ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-৩ (গতকালের পর)
লিখেছেন লিখেছেন আজাদ আব্দুল্লাহ ০২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৫৯:৪০ সকাল
ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-১
ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-২
ধর্মদ্রোহীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ৩ টিঃ
1) Professionally Competent, 2) Ideologically Motivated 3) Working against Public values
1) Professionally Competent: এরা সাধারণত দুনিয়াবী যোগ্যতায় তুলনামূলক বেশী যোগ্যতা সম্পন্ন। এ কারনে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে একটু বেশিই পটু। কথার ফুলঝুরি, বাকস্বাধীনতা, প্রগতিশীলতার যুক্তি দেখিয়ে এদের কাজের বৈধতা প্রমান করতে এরা সচেষ্ট থাকে। এরা মিথ্যা বলতে এতই পটু যে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই বিভ্রান্ত হতে পারে। এদের মিথ্যা এক ধরনের শিল্প। এ কারণে জনকন্ঠের মিথ্যা মানুষ সহজে ধরতে পারলেও প্রথম আলোর ভেল্কিবাজি বুঝতে একটু বেগ পেতে হয়। বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলো এরা দখল করে আছে।
2) Ideologically Motivated: আদর্শের প্রতি এদের মারাত্মক ধরনের কমিটমেন্ট থাকে। এটা এক ধরনের মোহ। তারা নিজেদেরকে সঠিক মতের অনুসারী মনে করে। আর বাকী সবাইকে মনে করে মূর্খ। দুনিয়ার যা কিছু শুধু তারাই বুঝে এমন একটা ভাব কাজ করে।নিজেদের বিজ্ঞান-মনষ্ক আর যুক্তিবাদি বলে জাহির করে। নিজেদের মধ্যে বাহ্যঃত অনেক দল উপদল থাকলেও ধর্মদ্রোহীতার ক্ষেত্রে একে অপরের সহায়ক। ধর্ম বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার ক্ষেত্রে এরা খেকশিয়ালের মত। একজনের সুরেই সবাই একই মিথ্যার পুনরাবৃত্তি করে। গোয়েবলসের থিওরী মতে একটা মিথ্যাকে দশবার বললে তা সত্য হয়ে যায়, ওরাও তাই মনে করে।ইসলাম-পন্থিদেরকে সন্ত্রাসী প্রমাণ করা ওদের মিশন। ইসলামের যৌক্তিক কোন দাবী উত্থাপন করলেও এদেরকে জঙ্গীবাদী-মৌলবাদী নামে বিশেষায়িত করার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে ওরা সবাই একই সুরে কথা বলে। এরা বিচারপতি হোক, সাংবাদিক হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হোক কিংবা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হোক-সুর ঐ একটাই হুক্কা-হুয়া। একজন মাদ্রাসার শিক্ষক বা ছাত্র কোন অপরাধ করলে তারা মাদ্রাসা বন্ধ করার দাবী তোলে(মাঝে মাঝে কোরবানী’র ছুরি উদ্ধার করে এমন দাবী করেছিল) কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অজস্র অস্ত্র উদ্ধারের পরেও কখনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বলে না। একইভাবে কোন দাঁড়ি-টুপি ওয়ালা লোক অপরাধ করলে সব আলেম ওলামাদের দায়ী করতে এদের দেখা যায়।কোথাও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেই ফতোয়া নিষিদ্ধ করার দাবী করে, ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়(যদিও দেখা যায় এগুলো গ্রামের কোন সাধারন মোড়লের কাজ)। নারী অধিকার নিয়ে এত কথা বললেও ইসলামপন্থি নারীরা হয়রানির স্বীকার হলে এরা বিরোধীতা না করে সমর্থন দেয়। একজন বিশ্বজিৎ বা লিমনের জন্য ওদের মুখে ফেনা উঠলেও শত শত আলেম-ওলামাকে হত্যায় এরা উল্লাস করে। মুলত নারী অধিকার, মানবাধিকার, প্রগতিশীলতার বর্ম ব্যবহার করে ওরা ইসলাম কে নির্মূল করতে চায়।
3) Working against Public values:
আমাদের পাবলিক ভ্যালুজ গুলো হচ্ছে… ক)বিশ্বাস (যে ধর্মের-ই হোক না কেন), খ) সামাজিক বন্ধন, গ) পারিবারিক বন্ধন, ঘ) নৈতিক পরিবেশ, ঙ) সহিষ্ণুতা, চ) দেশপ্রেম, ছ) ধর্মীয় বন্ধন, জ)হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী শালীন সংস্কৃতি ইত্যাদি।
ধর্মদ্রোহী বিচ্ছিন্ন এই জনগোষ্ঠী আমাদের এই পাবলিক ভ্যালুজ গুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে। এরা শুধু ধর্মের শত্রু না এরা দেশ-জাতির ও শত্রু।ওদের মনগড়া আজগুবি কথা-বার্তা, গালিগালাজের মাধ্যমে ওরা মানুষের বিশ্বাসে আঘাত হানে। এর মাধ্যমে অশান্তির বীজ বপন করে। দূর্বল বিশ্বাসীদের ধর্মহীন নাস্তিক বানানোর চেষ্টা করে। সরকারি সব দপ্তর থেকে ইসলামকে নির্মূল করতে চায়। উদাহরণ দিতে গেলে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে।
ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ, কনজুমারিজম, বস্তুবাদ ইত্যাদির মাধ্যমে তারা ব্যক্তিকে সমাজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। সামাজিক দায়িত্ববোধকেও ওরা ব্যবসায়িক-রাজনৈতিক ও ধর্মহীনতার হাতিয়ারে পরিণত করে।যাকাত কে নিয়ে তামাশা করে দরিদ্রের প্রতিও অবিচার করে।
সব ধর্মই পবিবারকে সভ্যতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করে। কিন্তু এই ধর্মদ্রোহী নাস্তিকেরা প্রেম, পরকীয়া প্রেম, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, যৌন স্বাধীনতা, জরায়ুর স্বাধীনতা ইত্যাদি চমকপ্রদ শব্দ ব্যবহার করে আমাদের পারিবারিক বন্ধনকে নষ্ট করে দিতে চায়। ইতোমধ্যেই নাটক, সিনেমা, সাহিত্য আর বক্তৃতার মধ্য দিয়ে ওরা অনেক দূর এগিয়েছে।এ জন্য দেশে আজ পারিবারিক অশান্তি, ভাঙ্গন, বিচ্ছেদ, খুন, ইভটিজিং, ধর্ষণ ইত্যাদি মহামারি আকার ধারন করেছে।(উল্লেখ্য, নাস্তিক-গুরু জাফর ইকবাল সেদিন ও শাহবাগে তার বক্তৃতায় বলেছিল “ তোমাদের যখন প্রেম করার ইচ্ছে তখন প্রেম করবে”)।
“নগ্নতাই অশ্লীলতা নয়” টাইপের শ্লোগান দিয়ে ওরা নগ্নতার প্রসার করছে। নগ্নতাকে ওরা উপস্থাপন করছে শিল্প হিসেবে। সংগীত, চিত্রকলা, সিনেমা ইত্যাদির মাধ্যমে এবং আকাশ সংস্কৃতির অবাধ লাইসেন্সের ওকালতি, পতিতালয় টিকিয়ে রাখতে যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলন, ‘পতিতারা সমাজের প্রাণ’ টাইপের প্রচারণা চালানো ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে।
মানুষে মানুষে বন্ধন, ধর্মীয় বন্ধন, হাজার বছরের শালীন সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে। এক ধর্মের মানুষকে তাদের অধিকার এর কথা বলে অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। তারপর প্রমাণ করার চেষ্টা করে ধর্ম মানেই খারাপ-তা যে ধর্মই হোক না কেন। এছাড়া দেশপ্রেম কিংবা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা ও ধর্মকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফায়দা লুটতে চায়।ভাষা ভিত্তিক জাতি গুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী বিভাজন তৈরি করে।সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু শব্দ গুলো বেশি উচ্চারণ করতে দেখা যায়।মোটকথা এরা সমাজে বিভাজন তৈরি করে(হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ)।
ধীরে ধীরে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে স্তব্ধ করে দিতে চায়। ধর্মীয় রাজনীতি ও মাদ্রাসা বন্ধের প্রস্তাব, স্কুলের ইসলাম শিক্ষা বইতে ইসলামের বিকৃত উপস্থাপন, নারী নীতি, সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহর উপর আস্থা বিশ্বাস উঠিয়ে দেয়া ইত্যাদি সবই এই গুটিকতক ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদের কারসাজি।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৬৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন