প্রতিমাসে ২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তিতাস গ্যাস!!

লিখেছেন লিখেছেন ভবের চর ২৫ মার্চ, ২০১৩, ০২:৪৯:২৯ দুপুর

তিতাস যে পরিমাণ গ্যাস কিনছে, তার চেয়ে বেশি বিক্রি করছে। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের মতে, দেশে দেড় লাখ অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে, যা দিয়ে মাসে ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে।

তাহলে এই বিশাল অংকের চুরি যাওয়া গ্যাসের হিসাব মিল করা হচ্ছে কিভাবে? এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায় মজার তথ্য!

তিতাসের আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকরা গ্যাস ব্যবহার করুক আর না-ই করুক, প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে বিল আদায় করছে তিতাস।

তিতাস গ্যাস আবাসিকে ডবল বার্নারের জন্য ৪৫০ টাকা আদায় করছে। এতে প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে ৮৭ ঘনমিটারের (প্রতি ঘনমিটার ১৫.১৭ টাকা) দাম নেওয়া হচ্ছে। আর শিল্পখাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ লোডের বিল কষা হচ্ছে।

আর এখানেই মূল রহস্য লুকিয়ে আছে। বিষয়টি ধরা পড়ে আবাসিকে প্রি-পেইড মিটার বসানোর পরে। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কারোরই সাড়ে ৪শ টাকা বিল হচ্ছে না। ছোট পরিবার ২শ টাকা, আর বড় পরিবারের সর্বোচ্চ ৩ থেকে সাড়ে ৩শ টাকার গ্যাস খরচ হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া এলাকায় ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ সাড়ে ৩শ টাকার গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে।

লালমাটিয়া ডি-ব্লকের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বাংলানিউজকে জানান, প্রি-পেইড মিটার বসানোর পর তার অনেক সাশ্রয় হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে তার খরচ হয়েছে মাত্র আড়াইশ টাকা। একই ব্লকের বাসিন্দা আব্দুর রউফ জানান, তার গেল মাসে খরচ হয়েছে শুধু ৩শ টাকা।

আরও ১৫ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে। কারোরই ৪শ টাকা বিল হয়নি। অথচ পোস্ট-পেইড মিটারের আবাসিক গ্রাহকরা বিল দিচ্ছেন ৪শ ৫০ টাকা হারে।

দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তিতাস গ্যাস। কোম্পানিটির আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা ১৫ লাখ ১৯ হাজার ২১৪ জন। এর মধ্যে প্রি-পেইড মিটারধারী গ্রাহক সংখ্যা মাত্র সাড়ে ৪ হাজার।

সে হিসেবে পোস্ট-পেইড মিটারধারী ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৬২৬ আবাসিক গ্রাহকদের কাছ থেকে গড়ে ১শ ৫০ টাকা হারে বাড়তি টাকা আদায় করছে তিতাস।

গড়ে ১শ ৫০ টাকা ধরা হলে বাড়তি আদায়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৭৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা, যা পুরোটাই চলে যাচ্ছে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের পকেটে।

এর সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

একইভাবে ক্যাপটিভ পাওয়ার ও শিল্প গ্রাহকদের কাছ থেকেও নির্দিষ্ট লোডের বিপরীতে বিল আদায় করছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। শিল্প মালিকরা এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, “২ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ পাওয়ারের জন্য মাসে ১০ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই বিল ৮ লাখের বেশি হতে পারে না।”

তিনি দাবি করেন, “গ্যাস না পুড়িয়ে বিল দিতে হচ্ছে আমাদের। আমরা এ বিষয়ে অনেক বার লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।”

তিতাসের ২০১১-২০১২ অর্থবছরে বার্ষিক রিপোর্টে দেখা গেছে, তারা ওই অর্থবছরে গ্যাস কিনেছে ১৩ হাজার ৪২৬ মিলিয়ন ঘনমিটার (এমএমসিএম), আর গ্যাস বিক্রি করেছে ১৩ হাজার ৬০০ এমএমসিএম অর্থাৎ ১৭৪ এমএমসিএম বেশি।

শুধু আবাসিকের সঠিক হিসাব ধরা হলে, বাড়তি গ্যাসের পরিমাণ ১৮ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ ক্টোবর পেট্রোবাংলার এক সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেছিলেন, “দৈনিক ১৮ লাখ টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, তার ৭০ শতাংশই এখন অবৈধ সংযোগ দিয়ে চলছে। সংযোগ দিলে বাড়তি ৩০ শতাংশ গ্যাসের আওতায় আসবে।”

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারমান ড. হোসেন মনসুর বলেন, “এখনও গ্যাস চুরি হচ্ছে। পেট্রোবাংলা তদন্তে নামলেও সঠিকভাবে সহযোগিতা করছে না তিতাস।”

আবাসিকের বাড়তি বিল দিয়ে এ বিষয়ে মেকাপ করা হচ্ছে বলে ধারণা তার।

সন্দেহের তীর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজের দিকে।

কিন্তু তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীরা সাশ্রয়ী হচ্ছেন। কিন্তু পোস্ট-পেইড গ্রাহকরা সাশ্রয়ী নন! তাই, বাড়তি বিল আদায়ের এই হিসাব সঠিক হতে পারে না!”

“তবে সামান্য অবৈধ সংযোগ রয়েছে” বলেও স্বীকার করেন তিতাস এমডি।

উৎসঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিষয়: বিবিধ

১৩১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File