মহা বিচারের কাহিনী ।
লিখেছেন লিখেছেন আবু নিশাত ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৪৯:১২ রাত
পৃথিবীর উত্তরে এবং মঙ্গল গ্রহের দক্ষিণ-পূর্বে একটি দেশে চলছিল ভয়ংকর কিছু অপরাধীদের বিচার । এই অপরাধীরা এতই ভয়ংকর ছিল যে , তারা যেখানে যে অপরাধ সংঘটিত করত , সেখানে সে অপরাধ প্রত্যক্ষ করার মত কোন মানুষ থাকত না , মানুষগুলো তখন ভয়ে আফ্রিকার জঙ্গলের পশ্চিম দিকে বৃহস্পতি গ্রহের দক্ষিণ দিকে অবস্থান করত । প্রায় ৪০ হাজার বছর পর এই ভীতু মানুষগুলোর ভিতর এমন সাহস সঞ্চার হল যে , তারা ঠিক করল এই ভয়ংকর অপরাধীদের বিচার করবে । যেহেতু কেউ অপরাধ প্রত্যক্ষ করেনি , তাই ঠিক হল শোনা কথার ভিত্তিতে বিচার হবে । এই মহা বিচারের কার্যক্রম সম্মানিত পাঠকদের সামনে তুলে ধরলাম -
আদালতে খুব কথা বার্তা হচ্ছে ।
বিচারক ঃ অর্ডার অর্ডার ।
দর্শক (১ম)ঃ এক কাপ চা , দুইটা পরাটা ।
দর্শক (২য়)ঃ ভাই এটি হোটেল না , আদালত ।
দর্শক (১ম)ঃ তাহলে ম্যানাজার সাহেব অর্ডার অর্ডার কেন বললেন ?
দর্শক (২য়)ঃ আরে ভাই উনি ম্যানাজার নন । উনি মহামান্য বিচারক । আর উনি অর্ডার অর্ডার বলছেন , যাতে আপনারা একটু চুপ থাকেন ।
এমন সময় কাঠগড়ায় একজন ভয়ংকর আসামী আনা হল ।
সরকারি আইনজীবিঃ মাননীয় আদালত , অপরাধী ভয়ংকর ।
বিচারক ঃ প্রমাণ কী ?
সরকারি আইনজীবিঃ মুখে দাড়ী আছে ।
বিচারকঃ রবীন্দ্রনাথেরও দাড়ী আছে ।
সরকারি আইনজীবিঃ আসামী নিয়মিত নামাজ পড়ে , শুধু তাই না তাহাজ্জুদের নামাজও পড়ে , যা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার ।
বিচারক ঃ আসামী কতজন লোক হত্যা করেছে ?
সরকারি আইনজীবিঃ ৩ হাজার ৩০ জন ।
আসামী পক্ষের আইনজীবি ঃ অব্জেকশন অব্জেকশন । হত্যার সংখ্যা ঐ গ্রামের বর্তমান জনগণ হতে বেশি হয়ে গেছে । তাই অভিযোগ মিথ্যা ।
সরকারি আইনজীবিঃ মাননীয় আদালত মিথ্যা নয় । এই লোক ৪০ হাজার বছর পূর্বে যে পরিমাণ হত্যা করেছিল , সে মানুষগুলো যদি বাঁচত , তবে এরা বিবাহ-শাদী করলে এই সংখ্যক মানুষ পেতেন । কিন্তু তারা মারা যাওয়ার কারণে , এই মানুষগুলো পৃথিবীতে আসতে পারেনি । তাই মাননীয় আদালত , যারা মারা গিয়েছে এবং তারা মারা যাওয়ার কারণে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে যারা আসতে পারেনি , তাদের সংখ্যা ধরে আমরা ৩ হাজার ৩০ জন পেয়েছি ।
আদালতে স্বাক্ষী আনা হল ।
আসামী পক্ষের আইনজীবিঃ আপনি কি দেখেছেন আসামী ৩ হাজার ৩০ জন লোক হত্যা করেছে ?
স্বাক্ষী (১ম)ঃ না ।
আসামী পক্ষের আইনজীবিঃ কেন দেখেন নি ?
স্বাক্ষী (১ম)ঃ ঐ সময় আমার বাবা ও মায়ের বিয়ে হয় নি ।
আসামী পক্ষের আইনজীবিঃ তাহলে আপনি কিভাবে বুঝলেন , আসামী এতগুলো লোক হত্যা করেছে ?
স্বাক্ষী (১ম)ঃ বাংলা সিনেমায় দেখেছি ।
আসামী পক্ষের আইনজীবিঃ ঐ সিনেমা কে তৈরি করেছে ?
স্বাক্ষী (১ম)ঃ ফেনসেডিল কেরিয়ার কবীর ।
সরকারি আইনজীবি ঃ মাননীয় আদালত ফেনসেডিল কেরিয়ার কবীর ওরফে মুরগী কবীর খুবই উন্নত চরিত্রের একজন ব্যক্তি । যেহেতু তার সিনেমায় আছে হত্যার কথা , তাই অবশ্যই আমাদের বিশ্বাস করতে হবে , আসামী ৩ হাজার ৩০ জন লোককে হত্যা করেছে । তাই তারা সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ্বন্ড দেয়া উচিত ।
২য় স্বাক্ষী আনা হল ।
স্বাক্ষী (২য়)ঃ মাননীয় আদালত আসামী আমার ছোট ৩ বোনকে রেপ করেছে ।
আসামী পক্ষের আইনজীবি ঃ ঐ সময় আপনার বয়স কত ছিল ?
স্বাক্ষী (২য়)ঃ ৮ বছর ।
আসামী পক্ষের আইনজীবি ঃ আপনার ছোট তিন বোনের বয়স কত ছিল ?
স্বাক্ষী (২য়)ঃ বড় টার ৫ বছর মেজটার ২ বছর ছোটটা মায়ের পেটে ছিল ৭ মাস ।
আসামী পক্ষের আইনজীবিঃ তাহলে ছোটটা রেপ হল কিভাবে ?
সরকারি আইনজীবিঃ মাননীয় আদালত , স্বাক্ষী (২য়) অষ্টম শ্রেণী পাশ , একজন শিক্ষিত ব্যক্তি , তাছাড়া তিনি চুরির কারণে ৫ বার , রেপের কারণে ২ বার , মাদক ব্যবসার কারণে ৪ বার জেলে গিয়েছেন । কিন্তু একবারের জন্যও মিথ্যা বলার অপরাধে জেলে যাননি । তাই তার স্বাক্ষ্যকে সত্য ধরে নিতে হবে । তাছাড়া প্রশ্ন হল রেপ হয়েছে কিনা ? অবশ্যই রেপ হয়েছে । এক্ষেত্রে আইনের কোথাও লেখা নাই , ধর্ষিতার বয়স কত হতে হবে , সে দুনিয়াতে থাকবে না মায়ের পেটে থাকবে । তাই অভিযোগ প্রমাণিত এবং তার সর্বোচ্চ সাজা হওয়া উচিত ।
বিচারকঃ সবগুলো অভিযোগ এবং স্বাক্ষী - প্রমাণ বিচার - বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে , আসামী অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছেন । এজন্য প্রথম অপরাধে তাকে ২০ বছর এবং ২য় অপরাধে তাকে ১০ বছর সাজা দেয়া হল । কিন্তু সরকারের দিক বিবেচনা করে আসামীর ২য় অপরাধের ১০ বছর সাজা ১ম অপরাধের সাথে যুক্ত করে ৩০ বছর করা হল এবং ২য় অপরাধ হতে মুক্ত করা হল , যাতে সরকার ২য় অপরাধের ব্যাপারে প্রয়োজনে আপিল করতে পারে ।
সরকারি আইনজীবিঃ আজ দেশ পাপমুক্ত হল । তবে ২য় অপরাধের জন্য আপীল করব ।
আসামী পক্ষের আইনজীবিঃ আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । তবে আপীল করব ।
বড় মন্ত্রিঃ ছোট মন্ত্রি , রায় কেমন হল ?
ছোট মন্ত্রিঃ ঐতিহাসিক । অপরাধীরা বেশি বাড়াবাড়ি করলে ২য় অপরাধের আপীল করে মৃত্যুদ্বন্ড দেয়া যাবে ।
বিষয়: বিবিধ
২৪৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন