সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পাতা থেকে

লিখেছেন লিখেছেন আবু নিশাত ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৪:০৫:৪৫ বিকাল

আজকের এই লেখাটি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করে লিখছি এবং পাঠকদের অনুরোধ করব, লেখাটি পড়ে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখার জন্য।

কাদের মোল্লার ফাঁসীর আদেশ হলো। সুপ্রিমকোর্ট হতে রায় ডাউনলোড করলাম এবং পড়লাম, আমার ধারণাটি সত্য হলো, যা এর আগে অনেকবার বলেছি এবং লিখেছি । এগুলো হলো বিচার এর আগেই রায় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে । আব্দুল কাদের মোল্লার আইনজীবিরা ভাল করেই জানেন, রায় হবে ফাঁসী। তাহলে কোর্টে গেলেন কেন ? উত্তর একটাই। সময়ক্ষেপণ করে যদি এই সরকারের সময় শেষ করা যায় ।

সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগ ৬নং চার্যে মোমেনা বেগমের স্বাক্ষীর উপর নির্ভর করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসীর আদেশ দেন। কিন্তু সরকার পক্ষ আদালতে যে মোমেনা বেগম হাজীর করেন, সে প্রকৃত মোমেনা বেগম ছিল না। প্রকৃত মোমেনা বেগমের বক্তব্য মিরপূরের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অধীন জল্লাদখানায় রয়েছে। রায়ের কপির ৪৭৭ পৃষ্ঠায় মোমেনা বেগমের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে লিখা আছে, ২৬ শে মার্চ সকাল ৭ টায় বিহারীরা মোমেনা বেগমের পিতা হযরত আলী লস্কর, মা, তিন বোন এবং এক ভাইকে হত্যা করে কুয়োতে ফেলে দেয়। ঘটনার দুই দিন আগে শ্বশুড় বাড়ীতে চলে যাওয়ার কারণে সে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। এখানে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম নেই। কিন্তু সরকার পক্ষ যে মিথ্যা মোমেনা বেগম সাজিয়ে এনেছে, সে ২১/৭/২০১০ তদন্ত সংস্থাকে বলেছে, (রায়ের ৪৭৩ পৃষ্ঠা) ২৬ শে মার্চ সন্ধায় পাকিস্তান আর্মির সহযোগীতায় আক্তার গুন্ডাসহ বিহারীরা তার পরিবারকে হত্যা করে, খাটের নীচে থাকায় সে বেঁচে যায়। আবার ১৭/৭/২০১২ এই মোমেনা বেগম কোর্টে স্বাক্ষ্য দেয় (৬০৩পৃষ্ঠা), ২৬ শে মার্চ সন্ধায় বেলা ডুবার আগে কাদের মোল্লাসহ বিহারী এবং পাক আর্মিরা তাদের বাসায় এসে তার পরিবারকে হত্যা করে, কিন্তু খাটের নীচে থাকায় থাকায় সে বেঁচে যায়, তবে তাকে আক্রমণকারীরা খাটের নীচ হতে বের করেছিল।

যে মোমেনা বেগমের স্বাক্ষীর উপর কাদের মোল্লার ফাঁসী হলো, তার স্বাক্ষ্য বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সামনে আসে -

(১) মিরপূর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রকৃত মোমেনা বেগম এর বক্তব্য অনুযায়ী হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল ২৬ শে মার্চ সকাল ৭টার দিকে। সরকার পক্ষের বানানো মোমেনা বেগম বক্তব্য অনুযায়ী হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল ২৬ শে মার্চ সন্ধার সময়।

(২) মিরপূর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রকৃত মোমেনা বেগম এর বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনার দুই দিন আগে সে শ্বশুর বাড়ীতে চলে যাওয়ার কারণে প্রাণে বেঁচে যায়। সরকার পক্ষের বানানো মোমেনা বেগম বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনা সে প্রত্যক্ষ করেছে এবং ঘটনার সময় সে খাটের তলে ছিল।

(৩) মিরপূর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রকৃত মোমেনা বেগম এর বক্তব্য অনুযায়ী হত্যাকারীরা ছিল বিহারী জনগোষ্ঠি। সেখানে আব্দুল কাদের মোল্লার কোন নাম নেই। সরকার পক্ষের বানানো মোমেনা বেগম বক্তব্য আব্দুল কাদের মোল্লা ঘটনার সাথে জড়িত। তবে তার ২১/৭/২০১০ এর জবানবন্দীতে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম ছিল না। এটি এসেছে কোর্টে স্বাক্ষ্য দেয়ার সময় ১৭/৭/২০১২ তারিখে।

(৪) মিরপূর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রকৃত মোমেনা বেগম এর বক্তব্য, সে তিন বছর পাগল ছিল, তা উল্লেখ নেই। কিন্তু বানানো মোমেনা বেগম উল্লেখ করেছে (৬০৭ পৃষ্ঠা), ঘটনার পর সে তিন বছর পাগল ছিল এবং শ্বশুড় বাড়ীতে তাকে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হত।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান এবং মনোয়ারা বেগম শুধু মোমেনা বেগমকে মিথ্যা স্বাক্ষ্য বানাননি। তারা পল্লবের ভাবীর নামে মিথ্যা জবানবন্দী তার অজান্তে কোর্টে প্রদান করেন। রায়ের কপির ৬৭৫ পৃষ্ঠায় তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান বলেন, তিনি পল্লবের ভাবী সাহেরার বক্তব্য গ্রহণ করেন। কিন্তু পল্লবের ভাবী মোছাঃ সাহেরা কাদের মোল্লার পক্ষে কোর্টে স্বাক্ষ্য দেন। ৭০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, সাহেরা কোর্টে স্বাক্ষ্য দেন, তিনি কাউকে জবানবন্দী দেননি। তিনি বলেন, তার দেবর পল্লবকে আক্তার গুন্ডা এবং বিহারীরা মেরেছে। তিনি কাদের মোল্লার নাম শোনেননি। এরপরও পল্লবের কেইসে আদালত কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় দিল।

রায়ের পাতা হতে তথ্যগুলো দিলাম। আরও অনেক তথ্য আছে, যা দেখলে সহজেই বোঝা যায়, এগুলো মিথ্যা-বানোয়াট, ঘরে বসে তৈরী করা হয়েছে। সম্ভবত আজ রাতেই কাদের মোল্লার ফাঁসী হবে। লেখার মত শক্তি পাচ্ছি না। ভবিষ্যতে বিস্তারিত লেখব, যাতে আব্দুল কাদের মোল্লা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারেন। খুবই ভগ্ন হৃদয় নিয়ে আজ যা লিখলাম সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট হতে রায় সংগ্রহ করে পৃষ্ঠা নম্বরগুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন এবং নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করবেন । নীচে রায়ের লিংক দিলাম ।

http://www.supremecourt.gov.bd/scweb/documents/601845_CrlA_24_25_2013.pdf

বিষয়: বিবিধ

২৬৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File