হয়, তবে একদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরাই বলবে, নামাজ পড়াতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই, রোজা রাখাতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই, ইসলামী উত্তরাধিকার আইন বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের নতুন উত্তরাধিকার আইন মানতে হবে, মদ্যপান করা ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর পড়ে, ইচ্ছে করলে বিয়ে করব অথবা লিভ-টুগেদার করব, রাষ্ট্র কোন বাধা দিতে পারবে না ।
বিষয়: বিবিধ
২৩১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন