হিজড়া কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? মানসিক হিজড়াদের চিনে নিন।
লিখেছেন লিখেছেন আজাদ আব্দুল্লাহ ২১ মার্চ, ২০১৩, ১১:০০:০০ সকাল
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ ৬৮-৬৯ সালের প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতির অবস্থা বর্ণণা করতে গিয়ে তার মাতাল হাওয়ায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের অবস্থা বর্ণণা করতে গিয়ে লিখেছিলেন
“যারা এই দলে, ধরেই নেয়া হত তাদের মধ্যে মেয়েলিভাব আছে। তারা পড়ুয়া টাইপ। রবীন্দ্রনাথ তাদের গুরুদেব। এরা পাঞ্জাবি পরতে পছন্দ করে। গান বাজনা, মঞ্চনাটক জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত থাকে। এদের ভাষা শুদ্ধ। নদীয়া শান্তিপুর স্টাইল। যে কোন বিপদ আপদে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে এরা পারদর্শী। মিছিলের সময় পালানোর কথা বিবেচনায় রেখে এরা পেছন দিকে থাকে। এ দলটির আবার দুই ভাগ। মতিয়া গ্রুপ, মেনন গ্রুপ। এক দলের উপর চীনের বাতাস বয়, আরেক দলের উপর রাশিয়ার বাতাস বয়”।
হুমায়ুন আহমেদ সত্তর দশকের leftist দের যে চিত্র এঁকেছিলেন তাতে পড়াশুনার কিছু ঘাটতি এবং রবীন্দ্রভক্তির বদলে গঞ্জিকা ভক্তি ছাড়া বাকি অভ্যাস গুলো অদ্যবধি রয়েছে। কোথাও কোথাও বৃদ্ধি পেয়েছে যেমন মেয়েদের মত চুল লম্বা রেখে খোপা করা, হাতে চুড়ি, বালা পড়া ইত্যাদি। তবে প্রতিভাবান এই কথাসাহিত্যিক leftist ছেলেদের এই half ladies এর মত আচরণের কথা বললেও leftist মেয়েদের কথা বোধ করি খেয়াল করেন নি।
এই দলের ছেলেদের মধ্যে যেমন মেয়েলিপনা দেখতে পাওয়া যায়, তেমনি মেয়েদের মধ্যেও ছেলেপনা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, জিন্স প্যান্ট পরা, ধূমপান ও গঞ্জিকা সেবন, জোর গলায় কথা বলা এবং স্লোগান দেওয়া, সমান অধিকারের নামে কোথাও কোথাও অতিরিক্ত ও বিশেষ অধিকার দাবী করা ইত্যাদি।
ছেলেদের মধ্যে মেয়েলি প্রবণতা এবং মেয়েদের মধ্যে ছেলেপনা অর্থাৎ একই ব্যক্তির মধ্যে একই সাথে ছেলে ও মেয়ে হওয়ার প্রবণতা আমরা শারীরিক গঠণে ত্রুটি সম্পন্ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে পাই, যাদেরকে বলা হয় বৃহন্নলা (এই নামে স্যারের একটি উপন্যাসও আছে)। সর্বসাধারণের কাছে যারা “হিজড়া” নামে পরিচিত।
বিস্ময়কর হলেও এটি সত্য যে বামপন্থী ছেলেমেয়েদের মানস, আচার আচরণ, প্রবৃত্তি, ধর্মচেতনা, বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশ্লেষণ করলে “হিজড়া” সম্প্রদায়ের সাথে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পার্থক্য এক দলের ত্রুটি শারীরিক আর অপর দলের ত্রুটি মানসিক। তবে আচার আচরণ ও ব্যবহারে উভয় ত্রুটিরই ফলাফল বেশ কাছাকাছি প্রকৃতির।
হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন যে এদের এক গ্রুপের উপর দিয়ে চীনের বাতাস বয় এবং আরেক গ্রুপের উপর দিয়ে রাশিয়ার বাতাস বয়। এদের উপর দিয়ে কখনও মক্কা, মদীনা, গয়া, কাশী বাংলাদেশের বাতাস বয় না। অথচ দেশের সাধারণ মানুষের উপর দিয়ে মক্কা, মদীনা, গয়া, কাশী ও বাংলাদেশের বাতাস বয়। এক্ষেত্রে হিজড়া শ্রেণীর মতই চিন্তা চেতনায় আপামর জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ক্ষুদ্র প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়। খেয়াল করার মত একটি বিষয় হল এরা মুলতঃ শ্রেণী সংগ্রামী হয়েও মাঝে মাঝে জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় নিজেদের প্রকাশ করার চেষ্টা করে। বর্তমান এবং ৭১ পূর্ববর্তী সময়সহ এদের মূল তাত্ত্বিক শ্লোগান হল, “দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই কর”, এই মজদুরদের মধ্যে কিন্তু পাকিস্তানি মজদুরও ছিল এবং এখনও আছে, যদিও সাধারণ মানুষ তখন শ্লোগান দিয়েছিল “বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর”। অর্থাৎ এদেরকে আমরা বলতে পারি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্থানীয় শাখা। এজন্য এদেরএকটি মূল সংগঠনের নাম হচ্ছে “বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি”। এক্ষেত্রে এদের জাতীয়তাবাদী কথা এবং মুক্তিযুদ্ধের আবেগ অনেকটাই কৌশলপূর্ণ। ইদানীং আবার শ্রেণী সংগ্রামের নামে বুর্জোয়াদের সাথে power structure এ এসে হালুয়া রুটিতে ভাগ নিতেও দেখা যাচ্ছে এদের। এই মানসিক হিজড়া বামপন্থীরা এদেশের আপামর মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ সকল ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় চেতনা, বিশ্বাস এবং বিশেষ করে সামগ্রিকভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। এই ক্ষুদ্রগোষ্ঠী হিজড়াদেরকে চিহ্নিত করার প্রয়োজন রয়েছে।
ধর্ম চেতনাঃ-
আপনি যদি একজন হিজড়াকে তার ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, সে বলে ধর্ম আমাকে কি দিল, আমরা বঞ্চিত হয়েছি। ধর্ম এবং ধর্মভিত্তিক সমাজ আমাদের গ্রহণ করে নেয়নি। কোন মসজিদ বা মন্দিরে আমাদের স্থান নেই (কথাটি সম্ভবত সত্যি নয়। আমি যতটুকু জানি তাতে ইসলামে হিজড়াদের কে অন্যান্য সকল মানুষের মতই দেখতে বলা হয়েছে। তাদের সামাজিক, ধর্মীয় ও পারিবারিক অধিকার অন্যান্য সকল মানুষের মত একই। বৈবাহিক ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক লিঙ্গের ভিত্তিতে বিপরীত লিঙ্গের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে শারীরিক এবং মানসিক স্টাটাসের যেকোন ডিসক্রিপেনসি কে ইসলাম পরীক্ষার বিষয় হিসেবে ঘোষনা করে বলেছে যার যত বড় পড়িক্ষা তার প্রতিদান তত বড়। এবং এ পরিক্ষার বিষয় প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। যেমন টি সুরা বাকারাতে বলা হয়েছে--"আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ এবং ঘাটতি(শারীরিক/মানসিক) এবং ফল-ফলাদি(প্রাচুর্যতা এবং সফলতা) দিয়ে।"আর যৌনতায় অক্ষমদের বিয়ে না করতে বলা হয়েছে। আর অন্যান্য ধর্মের বিধান সম্পর্কে আমার জানা হয়ে ওঠে নি। তবে এই বিষয়ে ইসলামের উপর্যুক্ত বক্তব্যগুলো আমার সীমাবদ্ধ পড়াশোনার ভিত্তিতে বলেছি। এর সত্যতা ও সঠিকতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ইসলামী পন্ডিতদের বক্তব্যই চূড়ান্ত।) যেহেতু ধর্ম আমাকে কিছু দেয়নি বা ধর্ম থেকে কিছু পাই নি, কাজেই ধর্ম বা স্রষ্টা নিয়ে আমি ভাবি না।
একজন বামপন্থী ছেলে বা মেয়ের সাথে কথা বললেও আপনি শুনতে পাবেন যে পৃথিবীর যত অনাচার, বিশৃংখলা হচ্ছে তার পেছনে ধর্মই দায়ী। তাই এরা ধর্মহীন জীবন ও ধর্মহীন সমাজ তৈরী এবং সর্বত্র ধর্মবিদ্বেষ ও ধর্মদ্রোহিতা ছড়িয়ে সামাজিক বন্ধন, পারিবারিক বন্ধন এবং সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করে। এদের মধ্যে একটি সংস্কারবাদী গ্রুপ বলে মুহাম্মাদ (স) নিজের কথা আল্লাহর বাণী হিসেবে প্রচার করলেও উদ্দেশ্য হয়ত মহৎ ছিল। কিন্তু বাস্তবে কোন মহৎ ফলাফল নেই।
যৌনাচারঃ-
হিজড়াদের নির্দিষ্ট কোন যৌনাচার নেই। কেউ বিপরীতকামী, কেউ সমকামী, কেউ উভকামী ইত্যাদি ইত্যাদি। বামপন্থীদের মধ্যেও আমরা কদর্য যৌনাচার ও চিন্তা দেখতে পাই। কাউকে কাউকে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এটি অভ্যাস নয় বরং জেনেটিক ব্যাপার ইত্যাদি বিষয়ে তর্ক বিতর্ক করতে এবং বই লিখতে দেখা যায়। এ বিষয়ে তাদের একটি পাবলিকেশন ও প্রচার আন্দোলনও রয়েছে। আবার যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের এবং শুদ্ধতার পরিবর্তে অবাধ যৌনাচার অব্যাহত রেখে কিভাবে এইডস মুক্ত থাকা যায় সেগুলো নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালাতেও তাদেরকে দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় পতিতার কাছে গিয়ে এসে বন্ধুদের কাছে এদেরকে শ্রেণীহীন ও সাম্যতার দৃষ্টিকোন থেকে দেখার পরামর্শ দিতেও দেখা যায়। এমনকি মুক্তমনা এবং সমতার নামে এদেরকে যৌনপল্লী থেকে ঘুরে এসে বন্ধুদের সাথে গল্প করতেও দেখা গেছে। নগ্নতাই অশ্লীলতা নয় এবং সমাজের safety bulb হিসাবে যৌনপল্লী থাকা দরকার এ ধরণের কথা অহরহ এদের কাছে শোনা যায়। দেহব্যবসা কে আদিমতম পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করে এর প্রয়জনীয়তা সম্পর্কে আওয়ায তুলতেও দেখা যায় এদের। মোটামুটিভাবে এদের সকলকেই বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ককে মুক্তমন এবং প্রগতিশীলতার একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রচার করতেও দেখা যায়। এই বামপন্থীদের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই কদর্য চিন্তা এবং আচারের প্রসার ঘটানোর ঐকান্তিক প্রয়াস যেমন পরিলক্ষিত হয় তেমনি যারা এগুলোর বিরোধীতা করে, তাদের কে প্রতিক্রিয়াশীল, মৌলবাদী,পশ্চাৎমুখী এবং প্রগতির শত্রু বলে আখ্যায়িত করে, এবং নিজেদেরকে প্রগতির পরিব্রাজক দল (প্রপদ) হিসাবে দাবী করতেও দেখা যায়। শুনেছি পাগল নাকি নিজেকে সুস্থ্য এবং অন্য সবাইকে অসুস্থ্য বলে মনে করে। বামপন্থীদের এই অস্বাভাবিকত্বকে তারা প্রগতিশীলতা, বা supernormal জিনিস হিসাবে চালাতে চায়। যদিও সাধারণ মানুষ এগুলোকে অধঃগতি, উচ্ছন্নে যাওয়া, নষ্ট হওয়া এবং abnormal activities হিসাবেই জানে। বিয়ে বহির্ভূত যৌনাচার এর লাইসেন্স দিতে চায় এরা।
আক্রমণাত্মকভাব ও অসহিষ্ণুতাঃ-
হিজড়াদের মধ্যে একধরণের don’t care ভাব ও অনেকটা আক্রমণাত্মক ও অসহিষ্ণু ভাব পরিলক্ষিত হয়। রাস্তাঘাটে বা দোকানদার কে নানা অশ্লীল অংগভঙ্গি, কথা ও হেনস্তা করে টাকা পয়সা ও বিভিন্ন সামগ্রী হাতিয়ে নিতে দেখা যায়। বামদের মধ্যেও সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাস, প্রথা, ধর্মাচরণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের গালাগাল, আক্রমণ করা ও চড়াও হতে দেখা যায়।
হিজড়াদের মধ্যে ভয় আছে, কিন্তু লাজ লজ্জা একেবারে নাই বল্লেই চলে। সাধারণ পথচারী ঐক্যবদ্ধ হয়ে যখন হিজড়াদের আক্রমণাত্মক ও অসহিষ্ণু আচরণ কে সংযত করতে এগিয়ে আসে তখন তারা একটু ভয় পেয়ে সংযত হয়। কিন্তু যেহেতু লজ্জা নেই তাই সুযোগ পেলেই আবারও একই রকম আচরণ করতে দেখা যায়।
বামপন্থীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বিশ্বাসী মানুষরা যখন এদের ধর্মদ্রোহী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে তখন তারা সংযত হতে চেষ্টা করে। বাইতুল মোকাররমের খতিবের হাত ধরে ক্ষমা চাইতেও দেখা যায়, কেউ কেউ জনরোষ থেকে বাঁচতে দেশও ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু সময় ও সুযোগ পেলে আবারও সেই হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক আচরণে ফিরে যেতে চেষ্টা করে।
পরিশেষে এ কথা বলে এই লেখা শেষ করতে চাই যে, শারীরিক অবয়বে প্রকাশ হওয়ার কারণে হিজড়াদের চিহ্নিত করা যায় এবং সচেতন হওয়া যায় এবং সময়মত ব্যবস্থাও নেয়া যায়।
কিন্তু মানসিক হিজড়ারূপী বামদের চিহ্নিত করার কাজটি কখনো করা হয়ে উঠেনি। ফলে তাদের ব্যপারে সবসময় সতর্ক হওয়াও সম্ভব হয়ে উঠে না।তাই আসুন হিজড়া ইউনিয়ন, হিজড়া মৈত্রী, জাতীয় সুবিধাবাদী দল হিজড়া লীগ, হিজড়া ফেডারেশন, হিজড়া ফ্রন্ট ইত্যাদিকে চিহ্নিত করি। আগে মানসিক হিজড়াদের দলে ছিল, এবং অভিন্ন মানসিকতা পোষণ করে এবং তা জনসাধারণের দৃষ্টির অগোচরে রেখে বর্তমানে বিভিন্ন mainstream দলগুলোতে অনুপ্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করি এবং তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করি।
After all হিজড়ারাও মানুষ যেমন করে বামপন্থীরাও । সে হিসাবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদেরকে দেখে তাদেরকে চারিত্রিক ও মানসিক সংশোধন করার প্রয়াস এবং আয়োজন থাকা দরকার। সেই সাথে সতর্কতার প্রয়োজনীয়তাকেও অস্বীকার করা যায় না। পরিশেষে বলতে চাই,
জগতের সকল হিজড়ারা ভাল হোক,
নতুবা বন্যরা থাকুক বনে, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।
(কালেক্টেড)
বিষয়: বিবিধ
৬৬৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন