দলীয় গঠনতন্ত্র এবং দেশের সংবিধান ।
লিখেছেন লিখেছেন আবু নিশাত ০১ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:৫৩:৪৮ রাত
নির্বাচন কমিশনের আদেশ দলীয় গঠনতন্ত্র হতে হবে দেশের সংবিধানের আলোকে । সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেল প্রগতিশীল নামধারী বুদ্ধি বিক্রেতা বুদ্ধিজীবিদের হাঁকডাক, জামায়াতের গঠনতন্ত্র নাকি দেশের সংবিধান বিরোধী । নির্বাচন কমিশনের হুংকার এবং বুদ্ধি বিক্রেতাদের শোরগোলের কারণে কোন ধরনের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ছাড়াই জামায়াত শুরু করে দিল, তার সংবিধান সংশোধন । জামায়াতের এই সংশোধন দেখে বুদ্ধি বিক্রেতারা এবার বলা শুরু করল, “বলেছি না ! জামায়াত ইসলামের নামে ব্যবসা করে । যদি সত্যিই তারা ইসলামী দল হত, তাহলে দল হতে কি আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে দিত ?” অন্যদিকে কিছুসংখ্যক জামায়াত সমর্থকরা বলা শুরু করলেন, কোন ইসলামী দলে গঠনতন্ত্রে আল্লাহর আইন, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব থাকার কোন প্ররেয়াজন নেই, বরং মনের ভিতর থাকলেই চলবে । কিন্তু কেউই বললেন না যে, দলীয় গঠনতন্ত্র এবং দেশের সংবিধান সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় ।
একটি দেশের সংবিধান হল দেশ পরিচালনার মূলনীতি । যদি কোন রাজনৈতিক দল দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়, তবে সে দল দেশের সংবিধানের আলোকে দেশ পরিচালনা করবে । অন্যদিকে দলীয় গঠনতন্ত্র হল সংগঠন পরিচালনার মূলনীতি । দলের আদর্শ গঠনতন্ত্রে স্থান পায় । দলের গঠনতন্ত্রের কোন ধারা দেশের সংবিধানের কোন কোন ধারার পরিপন্থি হতে পারে । যেমন একটি দেশের সংবিধান, অর্থনীতির বিভিন্ন উপাদানের উপর ব্যক্তি এবং ভোক্তার সার্বভৌমত্ব (বাজার অর্থনীীত) সমর্থন করে । অন্যদিকে একটি দলের গঠনতন্ত্র, অর্থনৈতিক উপাদানের উপর ব্যক্তি এবং ভৌক্তার সার্বভৌমত্ব স্বীকার না করে রাষ্ট্রিয় কর্তৃত্ব (সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি) সমর্থন করে । এখানে দলের গঠনতন্ত্র এবং দেশের সংবিধান সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়ার কারণে কি ঐ দলটি রাজনীতি করতে পারবে না ? অবশ্যই দলটি রাজনীতি করতে পারবে এবং নির্বাচিত হলে দেশের সংবিধান অনুযায়ী বাজার অর্থনীতি চালু রাখবে । আবার যদি দলটি সংবিধান সংশোধন করার মত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তবে সংবিধান সংশোধন করে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করবে । এটাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবিধান এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের বাস্তবতা । বাংলাদেশেও এ বাস্তবতা বিদ্যমান । যদি বাংলাদেশে এ বাস্তবতা বিদ্যমান থাকে, তবে কেন নির্বাচন কমিশন এবং এক্ই সাথে দেশের আদালত দলীয় গঠনতন্ত্র এবং দেশের সংবিধান একসাথে গুলিয়ে ফেলল ? আর যাদের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করার কথা, তারা কেন একেবারে নিশ্চুপ !
গণতন্ত্রের পূজারী বুদ্ধি বিক্রেতারা গণতন্ত্রের নাম নিতে নিতে অজ্ঞান হয়ে পরেন । সবকিছুর ভিতরে তারা খুঁজতে থাকেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা । যদি তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হন, তবে এ স্বাধীনতাই বলে, প্রতিটি মতের ভিন্নমত রয়েছে । আর ভিন্নমত রয়েছে বলেই একাধিক রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়েছে । আর দলগুলো তাদের মত বা আদর্শ জনসমক্ষে প্রকাশ করে যদি জনগণের পর্যাপ্ত সমর্থন পায়, তবে ধরে নিতে হবে জনগণ ঐ দলের মতকে (আদর্শকে) সমর্থন করেছে । অতএব দলটি তার মতের আলোকে সংবিধান সংশোধন করবে । আর যদি পর্যাপ্ত সমর্থন না পায়, তবে বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবে । একটি দেশের সংবিধান সংশোধন বলে দেয় , বিদ্যমান সংবিধানের নীতির বাইরে অন্য নীতিও থাকতে পারে, যা এখনও জনগণের সমর্থন পায়নি । যখনই সমর্থন পাবে, তখনই তা সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে স্থান করে নিবে । যেমন ৭২ এর সংবিধানে জাতীয় চার মূল নীতির একটি ছিল ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ’ । কিন্তু পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বাদ গিয়ে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ যুক্ত হয় । আবার বর্তমান সংবিধানে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ বাদ পড়ল এবং পুনরায় ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ’ স্থান দখল করল । বাংলাদেশের সংবিধানের এ পরিবর্তন স্পষ্ট করে বলে দেয়, দেশের সংবিধান এবং দলীয় গঠনতন্ত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় । আর ভিন্ন বিষয় বলেই, ৭২ সালে জনগণের ম্যান্ডেট থাকার কারণে আওয়ামিলীগ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে সংবিধানে যুক্ত করে । অন্যদিকে ৭৫ এর পর জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বি, এন , পি তাদের আদর্শ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সংবিধানে যুক্ত করে । ৩৩ বছর পর্যন্ত আওয়ামিলীগ এর কোন পরিবর্তন করতে পারেনি । কিন্তু ২০০৯ সালে এসে আওয়ামিলীগ পুনরায় বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ সংবিধানে যুক্ত করে নেয় । বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে এত বছর আওয়ামিলীগ এবং বি, এন, পি রাজনীতি করতে পারল, তবে জামায়াত কেন রাজনীতি করতে পারবে না ? এটা ঠিক , জামায়াতের গঠনতন্ত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে রয়েছে জনগণের সার্বভৌমত্ব । বিষয়টিকে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মত তুলনা করা যেতে পারে । অর্থাৎ জামায়াত যদি তার আদর্শের পক্ষে জনগণের পর্যাপ্ত সমর্থন পায়, তবে সংবিধান সংশোধন করে জনগণের সার্বভৌমত্বের পরিবর্তে আল্লাহর সার্বভৌমত যুক্ত করবে । আর যদি সমর্থন না পায়, তবে জনগণের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে দেশ পরিচালনা করবে, যেমন ২০০১ সালে বি,এন,পি এর শরীক দল হিসেবে করেছিল । অবশ্য এটা নিয়ে একটি বড় বিতর্ক থেকেই যাবে যে, জনগণের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে দেশ পরিচালনা করা ইসলামী শরীয়াহ সমর্থন করে কিনা ? তবে এ বিতর্কটি করবেন ইসলামপন্থিরা, নিশ্চয়ই নাস্তিক বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা নয় ।
বি,এন,পি এর গঠনতন্ত্রের ২(a) তে বলা হয়েছে , “বাংলাদেশের স্বাধীনতা , সার্বভৌমত্ব , নিরাপত্তা , রাষ্ট্রের অখন্ডতা, গণতন্ত্র সুদৃঢ় এবং শক্তিশালী করা হবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গণ ঐক্য গড়ে তুলে ।” অন্যদিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সংবিধানে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ধারণা বাদ দিয়ে ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ’ যুক্ত করা হয়েছে । তাহলে কি বলতে হবে, বাংলাদেশী জনগণ যারা বি,এন,পি এর সমর্থক তারা বাংলাদেশের সংবিধান মেনে চলে না ? বাংলদেশের সংবিধানে যেখানে বলা হয়েছে, ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের’ কথা, সেখানে সংবিধান পরিপন্থি ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের’ ভিত্তিতে কিভাবে জাতীয় ঐক্যের ডাক বি,এন,পি দিতে পারে ? আর নির্বাচন কমিশন বি,এন,পিকে তার গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের কথা বলে না কেন ?
আবার বাংলাদেশের সংবিধানে আছে, ‘রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম’ । কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামিলীগ এবং ধর্মহীন বামপন্থি দলগুলো রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামে বিশ্বাসী নয় । এ ব্যাপারে দলগুলোর গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে । যেমন আওয়ামিলীগের গঠনতন্ত্রের ২নং ধারায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ কথা বলা হয়েছে । যেখানে একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম সেখানে দলগুলো যদি তাদের গঠনতন্ত্রে রাষ্ট্র ধর্মকে গুরুত্ব না দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে, তবে তা কি সংবিধান পরিপন্থি নয় ? আর এজন্য কি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আওয়ামিলীগকে তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধনের কোন নির্দেশ দেয়া হয়েছে ? আরও মজার ব্যাপার হল, আওয়ামি এবং বামপন্থি বুদ্ধি বিক্রেতারা প্রায় প্রতিনিয়ত তাদের লেখনী, সেমিনার, টক্শোতে বাংলাদেশের সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা ‘ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম’ থাকার বিরোধীতা করে আসছেন এবং এটি বাতিলের দাবী করছেন । আওয়ামি এবং বামপন্থি বুদ্ধি বিক্রেতারা প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রের সংবিধানের একটি ধারার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তখন তারা সংবিধান বিরোধী হচ্ছেন না ! আবার তাদের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্র বিরোধী কোন মামলা হচ্ছে না ! বিষয়টি একেবারে পরিষ্কার । দেশের সংবিধান এবং ব্যক্তি বা সংগঠনের মতের মধ্যে পার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক । আর যেখানে সংবিধানের সাথে আপনার মতের পার্থক্য আছে, সে পার্থক্যের প্রচার আপনি দেশের আইন মেনে নিয়ে প্রচার করতে পারবেন । এজন্যই বি,এন,পি, আওয়ামিলীগ, বামপন্থি দলগুলোর গঠনতন্ত্রের সাথে দেশের সংবিধানের কোন নীতির মিল না থাকলে, কোন অসুবিধা নেই , বরং প্রত্যেক দল তাদের নীতি-আদর্শ নিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হবে এবং জনগণ নির্বাচনে ভোটদানের মাধ্যমে বলে দিবে, তারা আগের নিয়মে চলবে , না কিছু পরিবর্তন চায় না বড় ধরনের পরিবর্তর চায় ।
এখন প্রশ্ন হল বাংলাদেশের বিভিন্ন দলগুলোর গঠনতন্ত্রের সাথে যেখানে রাষ্ট্রের সংবিধানের কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে, সেখানে এই দলগুলোর উপর নির্বাচন কমিশন কেন খড়গহস্ত নয় ? আর জামায়াতের উপর এত খড়গহস্ত কেন ? জামায়াতের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কেন কোন আইন মানছে না ? কেন শুধুমাত্র জামায়াতের গঠনতন্ত্র হতে হবে দেশের সংবিধানের আলোকে ? এখানে একটি প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই এসে যায়, জামায়াত কেন তার সংবিধানের সংশোধন করছে খুবই নীরবে ? জামায়াতের জেলা পর্যায়ের নেতারা অনেক সময় পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছেন সংবিধান পরিবর্তনের কথা ! কেন উচ্চ পর্যায়ের নেতারা পূর্বের লিখিত গঠনতন্ত্র হতে অতি সহজে আল্লাহর আইন, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, ইসলামী পরিভাষা বাদ দিয়ে দিলেন ? কেন তারা এ ব্যাপারে একবারের জন্যও নির্বাচন কমিশন ঘেড়াও করলেন না ? কেন তারা এ ব্যাপারে এক দিনের জন্যও হরতাল দিলেন না ? জামায়াত তার নেতাদের মুক্তির জন্য হরতাল দিতে পারে কিন্তু ইসলামী রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হবে না, এই প্রতিবাদে কেন একটিও হরতাল দিল না ? জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের ক্ষমতা কতটুকু, তা সংগঠনের ভিতরের সবই জানেন এবং দেশবাসী বর্তমানে তার প্রমাণ পেয়েছে । তাহলে কেন ইসলামের জন্য এই জানবাজ কর্মীদের মাঠে নামানো হল না ? আর এটা সত্য যে , বাংলাদেশের জনগণের ঈমান এত নীচে নেমে যায়নি যে, তারা দেশের কোন কমিশন বা প্রতিষ্ঠান আল্লাহর আইন, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানবে না, এ কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিবে এবং জনগণ তা মেনে নিবে । তাহলে নির্বাচন কমিশনের আল্লাহর আইন, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এর প্রতি প্রকাশ্য এবং স্পষ্ট বিরোধীতার বিষয়টি জনগণের সামনে জামায়াত কেন আনল না ?
এখন আর নির্বাচন কমিশন নয়, সরাসরি সরকারি আদালত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দিল । কারণ জামায়াত জনগণের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী নয়, বরং আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী । আমি জানতে চাই, আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী না হয়ে আমি যদি জনগণের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী হই, তবে কি আমি মুসলিম হিসেবে দাবী করতে পারব কিনা ? নিশ্চয়ই না । তাহলে বাংলাদেশের মুসলিম জনগণের অবস্থা কী ? তাদের দেশের সংবিধানে এতবড় ইসলাম বিরোধী কথা লিখা থাকার পরও তারা নিশ্চুপ কেন ? এর উত্তর হলো, দেশের রাজনৈতিক নেতারা সাধারণ জনগণকে ধোঁকার মধ্যে রেখেছেন । যদি আজ বাংলাদেশে আল্লাহর আইন চলবে না মানব রচিত আইন চলবে তা নিয়ে হ্যাঁ বা না ভোট নেয়া হত, তবে আমি অবশ্যই বলব, দেশের জনগণ ভোট দিবে আল্লাহর আইনের পক্ষে । কিন্তু দেশের চতুর রাজনৈতিক নেতারা কখনও এ ধরনের গণভোটের আশ্রয় নেবে না ।
একজন ব্যক্তি যদি নিজেকে মুসলিম হিসেবে ঘোষণা করে, তবে আমরা বিশ্বাস করব যে, সে অবশ্যই আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী । মাননীয় সরকারি আদালত জামায়াতকে নির্বাচনের অযোগ্য দল হিসেবে ঘোষণা করল । কিন্তু একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি মুসলিম হয়, তবে তাকে জামায়াতের মত নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হলো না কেন ? কারণ ঐ ব্যক্তি মুসলিম হওয়ার কারণে জামায়াতের মতও বিশ্বাস করে সবক্ষেত্রেই আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বিদ্যমান ।
মাননীয় আদালত বলেছেন, জামায়াতের একটি বড় অপরাধ হলো, তার জন্ম ভারতের মাটিতে । তাই সে একটি বিদেশী দলের শাখা; অতএব নিবন্ধন বাতিলযোগ্য । তাহলে আওয়ামিলীগের জন্মও তো বিদেশের মাটিতে । আওয়ামিলীগের জন্মস্থান হলো পাকিস্তান এবং এর ‘আওয়াম’ শব্দটি এসেছে উর্দু শব্দ হতে এবং দলটি গঠনের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন জন্মগতভাবে ভারতের নাগরিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানী (মাননীয় আদালতের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, এই দুই নাগরিকের জন্মস্থান ও মূল আবাসস্থল বর্তমান বাংলাদেশের কোন এলাকা নয় )। তাই স্থানগত এবং ভাষাগত দিক হতে এবং বিদেশী নাগরিকদের দ্বারা গঠিত সংগঠন হওয়ার কারণে আওয়ামিলীগের নিবন্ধনও বাতিলযোগ্য হওয়ার কথা ! আর বৃটিশ আমলে গঠিত গোপন এবং সন্ত্রাসী সংগঠন কম্যুনিস্ট পার্টির শাখা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে, যাদের দেহ, আত্মা মস্কোর সাথে সম্পর্কিত । তাহলে কম্যুনিস্ট পার্টির নিবন্ধন বৈধ হয় কিভাবে ?
বর্তমান বাংলাদেশের নতুন সংবিধানে বলা হয়েছে, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জনগণের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে । আর জনগণের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারের পক্ষ থেকে ভূমিকা পালন করে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু প্রশ্ন হলো সংবিধানের এ ধারা অনুযায়ী চাকমা, মণিপূরীসহ উপজাতীয়রা যারা বাঙ্গালী নয়, তারা ত বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নয, তবে তার কিভাবে আমাদের জাতিগত ঐক্য স্থাপনে ভূমিকা পালন করতে পারবে ? তারা কি সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ পাবে ? যারা দেশের সংবিধানের একটি মূলনীতি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বিশ্বাস করে না, তারা কিভাবে বাংলাদেশের সরকারের চাকুরি পাবে ? তারা কিভাবে একেবারে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হয়ে বাঙ্গালী জাতির বিচার করবে ! এটি কি সংবিধান বিরুদ্ধ নয় ? তাই বলি যারা কথায় কথায় সংবিধান বিরোধী বলেন, তারা মূলত সংবিধানকেই হালকা করে ফেলেছেন ।
বিষয়: বিবিধ
৫২৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন