ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-৫
লিখেছেন লিখেছেন আজাদ আব্দুল্লাহ ০৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৫৮:২৩ সকাল
আগের কোন পর্ব পড়া না থাকলেও আজকের টা অবশ্যই পড়ুন।
আজ লিখার কথা ছিল “শাহবাগ আন্দোলনঃ ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহীদের চুড়ান্ত বিদ্রোহ” এ বিষয়ে। কিন্তু গত পরশু দিন তিন পর্ব লেখাটি মেইল করি এক প্রিয় বড় ভাইকে (উনিও এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক)। ফাইল এর নাম দিয়েছিলাম “Economics of Profanism”। উনি লেখাটি পেয়েই ডিকশনারিতে খুজতে শুরু করলেন Profanism এর অর্থ কি? পেলেন না। আমাকে জানালেন-এই শব্দতো ডিকশনারিতে নেই। মৃদু হেসে বলি, না নেই। আমি নতুন করে দিলাম। না থাকার কারন ব্যাখ্যা করি- ধর্মদ্রোহীতাকে একটা মতবাদ হিসেবে ওরা কল্পনা করতে পারেনি এখনো। তাই Profane, Profanity, Profanation থাকলেও Profanism নেই। তিনি আমার যুক্তি শুনে হাসলেন, বললেন তুমি তো ইংরেজি ডিকশনারিতে একটা নতুন শব্দ সংযোজন করলে। চল, তোমারে খাওয়াই। অতঃপর হোটেলে(বিলটা অবশ্য আমিই দিয়েছি)।
ধর্মদ্রোহীতা একটি মতবাদঃ
ধর্মদ্রোহিতা আজ আর কোন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিগত প্রয়াস নয়, এটি একটি মতবাদ। সেক্যুলারিজম এবং নাস্তিকতাবাদের উগ্ররূপ হচ্ছে ধর্মদ্রোহীতাবাদ (Profanism)। মুলত সেক্যুলার এবং নাস্তিকদের হতাশাগ্রস্থ গ্রুপটি এ দলে সম্পৃক্ত হয়। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মতবাদ নিয়ে জনগনের কাছে প্রত্যাখাত হয়ে এদের মধ্যে তৈরি হয় এক ধরনের হতাশা যা চুড়ান্ত পর্যায়ে ঠেলে দেয় ধর্মদ্রোহীতার পথে। তখন তারা যুক্তির দুয়ার হারিয়ে ঘৃণা আর বিদ্বেষের গর্তে পতিত হয়। এই জিঘাংসা ছড়িয়ে পড়ে ওদের শিরা উপশিরায়। বিবেকের ধার না ধেরে ওরা তখন পরিণত হয়ে পড়ে পাগলা কুকুরে। শুরু করে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি। কারন ওদের বিশ্বাস নেংটা মানুষ দেখলে নাকি সভ্য মানুষরা চোখ বন্ধ করে দৌড় দেয়। নগ্ন মানুষের লজ্জ্বা না করলে ও পথচারীদের লজ্জ্বা হয়।
এদের সব কর্মকান্ডই পরিচালিত হয় ঐ একটি উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেই। ভাবখানা ঐ বাচ্চা ছেলের মত –নিজে যেহেতু খেতে পারি নাই তোদেরও খেতে দিব না। ওদের শিক্ষাদীক্ষা, ব্যবসা-চাকুরি সব কিছুই আবর্তিত হয় আদর্শকে ঘিরেই। রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া এ জনগোষ্ঠীর প্রধান টার্গেট অর্থবিত্তের মালিক হওয়া তথা ব্যবসা-বাণিজ্য, মিডিয়া এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গন দখল করা। এ সব কটাই একটা আরেকটার সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত এবং ধর্মদ্রোহিতার প্রসারে প্রয়োজনীয়।
সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ধর্মের ভ্যালুজ গুলো নষ্ট করার কাজ করে, অশ্লীলতা ছড়ায়। নারীর শারীরিক উপস্থাপনের মাধ্যমে নারীকে পন্য হিসেবে ব্যবহার করে ধর্মদ্রোহীতা এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করে। নতুন নতুন নাটক, সিনেমা, টকশো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামক-ইসলামী ব্যক্তিত্বকে হেয় করার কাজ করে। নগ্ন-অর্ধনগ্ন ভাবে নারীকে উপস্থান করে তরুনদের আকৃষ্ট করে। প্রেম, পরকীয়া, অবৈধ যৌনতার চর্চার মাধ্যমে বিকলাঙ্গ জেনারেশন গড়ার সকল আয়োজন করে চলেছে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিস্তৃতির জন্য বিভিন্ন ধরনের সংগঠন পরিচালনা করে। পথনাটক, মঞ্চনাটক, শিশুদের নাচ, গান, মডেলিং, সুন্দরী প্রতিযোগিতা, তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ, বিজিদের ইজি শো, সেরা কন্ঠ, সেরা নাচিয়ে, লাক্স তারকা ইত্যাদি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিশুদের সম্পৃক্ত করছে। অর্থের আশায় মা-বাবারাও নিয়ে যাচ্ছে বাচ্চাদের।
সারাদেশে অন্তত ২০০ টি সাংস্কৃতিক সংগঠন ওরা গড়ে তুলেছে। যেগুলো সব একই কল কাঠিতে নড়ে।
ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াকে ব্যবহার করে চালাচ্ছে প্রপাগান্ডা। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য, তিলকে তাল আর তালকে বায়বীয়তায় মিশিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতায় মত্ত ওরা। সংবাদ, সংবাদ বিশ্লেষন, কলাম এর মাধ্যমে ছড়াচ্ছে ফ্যাসিজম আর ধর্মদ্রোহীতা।মিডিয়া জগতে ওরা গড়ে তুলেছে রমরমা আধিপত্য।
এই মিডিয়া এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গুলোর অর্থ আসে কর্পোরেট গুলো থেকে। এজন্য ওরা গড়ে তুলেছে বেশ কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের মুনাফার একটা বৃহৎ অংশ ব্যয় করে মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গুলোর পিছনে। পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণের জন্য ওরা এমন সব বিজ্ঞাপন প্রচার করে যার মাধ্যমে ব্যবসা এবং ধর্মদ্রোহীতা দুই উদ্দেশ্যই হাসিল হয়।
মিডিয়া-সাংস্কৃতিক সংগঠন-কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এই তিনের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ওদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। কারন এই তিনের সম্মিলনের মাধ্যমেই আদর্শ প্রচার সম্ভব। বিপদে একটা আরেকটাকে সহায়তা করে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কিছু হলে মিডিয়া, মিডিয়ার কিছু হলে ব্যবসা দিয়ে মোকাবেলা করে।আপাত দৃষ্টিতে ব্যবসা বা নিরেট বিনোদন মনে হলেও একটু দৃষ্টি দিলেই তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায়।
ব্যবসার কেন্দ্রিক মডেল গুলো হচ্ছে-ঔষধ শিল্প ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম), বানিজ্য ও বিপণণ প্রতিষ্ঠান, পরিবহন খাত, রূপচর্চার প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট, এনজিও, সংবাদ মাধ্যম।
কালচারাল প্রতিষ্ঠান(ছায়ানট)ও এনজিও গুলো আপাত দৃষ্টিতে অলাভজনক মনে হলেও মানুষের সরলতা আর চিত্ত-বিনোদনের আকাঙাকে পুজি করে এখান থেকেও তারা মুনাফা অর্জন করে। তবে এসব ক্ষেত্রে সাধারণত তারা ক্রস সাবসিডি দেয়(এক জায়গার মুনাফা দিয়ে অন্যটাকে বাঁচিয়ে রাখা)। নতুন যুক্ত ব্লগ গুলোকে অবশ্য পুরোটাই ভর্তূকি দিয়ে চালাচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের পাঠচক্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান (জাগরনের পাঠশালা, প্রগতির পরিব্রাজক দল, ল্যামপোষ্ট) গুলোও ভর্তুকি দিয়েই চলে।
এ মডেল গুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-বিভিন্ন মডেলের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন থাকলেও উচ্চস্তরের কো-অর্ডিনেটরদের পরিচিতি যথেষ্ট গোপন রাখা হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে বাহ্যিক মতভেদ ও দেখানো হয়(অনেকটা গেরিলা যুদ্ধের রণনীতি)।প্রতিটি মডেলই সুসংবদ্ধ ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশে ধর্মদ্রোহীতার অর্থনীতির বার্ষিক নীট মুনাফা প্রায় ১৫০০০ কোটি টাকা। যার প্রায় ৫৩% আসে কর্পোরেট গুলো থেকে, ১২% আসে রিয়েল এস্টেট থেকে, সংবাদ মাধ্যম হতে আসে ১৭%, অন্যান্য খাত(পরিবহন, ঔষুধ, এনজিও) থেকে আসে ১৮%।
এই মুনাফার অন্তত ৬৫% ব্যয় হয় প্রত্যক্ষ ধর্মদ্রোহীতার কাজ এবং ধর্মদ্রোহী তৈরির দীর্ঘ মেয়াদি কাজে। সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি যায় কারচারাল অঙ্গনে(মোট ভর্তুকির প্রায় ৬০%), ২৫% যায় ব্লগ ও পাঠচক্র গুলো পরিচালনায় আর বাকি ১৫% ব্যয় হয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরষ্কারে।
ব্লগ ও পাঠচক্রের জন্য বরাদ্ধ অর্থ যায় সরাসরি বাম ছাত্রনেতাদের হাত দিয়ে (এ কারনে ইদানিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার দশ বছর পর ও বাম ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব ছাড়তে চায় না)। এক হিসেবে দেখা গেছে- প্রতিটা বাম ছাত্র কর্মীর পিছনে ওদের বাৎসরিক ব্যয় হয় গড়ে ৫৬ হাজার টাকা।
এ প্রতিষ্ঠান গুলোর পরিচিতিও পরবর্তী পর্ব গুলোতে থাকবে। সাথে থাকুন
ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-১(ভূমিকা পর্ব)
ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-২(ধর্মদ্রোহীতার অর্থনীতি সংজ্ঞা স্বরূপ পর্ব)
ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-৩ (ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য পর্ব)
ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-৪
বিষয়: বিবিধ
২৬৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন