হরতালে ‘ফ্লাইট মিস’ আতঙ্কে দু’দিন আগেই বিমানবন্দরে!
লিখেছেন লিখেছেন ভবের চর ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০২:৫৮:০৪ দুপুর
টানা দু’দিন হরতালের কারণে বিদেশ গমনেচ্ছু প্রবাসী শ্রমিকরা পড়েছেন মহাসঙ্কটে। যথা সময়ে ফ্ল্যাইট ধরতে আত্মীয় পরিজন নিয়ে দু’দিন আগেই তারা আশ্রয় নিয়েছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সঙ্গে আছে খাবার-দাবারসহ নানা উপকরণ। খবরের কাগজ বিছিয়ে, লাগেজের ওপর শুয়ে বসেই মানবেতর অবস্থায় কাটছে তাদের সময়।
কিন্তু এতেও বাধ সেধেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বারবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে টার্মিনালের সামনে আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষকে বিমানবন্দর ছাড়তে বলা হচ্ছে, অন্যথায় ভয় দেখানো হচ্ছে জরিমানার।
রাজনৈতিক ডামাডোলের অসহায় শিকার এসব মানুষ কোথায় যাবে এবং টার্মিনালের সামনে অবস্থান করলে কি অপরাধ, এই প্রশ্নের সদুত্তর না আছে তাদের কাছে, না আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
টাঙ্গাইলের ভূঁয়াপুর উপজেলার চরলা গ্রামের অধিবাসী মাজেদা বেগম। মধ্যবয়সী এ নারী শ্রমিক গৃহকর্মী হিসেবে যাচ্ছেন লেবাননের বৈরুত। মাজেদা বেগমের উড়োজাহাজ বিমানবন্দর ছাড়বে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায়। বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল শেষ হবে তারও ৫ ঘণ্টা পর। আর এ কারণেই পরিবার-পরিজনসহ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তিনটি টিফিন ক্যারিয়ার ভর্তি খাবার আর পানির বোতলসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক।
তবে টার্মিনালের মেঝেতে খবরের কাগজ বিছিয়ে কোন রকম গুটিসুটি মেরে বসে থাকলেও সে জন্য যে কোন মুহুর্তে জরিমানা গোনার ভয়ে আতঙ্কিত তিনি। অন্যদিকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় থাকা আনসাররা খবরদারির নামে এসে খেয়ে যাচ্ছে লাভের গুড়।
বিমানবন্দরে আশ্রয় নেওয়া প্রসঙ্গে মাজেদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, “ভিসা আর বিমানের টিকিট পাইতেই সহায়-সম্বল সব হারাইছি। এহন হরতালের কারণে দু’দিন আগে ঢাহাত আইতি হইছে। সঙ্গে ভাই, ভাইপুত, নিজের পুত রইছে। এতগুলান মানুষ হোটেলে থাহার সামুর্থ্য নাই, তাই এইহানে পইড়া আছি। কিন্তু তাতেও যে কুনো সুময় জরিমানা দিতি হইতে পরে। এছাড়ে আনসারে নিছে ১০০ টিহা।”
কেবল মাজেদা বেগম নয়, বরিশালের বানারীপাড়ার মামুন, শরীয়তপুরের নড়িয়ার লিয়াকত, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির আবুল কাশেম, ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের মহসিন, কুলাউড়ার বরকত, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের কামালসহ হাজার হাজার যাত্রী আটকে আছেন শাহজালাল বিমানবন্দরে। এদের কারো গন্তব্য দুবাই কারও বা লন্ডন, রোম, কুয়ালালামপুর, রিয়াদ, সিডনি প্রভৃতি গন্তব্যে। এরা সবাই প্রবাসী শ্রমিক। দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার প্রধানতম হাতিয়ার।
কেবল বিদেশগামীরাই নয় বিমানবন্দরে আটকে আছেন বিদেশ ফেরতারাও। এদেরই একজন কাতার প্রবাসী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহিদ শান্ত। ভোর ৬টার একটু আগে এসে নেমেছেন ঢাকায়। কিন্তু সারা দেশের জ্বালাও পোড়াওয়ের খবর সকালের পত্রিকা মারফত পেয়ে ঢাকার পাশেই মুন্সীগঞ্জেও ট্যাক্সি বা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না তিনি।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “ আমাদের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের এ হেন আচরণই আমাদেরকে বিদেশমুখী হতে বাধ্য করেছে।”
তিনি বলেন, “যে প্রবাসী শ্রমিকরা গায়ের রক্ত পানি করে দেশের অর্থনীতি সচল রাখে, তাদের জন্য দেশের বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সব কিছুতেই বিশেষ ব্যবস্থা থাকার কথা ছিল। আজ হরতাল হচ্ছে, কিন্তু প্রবাসী শ্রমিকরা কেন এই হরতালের আওতামুক্ত থাকবে না? কেন তাদের জন্য থাকবে না বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থা?”
এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা বা দায়িত্ব যাদের, তাদের কানে কি পৌঁছুবে প্রবাসী শ্রমিকদের এই আর্তনাদ।
উৎসঃ
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বিষয়: বিবিধ
১১১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন