ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-২ (গতকালের পর)
লিখেছেন লিখেছেন আজাদ আব্দুল্লাহ ০১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৪৭:০৬ সকাল
ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-১
ধর্মদ্রোহীতার অর্থনীতি আসলে কি?
ধর্মদ্রোহীতার অর্থনীতি বিষয়টি তুলনা মুলক ভাবে নতুন ধারণা। এক কথায় বলতে গেলে যে অর্থনীতি হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক-ধর্মীয় বন্ধন কে ভেঙ্গে দিতে চায়। সমাজে ছড়িয়ে দিতে চায় কদর্যতা, হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা। চুড়ান্ত পর্যায়ে হানাহানি-বিশৃংখলা-অশান্তি। ধর্মদ্রোহীতার অর্থনীতি সকল ধর্মের মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থি। এ অর্থনীতি মানুষের বোধ বিশ্বাস, নৈতিকতার বাঁধন খুলে দিয়ে লাগামহীন ঘোড়ায় পরিণত করতে চায়। এ অর্থনীতির টার্গেট তরুন সমাজ। মানব মনের স্বাভাবিক ঝোঁক কে কাজে লাগিয়ে এরা ছড়িয়ে দিতে চায় অশ্লীলতার বিষবাষ্প। এদের অস্ত্র হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির অযাচিত ব্যবহার, কখনো কখনো বুদ্ধিবৃত্তিক চাতুর্যতা আর অশ্লীল ভাষার মাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো। বুদ্ধিভিত্তিক ও মিডিয়া জগতে ইসলাম পন্থীদের পিছিয়ে থাকা আর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর উদাসিনতার কারনেই এই অশুভ শক্তি পুষ্ট হচ্ছে।এরা গড়ে তুলেছে বেশ কিছু মিডিয়া ও কর্পোরেট। যারা তাদের অর্থ ও সাহসের যোগান দেয়।
ধর্ম এবং সমাজে ধর্মের ভূমিকাঃ
তাত্ত্বিক অর্থে ধর্মের সংজ্ঞা যাই হোক না কেন-ধর্ম হচ্ছে মানুষের জন্য আদর্শিক জীবন চলার পাথেয়। সুন্দর জীবন যাপনের নির্দেশিকা। ধর্ম মানুষকে শিখায় সম্প্রীতি, ভালবাসা, দায়িত্ববোধ আর জবাবদিহিতার অনুভূতি। ধর্মে ধর্মে বিধানের ভিন্নতা আছে কিন্তু নৈতিকতা আর শৃংখল জীবন যাপনের প্রশ্নে মোটামুটি সব ধর্মই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। ধর্ম মানুষকে স্বেচ্ছাচারী হতে দেয় না। নষ্ট করতে দেয় না অন্যের অধিকার। ঘৃণার পরিবর্তে শিখায় ভালবাসা।
আদর্শ সমাজ গঠনে তাই ধর্ম অপরিহার্য। ইসলামের বক্তব্য এক্ষেত্রে আরো বেশি স্পষ্ট। ইসলাম শুধুমাত্র ব্যক্তি জীবনকেই পরিশুদ্ধ করে না বরং একটা আদর্শ সমাজ গঠনের নির্দেশনা দেয়।আমাদের প্রিয় নেতা রাসুলে আকরাম (স) শুধু তাত্ত্বিক ছিলেন না বরং বাস্তবে দেখিয়েছেন শান্তিপূর্ণ সমাজের মডেল। কোন ধর্মপ্রাণ মানুষ অন্যের ধর্মকে গালি দেয় না। বরং অন্য ধর্মের অনুসারিদের সম্মান করে। হয় আচরণ বা যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে নিজের ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে না হয় তার ধর্ম পালনে আপত্তি করে না।
ধর্ম অনেক উত্তম আদর্শের কথা বললেও একথা সত্য ধর্মের সাথে জড়িত সব মানুষই উত্তম নয়। বিভিন্ন ধরনের মানুষ এখানে আছে। ধর্ম কি প্রমোট করতে চায় তা না জেনে শুধু একজন ব্যক্তিকে দিয়ে ধর্মকে বিচার করা যায় না।
কিছু মানুষ আছেন ধার্মিক-এরা জীবনকে ধর্মীয় নির্দেশের আলোকে পরিচালনা করেন। ব্যক্তি জীবন ও সামাজিক জীবনে ধর্মের বিধান গুলোকে বাস্তবায়নে সদা তৎপর থাকেন। এদের মধ্যে কেউ শুধু ব্যক্তিগত ভাবে পালন করে। কেউ নিজের পাশাপাশি অন্যকেও দাওয়াত দেয়(ইসলামে এদের দা’য়ী বলা হয়)।
কিছু মানুষ আছেন যারা ধর্মপ্রাণ কিন্তু নিজেরা খুব একটা প্রাক্টিসিং ধার্মিক না। তবে এদের বিশ্বাসে দৃঢ়তা আছে। পালন করতে না পারায় এদের অনুশোচনা হয়। ধর্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হলে এরা এগিয়ে আসে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তা করে।
কিছু মানুষ আছেন ধর্ম-উদাসিন। এরা ধর্ম সম্পর্কে তেমন জানে না আবার বিরোধিতা ও করে না। ধর্মীয় বিষয় এলে এরা বেশির ভাগ সময় নিশ্চুপ থাকেন।
আরেক শ্রেণীর মানুষ আছে বক-ধার্মিক। এরা তেমন একটা প্রাকটিসিং না হলেও বিভিন্ন অকেশানে ধর্ম্পালন করে। লোক দেখানো আমল এবং দান-খয়রাত করে।
অন্য এক শ্রেণীর মানুষ আছে ধর্মহীন। এদেরকে আমরা সাধারণত নাস্তিক বলে জানি। এরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না। নিজেদের গন্ডির মধ্যেই এরা সীমাবদ্ধ থাকে। এটা একজন মানুষের ব্যক্তিগত পর্যায়ে থাকে। কোন ধর্মপ্রাণ মানুষ এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। সে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধর্ম না বিশ্বাস না করলেও সমাজের খুব একটা কিছু হয় না।
এ নাস্তিকদের মধ্যে আবার তিন ধরনের নাস্তিক আছে। এক ধরণের নাস্তিক শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের নাস্তিক। অন্যকে সে প্রভাবিত করতে যায় না(যাদের কথা উপরে বলা হয়েছে)। ২য় ধরনের নাস্তিকরা শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে না এরা নাস্তিকতা প্রচার করে। এক্ষেত্রে ধর্মের যৌক্তিক সমালোচনা করে তারা নাস্তিকতার দিকে মানুষকে আহ্বান জানায়।
৩য় পর্যায়ের নাস্তিকেরা হচ্ছে ধর্মদ্রোহী। এরা কোন যুক্তি মানে না। গায়ের জোরে ধর্মকে বিতাড়িত করতে চায়। মিথ্যা আর অশ্লীল কাব্য রচনা করে ধর্মপ্রাণ মানুষকে আঘাত দেয়া এদের প্রধান কাজ। এরা সমাজের প্রত্যেকটা সেক্টর থেকে ধর্মকে নির্মূল করে দিতে চায়। এরা সামাজিক শৃংখলার জন্য হুমকি স্বরূপ। এদের উগ্র ধর্মদ্রোহিতার কারনে বিভিন্ন সময় মানুষের জান-মাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশে এরা ইসলামী নাম সম্পৃক্ত কোন কিছুকেই সহ্য করতে পারে না। সব জায়গা থেকে বিসমিল্লাহ, আল্লাহ, রাসুল(স), কোরআন কে সরিয়ে দি্তে চেষ্টা করে।
ধর্মদ্রোহীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ৩ টিঃ
1) Professionally Competent,
2) Ideologically Motivated
3) Working against Public values
(চলবে...)
পরবর্তী পর্বে এই বৈশিষ্ট্য গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সাথে থাকুন। প্রচার করুন।
ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-৩
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন