ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর সেই আলোচিত বক্তব্য

লিখেছেন লিখেছেন আজাদ আব্দুল্লাহ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:০৩:০৬ দুপুর

ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর সেই আলোচিত বক্তব্য

‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য হলে আমি যেন ঈমান নিয়ে মরতে না পারি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

তারিখ: ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩

গত বছর ৬ ডিসেম্বর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে মাত্র আড়াই থেকে তিন মিনিট আবেগময়ী এবং মর্মস্পর্শী বক্তব্য রেখেছিলেন। নিজেকে বিশ্বাসের চূড়ান্ত ও সর্বশেষ স্তরে সঁপে দিয়ে মাওলানা সাঈদী অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে সে দিন বলেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটিও যদি সত্য হয় তাহলে আমি যেন ঈমান নিয়ে মরতে না পারি। রোজ কিয়ামতের দিন যেন রাসূল সা:-এর শাফায়াত আমি না পাই। আর যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে তারা যদি তওবা না করে এবং তওবা যদি তাদের নসিব না হয় তাহলে গত দুইটি বছর আমি এবং আমার সন্তানেরা যে যন্ত্রণা ভোগ করেছি, আমার যে পরিমাণ চোখের পানি ঝরেছে, আমার সন্তানদের যে চোখের পানি ঝরেছে, তার প্রতিটি ফোঁটা অভিশাপের বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শতগুণ যন্ত্রণা এবং কষ্ট ভোগের আগে যেন তাদের মৃত্যু না হয়। আর জাহান্নাম হয় যেন তাদের চির ঠিকানা।’

মাওলানা সাঈদী বলেন, ‘যদি আমার প্রতি জুলুম করা হয় তাহলে এ বিচারের দুইটি পর্ব হবে। আজ এখানে একটি পর্ব শেষ হবে। আর কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে আরেকটি বিচার বসবে। সেই বিচারে আমি হবো বাদি। আর আমার বিরুদ্ধে যারা জুলুম করেছে তারা হবে আসামি।’

মাওলানা সাঈদীর আবেগময়ী এ বক্তব্য নিয়ে পরের দিন দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পাঠক মহলে বিপুল সাড়া ফেলে। পাঠকের অনুরোধে আজ রায় ঘোষণা উপলক্ষে তার সে বক্তব্য আবার প্রকাশ করা হলো।

মাওলানা সাঈদী যা বলেছিলেন : ‘আমি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার আপামর জনগণের কাছে অতি পরিচিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এই মামলায় আমার নাম বিকৃতি করে সরকারের লেলিয়ে দেয়া তদন্ত কর্মকর্তা কখনো দেলোয়ার শিকদার বর্তমানে সাঈদী, কখনো দেলু ওরফে দেইল্যা, দেউল্লা বলে আখ্যায়িত করেছে আমাকে। আমি শপথ করে বলতে চাই ১৯৭১ সালের যে দেলোয়ার শিকদারের অপকর্মের দায়ভার আমার ওপর চাপানো হয়েছে সেই রাজাকার দেলোয়ার শিকদার আমি নই।’

‘আমার বিরুদ্ধে চুরি ডাকাতি, জেনা ব্যাভিচার এবং ধর্ষণের অভিযোগ আনছেন তিনি। তিনি ১২-১৪ বার পিরোজপুর গেছেন তদন্ত উপলক্ষে। রাজনৈতিক কারণে বর্তমান সরকার দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তিনি এসব অভিযোগ এনেছেন। স্থানীয় এমপির সাথে বসে তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী সাবুদ তৈরি করেছেন।

রোজ কিয়ামতের ভয় আছে, পরকালে বিশ্বাস আছে এমন কোনো মুসলমান কোনো মানুষের বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আনতে পারে না।’

‘আমার বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটিও যদি সত্য হয় তাহলে আমি যেন ঈমান নিয়ে মরতে না পারি । রোজ কিয়ামতের দিন যেন রাসূল সা:-এর শাফায়াত আমি না পাই। আর যদি আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা হয় এবং যারা এ মিথ্যা অভিযোগ এনেছে তারা যদি তওবা না করে এবং তওবা যদি তাদের নসিব না হয় তাহলে গত দুইটি বছর আমি এবং আমার সন্তানেরা যে কষ্ট এবং যন্ত্রণা ভোগ করেছে, আমার যে চোখের পানি ঝরেছে, আমার সন্তানদের যে চোখের পানি ঝরেছে তার প্রতিটি ফোঁটা যেন অভিশাপের বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শত গুণ যন্ত্রণা ভোগের আগে, কষ্ট ভোগের আগে আল্লাহতায়ালা যেন তাদের মৃত্যু না দেন। মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ অযুত ধারায় বর্ষিত হোক। আর জাহান্নাম যেন হয় এদের চিরস্থায়ী ঠিকানা।’

‘আমার প্রতি যদি জুলুম করা হয় তাহলে এ বিচারের দুইটি পর্ব হবে। আজ এখানে একটি পর্ব শেষ হবে। আর রোজ কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে আরেকটি বিচার বসবে। সে দিন রাজাধিরাজ, সব সম্রাটদের সম্রাট, সব বিচারকদের বিচারপতি, আসমান ও জমিনের মালিক মহান আল্লাহ হবেন বিচারপতি। যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার প্রতি জুলুম করা হয় তাহলে আমার প্রতি যারা মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন, আজ এখানে যারা আছেন তারা হবেন আসামি। আর আমি হবো বাদি।’ আপনাদের তিনজনের প্রতি আমি আশা রেখে বলছি আপনাদের ন্যায় বিচারের তৌফিক দান করুন আল্লাহ। সে দিন বিচার কার্যক্রম শেষে মাওলানা সাঈদীর তিন ছেলে, আত্মীয়স্বজন এবং আইনজীবীরা যখন তার কাঠগড়ার সামনে যান তখন তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তার সন্তানদের মাথায় চুমু খান। আইনজীবী ও অন্যান্যের সাথে করমর্দন করেন এবং দোয়া করেন। এরপর পুলিশ তাকে হাজতখানায় নিয়ে যায়।

বিষয়: বিবিধ

১০৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File